নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"সুরঞ্জনা\"সোনার খাঁচায় বন্দী যে জন -প্রেমিক মাতাল [email protected]

নুর ইসলাম রফিক

প্রেমিক মাতাল

নুর ইসলাম রফিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

পথশিশু

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৯

(১)

আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে

কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে ?

সেই বাল্যকালের "আদর্শ ছেলে" কবিতা খানা কিছুদিন যাবত

আমাকে বিবেকের কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে রেখেছে।

আমি কিছুতেই মুক্তি পাচ্ছিনা নিজ বিবেকের কাঠগড়া থেকে।

কি করে পাবো আমি মুক্তি। আমি যে কাজে বড় না হয়ে কথায় বড় হয়ে গেছি।



আমার অতিতটা আজ খুব মনে পড়ছে। মাত্র দুই বছর আগের স্মৃত্বি।

আমি ফুটপাথে চা খেতে বসে পথশিশু নিয়ে কথা বললে,চায়ের দোকানের সেলস বেড়ে যায়।

বেড়ে যায় আমার কথা শোনার শ্রুতা।

কেউ কেউ আবার করতালি দিয়ে আমাকে কথা বলায় উৎসাহ দান করে।

আমি হই গর্বিত, অহংকারী।

মুহূর্তের মধ্যেই কোন এক পথশিশু অসহায় মুখে কচি হাত খানা মেলে যদি বলে

স্যার সকাল থাইকা কিচ্ছু খাই নাই একটা রুটি খাওয়ান।

আমি আমার শ্রুতাদের দিকে নকল মুচকি হাঁসি দিয়ে অভাগার মতো তাকিয়ে

পকেটে হাত দিতেই, কেউ একজন বলে উঠে "ঐ পিচ্চি দূরে যা"।

আমি ইজ্জতের মুখবর্তি হয়ে ইজ্জত বাঁচাতে পকেট থেকে গুগল সার্চের মতো খুজে পুরাতন

একটা চেড়া ফাটা দুই টাকার নোট বের করে বলি "থাক অদের ও তো কিছু খাওয়া পড়া লাগে"।

শ্রুতাদের মাঝ থেকে কেউ একজন বিদ্রোহীর মতো বলে উঠেন

"ভাই থামেন,অগোরে একটা টাকাও দিয়েননা"।

পথশিশুর মুখের দিকে থাকিয়ে পিটে হাত ঠেকিয়ে জোরে ধাক্কা দিয়ে আবার বলে উঠলেন

"ঐ যাবি না মাইর খাবি"।

পথশিশুটা মার খাওয়ার ভয়ে কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেল।

আমিও হাঁপ ছেড়ে বাচলাম। যাক দুইটা টাকা বেচে গেল।

আস্তেধীরে সেই দুই টাকার নোটটা আবার পকেটে ডুকিয়ে চায়ের বিল দিতে গেলাম।

চায়ের দোকানির চোখ দেখে তো মনে হয়, সে এখনি আকাশ থেকে পরলো।

পিছন দিক থেকে তো দু-জন পাগলা ঘোড়ার মতো দৌড়ে এসে বলতে লাগলেন,

একি করছেন একি করছেন,বলেই দু-জন টেলাঠেলি লাগিয়ে দিলেন আমি দেই আমি দেই বলে।

দেখে মনে হচ্ছিল এই বুঝি ৩য় বিশ্ব যোদ্ধের সূত্রপাত গঠলো।

কিন্তু দুজনই পরাজিত হয়ে গেলেন চায়ের দোকানির কথা শুনে।

চায়ের দোকানি বললেন, "আপনার পাঁচ টাকা তো কবেই রহিম ভাই দিয়ে চলে গেছেন"।

আমার বুকের ভিতর তো খুশির জোয়ারে ফেটে যাচ্ছে।

এতো অহংকার এতো গর্ব হচ্ছিলো নিজেকে নিয়ে।

এতো সম্মান এতো মর্যাদা আমি জীবনেও পাইনি।



এই পথশিশু নিয়ে বলতে বলতে সমাজে আমার হলো বেপক পরিচিতি।

উঠতে বসতে চলতে সালাম আদাব নিতে নিতে আমার হাত মুখ ব্যথা হয়ে যেত।





এখন পথশিশু নিয়ে শুধু বলিনা, অনেক লেখালেখিও করি।

জাতীয় পত্রিকা গুলিতে আমার লেখার হিড়িক পড়ে।

মাঝে মাঝে কোন কোন সম্পাদকরা আমার উপরে রেগে থাকেন

তাদের পত্রিকায় লেখা দেইনি বলে।



বইও অনেক লিখি।

না লিখে উপায় নেই পাবলিসিটির লোকেরা যে ভাবে আমার পিচনে দৌড়ায়।

আমি তো এখন বলার চেয়ে লিখি বেশি।

আমার বই সুপারহিট হতে আন্তর্জাতিক বই মেলার প্রয়োজন পরে না।



প্রাইভেট সরকারী টিভি চ্যানেল গুলি হা করে বসে থাকে আমার অপেক্ষায়।

কখন আমি সময় দেবো তাদের পথশিশু বিষয়ক আলোচনা অনুষ্টানে।



আমার দাদার আমলের পুরনো টিনের ঘরটা ভেঙ্গে পাঁচ তলা করেছি।

দু-তলায় আমরা থাকি, তিন তলা থেকে পাঁচ তলা ভাড়া দিয়ে দিয়েছি।

নিচ তলাটা ফাকা রেখে দিয়েছি গাড়ি পার্ক করার জন্য।

আমাদের চারটা গাড়ি আর সারাদিন তো বিভিন্ন মিডিয়ার লোকজন আসেন,

তাই পুরাটাই ফাকা দেখে দিলাম।

যাতে কোন গাড়ি রাস্তায় পার্ক করা না লাগে।





(২)

এখন আর আমার বাড়ির গেইটের বাহিরে পায়ে হাটার সময় হয়না।

গেইটের ভিতরেই গাড়িতে চরে বসতে হয় সময় বাচানোর জন্য।

আজ কেন জানি আমার একমাত্র মেয়েটা বায়না ধরলো গেইটে বাহিরে হাটতে যাবার জন্য।

আমি আবার আমার মেয়েটার কোন বায়না এড়িয়ে যেতে পারিনা।

দেখতে একেবারেই আমার মায়ের মতো তাই।



পথশিশুদের কথা বলেই সেই আমি আজ এই আমি।

কথাই আমার জীবন পাল্টে দিয়েছে, বদলে দিয়েছে আমার ভাগ্যরেখা।

ঐ চায়ের দোকানেই যেদিন আমি প্রথম পথশিশুদের নিয়ে কথা বলি,

সে দিনই ঘরে এসে শুনি আমার একটা মেয়ে হয়েছে।

তাই আমার এই একমাত্র মেয়ের নাম রেখেছি কথা।

ওর মা'র ও এই নামটা খুব পছন্দ হয়েছিল।



কথা আমায় ধাক্কা দিয়ে বললো ও বাবা চলনা বাহিরে যাই।

আমিও কথাকে কুলে নিয়ে একটু দূর হেটে যেতেই ডাস্টবিনের দিকে চোখ গেল। চোখে পরলো ঐ সেই পথশিশুটার দিকে।

ছেলেটা ডাস্টবিন থেকে কি যেন কুড়িয়ে খাচ্ছে।

কথার ও দৃষ্টি পড়লো ছেলেটার দিকে। কথা তার নাকে ঠিপ দিয়ে বললো বাবা ও বাবা

তুমিও নাক বন্দ করো। দেখছোনা কি পচা গন্ধ।

ছি ছি বাবা ঐ পচা ছেলেটা ময়লা থেকে খাবার কুড়িয়ে খাচ্ছে কেন?

ওকে তুমি খেতে নিষেধ করো বাবা। ওর তো পেট ব্যথা হবে।

মা বলেছে পচা খাবার খেলে পেট ব্যথা হয়।

আমি বললাম না মা ওর পেট ব্যথা হবে না। ও প্রতিদিনই খায় তো তাই ওর অব্যাস হয়ে গেছে।

কথা বললো তাই বলে তুমি বাঁধা দেবে না। তুমি একটা পচা বাবা।

আমি মেয়ের মুখে পচা শব্দটা শুনে একটু অপমানিত হয়ে ছেলেটাকে বললাম,

এই ছেলে অখানে কি করছো?

ছেলেটা আমাকে ভয় পেয়ে লুকিয়ে গেল।

আমার মোবাইলে কল আসলো। আমি কথাকে কোল থেকে নামিয়ে বললাম,

মা তুমি একটু দাঁড়াও আমি মোবাইলে কথা বলে নেই।

কথা বললো আচ্ছা বাবা।

আমি মোবাইলে কথা বলতে গিয়ে আমার মেয়ে কথার কথা ভুলে গেলাম।

হটাত বিকট শব্দে পিচনে তাকালাম।

তাকিয়ে দেখি আমার মেয়ে কথা ঐ পথশিশুটার বুকের মাঝে আগলে রাখা।

ছেলেটা রাস্থার উপর পরে আছে অজ্ঞান হয়ে। পুরোটা দেখা যাচ্ছেনা নোয়া গাড়িরটার জন্য।

দৌড়ে গাড়িটির সামনে গিয়ে কথাকে কোলে নিয়ে দেখি, নোয়া গাড়িটির সাথে ধাক্কা খেয়ে

ছেলেটি নিথর হয়ে পরে আছে।

অনেক লোক জড়সড় হয়ে আমাকে বলতে লাগলো, আপনার মেয়েকে বাচাতেই ছেলেটার

এই অবস্থা হলো।

আমি আমার মেয়ের দিকে একবার তাকাই আরেক বার ছেলেটার দিকে তাকাই।

কিছু লোক ছেলেটাকে নোয়াতে গাড়িতে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গেল।

যতো দূর গাড়িটা দেখা গেল আমি ততো দূর অবাক নয়নে তাকিয়ে রইলাম।

আমার মেয়েরটা যে কাদছে সে দিকে আমার কোন খেয়াল নেই।



(৩)

আমার স্ত্রী মেয়েটাকে কুলে নিয়ে দরজা ধাক্কা দিয়ে আমার রুমে ডুকতেই

আমি গত দুই বছর থেকে আজ সকাল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সব ঘটনার

কল্পনা থেকে হুচুট খেয়ে পরলাম। আমার থুঁতনির নিচ থেকে বাম হাত খানা

আমার ইচ্ছা শক্তির বাহিরে, টেবিলে ধপাস করে পরে গেল।

আমি ফিরে এলাম বর্তমানে।

আর এক অজানা আতংকে কেপে উঠে চিৎকার দিয়ে বললাম কে কে?

আমার স্ত্রী বললো আমি। তুমি কাপছো কেন? ভয় পেয়েছো নাকি?

আমি বললাম না না আমি ঠিক আছি। আজকে সকালে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা

তোমাকে বলা হয়নি।

আমার স্ত্রী বললো আমি শুনেছি তোমার মেয়ে কথা আমাকে একটু একটু বলেছে।

আমি বললাম তুমি ম্যানেজার কে বলে দাও উপরের ভাড়াটিয়ারা যেন যতো

তারাতারী সম্ভব বাসা খালি করে অন্যথায় চলে যান।

আমি উপরের পুরো চার তলায় পথশিশু আশ্রয় কেন্দ্র করবো।

আজকের ঘটনা আমার শুধু চোখ খুলে দেয়নি, বিবেক ও খুলে দিয়েছে।

আশা করি তোমার কোন আপত্তি থাকবেনা।

আমি এখন ঐ পথশিশুকে দেখতে হাসপাতালে যাচ্ছি।

ছেলেটা সুস্থ হলেই আমি ওকে নিয়ে আসবো আমাদের বাড়িতে।

আর এই শহরে যতো পথশিশু আছে সবাইকে আমি আমার এই বাড়িতে

আশ্রয় দেব।

তারা আর কুকুরের খাবার কেড়ে নিয়ে খাবে না।

আমরা যা খাবো, তারাও তাই খাবে।

তারা আর ময়লা ছেড়া ফাড়া জামা পরে রাস্তায় ঘুরবেনা,

আমাদের মতো সুন্দর পরিস্কার জামা পরবে।

স্কুলে যাবে শিক্ষিত হবে।

অসুখ হলে চিকিৎসা নেবে।

বলতে বলতে কখন যে আমার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পরছে আমি খেয়ালি করিনি।

আমার মেয়েটা যখন আমার চোখের পানি মুছে দিল তখনি, আমার খেয়াল হলো।

আমার স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখও অশ্রুতে ছলছল করছে।

আমি মেয়েটাকে কুলে নিয়ে আদর করতে করতে, আমার স্ত্রীকে বললাম

এই তুমিও চল আমারদের সাথে।





আমরা তিন জন হাসপাতালে ছেলেটির বেডের নিকট এসে দেখি অনেক লোক জন

ছেলেটিকে গিরে আছে। সবার চোখ অশ্রু ছলছল। সেই নোয়া গাড়ির ড্রাইভারটি

এমন ভাবে কাদছে, দেখে মনে হচ্ছে তার নিজের ছেলেটি মৃত্যু শয্যায়।

আমি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে দেখি মৃত্যুর যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। ও আমাকে দেখে হাউমাউ করে কি বলার চেষ্টা করছে। আঙ্গুল দিয়ে ইশারা দিয়ে আমার মেয়েকে দেখাচ্ছে।

আমি কোন কিছু না বোঝার আগেই, আমার স্ত্রী আমার মেয়ে কথাকে ছেলেটির

বুকের উপর বসিয়ে দিলো।

এখন বুঝলাম সে আমার মেয়েটিকে তার কুলে দিতে বলেছিল।

আমি আর আমার চোখের জল আটকাতে পারলাম না।

ছোট বাচ্ছাদের মতো ফুফিয়ে ফুফিয়ে কাদতে লাগলাম।

ছেলেটি আমার মেয়ের গালে থুতনিতে কপালে চুমু দিতে দিতে হটাত থেমে গেল।

শেষ চুমুটাই হলো তার শেষ নিঃশ্বাস। আমার মেয়েটাই হলো তার চোখের শেষ দেখা।

আমি পারলাম না নাম না জানা পথশিশুটাকে মুক্তি দিতে যন্ত্রণার জীবন থেকে।

মৃত্যুই নাম না জানা পথশিশুটাকে মুক্তি দিলো যন্ত্রণার জীবন থেকে।

এখানে দাঁড়ানো সবাই নিজেদের অশ্রু ধরে রাখতে পারলোনা।

এবং কি আমার দুই বছরের মেয়েটাও না।

শুধু আমি দাড়িয়ে রইলাম প্রাণহীন কঠিন পাথরের মতো।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:১৮

মামুন রশিদ বলেছেন: ভালো লিখেছেন ।

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:১৪

নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: dhonnobad

২| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৮

কোবিদ বলেছেন:
চমৎকার লেখনী,
শুভেচ্ছা জানবেন।

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৪

নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: ধন্যবাদ.........

ভালো থাকবেন
শুভ কামনা রইলো।

৩| ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৩

♥কবি♥ বলেছেন: লিখুনি ভাল প্লট ভাল। ++++

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:০৫

নুর ইসলাম রফিক বলেছেন: লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ.........

ভালো থাকবেন
শুভ কামনা রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.