![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চৈনিক যুবক দিং লিরেনের বেড়ে ওঠা ওয়েনঝু’র উপকূলবর্তী শহরে। দাবা খেলা শেখেন চার বছর বয়েসে, পড়েছেন পিকিং ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে। চায়নার মতো একটা দেশে ‘গো’ গেমের জনপ্রিয়তা দিং লিরেনকে কেন স্পর্শ করতে পারেনি, এই প্রশ্নের জবাবে দিং লিরেন স্মরণ করেছিলেন চাইনিজ দাবার লেজেন্ড শ্রীমতি শিয়ে জুন’কে।
শিয়ে জুন ছিলেন এশিয়ার প্রথম নারী গ্র্যান্ডমাস্টার। তিনি দুই মেয়াদে দু-বার নারী বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। ৯৫ সালে দিং লিরেনের শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিলো এক এপিক টুর্নামেন্ট। শিয়ে জুন বনাম সোভিয়েত-সুইস গ্র্যান্ডমাস্টার ভিক্টর কর্শনয়। ইনি সেই কর্শনয়- যাকে কিনা বলা হয়ে থাকে ইতিহাসের অন্যতম শক্তিমান দাবাড়ু যে কখনও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি! জীবদ্দশায় কর্শনয় হারিয়েছেন নয়জন বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে, তিনি একমাত্র দাবাড়ু যার কিনা সকল বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিপরীতে জয় কিংবা ড্র স্কোর আছে। ফলে, শিয়ে জুনের সাথে কর্শনয়ের এরূপ ম্যাচ সমগ্র চায়নায় আলোড়ন ফেলবে- এটিই স্বাভাবিক। দিং লিরেন মনে করতে পারেন তখনকার কথা? ৩ বছর বয়সের দিং-কে আসন্ন ভবিষ্যৎ যে দাবার দিকেই টানবে- তা কষ্টসাধ্য না হলে- সহজেই অনুমেয়। ৪ বছর বয়েসে সৌভাগ্যক্রমে কোচ হিসেবে দিং লিরেন যাকে পায়- মহাত্মা চেন লিশিং, তিনি ছিলেন আরেক চৈনিক নারী বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, শিয়ে জুনের পরেই যার নাম উচ্চারিত হয়- ঝু শেনের কোচ! ফলে, আপনি যদি কানেককশনটা খেয়াল করেন, একদম অল্প বয়েস থেকেই দিং লিরেন যাদের সংস্পর্শে এসেছিলেন, তাদের সবাই-ই কোনো-না-কোনোভাবে “বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন” ব্যাপারটার সাথে জড়িত।
এইটুকু ‘ফ্যাক্ট’ থেকেই কি যেকেউ সহজ কনক্লুশনে আসতে পারে না যে- দিং লিরেন ভবিষ্যতের কোনোএক সময়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবেন? পাঠক, আমাদের উচিত ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টিয়ে আরেকটু সামনে ভ্রমণ করা।
২০০৯ সাল। তখনও ‘টিন-এজার’ দিং লিরেন। ১৬ কি ১৭ বয়েস মাত্র। চায়নার সেরা ১২ জন দাবাড়ু নিয়ে অনুষ্ঠিত চাইনিজ চ্যাম্পিয়নশিপ, ১১ খেলায় সাড়ে আট স্কোর করে জিতে নিলেন শিরোপা। স্বদেশী ওয়াং হাও হয়েছিলেন সেই টুর্নামেন্টে দ্বিতীয়। চেসগেমসের ফোরামে সবাই বলাবলি করছিলেন- কে এই দিং লিরেন?
তখন দিং লিরেন স্রেফ হাই স্কুলে পড়ুয়া এক কিশোর। বয়স ঠিক চেহারা দেখে আঁচ করা যায়না। ২০০৮-এ চাইনিজ চ্যাম্পিয়নশিপে হয়েছিলেন ৭ম। সেই ধারাবাহিকতায় খেলতে পেরেছেন পরের বছরের চ্যাম্পিয়নশিপ। ইন্টারনেটে সমস্ত তথ্য পাওয়া যায়না, কারণ চায়নায় প্রথাগত ইন্টারনেটের এক্সেস নাই। নির্ভরযোগ্য তথ্যের যাকিছু মেলে, ভালো পেতে হলে ব্যাপক কোশিশ করতে হয়।
চায়নায় অনূর্ধ্ব ২৫০০ রেটিংয়ের ছেলেমেয়েদের অধিকাংশই আন্ডাররেটেড, বহির্বিশ্বের কাছে আন-নউন। তখনকার সময়ে রাশিয়ান বা ইউরোপিয়ান প্লেয়ারদের তুলনায় তারা খেলবার সুযোগ পেত খুবই কম। চেসগেমসের পুরোনো ফোরামে একজন লিখেছিলেন- কার্লসেন যেরকম পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে, দিং লিরেন এসব পেলে সেও কার্লসেনের মতো শক্তিমান একজন দাবাড়ূ হতে পারবে।
মোদ্দাকথা হলো- দিং লিরেনের তখনকার খেলার ধরণ বেশ লক্ষণীয় ছিলো, দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলো অনেকেরই। সেই অনেকের ভেতর একজন ছিলেন ‘অল্পের জন্য বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে-না-পারা’ পিটার লেকো-র।
পিটার লেকো-কে যারা চেনেন না- আমাদের আলোচনায় তিনি থোড়াই গুরুত্বপূর্ণ। তবে জেনে রাখা ভালো- হাঙ্গেরিয়ান এই গ্র্যান্ডমাস্টার ১৯৯৪ সালে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়ার খেতাব লাভ করেন। ২০০৪ সালে অল্পের জন্য বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি, হালের ইঞ্জিন-কাকু ভ্লাদিমির ক্রামনিকের সাথে চ্যাম্পিয়নশিপ টাইটেলের লড়াইয়ে ৭-৭ স্কোর করলেও ফিদে-র নিয়মানুযায়ী ভ্লাদিমির ক্রামনিকই টাইটেল ধরে রাখেন।
ফলে, সেইসময়ে বিশ্ব র্যাংকিং-এ প্রথম পাঁচজনের একজন পিটার লেকো যখন একটি ইন্টারভিউতে বললেন- দিং লিরেনের খেলার ধরণ তাঁকে অনুপ্রাণিত করে, তখন খোদ দিং লিরেন নিজেও অনুপ্রাণিত না হয়ে পারেন না।
২০০৯ সালেই দিং লিরেন চায়নার ৩০তম গ্র্যান্ডমাস্টার হন। ২০১১-১২ টানা দুবছর চাইনিজ ইন্ডিভিজুয়াল চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম হন। ধীরে ধীরে বিশ্ব মঞ্চের দিকে এগোতে শুরু করেন দিং লিরেন।
গণিতে ভালো ছিলেন ছোটবেলা থেকেই। কিন্তু পড়াশোনা করেছেন আইন নিয়ে। বিশ্ববিদ্যালয় পেরোনোর খুব বেশিদিন হয়নি, দিং লিরেন আবিষ্কার করেন তিনি মূলত ভালোবাসেন সাহিত্য। ব্রায়ান কক্সকে দেওয়া এক ইন্টারভিউতে অকপটে স্বীকার করেছেন। আইন নিয়ে পড়ার ব্যাপারটা নিয়ে কখনো খারাপ লাগা অনুভব করেন না, কিন্তু একইসাথে এও জুড়েছেন- যদি আবার ‘পড়তেই’ হয়, তবে আইন নিয়ে পড়বেন না। চাইনিজ সাহিত্য লিরেনের শখ, কিন্তু একাডেমির বেলায় তাঁর আলাদা ফিলোসফি আছে। শখকে বিসর্জন দিতে চাননি কখনও। পড়েছেন রেমন্ড কার্ভার, হারুকি মুরাকামি।
২০১৫ সালে নিজ শহর ওয়েনঝুতে ঘটে ১৯৯৫ সালের মতোই এপিক একটা টুর্নামেন্ট। পাঠক, আপনার মনে আছে কিনা জানি না- শিয়ে জুনের সাথে ভিক্টর কর্শনয়ের দ্বৈরথের মতই, এ যেন ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি- দিং লিরেন খেলবেন এমন একজনের সাথে, যিনি কিনা দাবার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। লোকটির নাম বরিস গেলফান্ড।
বরিস গেলফান্ড ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট খেলেছিলেন মোট ৬ বার। ২০১২ সালে তৎকালীন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দের বিরুদ্ধে শিরোপার লড়াইয়ে গেলফান্ডের পরিণতি হুবুহু ভিক্টর কর্শনয়ের মতোই। ৬-৬-এ সমান স্কোর করে পারলেন না বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে। আনন্দের সাথে র্যাপিড টাইব্রেকারে হেরে আফসোসের খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন গেলফান্ড। ২০১৫ সালে সেই গেলফান্ডের সাথে ৩-১ স্কোরে জয় লাভ করেন দিং লিরেন।
দিং লিরেনের প্রোপার ব্রেকথ্রু ঘটে ২০১৭-তে। ওয়ার্ল্ড কাপে রানার-আপ হওয়ায় ২০১৮ সালের ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টে খেলার সুযোগ পান প্রথম চাইনিজ দাবাড়ু হিসেবে। তবে সেই বছর চ্যাম্পিয়ন হন দাবার আরেক বরপুত্র ফাবিয়ানো কারুয়ানা, সাড়ে সাত পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ হওয়া দিং লিরেনের নিয়তি তাঁকে টেনে নিয়ে কোথায় যাবে- তা আমরা একটু পরেই জানতে পারবো।
আজারবাইজানের মেধাবী গ্র্যান্ডমাস্টার ভুগার গাশিমভ অকালে মারা গেলে দাবার দুনিয়ায় নেমে আসে শোকের ছায়া। তাঁর স্মরণে প্রতিবছর আয়োজন করা হয়ে থাকে গাশিমভ মেমোরিয়াল নামে একটু টুর্নামেন্ট। অত্যন্ত প্রেস্টিজিয়াস এই টুর্নামেন্টে অংশ নেন শীর্ষ দাবাড়ুগণ। তেমনই ২০১৮ সালের গাশিমভ মেমোরিয়ালে ম্যাগনাসের ঠিক পেছনে হাফ পয়েন্ট ব্যবধানে রানার আপ হয়েছিলেন দিং লিরেন।
সিঙ্কফিল্ড কাপের ৭ম এডিশনে (২০১৯) দিং আর ম্যাগনাস সমান স্কোর করার কারণে দুটি র্যাপিড টাইব্রেক হয়, সেই দুটি ড্র করার কারণে দুটি ব্লিটজ টাইম কন্ট্রোলের দুটিতেই ম্যাগনাসকে হারিয়ে সেই এডিশন জিতে নেন দিং লিরেন।
২০১৯ সালের ওয়ার্ল্ডকাপে ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি, এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ওয়ার্ল্ডকাপে দিং লিরেনের ফাইনাল-গমন। তবে সেই ক্ষতি তিনিই পুষিয়ে দিয়েছিলেন পরের মাসে অনুষ্ঠিত গ্র্যান্ড চেস ট্যুর জিতে গিয়ে। সেমি ফাইনালে লেভন আরোনিয়ানকে এবং ফাইনালে ম্যাক্সিম ভাশিয়ের-লেগ্রাভকে পরাজিত করেন দিং লিরেন।
মজা শুরু হয় ২২ সালের ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্টে। নিয়ম অনুযায়ী বাছাইকৃত ৮ জন দাবাড়ু এখানে অংশ নেওয়ার কথা। সেই আটজনের দলে দিং লিরেনও ছিলো। কিন্তু আসলেই কি দিং লিরেনের থাকার কথা ছিলো? নাকি ‘গড’ তাঁকে প্লেস করেছেন আটজনের দলে?
২০২১ সালের ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে ম্যাগনাসের চ্যালেঞ্জার হওয়ার কারণে অটো-সিলেক্ট হন ইয়ান নেপোমনিয়াশি।
ইউক্রেন-যুদ্ধ নিয়ে ২০২১ সালে ওয়ার্ল্ড কাপে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করা সার্গেই কারিয়াকিন রাশিয়ার পক্ষ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করায় ফিদে-র এথিকস এবং ডিসিপ্লিনারি কমিশন তাঁকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করে। ওয়ার্ল্ড কাপে রানার-আপ হওয়া এবং একসময়ের চ্যালেঞ্জার কারিয়াকিন বাদ পড়ে যান ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট থেকে। কারিয়াকিনের অবশ্য সুযোগ ছিলো বিভিন্ন পর্যায়ে আপীল করার, কিন্তু সে এতটাই গোঁয়ার, আপীল করে কিংবা ক্ষমা চাওয়ার কোনো ‘প্রয়োজন’ও সে দেখেনি। ভালো পারফরম্যান্স করার সম্ভাবনা নিয়েও সেই যে কারিয়াকিনা হারিয়ে গেলো দাবার মঞ্চ থেকে- অদ্যাবধি তাঁকে দেখা যায়নি কোনো এলিট টুর্নামেন্টে।
এই কারিয়াকিনের রিপ্লেসমেন্ট হিসেবে স্টেজে আসেন দিং লিরেন। তবে এখানেও আছে সংকট। কারিয়াকিন নিষিদ্ধ হওয়ার পর ফিদের নিয়মানুযায়ী সর্বোচ্চ রেটিংধারী দাবাড়ু- যার অন্তত ৩০ টি রেটেড গেম খেলা আছে জুন ২০২১ থেকে মে ২০২২ পর্যন্ত- তিনিই অংশ নিতে পারবেন।
এপ্রিল ২০২২-এর রেটিং লিস্ট অনুযায়ী সর্বোচ্চ রেটেড দাবাড়ু ছিলো দিং লিরেন, রেটিং ছিলো ২৭৯৯! কিন্তু ছোট্ট একটা সমস্যা- উল্লিখিত সময়ের মধ্যে দিং লিরেনের মাত্র ৪ টি রেটেড গেম খেলা আছে। নিয়মানুযায়ী, কোয়ালিফাই করতে হলে তাঁকে খেলতে হবে আরো ২৬ টি খেলা! একইসাথে এও মাথায় রাখতে হবে- সেইসব খেলায় দিং লিরেন যদি রেটিং হারায়, তাহলে তাঁর এন্ট্রি বন্ধ হয়ে যাবে ক্যান্ডিডেটস-এ। কারণ, দিং লিরেনের স্পট ধরার জন্য প্রতিযোগিতায় আছে আরো দুজন ব্যক্তি- শাখরিয়ার মামেদিয়ারভ এবং লেভন আরোনিয়ান।
এগিয়ে আসে চাইনিজ চেস এসোসিয়েশন। তারা দিং লিরেনের পথ সুগম করার জন্য আলাদা আলাদা তিনটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। দিং লিরেন সেই টুর্নামেন্টগুলোতে অল্প সময়ের নোটিশে অংশ নেন এবং রেটিং মেইনটেইন করে ক্যান্ডিডেটসে নিজের জায়গা নিশ্চিত করেন।
এরপরের ঘটনা মোটামুটি সবারই আমাদের জানা। ম্যাগনাস ঘোষণা দেন তিনি ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য আর লড়বেন না। ফলে ক্যান্ডিডেটসে যথাক্রমে ফার্স্ট ও সেকেন্ড হওয়া ইয়ান নেপোমনিয়াশি বনাম দিং লিরেন খেতাবের যুদ্ধে শরীক হন।
দিং লিরেন ইতোপূর্বে যত খেলা খেলেছেন ইয়ান নেপোমনিয়াশির সাথে, হেড টু হেড স্কোর চিন্তা করলে বরং নেপোই এগিয়ে। ৩ টি খেলা নেপো জিতেছে, ২ টি খেলা দিং এবং ৮ টি খেলা ড্র। সবারই যার যার পছন্দসই কোচ/সেকেন্ড আছে। নেপোর দলটাই মূলত ভারী, দিং লিরেনের দলে রিচার্ড রাপোর্ট ছাড়া তেমন সিগনিফিকান্ট কেউ নেই।
প্রথম রাউন্ড ড্র। ৪৯ চাল পর্যন্ত গড়িয়ে।
দ্বিতীয় রাউন্ড নেপোর জয়। মাত্র ২৯ চালে।
তৃতীয় রাউন্ড গতানুগতিক, ৩০ চালের কুইক ড্র।
চতুর্থ রাউন্ডে দিং লিরেনের প্রয়োজনীয় কাম-ব্যাক। ৪৭ চালের মাথায় জয়।
রাগে-ক্ষোভে কিনা জানি না, তবে পঞ্চম রাউন্ড জিতে গেল নেপো।
সেয়ানে সেয়ান। ষষ্ঠ রাউন্ডে এক ব্রিলিয়ান্ট গেমপ্লে-তে সবাইকে হতবাক করে দিয়ে জয় দিং লিরেনের। লন্ডন সিস্টেমের এমন অভাবনীয় প্রয়োগ আর কেউ কখনও দেখেনি।
সপ্তম রাউন্ড। ঘড়িতে মাত্র ৩ সেকেন্ড বাকি থাকতেই রেজিগনেশন দিং লিরেনের। নেপোর জয়।
পরের টানা চারটি রাউন্ড ড্র।
বারোতম রাউন্ডে দিং যদি জয় না পেত, তাহলে গল্প হয়তো ফুরিয়েই যেতো এখানে।
শেষমেশ খেলা যখন গড়ালো টাই-ব্রেকে, পরের ঘটনা নিশ্চয়ই জানা সবার।
র্যাপিড টাই-ব্রেকের চতুর্থ খেলায় ৪৬ তম চালে দিং লিরেনের নৌকো যখন g6 ঘরে গিয়ে বসলো, তার পরে নেপোর রিয়েকশন, মুখাবয়ব দেখার মতো- এদিকে ব্রডকাস্ট চলছে, ভিউয়ার প্রায় লাখের ঘরে! কমেন্টারিতে শোনা যাচ্ছেঃ
“...Nepomniachtchi knocked some captured pieces onto the floor as his hands visibly trembled while searching for a move, clearly distraught; he resigned after one more move with less than 30 seconds on his clock.”
**
প্রেস কনফারেন্সে দিং অকপটে স্বীকার করেছেন- চার বছর বয়েস থেকে পরের ২৬ টি বছর, টানা দাবা, ক্রমাগত শিখন, প্রশিক্ষণ- বলছেন,
“I think I did everything. Sometimes I thought I was addicted to chess, because sometimes without tournaments, I was not so happy. Sometimes I struggled to find other hobbies to make me happy. This match reflects the deepness of my soul. I could not control my mood. I will cry. I will burst into tears. It was quite a tough tournament for me. I feel quite relieved.”
দিং লিরেনকে একবার প্রশ্ন করেছিলেন ডেভিড কক্স, প্রশ্নটি এরকম ছিলো:
আপনি কি বিশ্বাস করেন আপনি বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতে পারবেন? কার্লসেনকে চ্যালেঞ্জ করতে পারবেন?
লিরেন উত্তর দিয়েছিলেনঃ "হয়তো কার্লসেন বুড়ো হয়ে যাওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে! সত্যিই তাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারি না আমি, সে শীর্ষ অবস্থানে আছে। কেউই তাকে হারাতে পারে না। কিন্তু যদি সে তার উত্তম অবস্থানে না থাকে- অর্থাৎ বুড়ো হতে শুরু করে, তখন হয়ত সুযোগ আছে কিছুটা। সত্যি বলতে কি, বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচ পর্যন্ত পৌঁছানো আমার পক্ষে সম্ভব না।"
ওটা দুই হাজার বিশ সালের কথা। তিন বছর পর কার্লসেনকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে না-হারাতে পারলেও কাছাকাছি শক্তির ইয়ান নেপোমনিয়াশি'কে হারিয়ে জিতে নিয়েছেন বিজয়মাল্য। ১৪ গেমের উথালপাতাল থ্রিলারে সন্দেহজনকরকম দুর্বল খেলার পর র্যাপিডের লাস্ট গেমে করেছেন বাজিমাত। খোদ কার্লসেন দিং লিরেনকে অভিনন্দন জানিয়ে লেখেন: "Self-pinning (র্যাপিড টাই-ব্রেকের ৪৬ তম চালের রেফারেন্স) for immortality. Congrats Ding!"
চ্যাম্পিয়ন হবার পর দিং লিরেনের পাবলিক এপিয়ারেন্স কমে গিয়েছিল বেশুমার। কোনো টুর্নামেন্টে দেখা যেতো না তেমন। পত্রিকায় দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে দিং লিরেন খুলে বলেছেন অনেক কথা, জানিয়েছেন- তাঁকে বেশ কয়েকবার ক্লিনিকে যেতে হয়েছিলো। আক্রান্ত হয়েছিলেন ডিপ্রেশনে। ঘুম কমে যাওয়ার দরুণ দিং-কে নিতে হতো নানাবিধ ট্যাবলেট।
ফলে, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরেও দিং লিরেন ওটার স্বাদ উদযাপন করেননি এবং করতে পারেননি ভালোভাবেই। উপরন্তু তাঁর অনুপস্থিতি অনলাইন/অফলাইন সবার কাছেই সমালোচিত হয়েছিলো নিদারুণ। রেটিং কমে গিয়েছিলো, নেমে গিয়েছিলেন শীর্ষ অবস্থান থেকে অনেক নিচে। আর কোনো বিশ্বচ্যাম্পিয়নের বেলায় এমনটা দেখা যায়নি কখনওই।
দিং লিরেন যে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবেনই একদিন- এমনটা জোর দিয়ে আসলেই বলা যেত কিনা সে বিষয়ে শুরুতে একটি প্রশ্ন করেছিলাম। দিং লিরেন একসময় দারুণ খেলেছেন, ২৮০০ রেটিং পেরিয়েছেন- ইতিহাসে হাতে গোনা কয়েকজনই তা পেরেছে। দাবার ইতিহাস যেহেতু কখনও থেমে থাকবে না- সেহেতু নতুন করে ইতিহাস রচিত হতে থাকবেই।
...আর সে ইতিহাসে দিং লিরেনের নামের আগে ‘অ্যাকসিডেন্টাল’ লেখা থাকে কি থাকবে না- তা নির্ভর করছে আমরা কীভাবে ইতিহাসকে গ্রহণ করছি- তার ওপর।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:০০
রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।