নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাশেদ রাহমান

প্রশান্তিই কাম্য, অন্যকিছু নয়।

রাশেদ রাহমান ৭১

প্রশান্তিই কাম্য, অন্যকিছু নয়।

রাশেদ রাহমান ৭১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসা বিদায়ের আগে

২০ শে নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০৬

ভালোবাসা বিদায়ের আগে







আমি এর আগে কখনো বুঝতে পারিনি আমার জীবনে এত দ্রুত এমন সময় আসবে। আমার চোখ জলে পূর্ণ, তবু জল গড়াচ্ছে না। ভেতরটা গন্ধহীন পুড়ে যাচ্ছে। প্রবল আকুতি জানাতে ইচ্ছে করছে ঈশ্বরের কাছে কিন্তু তাঁকে আর বলে কি হবে! একটু পরেই তো তাঁর সাথে আমার দেখা হচ্ছে,তখনই না হয় খুলে বলবো আমার সব কথা।



আবার মুহূর্তেই ভাবি তাকে বলেই বা কি লাভ? তিনি তো সবই জানেন। নতুন করে কীইবা বলার আছে আমার। একইভাবে হারানোরও কিছু নেই।মাকে হারিয়েছি গত বছর,পড়াশোনাটাও আমাকে বিদায় জানিয়েছে সেই কবে। গানটা আর গলায় আসেনা। সবশেষে,গতকাল হারিয়েছি...না,না, ওর নাম মুখে আনতে ইচ্ছে করছে না।





দুদিন আগে ,হ্যাঁ গত পরশুই তো একটা মিষ্টি বিকেল কাটালাম দুজন মিলে।ওইতো ঝাপসা-ভাবে মনে পড়ছে আরো দুজন ছিলো,শীমু ও সামি ছিলো। ওরাও দেখেছে আমাদের একসাথে। আমরা বসেছিলাম পাশাপাশি , সামনের টেবিলটাতে ওরা। আমার পাশে আমার পরী। পরী বলেই তো ডাকতাম ওকে।



আমাকে কি বলে ডাকতো আমার মনে পড়ছে না কেনো? মনে পড়বে কি করে? ওযে আমাকে সত্যি করে কিছুই বলেনি।যা বলেছে সব মিথ্যে করে। মানুষের মৃত্যুর আগে মিথ্যে মনে পড়তে নেই। মিথ্যে করেই সে আমার কাঁধে হেলান দিয়ে ছিলো বিকেলটায়,আলোটা সাক্ষী ছিলো শুধু। মানুষ এত দ্রুত পালটায় কেন? আমি তো পারিনা। না,না ওরই বা কি দোষ? সব দোষ তো আমারই। তবে এবার আমি পালটাবো , পালটাবো পচে গিয়ে ,শুধু পড়ে থাকবে অস্থায়ী কিছু হাড় ,শুনেছি মাংস কয়েকদিনের মধ্যেই পচে যায়।





আমার পরিচিত প্রত্যেক মানুষ আমাকে বোকা বলছে। আমিতো বোকাই ,বোকা না হলে কেউ সামান্য কান্না দেখে এতটা গলে যায়, পুড়ে যায় এতটা তীব্রতায়? পোড়ে না। আমার পরীর কান্না সামান্য ছিলোনা। ওর কান্না বেয়ে পড়ছিলো একজোড়া সোনালি চোখ-জুড়ে , আমার খুব করে ও কান্না গায়ে মাখতে ইচ্ছে করছিলো। আমি আমার শক্ত হাত দিয়ে সেই প্রথম তার চিবুক ছুঁয়েছিলাম। তখন সন্ধ্যা ছিলো,চারদিকের আঁধারটা যেনো আমাদের তাঁবু করে দিয়েছিলো। গড়ে দিয়েছিলো দুজনের একটা পৃথিবী। আমাদের সম্পর্কের শুরু সেদিন থেকেই। আমার পরীটার সোনালী চোখে জল এনেছিল কবির। পরীটা আমাকে খুলে বলেছে তার আর কবীরের সব কথা। মানুষ কিভাবে এমন হতে পারে এর আগে আমি বুঝিনি ,গতকাল সবশেষে বুঝেছি যখন পরী আমাকে ছেড়ে...।





রাত ছিলো ঐ সময়টা। অন্ধকার একটা ঘর। পরী ও আমি ছিলাম একসাথে,একটু দূরেই অবশ্য সুমন, শাওন ছিলো। উপায় ছিলোনা অবশ্য। নাটক থেকে ফিরেছিলাম আমরা দুজন। মানিকগঞ্জে আমাদের একটা শো ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার থেকে গিয়েছিলাম শো করতে। সেই রাতেই বুকের খুব কাছে এনে রেখেছিলাম ওকে,আমার পরীকে। এমন ভাবে বুকটা ভরেনি কখনো,ভালোবাসা এতটা প্রশান্তি দেয় আমার জানা ছিলোনা। তবু আমি সে রাতেই খুব করে অনুভব করেছি ওকে। আমার বুকে মাথা গুজে পোষা বিড়ালটার মত,হ্যাঁ আমার পোষা বিড়াল মিনি যেমন খুব শীতের রাতে আশ্রয় খোঁজে গরম কম্বলে তেমনি ও আশ্রয় খুঁজেছিলো আমার বুকে একদম ভোরের আলো ফোঁটার পুর্ব পর্যন্ত।



আমাকে এতটা ভালো কেও বাসতে পারে এর আগে আমার জানা ছিলোনা। আজ বুঝতে পারছি না জানাটাই আমার জন্য কতটা ভালো ছিলো। এ জানা , অজানা ব্যাপারটাই কিছুক্ষণ পরে মিথ্যে হয়ে যাবে। মিথ্যে হয়ে যাবে পরীর বলা সব কথার মত।

ও সকালে আমি প্রচুর ঘুমাচ্ছিলাম। ঘুমটা অবশ্য হালকা হয়ে গেছিলো সে দিনগুলোতে। তবু ও সকালে আমি প্রচুর ঘুমচ্ছিলাম। বালিশের কোণে রাখা আমার ফোন কবার কেঁপে ওঠতেই আমি জেগে গিয়েছিলাম। ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে পরী আমাকে ক্যাম্পাসে যেতে বলছিলো। আমি গিয়েছিলাম । আমার মনে আছে ও সাংবিধানিক আইনটা বুঝতে পারছিলোনা কিছুতেই । আমি গেছিলাম আমার তীব্র ঘুম বিসর্জন দিয়ে । সেদিন পরীর পাশে বসে ছিলাম সন্ধ্যা পর্যন্ত । সন্ধ্যার নাস্তাটাও করেছিলাম একসাথে , ওদিকে মা আমাকে বাসায় ফিরতে বলছিলো । আমি মাকে সেদিন প্রথম মিথ্যে বলেছিলাম । তবু মিথ্যে দিয়ে কিনেছিলাম সন্ধ্যাতারা এবং একটি মিষ্টি গোলাপ।গোলাপটা দিয়েছিলাম পরীকে । পরী আমার সন্ধ্যা তারা ছিলো, আমি ছিলাম দিগভ্রান্ত পথিক ।





সদ্য পার হওয়া পহেলা বৈশাখটাও চোখে ভাসছে । বড় সাধ করে পাঁচদিন তাঁতির কাছে ধরনা দিয়ে লাল শাড়ীটা কিনেছিলাম ওর জন্য । ভেবেছিলাম ও আমার শাড়ীটা পরবে । একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র হিসেবে আমার উপহারটা বেশ দামিই ছিলো তবু সে ফিরিয়ে দিয়েছে । তখনো দিয়াশলাই সস্তা ছিলো – মাত্র এক টাকাতেই পাওয়া যেত । এরপর , ফার্মগেট কিছু আগুনের ফুলকি দেখেছে । ও বাতাসে বেশীক্ষণ আগুন জলেনা । আগুনও মিশে যায় সময়ের স্রোতে । সেদিন ও আগুন বুকে ধারণ করতে পারলে হয়তো আজ আমার এমন হতনা ।

কদিন আগে ওকে ফোনে পাচ্ছিলাম না , আমি তবু ভাবিনি এমন হবে । এর আগেও তো কত তুচ্ছ ব্যাপারে আমাদের ঝগড়া হয়েছে আবার ঠিকও হয়ে গেছে । এইতো এবার ঈদে ও আমাকে বলেছিলো ওর বাসায় আমাকে মেনে নেবেনা । এ নিয়ে আমি প্রচুর কষ্ট পেয়েছিলাম । অভিমানে কথা বলতে চাচ্ছিলাম না , তবু সে আমাকে কতবার “সরি” বলে যোগাযোগ করেছে নিজে থেকেই ।





গতকাল বিকেলে আমিই জানতে চেয়েছিলাম শেষবারের মত ও আমার সাথে আর যোগাযোগ করছেনা কেন । পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মম সত্যটা তখনি বলেছে আমাকে । বলেছে – ও আমাকে এতদিনেও ভালোবাসতে পারেনি এবং ওর পক্ষে সম্ভব নয় আমার মত মানুষের সাথে থাকা । আমি কিছু বলিনি ওকে ,শুধু ওর দিকে শেষবারের মত এক-পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিয়েছি । আর মনে মনে ভেবেছি বুকে মাথা রাখা,হাত ধরা,আহ্লাদী আবদার,আশ্রয় খোঁজা শরীর-সব কি মিথ্যে ছিলো ? মিথ্যে ছিলোনা , মিথ্যে ছিলোনা রোদেলা দুপুরে আমাকে ছুঁয়ে ওর বলা কথা-আমার জন্য ওর আজন্ম অপেক্ষার আশায় বানী । গতকাল মিথ্যে হয়ে গেছে। কারণ, আমি সায়েম এর মত বড়লোক ব্যবসায়ী বাবার একমাত্র ছেলে নই । আমি আমেরিকা থেকে উচ্চ ডিগ্রি নিয়ে আসিনি । আমি মধ্যবিত্ত বাবার বড় ছেলে,মা মরা সংসারের সব বোঝা আমার কাঁধে । বাবার পেনশনের টাকায় চলে দুই ভাইয়ের পড়াশোনা , বোনের বিয়েও দিতে হবে এ দিয়েই । আমি ওর কাছে কাওরান বাজারের ভিখারিটার মত,ওর বুঝতে এই একটা বছর দেরী হয়ে গেছে এই যা । না,ওর প্রতি আমার কোন রাগ কিংবা অভিমান নেই ।





আজ আমি কাউকে কিছু বলিনি । আমার হাতে ছোট্র বিষের বোতল, বুকের সাথে সাথে পেটটাও জ্বলে যাচ্ছে এবার । আর মাত্র কয়েক সেকেন্ড ।এর মধ্যে চাইলেও আমি ওকে কিছু বলতে পারবো না,যদি পারতাম তবে বলতাম-পরী,আমি যতটা শুদ্ধতা নিয়ে তোমার হাত ধরেছি,যতটা পবিত্রতায় ছুঁয়েছি তোমার কপাল হতে চিবুক,আশ্রয় দিয়েছি বুকের বাঁ পাশটায়,কেউ পারবেনা আর এভাবে তোমার ঠিকানা খুঁজে দিতে,মনে রেখো । চোখটা ঘোলাটে হয়ে আসছে। আমি কিছু দেখতে পারছি না , তবু হারিয়ে শেষবারের মত খুঁজে ফিরছি সোনালী চোখ ।







রাশেদ রাহমান

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.