![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শেষ বিকেলের চা
আইজ খাওনডা ঠিকমতো অইনাই, ভাবছে মজিদ। পেটে ক্ষুধা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠছে। মজিদ রিকশাচালক। ধানমন্ডির বিভিন্ন রাস্তায় উড়ে চলে মজিদের রিকশা। মজিদের সাধারণ রিকশা চালায় না। তার রিকশা ব্যাটারিতে চলে। পায়ে প্যাডেল তাকে করতে হয়না।
আগেরটা ছিলো পায়ে চালানো। প্যাডেল করতে করতে জান শেষ হয়ে যাবার মতো অবস্থা হতো। আজকাল ক্লান্তিটা কমলেও কষ্টটা খুব বেশি কমেনি। আজো তাকে অন্যের ইচ্ছায় এখানে-ওখানে যেতে হয়।
মজিদের ইচ্ছা হয়না নিউমার্কেট-মোহাম্মদপুর চষে বেড়াতে। মজিদের মন চায় বাড়ি যেতে। বাড়ি গিয়ে যে মাটির রাস্তাটা আছে তার বাড়ির পাশে সেখানে রিকশা চালাতে। অন্য কোনো যাত্রী নিয়ে নয়। লেবুর মাকে নিয়ে। লেবুর মা মজিদের বউ। লেবু মজিদের একমাত্র ছেলে।
লেবুর মা উঠতে লজ্জা পাবে, ভাবে মজিদ। আগে লজ্জা পেতোনা। আগে লজ্জা মজিদই পেতো। বিয়ের ক’দিন পরে মজিদকে লেবুর মা ধরেছিলো ঘোরার জন্য। মজিদ লজ্জায় লেবুর মাকে নিয়ে ঘুরতে পারেনি। লোকজন কি বলবে! আজ হঠাৎ ঘোরার সাধ জেগেছে মজিদের।
সন্ধ্যা হয়নি এখনো। চারপাশে তাকিয়ে বোঝা যাচ্ছে, নামতে বেশি বাকিও নেই। এটা ভাত খাওয়ার জন্য অসময়। আর ছেলেটা তার খেয়েছে কিনা সে জানেনা। হয়তো পাঁচ বছরের লেবুটা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে, খেলা বেড়াচ্ছে। লেবুর মা হয়তো লেবুকে ডাকছে।
অনেকগুলো চায়ের দোকান রাস্তার পাশে। মাঝারী একটা চায়ের দোকানে গিয়ে চা চায় মজিদ। চায়ের চুলার আগুন দেখে তার বাড়ির কথা মনে পড়ে। আনমনে দেখে লেবুর মা কি পরম যত্নে ভাত রাঁধছে। দোকানী চা দিলে ঘোর কাটে মজিদের।
চায়ে চুমুক দিয়ে ক্লান্তি কাটে। ক্ষুধা মরে যায়। সন্ধ্যায় ভাত খেতে যে টাকাটা লাগতো সেটা আলাদা করে রাখে সে। হয়তো বাড়ি গেলে ছেলের হাতে দিতে পারবে। বছর খানেক হলো কোনো কিছু ছেলেকে কিনেও দেয়া হয়না। একটা জামা কেনার কথাও ভাবে সে।
চায়ের সাথে বিস্কুট খেতে ইচ্ছে করে মজিদের। মজিদ বিস্কুট খায়। যতোগুলো খুশি খায়না। টাকাগুলো যত্নকরে যতটা সম্ভব প্রিয়জনদের জন্যে বাঁচায়। একটা দেশের রাজা হলে নিজের ছেলে বা বউকে যতোটা ভালোবাসা যায়, তারচেয়ে সেও কম বাসেনা, ভাবে মজিদ। ভাবতে ভাবতে চা তলানিতে ঠেকে।
রাশেদ রাহমান
২০-১১-১৩।
©somewhere in net ltd.