নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাতের আকাশের নাম না জানা একটি অজানা তারা.........................

রাত জাগা তারা ও আমি

রাত জাগা তারা ও আমি › বিস্তারিত পোস্টঃ

রক্তাক্ত শিশুদের আর্তি, ‘আমাদের বাঁচান!’ সিরিয়া মানবতার মৃত্যু..

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৫:৫১



সিরিয়ায় সরকার বিরোধী বিদ্রোহীদের আঁতুরঘর পূর্ব ঘৌতা। সেখানে নিরস্ত্র মানুষের বসতি এলাকা ছিল। আর এই বসতি এলাকা লক্ষ্য করেই সিরিয়া সরকারও রাশিয়ার জোট মিলে ক্রমাগত বিমান হামলা চালিয়েছে। যার ফলে এই বিশ্বে ‘নরক’-এর চেহারা নিয়েছে সিরিয়ার ঘৌতা। ফেব্রুয়ারির ১৮ তারিখ থেকে সেখানে ক্রমাগত বিমান হানায় তাসের ঘরের মতো যেমন ভেঙেছে একের পর এক ইমারত, তেমনই মৃতদের রক্তে লাল হয়েছে সিরিয়ার মাটি।

এই নতুন আলোর সকালে পিঠে ব্যাগ নিয়ে তোদের স্কুলে যাওয়ার কথা নাসরিন, আহমেদ। কিংবা আব্বাস তোর তো এই বিকেলের পড়ন্ত রোদে দমছুট হয়ে রজ্জান আর হামিদার সঙ্গে খেলার কথা। অথবা নিঝুম রাতে মায়ের বুকের কাছে মুখ রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমোনোর কথা ছিল তোর ফরিদা। কিন্তু সব হিসেবগুলো চুরমার হয়ে গেল বোমাবর্ষণে আর রাসায়নিক অস্ত্রের আঘাতে। রাসায়নিক অস্ত্র কাকে বলে তোরা জানিস না। কিন্তু চিনিস মৃত্যুর হাহাকারকে! এখন তোদের ঘরবাড়ি, স্কুল, খেলার মাঠ ভেঙে পড়েছে বোমায়। কারও বাবা, কারও মা, কারও সন্তানসন্ততি চলে গেছে বোমায় ছিন্নভিন্ন হয়ে। অথবা রাসায়নিক বিষক্রিয়ায় নিঃশব্দে ঢলে পড়েছে মৃত্যুর কোলে। তোদের খেলার আঙিনা জুড়ে রক্তের বহমান স্রোত। এত রক্ত যে তাকে নদী বলেই ডাকা যায়! আজ তোদের দেশের সব রং মুছে গিয়েছে। নীল আকাশ, সবুজ মাঠ, হলুদ পাখি। সব হারিয়ে গিয়েছে। আজ শুধু একটাই রং সত্য। লাল রক্ত।
রক্ত লেগেছিল তোদের চোখেমুখে। সারা শরীরে। তোরা কোনওরকমে বেঁচে এখন হাসপাতালে শুয়ে আছিস। স্যালাইনের সূঁচ বিঁধে আছে তোদের শরীরে। এই বয়সেই তোরা শিখে গেছিস, কীভাবে লড়াই করতে হয় মৃত্যুর সঙ্গে। পারবি কী তোরা? পারতেই হবে রে। তোদের বন্ধুদের অনেকেই ইতিমধ্যে পৌঁছে গিয়েছে মৃত্যুর হিমশীতল অন্ধকূপে। কিন্তু এটাই শেষ সত্য নয়। এই মৃত্যুর অন্যদিকেও একটা সুন্দর জীবন আছে। সেটা তোরা দেখতেই পেলি না সোনারা।
গত ছয়-সাত বছর ধরেই তোদের দেশ সিরিয়া যেন এক হত্যাপুরী। বোমার টুকরো টুকরো। দৌমার বাজার, জারামানা, আয়েন তারমা, আল বাহারিয়া, পূর্ব ঘৌতা— সব জায়গা যেন এক মৃত্যু সরণি। পায়ে পায়ে রক্তের স্রোত। বাতাসে পচা দেহের গন্ধ। কে যে কার সৎকার করবে! গোটা, শহর, গ্রাম, উপত্যকা এক কবরভূমি। রক্তের স্রোত গড়িয়ে গড়িয়ে নদী বেয়ে মিশছে ভূমধ্যসাগরের জলে। এই মৃত্যুর পিছনে কতটা রাজনীতি, কতটা ক্ষমতায়নের দ্বন্দ্ব, কতটা জঙ্গিপনা। এসব তোরা জানিস না আব্বাস, কুলসুম। জানলে এই বয়সেই আরও ঘৃণা জমত তোদের চোখেমুখে।
সিরিয়ায় তোদের শৈশব আজ আক্রান্ত মহম্মদ, বসির। তোদের বন্ধুরা আজ কেউ মৃত্যুর ওপারে, কেউ হাসপাতালে, কেউ বা আবার মানসিক চিকিৎসালয়ে। তোদের বইয়ের পাতাগুলো উড়ে গিয়েছে বসন্তের রক্তাক্ত হাওয়ায়। তোদের রঙ পেন্সিল, ভাঙা সাইকেল, খেলার পুতুল, লাট্টু সব কোথায় যে হারিয়ে গেল। যে খেলনার জন্য বুকভরা ভালোবাসা ছিল, না পেলে অভিমান জমত তোদের ছোট্ট বুকে, সেগুলো আজ কোথায় যে হারিয়ে গেল, তোদের আজ মনেও পড়ে না।
আট বছরের মহম্মদের বাবা একদিন তার চোখের সামনেই মারা গেলেন। একদল জঙ্গি তার বাবাকে গুলি করে মেরেছিল। বাবার পকেটে ছিল তার জন্য আনা চকোলেট। আজ রক্তের মতো লাল কোনও রং দেখলেই আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠে মহম্মদ। স্বচক্ষে বাবাকে ছটফট করে মরতে দেখে সে আতঙ্কে বোবা হয়ে গিয়েছিল। বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে বাবা বাঁচত কি? জানে না মহম্মদ। কিন্তু কারও সেদিন সাহস হয়নি বাবাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার। সেই মৃত্যু মহম্মদকে বোবা করে দিয়েছিল। সে বছর খানেক কথা বলতে পারত না। এখন চিকিৎসার ফলে সে জড়ানো উচ্চারণে তার মনের ভাব কিছুটা বোঝাতে পারে। তবে স্বভাবে সে অনেকটা হিংস্র হয়ে গিয়েছে। যাকে তাকে মারে, আঁচড়ে, কামড়ে দেয়।
নয় বছরের আহমেদও দেখেছে তার বাবার মৃত্যু। বোমায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল তাঁর দেহ। সেই আতঙ্ক তাকে প্রতি মুহূর্তে তাড়া করে বেড়ায়। রাতে ঘুমোতে পারে না। স্বপ্নের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়ায়। সেই আতঙ্কে কখন তার বিছানা ভিজে যায়, সে জানতেও পারে না। শুধু ভয়ে চিৎকার করে জেগে ওঠে।
তোর কথাও খুব মনে পড়ে আয়লান কুর্দি। সাড়ে চার বছরের ছেলেটাও যুদ্ধের শিকার। মুখ গুঁজে সে পড়েছিল ভূমধ্যসাগরের বালিয়াড়িতে। আয়লান তোর মৃত্যু সারা বিশ্বের মানুষের চোখে জল এনে দিয়েছিল। বুঝিয়ে দিয়েছিল রাজনীতি আর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব কত নির্মম আর ঘৃণ্য। কাউকে রেয়াত করে না। পশুর থেকেও বোধহয় হিংস্র। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকে বাবার হাত ধরে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলি গ্রিসে। কিন্তু মৃত্যু তোকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল।
সাত বছরের হাসান স্বপ্ন দেখত, সে পাখির মতো আকাশে উড়বে। আজ যেন সে নিজেই এক ডানাভাঙা পাখি। তার ছোট বোনটা মারা গেল। বাবা আর মা গিয়েছিল খাবার আনতে। সেখানেই বোমায় তাদের মৃত্যু হয়। আলেপ্পোর মাদায়া, ফোয়া, ফারিয়া শহরে চলছে চরম খাদ্য সঙ্কট। শিশুরা পাচ্ছে না দুধ। জুটছে না এক টুকরো রুটিও। কেঁদে কেঁদে গলা শুকিয়ে গিয়েছে।
আর কত রকম ভাবে যে মারবে আসাদ সরকার, তা জানে না কেউ। একদিকে নির্মম আসাদ সরকার, অন্যদিকে বিদ্রোহীরা। এদের লড়াই কেড়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাণ। গত সাত আট বছরের লড়াইয়ে শিশুমৃত্যু ঘটেছে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি। শত শত পরিবার দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। কেউ তুরস্কে, কেউ গ্রিসে বা ইউরোপের অন্য কোনও দেশে। ক্রমেই ইদলিব, আরবিন, দামাস্কাসের শহরতলিগুলো জনশূন্য হয়ে যাচ্ছে।
চিকিৎসার পর যে শিশুগুলো বেঁচে থাকছে, তারা কেউ হিংস্র আচরণ করছে, কেউ অপ্রকৃতিস্থ, কেউ নির্বাক, কেউ আতঙ্কে গুটিসুটি মেরে আছে। সকলেই ট্রমায় আক্রান্ত। আগামী প্রজন্ম তাহলে কী নিয়ে বাঁচবে? মৃত্যুর থেকেও ভয়ংকর এক অতীত ও স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকবে ওরা! কী নির্মম ওদের ভবিষ্যৎ! হায়রে সিরিয়ার হতভাগ্য শিশুরা!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৭

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:


সত্যি, খুব মন খারাপ হয়। আমরা চাই শান্তির একটা পৃথিবী। আমরা যুদ্ধ চাই না।

২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৬

সনেট কবি বলেছেন: কিছুটা পড়লাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.