![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাইরে হিমের হাওয়া হেমন্তের রাত; দরজায় জানালায় অবিরাম রাতের আঘাত।।
মাথায় কুচিন্তা।
চিন্তা করছি...
একটা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছি। আমার উপরে একটা সুসজ্জিত দালান ভেঙ্গে পড়েছে। দালানের নাম রানা প্লাজা।
দীর্ঘক্ষন হয়ে গেল।
একা একা বসে আছি। কোন সাড়া শব্দ নেই।
ধংশস্তুপের ডানদিকে একটা ফুটো দেখা যাচ্ছে। ফুটোটা দিয়ে একটু আলো আসছে।
আমি তাকিয়ে আছি আলোর দিকে। কি সুন্দর করে একটা আলোর রেখা তৈরী হয়েছে। । এই আলোটার গুরুত্ব কিছুক্ষন আগেও বুঝতে পারি নি। এখন বুঝছি। বের হলে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকব। হা করে আলোটাকে গিলে খাব। মানুষ যেভাবে ভাত খায়, গরু যেভাবে ভুষি মাখানো খড় খায় সেভাবে। আলোটাকে কেন এতো ভালো লাগছে?
ফুটোটা দিয়ে বাতাশও আসছে। খুব গুনেগুনে শ্বাস নিচ্ছি। যেকোন মুহুর্তে ফুটোটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। স্তুপের উপর নিঃশ্চয় অনেক উদ্ধারকর্মী। আমাকে উদ্ধারের প্রানপন চেষ্ঠা করছে। যে কারো পায়ের আঘাতে একটা ইট সরে এসে এই ফূটো বন্ধ হতে পারে। ফুটোটা বন্ধ হলে বাতাশ আসাও বন্ধ হয়ে যাবে। অক্সিজেন না পেলে নির্ঘাত মৃত্যু।
নাহ! যে কোন ভাবেই ফূটোটাকে বাচিয়ে রাখতে হবে। কিভাবে রাখব বুঝতে পারছি না।
আমি কতদুর নিচে আছি?
আশেপাশে আর কাউকে দেখতে পাচ্ছি না কেন?
সবাই কি বের হতে পেরেছে? নাকি সবাই...
চিৎকার করে কাউকে ডাকা যেতে পারে।
একবার ডাকলাম...
দুইবার ডাকলাম...
বহুবার ডাকলাম...
না কেউ শুনতে পায় নি।
আর ডাকা যাবে না। ডাকলেই শরীরের সব শক্তি শেষ হয়ে যাবে। শক্তি বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বের হয়ে একবার মায়ের কাছে যেতে হবে যে। মাকে একবার অনেক জোরে জড়িয়ে ধরব। চিৎকার করে কাঁনের কাছে বলব,
‘মারে তোকে কত যে ভালোবাসি। তুই কি জানিস? জানিস না মা। না বললে তোর জানার কথা না।
আগে কোনদিন বলিনি। আজ বের হলেই বলব। তোকে একবার জড়িয়ে ধরে কাঁধে তুলব। সমস্যা নেই মা। সেদিন শরীরে অনেক শক্তি থাকবে। শক্তিক্ষয়ের জন্য চিন্তা করতে হবে না। কাঁধে তোলার আগে ইচ্ছামত ডাল-ভাত খাব। শক্তি বাড়াব। মাংসের জন্য আর বায়না ধরব না।’
মা!
ওমা!!
একটু ডাল-ভাত দে না। চাঁপা পড়ে আছি অনেকক্ষন থেকে। আজ সকালে না খেয়ে কাজে এসেছিলাম। মালিক জোর করে কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। একজন ঢুকবে না। মালিকের লোক তাকে মেরে রুমে ঢুকিয়েছিল। ছেলেটার নাম কাদের। দেখতো মা, সে কি বের হতে পেরেছে? আমি তো দেখতে পাচ্ছি না। আমি যে চাঁপা পড়ে আছি।
দীর্ঘক্ষন হয়ে গেল। আলোটা নিভে এসেছে। ঘটনা কি?
মনে হয় রাত নেমেছে। মশা কামড়াচ্ছে না। এতো ছোট জায়গায় মশা আসতে পারবে না। ভালোই লাগছে। মশার কামড় ছাড়া একটা রাত তো কাটাতে পারব।
পীঠ লেগে গেছে।
সোজা হতে হবে। পাগুলো একটু সোজা করি।
আশ্চর্য!
আমি এতোক্ষন এতোটুকু জায়গায় কিভাবে আছি? আমার পা কোথায়?
অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে আমি পা খুজি। পা পাচ্ছি না। কোমরের কাছে থেকে মেরুদন্ডও মনে হয় ভেঙ্গে গেছে। মেরুদন্ড ভেঙ্গে যাওয়ায় নিচের দিকটা অবশ হয়ে গেছে। ভালোই হলো। পা ভাঙ্গার ব্যথা সহ্য করতে হচ্ছে না। নইলে এতোক্ষন ভাঙ্গা পায়ের ব্যথার জন্য বিষের ওষুধ খেতে হতো। এখানে বিষের ওষুধ নেই।
কিছুক্ষন আগেও উজ্জ্বল আলো ছিল। মাঝে অন্ধকার নেমেছিল। আবার আলো আসছে। এই আলোটা কেমন যেন মায়ামাখা। দেখতে ভালোই লাগছে। মনে হয় চাঁদের আলো। আজ কি পুর্নিমা? আজ বোশেখের বারো তারিখ। আজ-কালের মধ্যেই তো পুর্নিমা হওয়ার কথা। বের হতে পারলে একবার আকাশটা দেখা যেত।
উদ্ধারকর্মীদের রাতে তো থাকার কথা নয়। তারা কি কাজে আজকের মতো ইস্তফা দিয়েছে? দিতেও পারে। আমি তো অতি সাধারন মানুষ। আমার জন্য রাত জেগে তাদের কাজ করার কথা না। তাদেরও তো জীবন আছে। বৌ-বাচ্চা আছে। নিশ্চয় সবাই বাসায় গিয়েছে। এখন রাতের খাবার খাওয়ার সময়। তারা মনে হয় টেংরা মাছের ঝোল আর বিলেতি আলুর ভর্তা দিয়ে ভাত খাচ্ছে। জিভে জল এসে যাচ্ছে। টেংরা মাছের ঝোল কথাটা আসলেই কেন জানি জিভে জল এসে যায়। নাহ! এখান থেকে বের হলেই বেশী করে টেংরা মাছ কিনে এনে মাকে রান্না করতে বলব।
‘এমন ভাবে রান্না করবি যেন জিভে জল এসে যায়।’
ঘন্টা যায়। দিন যায়। অন্ধকারে আমি একা একা বসে থাকি। উদ্ধারকর্মীদের হাতুড়ী-সাবলের আঘাতের অপেক্ষায় থাকি। কেউ আসছে না।
তিনি মাস পর......
সাভারে ধ্বংসস্তূপ রানা প্লাজার উপর নতুন করে একটা আকাশচুম্বী অস্ট্রেলিয়া (অট্টালিকা) তৈরি করা হচ্ছে।
অট্টালিকার ভিত্তির কাজ চলছে। মাটিতে ড্রেজিং চলছে। নির্মানকর্মী ফজলু হঠাৎ একটা শক্ত কিছুর অস্তিত্ব অনুভব করল। মাটি সরিয়েই দেখাল একটা মানুষের কঙ্কাল। দেখে মনে হয় কঙ্কালটা বসে আছে। মেরুদণ্ডটা ভাঙ্গা। খুলিতে চোখের গর্তটার দিকে তাকালে মনে হয় সেটি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। পড়ন্ত বেলায় নির্মানমিস্ত্রী ফজলু আকাশের দিকে তাকাল। চোখের গর্তটা পড়ন্তবেলার সুর্যের দিকে তাকিয়ে আছে।
২| ৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:১৭
আরজু পনি বলেছেন:
ফেসবুকের লেখাগুলো ব্লগেও দিলে নিক সেইফ হতে সময় কম লাগবে।
আর সম্ভব হলে অনলাইনে থাকা ব্লগারদের ব্লগ থেকে চক্কর দিয়ে আসাও ভালো।
৩| ৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:৫৬
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ শুভকামনার জন্য।
৪| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৪৪
খেয়া ঘাট বলেছেন: দারুন। সম্মোহিত হলাম।
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:০০
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: সত্যই?
তাতে নিজেকে ধন্য মনে করলাম।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:১৫
আরজু পনি বলেছেন:

এই নিকটার জন্যে শুভকামনা জানিয়ে গেলাম।
হ্যাপি ব্লগিং