![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাইরে হিমের হাওয়া হেমন্তের রাত; দরজায় জানালায় অবিরাম রাতের আঘাত।।
হাসপাতালে রোগী এসেছে।
ডাক্তারের রুমে ঢুকেই বলছে,
"স্যার, প্লিজ একটু দেখেন। আর মনে হয় বাঁচব না।''
লা ইলাহা ইল্লালাহ......।
ডাক্তার রোগীর গায়ে হাত দিয়ে বলছে,
'ভাই চিন্তা করো না। সব ভালো হয়ে যাবে। এই যে ঔষুধ লিখে দিচ্ছি। ঠিকঠাক মত খাবেন।''
ভাইসূলভ হাতে পরম মমতায় ডাক্তারের হাত রোগীর পিঠে। অর্ধেক রোগ ভালো হয়ে গেছে।
রোগীর পেটে ভয়ানক ব্যাথা।
তাৎক্ষনিক এপেনডিসাইটিস বা তাৎক্ষনিক পেট (Acute Abdomen) নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। রোগীর সাথে রোগীর আত্মীয়স্বজনও হাউমাউ করে কাঁদছে। ডাক্তার রুম থেকে বের হয়ে আসলেন।
রোগীসহ রোগীর আত্মীয়-স্বজন সবাই ডাক্তারকে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আব্বা, ও আব্বা। আমার ভাইডারে বাচান। আপনে যা চান সব দিয়া দিমু। আমার কইলজাও পেট কাইইটা দিয়া দিমু। আব্বা ও আব্বা?’’
“আপনারা কেউ কান্নকাটি করবেন না। রোগীকে এখনই অপারেশন করতে হবে।”
এই কথা বলেই ডাক্তার রোগীর গায়ে হাত দিলেন। এই হাত একজন ডাক্তারের নয়। একজন বাবার।
এই বাবার একমাত্র ছেলেকে অপারেশন না করলে মারা যাবে।
অপারেশনের টেবিলে চেতনানাশক দেওয়ার পর রোগী বলেন,
‘আল্লাহ ও আল্লাহ। আমারে বাঁচাও।”
ডাক্তার আরেকবার রোগীর মাথায় হাত দিলেন।
এই হাতটার স্পর্শকে বিশ্বাস করে রোগী অজ্ঞান হয়ে গেল। অজ্ঞান আর মৃত্যুর মধ্যে পার্থক্য খুবই কম। একমাত্র সেতু হল বিশ্বাস। একজন মৃত্যু পথযাত্রী রোগীর বিশ্বাস।
অপারেশন শেষ।
রোগী সুস্থ। এখন হাটতে পারে। দুই ঘন্টা পর রিলিজ নিয়ে হাসপাতাল ছাড়বে।
রোগী আর তার আত্মীয়-স্বজন জোরে জোরে গল্প করছে।
গল্পের চাইতে মেজাজ বেশী।
‘শালার ডাক্তার, সময়ে পাওয়া যায় না। কি এটা অপারেশন করল পেটের মাঝে দাগ হয়ে আছে। সেলাইটা এখনো কটকট করে জলছে। সুয়োরের বাচ্চা ডাক্তার। টাকা নেবার সময় তো একটাকাও কমালি না। তোর মারে......( চ বর্গীয় শব্দটা এখানে বেশী বসে। অভিজ্ঞ লোকেরা ভালো জানে। শব্দটা লেখার সাহস যোগাড় করে উঠতে পারি নি। ডাক্তার প্রজাতিরা একটু বেশী ভিতু হয় আর-কী!!!)
যে ডাক্তার রোগীদের বাবা হয়, তার মা রোগীদের কে হবে?
যে ডাক্তার রোগীদের ভাই হলো, সেই ডাক্তারের মা রোগীদের কে হবে?
ভাবতেও খটকা লাগে।
যেদিন থেকে এই পেশায় আসলাম, সেদিন থেকেই নিজের মা-দাদীকে রোগীদের কাছে বিক্রী করে দিলাম।
তারপরেও রাত দুপুরে কয়েক হাজার টাকার বেতনে ক্লিনিকে খেটে খেটে অপেক্ষা করি।
আমাদের ভাই আসবে। আমাদের ছেলেরা আসবে। যাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক শুধুমাত্র বিশ্বাস। রক্তের নয়। তাদের বাঁচাতে হবে।
আপনি রাষ্ট্রপতি, আপনিও আমার রোগী।
আপনি রাজনীতিবীদ, আপনিও আমার রোগী।
আপনি ডাকাত, আপনিও আমার রোগী।
আপনি শিক্ষিত ভার্সিটির ছাত্র, আপনিও আমার রোগী।
একটুও ভেদাভেদ নেই। সবার জন্য আমাদের হাত সমান বাড়িয়ে যায়।
ভেদাভেদ এই চারশ্রেনীর মাঝে।
রাষ্ট্রপতিরে বোঝাইলে বোঝে না। সকাল বিকাল মাউন্ট এলেজাবেথ।
ভন্ড রাজনীতিবীদরে বোঝাইলে বোঝে না, বউয়ের খালাত ভাইয়ের দুঃসম্পর্কের চাচাতো ভাইয়ের বাড়ীর ঝি অসুস্থ হয়েছে, ঢোকাও আই,সি,ইউতে। অন্যদের কি হোন না হোক, বউয়ের আত্মীয় বলে কথা।
গরু মরে মরুক, বাচ্চারা শকুন দেখুক টাইপের ব্যবহার।
ভার্সিটি পড়ুয়াদের বোঝালে ভালো বোঝে। এদের সমকক্ষ বন্ধুরা অনেকেই মেডিকেলে পড়ে। আলাপ সুত্রে মেডিকেলের খবরা-খবর ভালোয় রাখে।
এরা যখন হকিস্টিক নিয়ে, ক্রোধে মাতাল হয়ে হাসপাতালে ভাংচুর করে তখন কিছু বলার নেই। শুধু করুন দৃষ্টিতে আমরা তাকিয়ে থাকি হাসপাতালের রুমগুলোর দিকে। এই রুমেই আমাদের হাতে বেঁচে যায় হাজার মানুষ। হাজার স্ত্রী বেঁচে যায় নিশ্চিত বিধবার বেশ থেকে। হাজার মা বেঁচে যায় তাদের একমাত্র ছেলে হারার ব্যাথার কবল থেকে।
এই রকম হাসিপাতালের একটা কক্ষেই এই নামধারী ভার্সিটি ছাত্ররা মায়ের জরায়ু ছিন্ন করে পৃথিবীর আলো দেখেছে।
এই রকম কোন হাসপাতালেই তাদের বাবা মারাত্মক অসুখ থেকে বেঁচে গেছে। এতিম হওয়ার হাত থেকে নিজে বেঁচে গেছে। কথাগুলো তাদের একটুকুও মনে নেই।
মনে রেখে কি হবে?
গীটারে নতুন সুরটা ধরতে হবে না?
ডালের বোতলের বর্তমান বাজার দর মাথায় আপডেট রাখতে হবে না?
শক্ত একটা হকিস্টিকের বাড়ী কোথায় দিলে জিনিসটা সহজে ভাঙ্গবে জানতে হবে না?
ডাকাতের কথা বাকী রাখার একটা কারন আছে।
আমার বাবা গ্রাম্য ডাক্তার।
ডাক্তারী সুত্রে মাঝরাতে অনেক রোগীর বাসায় গিয়েছি। প্রসব বেদনায় কাতর অনেক রোগীর ডেলিভারী বাবার হাতে দেখেছি। নির্জন রাস্তা দিয়ে, গভীর জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যখন যেতাম, তখন অনেক ডাকাতের সাথে দেখা হতো।
আগেরদিন যারা একজন মানুষকে গলা কেটে বাইক কেড়ে নিয়ে ব্রীজের নিচে লাশ ফেলে রাখে, তারা পথ থেকে সরে দাড়াত। লম্বা একটা সালাম দিয়ে পথ করে দিত।
‘ডাক্তার সাহেব, যান যান। মতির বউয়ের অবস্থা ভালো না।’
একবার এক ডাকাত সর্দার ফেরার পথে আব্বা আর আমাকে জঙ্গলে বসিয়ে রেখেছিল।
একমাত্র কারন,
তার বউ আজ ইলিশ রান্না করেছে।
রান্না নাকি চমৎকার করে। সবাই মিলে জঙ্গলে বসে বসে খাব।
সেদিন একদল খুনী দাকাত সর্দারের সাথে গহীন জংলী রাস্তায় বসে ইলিশ মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়েছিলাম।
ডাকাত সর্দার আমার পরিচিত। এই লোকের নাম মতি মিয়া। তার একমাত্র সন্তানের ডেলিভারীর দিনে উপস্থিত ছিলাম আমি আর বাবা। এখনো বাবার যেকোন বিপদে এই লোকটি সবার আগে আসে। গমগমে গলায় বলে,
“গোলজার ভাই। আপনাকে গালি দেয়, কার এতোবড় সাহস? একবার নামটা বলেন। গলাটা ফেলে দিয়ে আসি।’
আমি অহঙ্কার করে বলছি না। রাষ্ট্রপতি, রাজনীতিবীদ, ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্রদের চাইতে রোগী হিসাবে এরাই কতটা সুরক্ষিত আমি বুঝি।
সব ভার্সিটি পড়ুয়ারা এমন না।
খুবই নগন্য। আমার ফ্রেন্ড লিস্টে ভার্সিটি পড়ুয়া যারা আছেন, তারা মাফ করবেন। আমি সবার কথা বলছি না। বাকীদের উপর আমার যথেষ্ট সম্মান, বিশ্বাস আছে।
নগন্যের প্রতি বানী,
ভাইরে, আমরা নিরীহ প্রজাতি।
রাজনীতি-অর্থনীতি কিছুতেই আমরা নেই। আমরা শুধু বিশ্বাসের সেতু বানাই।
মসজিদ ভাঙ্গলে মানুষ মরবে না।
হাসপাতাল ভাঙ্গলে যে অনেক সমস্যা!!!
ধর,
তুমিই হাসপাতাল ভাঙ্গার পর হোস্টেলে এসেছ। দুর্ঘটনাঃবশত অসুস্থ হলে। ভয়ানক অসুস্থ একজনকে আই,সি,ইউতে ভর্তি করতে হবে।
হাসপাতালে এসে দেখলে আই,সিই,ইউ নাই। কিছুক্ষন আগে এই সৎকর্মটা তুমিই করে গেছ। তুমি শুধু মরবে না।
মরলে তো বেঁচে গেলে।
বাবা-মার কান্নার মুল্য কি পৃথিবীতে দিয়ে যেতে পারলে?
পারলে না। এই ক্ষমতা তোমার নাই। এই ক্ষমতা না থাকলে কিসের এত তেজ তোমার?
তিনবার পাতলা-পায়খানা, দুইবার বমি হলেই তো তোমার শরীরে কিছু থাকবে না।
কিসের এতো বড়াই?
আমাদের সাথে লাগতে এস না। বলা তো যায় না, কবে তিন সিসি ইঞ্জেকশনের সাথে দুই ফোঁটা বাতাস ঢুকিয়ে দিব তোমার শিরায়...
এই কাজটাও আমরা করতে পারি না।
আমরা বিশ্বাসের সেতু বানাই।
মীরাক্কেলের বিখ্যাত বানীঃ বড়ই আজিব চিজ হ্যায় মাগুর মাছ।
>>> বড়ই আজিব চীজ এই ডাক্তার। আমাদের ঘর ভাঙলে, বাস্তুহীন করলে আর আমরা কিছুই করলাম না।
৩১ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:০৯
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: আপনাদের সহ ব্লগার হতে পেরেছি বলে আমাকেও প্রচন্ড ভালো লাগছে। সহযাত্রী পেলে অবশ্যই আমার পথ চলা থামবে না। শুভ কামনার জন্য ধন্যবাদ দিলাম না। একেবারে নতুন একজন ব্লগারকে কেউ এভাবে যেচে এসে শুভা কামনা জানায় তাকে স্যালুট করা ছাড়া উপায় নেই। স্যালুট আপু।
২| ৩১ শে মে, ২০১৩ সকাল ১০:৫১
আরজু পনি বলেছেন:
লেখাটা পড়ার পর যে প্রতিক্রিয়া হয়েছিল সেটা শেয়ার করা দরকার...
জানি ভার্সিটি পড়ুয়া সবাই এমন না...তারপরও গুটিকয়েকের জন্যে ভার্সিটির সবার বদনাম! একজন ভার্সিটি পড়ুয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থী হয়ে লজ্জায় মুখ লুকাতে ভুলে যেয়ে ছল ছল চোখে লেখাটা শেষ করেছি ।
আপনার মতো ডাক্তার ভাই/বোনদের প্রতি রইল লাল সালাম।
৩১ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:১২
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ আপু। নিজ প্রজাতির দোষ সবাই ধরতে পারে না। "কতিপয়" নিজ প্রজাতির দোষকে নিজের বলে ধরে নিয়ে আপনি ছোট হয়ে যান নি। বড় হয়েছেন। অনেক বড় হয়েছেন। তাল গাছ ছাড়িয়ে আকাশে মাথা ঠেকেছে আপনার।
৩| ৩১ শে মে, ২০১৩ সকাল ১০:৫৫
শহুরে আগন্তুক বলেছেন: সব ডাক্তারও আপনার লেখা ডাক্তারের মতো না । আমার তো মনে হয় তারাই সংখ্যায় অনেকাংশে বেশী । সেইসব ডাক্তাররা রোগীর পিঠের থেকে মানিব্যাগে হাত রাখতেই বেশী স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ।
তবুও ভালোই লাগলো ।
৩১ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:০০
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: আপনার লেখা প্রথম বাক্যের সাথে একমত। পরের গুলোর সাথে অনেকতা দ্বি-মত। একজন মেডিকেলে চান্স পেলে ক্যারিয়ার নিয়ে তাকে ভাবতে হয় না। অন্য পেশায় চাকুরীর যেমন একটু হলেও চিন্তা আছে , ডাক্তারদের নেই। আপনি চল্লিশ বা পয়তাল্লিশ বছর বয়সে একটা ডিগ্রী কমপ্লিট করলেন। আপনার বাচা-কাচ্চা বিয়ের উপযুক্ত হয়েছে। এই অবস্থায় একটা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বসতে হলে আপনাকে অনেক শর্ত মানতে হবে। মিনিমাম ২০০০ টাকার টেস্ট। তাদের সেন্টার থেকেই অবশ্যই টেস্ট আরো কত-কী। একজন ডাক্তার পড়তে পড়তে বুড়ো হয়ে গেল, চেয়ারে বসে থেকে পাইলস আর মেরুদন্ডের ব্যাথার রোগী হয়ে গেল, সারাদিন হাসপাতালের রোগী আর তাদের আত্মীয় স্বজনদের ভীড়ে ক্রনিক ইরিটেড হয়ে মাথা ঠিক রাখা তাদের অসম্ভব হয়ে পড়ে। সক্কল ডাক্তার এই রাস্তায় যায়। বাইপাসের উপায় নেই। রাতে স্ত্রীর পাশে থাকতে পারে না, দিনে বাচ্চা কোলে আদর করতে পারে না তাদের কতটুকু ভালো হলে বলব,
ডাক্তাররা মানিব্যাগের জন্য ডাক্তারী করে না।
ভাইরে,
খুব কস্টে আছি।
এম,বি,বি,এস শেষ হলেই অন্য পেশায় জড়াব।
পোস্ট গ্রাজুয়েশনের পেইন বিয়ার করার ক্ষমতা আমার নেই।
৪| ৩১ শে মে, ২০১৩ সকাল ১০:৫৮
তাসনুভা সাখাওয়াত বীথি বলেছেন: +++
৩১ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:০০
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ আপু।
৫| ৩১ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:৩৮
রুদ্র হুমায়ূন বলেছেন: রাজীবের লেখা অলটাইম প্রশংসার বাইরে থাকে। তোকে প্রথম পাতায় পেয়ে খুব ভালো লাগল আজ।
৩১ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:০১
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: তোর জ্বালায় ফেসবুক ছাড়লাম। ব্লগে আসলাম। এখানেও তুই?
ইশ্বর আমাকে রক্ষা করুন।
৬| ৩১ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:২৭
কালো রাজপুত বলেছেন: এরা ভার্সিটিতে পড়লে কী হবে এদের মধ্যে হিউমিনিটি বলতে কিছুই নেই
০৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:৪৯
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: আছে ভাই আছে
তবে সুপ্ত।
নাতী-পুতি বাঁ তারো পরের বংশানুধারার কারো মাঝে এটা প্রকট হিসাবে দেখা দিবে।
সেই আশায়.।
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে মে, ২০১৩ সকাল ১০:৩৮
আরজু পনি বলেছেন:
রাজীব, অনেক ভালো লাগছে আপনাকে ব্লগার হিসেবে পেয়ে।
আমি এখন লগইন হয়েছি শুধুই আপনার ব্লগে কমেন্ট করবো বলে।
কমেন্ট যাই পড়ুক...আপনার লেখা থামিয়ে রাখবেন না প্লিজ।
আর কমেন্ট করতে না পারুন তবু্ও অন্য ব্লগারদের ব্লগে অনলাইনে ঘুরে আসবেন।
অনেক শুভ কামনা রইল।।