নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

থমথমে রাত,- আমার পাশে বসল অতিথি-- বললে,-আমি অতীত খুধা,তোমার অতীত স্মৃতি!

সময়ের সমুদ্রের পার--- কালকের ভোর আর আজকের এই অন্ধকার

রাজীব হোসাইন সরকার

বাইরে হিমের হাওয়া হেমন্তের রাত; দরজায় জানালায় অবিরাম রাতের আঘাত।।

রাজীব হোসাইন সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডেথ সার্টিফিকেট :(

৩১ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:০৫

ভদ্রলোক বিছানায় শুয়ে আছেন।



বিছানার রং ধবধবে সাদা । ধবধবে বিছানার দিকে কিছুক্ষন তাকালেই চোখ ধরে যায়। ঝাঝা করে ওঠে।



বিছানায় যিনি শুয়ে আছেন তার নামের সাথে লেখকের নামের একটা অদ্ভুত মিল।

শায়িত ব্যক্তির নাম গোলজার হোসাইন সরকার। লেখকের নাম রাজীব হোসাইন সরকার।



ভাগ্যক্রমে দুইজনই সরকার বংশের প্রতিনিধি। একজনের জীবন সুর্য অস্তগামী, আরেকজনের কেবল দুপুর। মধ্যদুপুর। কাঠফাটা মধ্যদুপুর।



অস্তগামী জীবনের মানুষটি রোগাক্রান্ত। ১২ ঘন্টার একটা অদ্ভুত কঠিন ব্যাধি তাকে কাহিল করেছে।



কঠিন ব্যাধিটির নাম মায়োকার্ডিল ইনফার্কশন।



কর্তব্যরত সুদর্শন তরুন ডাক্তার হাসিমুখে বললেন,



'কিছুই বলা যাচ্ছে না। আল্লাহ আল্লাহ করেন।'



ডাক্তারের অমায়িক হাসিমুখ দেখে মনে হল তিনি আমাকে দাওয়াত দিলেন। হাসির প্রকার বলে দিচ্ছে এটা বিয়ের দাওয়াত। যে বিয়েতে কোর্মা-পোলাও রান্না হয়। খাওয়ার শেষে মিস্টি আর টক দই থাকে।



আমি নিঃশব্দে ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে আছে।



আমি তার হাঁসি মুখ দেখে বিয়ের দাওয়াত কবুল করলাম।



পাশের বেডের রোগীটা ধুম করে মারা গেলেন।



সবার সাথে কথা বলছিলেন। দেখতেও সুস্থ সতেজ ছিলেন। কি এক কারনে কিছুক্ষন আগে তার ছেলেকে একটা থাপ্পড় মেরেছেন। ছেলের গাল ফেটে দাগ বসে গেছে।



ছেলে এখনও দরজার বাইরে।



যে লোক তাকে থাপ্পড় মেরেছে তাকে কি করা যায় ভাবছে।



ভাবলেশহীন অবস্থায় শুধু চোখের জল ফেলা যায়। ছেলেটি কাঁদছে। দরজার কপাট ধরে কাঁদছে। দেখে মনে হচ্ছে তার বুক ফেটে যাচ্ছে। একটু আগে তার বাবা থাপ্পড় দিয়ে গাল ফাটানোর সাথে সাথে বুকটাও ফাটিয়ে চলে গেছে।



সাদা চাদরে পেঁচিয়ে তাকে রুম থেকে বের করে দেওয়া হল।



মৃত্যের ছেলের হাতে একটা কাগজ। নিশ্চয়ই ডাক্তারের বিয়ের কার্ড। বিয়ের কার্ডে কি আজকাল “ডেথ সার্টিফিকেট” কথাটা লেখা থাকে?



থাকতেও পারে।



বাবার দুই পাশে বসে আছে অতন্দ্র দুই প্রহরী।



প্রহরী দুইজন আমার মা।



গ্রাম্য নিরক্ষর দুই মহিলাকে বাবার অসুস্থতা আর পাশের রোগীর মৃত্যু তাদের ভড়কে দিয়েছে। ভয় আর নীরব কান্না তাদের বদলে দিয়েছে। আমি নিজেই আমার মাকে চিনতে পারছি না। যে মহিলার বিয়ে হয়েছিল মাত্র বারো বছর বয়সে তাকে চিনতে পারছি না। বিয়ের সময় যে মহিলা হাফ প্যান্ট পরে থাকত তাকে একটুও চিনতে পারছি না। যে ভদ্রলোকটি তাকে এতোদিন বিরতিহীন ভাবে ভালোবাসা দিয়ে এসেছে তার ব্যাধি মায়ের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। রোগটা তো ছোয়াচে নয়।



তাহলে?



বাবার কঠিন ব্যধি আমাকে একটুও ভড়কে দিতে পারে নি। যারা দাওয়াতের অপেক্ষায় থাকে তাদের কোন মৃত্যু ভড়কে দিতে পারে না। এই দাওয়াত হবে সাদা কাগজের কার্ডে। যেখানে লেখা থাকবে ডেথ সার্টিফিকেট।



আমি দাওয়াতের অপেক্ষায় আছি।



সময় গড়িয়ে যাচ্ছে।



রাজীব হোসাইন সরকার অপেক্ষা করছে

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.