![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাইরে হিমের হাওয়া হেমন্তের রাত; দরজায় জানালায় অবিরাম রাতের আঘাত।।
মৃত্যু ও মাল্টিভার্স--------
কষে একটা চড় খেল আলী হোসেন।
গাল ফেটে ছয় আঙ্গুলের একটা দাগ বসল।
গাল ফাটার সাথে সাথে চোখ ফেটেও জল ঝরতে লাগল।
চড় খাওয়ার কারন সে নিজেও জানে না।
কারন না জানিয়ে কাস্টমার তাকে চড় মারতে পারে না। কাস্টমার একটা মহা ভুল করেছে। এই ভুলের শাস্তি একটায়। এটা ছাড়া অন্য কোন বিকল্প শাস্তি তার মনেই আসে না।
অভদ্র কাস্টমারের মুখে পিশাপ করে দিতে হবে।
কাস্টমার হা করে দাঁড়িয়ে থাকবে, আলী হোসেন পিশাপ করবে। এজন্য তাকে একটা উচু ফার্নিচারের উপর দাড়াতে হবে। উচুতে দাড়ালে পিশাপের ধারা মুখে টার্গেট করতে সুবিধা হবে।
আলী হোসেন আগে একটা চায়ের স্টলে কাজ করত। একদিন স্টলে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে গল্প করছিল।
চেয়ারম্যান একবার মৃদু স্বরে বলল,
‘ওই, আলী পানি দিতে কই না? দিস না কেন হারামজাদা?
বলেই তাকে একটা চড় মেরেছিল।
সেদিনও আলীর মেজাজ চুড়ান্ত খারাপ হয়েছিল। কলপাড়ে গিয়ে একগ্লাস পানি নিয়ে তাতে সে অল্প কিছু পিশাপ যোগ করে দিল।
চেয়ারম্যান যখন ঢকঢক করে সেই পানি খেল, আলী হোসেনের অনেক ভালো লাগল। গালের ব্যাথাটা মুহুর্তেই ভালো হয়ে গেল।
আজও তার তার মেজাজ চরম। সেদিনের গ্লাস পদ্ধতি আজ কাজ করবে না। অন্য কিছু ভাবতে হবে।
কাস্টমার তো হা করে বসে বসে পিশাপ গিলবে না। অজ্ঞান করে তাকে মাটিতে শুইয়ে দিতে হবে।
আলী হোসেন অজ্ঞান করার উপায় খুঁজছে।
সিনেমাতে মাথার পেছনে কাঠের বাড়ী মেরে অজ্ঞান করে করা হয়।
আলী হোসেনের ইটের বাড়ী দিতে ইচ্ছা করছে।
আশেপাশে কোন ইট নেই। প্রচুর পরিমান চ্যালা কাঠ আছে।
ইটের বাড়ী না দিতে পারলেও কাঠের বাড়ী দেওয়া যায়।
কাস্টমার অন্য গভীর মনযোগের সাথে ফার্নিচারগুলো দেখছে।
আলী হোসেন একটা চ্যালা কাঠ হাতে নিল। কাস্টমারের পিছুপিছু দাঁড়িয়ে গেল। পজিশন ঠিক আছে। এখন মাথার পেছনের দিকটাতে বসিয়ে দিতে পারলেই হবে।
সিনেমাতে মাথার পেছনেই আঘাত করে অজ্ঞান করা হয়।
‘এই আলী, কি করছিস?’
চমকে পেছনে তাকাল। আকবর মামা দোকানে এসেছে।
আকবর মামা দোকানের মালিক। এসেই ক্যাশে বসে পড়লেন।
মামা ঘটনা বুঝতে পারে নি। আরেকজন মারতে গিয়ে আলী হোসেন নিজে বেঁচে গেল।
তবুও আলী হোসেন এর মনটা চড় খাওয়ার পর থেকেই খুতখুত করছে।
একটা প্রশ্নের উত্তর সে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।
কেন তাকে চড় মারা হল।
এতো সুন্দর করে পালিশ করা ফার্নিচারটা নিতে বলায় তাকে চড় মারা ঠিক হয়নি। ফার্নিচারটার দামও কম। বহনের সুবিধা অন্য ফার্নিচারদের চাইতেও বেশী। চারপাশে চারটা হাতলও আছে।
কাস্টমারকে আলী হোসেন নিজেই বলল,
‘স্যার ভালো ফার্নিচার লিবেন?’
‘হুম।’
‘এইডা লেন। মাঝখানে জিনিস রাখার বিরাট জায়গা। ধরতিও সুবিধা পাইবেন। হাতল চাইরডা। ডাসাগুলা দেহেন না। শাল কাঠের। অনেক দিন থাইকা পালিশ করতাছি কেউ কিনে না। আপনে কিনেন। কামে দিব। আগে ছিল তিনহাজার টেকা দাম। দুইবছর থেইকা কেউ কিনে না তাই আপনারে একহাজার টেকায় দিলাম। মালিকে কিছু কইব না। আমিই ফাইনাল করে দিলাম। নিয়ে যান। শোবার ঘরে খুব সুন্দর মানাব।’
কথাগুলো এক নিশ্বাসে শেষ করেই আলী হোসেন ফার্নিচারটা কাস্টমারকে দেখিয়ে দিল।
অমনিই কাস্টমার আলী হোসেন নামক নয় বছুরের অকালপক্ক গরীব ছেলেটার ছোট্ট গালে চড় বসিয়ে দিল।
গাল ফেটে সাথে সাথেই ছয় আঙ্গুলের একটা দাগ বসে গেল।
কাস্টমারের চেহারা গদাম আকৃতির। তার বাম হাতে ছয়টা আঙ্গুল।
বাম হাত দিয়েই সে আলীর ছোট্ট গালে জোরে থাপ্পড় বসিয়েছে।
যে ফার্নিচারটাকে সে শোবার ঘরে সাজিয়ে রাখার কথা বলেছিল সেটা একটা খাটিয়া।
মৃতদেহ কবর পর্যন্ত বহন করার খাটিয়া।
জীবনের একমাত্র বিশ্বস্ত সত্য মৃত্যু। অথচ এই জিনিসটাকে সবচাইতে বেশী ভয়।
মানুষের একটা উল্লেখযোগ্য স্বভাব হলো নিজেকে ধোকা দেওয়া। ধোকার প্রধান হাতিয়ার কান্না। ভয়ানক আর মৃত্যুমাখা সিনেমা-বই পড়ে চোখে গোপনে পানি আনা আমাদের স্বভাব।
মৃত্যু নিয়ে সুন্দর একটা কবিতা পড়লাম। কবিতাটা পরে কেমন যেন অসম্পুর্ন অসম্পুর্ন মনে হচ্ছে।
ইচ্ছা করছে কবিতার সম্পুর্নতা আনতে। সম্পুর্নতা আনতে হলে মরতে হবে।
কবিতার পুর্ন ভাব বুঝতে হলে মরে যেতে হবে।
মাঝে মাঝে সবার এরকম অদ্ভুত ইচ্ছা হয়।
একবার মরেই দেখি না।
মৃত্যুর কথা ভাবলে মাঝে মাঝে ভয় পেয়ে যাই। ভয় পেলে প্রথম উপসর্গ হল হাটু দুর্বল হয়ে যাওয়া। মনে হয় হাটু ভেঙ্গে পড়ে যাব।
হাটুতে শক্তি ফিরিয়ে আনার একটা বিকল্প পদ্ধতি পেয়ে গেছি।
পদ্ধতিটা বিজ্ঞান সম্মত।
একবার চিন্তা করুন আপনার পরিচয়।
‘আমি কে?’
শুধু এই অনুভূতিই মস্তিষ্কে ২০-ওয়াট শক্তি সঞ্চালন করতে পারে।
আমরা না বুঝতে পারলেও সক্রেটিস কিন্তু এই বিজ্ঞান খুব ভালোয় বুঝেছেন।
“নিজেকে চেন?”
শুধুমাত্র এই কথাটা বলায় রাজা সক্রেটিসকে ফাঁসি দিলেন।
মৃত্যু নিয়ে আইনস্টাইনের একটা থিউরী আছে।
আইনস্টান বলেছেন,
সময় অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের মধ্যে পার্থক্য শুধু একগুঁয়ে বিভ্রমের। সময়ের বাইরে হিসাব করলে বা অসীম সময়ে হিসাব করলে মানুষের জীবন-মৃ্ত্যুর ফলাফল দাঁড়ায় সে জীবিত অথবা মৃত। অসীম মহবিশ্বের হিসাবে তুচ্ছাতিতুচ্ছ এক মানুষের জীবন-মৃত্যুর হিসাব অতি গৌণ। তবু মৃত্যুই শেষ কথা নয়।
পৃথিবীওয়ালা মহাবিশ্বের মৃতের যে শক্তিটুকু ছিল তা হয়তো আরেকটা কোনো মহাবিশ্বে জীবন হিসেবে বিকশিত হচ্ছে।”
হিসাব ক্লিয়ার। পানিত মত...
মাল্টিভার্স তত্ত্ব বলে,
যেকোনো বস্তুর যেকোনো অবস্থার বিপরীতে আরেকটি অবস্থা দাঁড় করানো থাকে। এই অবস্তানটা হবে তার বর্তমান অবস্থার ঋণাত্মক।
জীবনের বিপরীত ও ঋণাত্মক অবস্থান হলো মৃত্যু।
বিজ্ঞান বলে আমাদের মাত্রার পৃথিবীর বাইরে সমান্তরালে অন্য মাত্রার অসীম সঙ্খ্যাক মহাবিশ্ব আছে।
এই বিশ্বে আমরা জীবিত। সেখানে হয়তোবা এখনো জন্মায় নি। অথবা অনেক আগেই মরে গেছি।
অসীম সঙ্খ্যাক পৃথিবীতে হয়তোবা এখনো বেঁচে আছি।
বহাল তবিয়তেই...
জীবনের চব্বিশ ক্যারেটের খাঁটি সত্যাটাকে উপলব্ধি করার ক্ষমতা কয়জনের আছে?
আসুন...
ভয় ঝেড়ে ফেলি...
অন্য কোন মাত্রার পৃথিবীতে ভ্রমণ করি। চলে যাই। এই মাত্রার পৃথিবীতে জীবন অসহনীয় হয়ে উঠেছে......
মৃত্যুই শেষ কথা নয়...
আপনার মৃত্যু অন্য কোন আপনাকে জীবন দান করবে।
অন্যকোন মহাবিশ্বে, অন্য কোন মাত্রায়...
২| ১১ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:০১
তাসিম বলেছেন: জীবনের একমাত্র বিশ্বস্ত সত্য মৃত্যু। অথচ এই জিনিসটাকে সবচাইতে বেশী ভয়।
১১ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:০৮
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন:
বিশ্বাস না করার ভান করি,
অগোচরে নৈরাশ্যে ভুগি
৩| ১১ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:২০
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: পড়লাম।
আমরা ধূলি মাত্র, দেহ-মন-সত্ত্বা সব একদিন ধূলি হয়ে যাবে। তাই পরিণাম না জানার ভান করি।
১১ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৫১
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: উট পাখির মতো বালিতে মুখ গুজে থাকি। জনসমাবেশে মুখ ঢেকে ভাবি কেউ তো দেখছে না। বেশ বেশ
৪| ১১ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৩৩
অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: পড়লাম ভালো লেগেছে। শুরুর গল্পাংশ সুন্দর ।
পরের টা আবার গভীর ভাবের ।
১১ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৫৩
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: ভালো লেগেছে শুনে আমারও ভালো লাগল।
পরেরটা একটা উটপাখির জীবনের মতো। বালিতে মুখ ঢুকিয়ে ভাবে কেউ তো তাকে দেখতে পাচ্ছে না।
অনেকে বলেছেন আমি লেখাটার মাধ্যমে আত্ম-হত্যাকে উৎসাহিত করেছি।
বিষয়টা সত্য নয়
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৬
রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: কোন ভদ্রলোক ব্লগ কর্তৃপক্ষের কবলে লেখাটি পড়লে নতশিরে জানা,
ভাইরে অন্যদের স্ট্যাটাসে কমেন্ট করার অধিকার কি আমার কোনদিনও হবে না? :'(