নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

থমথমে রাত,- আমার পাশে বসল অতিথি-- বললে,-আমি অতীত খুধা,তোমার অতীত স্মৃতি!

সময়ের সমুদ্রের পার--- কালকের ভোর আর আজকের এই অন্ধকার

রাজীব হোসাইন সরকার

বাইরে হিমের হাওয়া হেমন্তের রাত; দরজায় জানালায় অবিরাম রাতের আঘাত।।

রাজীব হোসাইন সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

তোমরা যারা পরীক্ষা দিচ্ছ!!!

০১ লা জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:২৫

ঘুম ভেঙ্গেই ভয়ে চিৎকার করে উঠলাম।

আকাশ ফাটানো চিৎকার। রুমের দরজা জানালা বন্ধ। চিৎকার বাইরেও গেল না আকাশ ফাটল না।

চিৎকার করার কারন একটা প্যাকেট। প্যাকেটটা টেবিলে সুন্দর করে রাখা। প্যাকেটের গায়ে লেখা,

“বৈশাখী মিস্টিমেলা। এখানে দেশী-বিদেশী মিস্টি পাওয়া যায়।’

সামান্য মিস্টি আবার বিদেশ থেকে এনে বিক্রি করার কি আছে, বুঝলাম না?

প্যাকেট হাতে নিয়ে উত্তেজনায় কাপছি। মিস্টির সাইজ আর মান দেখেই বুঝতে পারছি এটা এই পৃথিবীর মিস্টি না। কোন মহান শক্তি আমার জন্য পাঠিয়েছে। মহান শক্তিদের একজন হলো জিন্দাবাবা ফরিদপুরী। ইদানিং নাকি তিনি স্বপ্নে তার প্রিয় বান্দাদের মিস্টির প্যাকেট আর চিঠি পাঠাচ্ছেন। আমি আবার ভয় পেয়ে গেলাম। প্যাকেটের নিচে একটা চিঠি। গোটাগোটা হাতে লেখা,

‘তুমি ঘুমাচ্ছিলে। ঘুম ভাঙ্গলেই এই মিস্টি বিতরন করবে।’

আমি শতভাগ নিশ্চিত হলাম। খাজা বাবা ছাড়া আর কেউ এভাবে মিস্টি পাঠাবে না। বাবাদের মতো সবার দিল এতো দরাজ না। আমার মাথা শ্রদ্ধায় নত হয়ে পড়ল। বাবার দিল এতো দরাজ!!!

প্রচন্ড উত্তেজনা আর উল্লসিত হয়ে হোস্টেলের রুমে রুমে মিস্টি বিতরন করছি। শিমুল তুলার মতো নরম আর মোলায়েম মিস্টি। মুখে দিলেই গলে যাচ্ছে। সবাই খাচ্ছে আর নাকের মধ্যে বলছে,

“আহা! আহা!! কেয়া বাত হে! কেয়া বাত হে!!

মেজাজ চরম খারাপ হয়ে গেল। সবাই গপগপ করে মিস্টি খাচ্ছে । কেউ জিজ্ঞাসা করছে না কিসের মিস্টি, কার মিস্টি, কেন মিস্টি?

প্রথমজন ভয়ানক ব্যবহার করল।

প্যাকেটের মধ্যে তার ভোটকা ভোটকা দুইটা আঙ্গুল ঢোকাল। আঙ্গুল দুটোকে সাঁড়াশির মতো করে আস্ত একটা মিস্টি তুলে নিল কপ করে। এরপর গপ করে মুখে ঢুকিয়ে ফেলল । চোখ বন্ধ করে অদ্ভুত একটা ভান করল। কিছুই নয় এমন ভাব। কিছু না বলে আমি পরের রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছি। অমনি কপ করে আমার সার্টের কলারটা ধরে ফেলল। মেঘস্বরে গমগম করে বলল,

‘কই যাস? আরেকটা দে। একটা খেয়ে মুখে চুলকানী হয়ে গেল। ছোট্ট মিস্টি তাই দাঁতের ফাকেই আটকে আছে। গলায় তো যেতেই পারে নি। মিস্টির স্বাদও পুরো পেলাম না। আরেকটা দে। দুইটা খেয়ে স্বাদটা কনফার্ম করি।’

আমি প্যাকেটটা এগিয়ে আরেকটা মিস্টি দিলাম। আবার অদ্ভুত ভাবে খেয়ে বলল,

‘চক্র পুরন করতে হবে। দানে দানে তিন দান। দুইটা দিয়েছিস আরেকটা দে।’

ভয়ে ভয়ে তিন নম্বর মিস্টিটা দিলাম।

আমি নিরীহ গোবেচারা ছেলে। বোকাসোকা মানুষ। সবাই বলে মিনমিনে পুলা, খারাপ পুলা।

চেহারায় একটা নিরীহ ভাব নিয়ে পরের রুমে গেলাম।

মাস্থান টাইপের ভাইটা মিষ্টি খেয়ে বলল,

‘কিসের মিস্টি?’

‘আজ্ঞে, ময়দার।’

‘মস্করা করস আমার লগে? ময়দার মানে কি?’

‘ময়দার মানে ময়দার। সাথে চিনিও আছে। ময়দা মন্থন করে ছানার পানিতে ছেড়ে দিতে হবে। এরপর চুলাতে লাকড়ী দিয়ে আগুন জ্বালাতে হবে। আপনি শহরে থাকলে লাকড়ী নাও পেতে পারেন। এক্ষেত্রে গ্যাসের চুলা ছাড়া উপায় নেই......।’

‘চুপ বেটা। আর এক ইঞ্চি কথাও হবে না। কল্লা ফেলে দিব। জ্ঞান দিতে আসস আমারে?’

আমি ভয় পেয়ে গেলাম। মিনমিন করে বললাম,

‘আপনি অনেক জ্ঞানী মানুষ। আপনারে জ্ঞান দেবার সাহস আমার ধড়ে নেই।’

‘চুপ।কথা বেশী কস? আমি আগে থেকে জানি আমি মহাজ্ঞানী। নতুন করে জানিয়ে আমাকে ভাব মারস? মেডিকেলে আইছস কে? রাস্তাঘাটে যা। সক্রেটিস হয়ে সবারে জ্ঞান দে। কবিরাজ হ। মানুষরে গাছ-গাছড়ার বয়ান দে। মেলা কামাবি। মানুষ যাবে আর তুই চিল্লাবি

আসেন বোন, আসেন ভাই,

আমি সবার আলকেস ভাই।

ভাই ভাই আলকেস ভাই

বাবার ভাই, মায়ের ভাই।



তিল তিষি তালমাখনা

খায় জোয়ানা হয় মর্দনা।

খেয়ে রাজায় বিয়া করে,

পঞ্চাসটা করে নিকা করে।।



যা ভাগ। মাস্টারী করার জন্য তোর মিস্টি বাজেয়াপ্ত করা হল।



মিস্টি প্যাকেট হারিয়ে মনক্ষুন্ন।

রুমে এসে বসে আছি। মেজাজ সীমা হারিয়ে ফেলছে। রাগে মেয়েরা হাড়ি-পাতিল ভাঙ্গে। আমি কি ভাঙ্গব কিছু বুঝতে পারলাম না। হাতের পুরনো নষ্ট নোকিয়া-১২৮০ মোবাইলটা ধপ করে আছাড় মারলাম। আশ্চর্য!

মোবাইলটা ভালো হয়ে গেল। দীর্ঘ একমাস থেকে মোবাইলটা নষ্ট। আমি শুনতে পাই অন্যজন শুনতে পায় না। কথার বদলে নাই ধুপধাপ আওয়াজ শোনা যায়। অনেকে ভেবেছে আমি বিপদে পড়ে তাদের কাছে ফোন দিয়েছি। চুরির অপরাধে আমাকে ধুপধাপ মারা হচ্ছে তাই সাহায্যের জন্য অন্যদের ফোন দেই। পড়ে বুঝতে পারলাম সাউন্ড রিসিভারটা নষ্ট ছিল। রাগের মাথায় আছাড় খেয়ে ভালো হয়ে গেল। আমি পরম আনন্দে মোবাইলটা টিপতে লাগলাম। পুরাতন টিভি এডটা মনে পড়ে গেল। ‘দাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয় তাহলে দাগই ভালো’। আমি বললাম, রাগ থেকে যদি ভালো কিছু হয় তাহলে রাগই ভালো।

দরজায় তাকিয়ে দেখি রুমমেট ডাক্তার জহির ভাই দাঁড়িয়ে আছে।

ইলেক্ট্রিক খাম্বার মতো স্থির। মোবাইল ভালো হয়ে যাওয়ার চোটে ভাইকে চিনতে পারলাম না। এক বছরের পুরাতন রুমমেটকে বললাম,

‘আপনি কে ভাই? আমার কাছে কি চান? আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?’

জহির ভাই বলল,

‘মিস্টির টোকলা খানা কই?

‘টোকলাখানা কেড়ে নিছে।’

‘কেড়ে নিছে মানে?’

‘কেড়ে নিছে মানে জোর পুর্বক অন্য লোকে কুক্ষিগত করেছে। ছিনতাইকরা হয়েছে। সাধারন ছিনতাইকারীদে চাইতে এই ছিনতাইকারী ভিন্ন ধরণের। আমার মেধায় মুগ্ধ হয়েছে। অতঃপর কবিরাজ হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমার নাকি কবিরাজ হওয়ার প্রচুর মেধা আছে। সেই মেধা এম,বি,বি,এস পড়ে নষ্ট করতে পারি না। তাই মেডিকেল ছেড়ে দেওয়া যায় কি না ভাবছি। সিদ্ধান্ত নিয়েছি ছেড়ে দিব। মেডিকেল ছাড়লে যদি ভালো কবিরাজ হওয়া যায় তাহলে কবিরাজ হওয়ায় ভালো।’

‘কেন মিস্টি খাওয়ালি?

আমি মুখে লজ্জা-লজ্জা ভাব নিলাম। নত মুখে হেসেহেসে বললাম,

‘ গতকাল থেকে বউ নাকি বমি করতেছে। সাথে মাথা ঘোরা আর পেট ব্যাথা। সংবাদ শুনে আমি ভয়ানক খুশি। বউয়ের পেটে আমার জুনিয়র আসছে। মজায় ডূবে আছে। আকন্ঠ নিমিজ্জিত। শুধু নাকটা বের করে আছি। শ্বাস নিতে হবে না? শ্বাস না নইলে তো মরে যাওয়ার সমুহ সম্ভাবনা। জুনিয়র রাজীবকে না দেখেই যদি মরে যাই তাহলে তো অকাল মৃত্যু হবে। অকাল মৃত্যু কথাটা বাক্য সংকোচন করে করা হয়েছে। সম্প্রসারত বাক্য হলো। কাল পুর্ন না হয়ে যে মৃত্যু। এখানে কাল বলতে আমি জুনিয়র রাজীবকে বুঝিয়েছি...’

রুমমেট আরেকবার গম্ভীর হয়ে বলল,

‘খুশী হওয়ার কিছু নাই। পেটে ব্যাথা বমিবমি ভাব গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষন। তোর বয়ের পেটে বাচ্চা নাই, আলসার হইছে। যা গিয়া ডাক্তার দেখা।’

‘কি কন ভাই? ডাক্তার হয়েছেন বলে এমন সুখের একটা বিষয়কে আপনি হীন করে দেখতে পারেন না। বুঝছি আপনি হিংসায় জ্বলে পুড়ে খান খান হয়ে যাচ্ছেন। খানখান শব্দটি বুঝেছেন তো? এটাকে ভাবার্থে নেওয়া হয়েছে। বাংলা ব্যাকরণে খানখান বলতে বোঝায়...”

সিনিয়র রুমমেট মেঘস্বরে চিৎকার করে বলল,

‘বাকী মিস্টি কই?’

আমিও মেঘস্বরে জবাব দিলাম,

‘মিস্টি নাই। মোবাইল আছে। সাউন্ড রিসিভার এই মাত্র ভালো হয়ে গেছে। এটা নিতে পারেন। না নিলে ভাগেন।’

‘আমার সাথে ফাজলামী মারিস? মিস্টি কই পাইলি ক তো?’

‘কোথায় আর পাব? স্বপ্নসুত্রে। জিন্দাবাবা ফরিদপুরী আমার স্ত্রী-সেবায় মুগ্ধ হয়ে স্বপ্নে পাঠিয়েছে। সেই মিস্টি হোস্টেলের রুমে রুমে বিতরন করতে বলেছে। বিলি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছি। মোটকু রাসেল সব কেড়ে নিছে।’

সিনিয়র ভাই গম্ভীর স্বরে বলল,

‘যা মিস্টি ফেরত আন। নয়তো কিনা আন।’

‘স্বপ্নের জিনিস ফেরত আনতে নেই। হারানো জিনিসের মায়াও রাখতে নেই । বাদ দেন ভাই মিস্টির কথা। দশটা টাকা নেন। কাওছার হোটেল থেকে একটা সাদা মিস্টি খেয়ে আসেন।’

‘হারামী, আমারে কস মিস্টি কিনে খাইতে? ইন্টার্নীর প্রথম মাসের বেতন দিয়া মিস্টি আনছি। ভাবছিলাম জুনিয়রদের খাওয়াব। যারা ফার্স্ট প্রফ পরীক্ষা দিচ্ছে তাদের খাওয়াব। তুই গিয়া ভাব মেরে ধরা দিয়া আইলি? যা মিস্টি আন। ছোট ছোট পোলাদের কাইলকা পরীক্ষা। মাথায় গ্লুকোজ নিয়া পড়ব সেই উপায় রাখলি না। যা এখনি। দশ মিনিটের মাথায় মিস্টি আইনা পরীক্ষার্থেদের রুমে রুমে গিয়া খাওয়াবি।’

আমি রুম থেকে বের হলাম।

আমার কাছে একটা টাকাও নেই। অর্থহীন দেড় মাস হয়ে গেছে। কেমনে কাটছে দিন জানি না। একমাত্র সম্বল নষ্ট মোবাইল ফোনটা। পাশের রুমের এক ভাইয়ের কাছে গেলাম। খুব গোপনে তার কাছে বিক্রি করলাম। মুল্য ছয়শ টাকা। দুই কেজী মিটির টাকা।

মিস্টি নিয়ে রুমে বসে আছি। লজ্জায় কারো রুমে যেতে পারছি না। লজ্জা কোথা থেকে আসছে জানি না। শুভকামনা আর সমবেদনা দিতে আমি লজ্জা পাই। মুখের কথা আটকে যায়। শুভকামনা জানানোর ভয়ে মাথার উপর বালিশ চেপে ঘুমিয়ে পড়লাম। সবাই শক্ত মাথা নরম বালিশে রেখে ঘুমায়। আমি ঘুমায় উল্টো ভাবে। শক্ত মাথার উপর নরম বালিশ রেখে নাক-মুখ চেপে।

শুয়ে শুয়ে ভাবতে শুরু করলাম নিজের প্রথম প্রফ পরীক্ষার কথা। লিখিত পরীক্ষার পড়া না পড়ে আমি শুরু করলাম বিদেশী অনুবাদিত উপন্যাস পড়া। এঞ্জেল এন্ড ডেমনস, দি দ্যা ভিঞ্চি কোড, রিভার গড আর ডিসেপশন পয়েন্ট নামক মোটা মোটা মহাগ্রন্থগুলোতে মেতে থাকলাম। রাত বারোটার পর রাস্তার পাশের ক্যান্টিনে চা খাওয়া আর ঢাকা বিরানী হাউজে রাতের খাবার ছাড়া কিছু ভালো লাগত না। এমনিতেই আমার বন্ধু কম। একা একা হাসি-কান্না আর নাচ-গানে মেতে থাকলাম। সৃষ্টিকর্তার বিশেষ কৃপায় মোটামোটি ভালো নাম্বার পেয়েই পাশ করলাম।

মেডিকেলের ফাইনাল পরীক্ষাগুলো খুবই সহজ। বিশাল সিলেবাস কাভার করা আর টেনশন নেওয়ায় মুশকিল বিষয়।

প্রফের সময় আশ্চর্যভাবে আমার টেনশন হাওয়া হয়ে গেল। পুরো মাথা টেনশন খালি। অদ্ভুত একটা অনুভূতি। প্রচন্ড খারাপ লাগতে শুরু করল। কিছু ভালো লাগে না। টেনশন ছাড়া এতোবড় পরীক্ষা হতেই পারে না। টেনশন বানাতেই হবে। যেকোনভাবে বানাতে হবে। টেনশন আর খুজে পাচ্ছি না। শুরু হল হারানো টেনশন বানানোর জন্য টেনশন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:২৮

আমিভূত বলেছেন: অন্য রকম পোস্ট !!

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ রাত ১২:২১

রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: ভূতের মত? :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.