নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

থমথমে রাত,- আমার পাশে বসল অতিথি-- বললে,-আমি অতীত খুধা,তোমার অতীত স্মৃতি!

সময়ের সমুদ্রের পার--- কালকের ভোর আর আজকের এই অন্ধকার

রাজীব হোসাইন সরকার

বাইরে হিমের হাওয়া হেমন্তের রাত; দরজায় জানালায় অবিরাম রাতের আঘাত।।

রাজীব হোসাইন সরকার › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিমু-ফিলিয়া-২: জমিদার পুত্র অমিত ও শেয়ালরাজ

০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৩৯

ভুমিকম্প হচ্ছে। এক দুই নয়। একেবারে সপ্তম মাত্রার। পুরো পৃথিবী দুলছে। আমিও দুলছি তার সাথে। নিয়ন্ত্রন রাখতে পারছি না। পড়ে যাচ্ছি। পৃথিবী থেকে আরও অনেক নিচে। এমন তো হবার কথা না।আমি থাকি তিনতলায়। সর্বোচ্চ তিনতলার গভীরে পড়তে পারি।

ধর্ম গ্রন্থে গভীর নরকের কথা বলা হয়েছে। মনে হচ্ছে এটার কোন একটাতে পড়ছি। হুতামাহ অথবা হাবিয়াহ। পড়ছিতো পড়ছিই। নিশ্চয়ই কোথাও গন্ডগোল আছে। নরকে পড়লে আগুন গ্রাস করার কথা আছে। এখনো পুড়ে যাইনি। শুধু আগুনের আঁচ লাগছে। অন্যকিছু কি হতে পারে? মানুষের কান্নার শব্দও কানে আসছে। মরে গেলাম নাকি?

আমি মরে গেছি। সবাই আমার পাশে বসে বিলাপ করছে। শুধু আমিই সাড়া শব্দ ছাড়া। সুখকর সুখকর একটা অনুভুতি।

ব্যাথা পেলাম। নাহ, তাহলে মরিনি। জ্যান্তই আছি। মরলে ব্যাথা পেতাম না। মরার পর মানুষের স্নায়ু কাজ করে না। আমারটা করছে।

আমি বেঁচে ওঠার প্রানপণ চেষ্টা করছি। আমার চারপার্শ্বে কি আছে, দেখার চেষ্টা করছি। ভুমিকম্প থেমে গেছে। কিন্তু মানুষের কান্নার শব্দটা মিলিয়ে গেলনা কেন? তাহলে কি সত্যিই কেউ?

না, ওটা শেয়ালের শব্দ। হোস্টেলের মাঠের শেয়ালগুলো ডাকছে। প্রচণ্ড শীতের মাঝে কষ্ট পাচ্ছে। তাদের নিজেদের মাঝে কথাও হতে পারে। মানুষ দুই কোটি আলোকবর্ষ দূরে পৃথিবীর মতো গ্রহের সন্ধান পায় সকাল বিকাল। বাড়ীর পার্শ্বের ধানখেতের শেয়ালরা সারাদিন কি বলছে সেটা জানার ইচ্ছা কারো নেই। কিন্তু আমার আছে। তাদের মাঝে কি কথা হতে পারে?

শেয়াল তার স্ত্রী শেয়ালীকে বলছে,

-তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে গেল কেন, ক দেখিনি?

-আজ্ঞে, মাফ করবেন,মহারাজ। আপনি শেয়াল কুলের রাজা। আপনিই এ বিষয়ে অধিক জ্ঞাত।

-তা তুমি মিথ্যা বলনি, বউ। ঘটনাটা কি জানো? না থাক। তুমিতো আর নিউক্লিয়ার এন্ড থার্মোডায়ানমিক্স পড়নি। পড়লে বোঝাতে পারতাম।

শেয়ালী এবার বলবে,

-আজ্ঞে মহারাজ, আপনার জ্ঞানের সীমা-পরিসীমা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম।

এবার শেয়াল মহাশয় খুশিতে গদগদ হয়ে ডেকে উঠবে,

-কাঁ হুঁয়া।

শেয়াল বিষয়ে আর আকর্ষন খুজে পাচ্ছিনা। ভুমিকম্পের কারন অনুসন্ধান করতে হবে।

আমার মোবাইল ফোনটার আলো জ্বলছে। কেউ ফোন দিয়েছিল। তিনটা মিসকল। ফোন দিয়েছিল আমার ক্লাসের সহপাঠী অমিত। ভালো নাম অমিত কৃষ্ণ সরকার। ওরা নাকি কোন এক সময় রাজশাহী পুঠিয়ার জমিদার ছিল। পূঠিয়ার ধংসস্তুপ রাজবাড়ীর মার্বেল পাথরের ফলকে এখনো তার দাদার নাম খোদাই করে লেখা আছে।

জমিদার শ্রী মহীশূর চন্দ্র সরকার, বর্তমান কালঃ ১৩১৮-১৩৮৮ বঙ্গাব্দ।

আমি স্বচক্ষে দেখেছি। কিন্তু এখন সেই রাম নেই, অযোদ্ধাও নেই। এখন আছে শুধু অমিত কৃষ্ণ সরকার।

অমিতকে ফোন দিলাম। গান বাজছে।

“পাড়ায় ধুকলে ঠ্যাং খোঁড়া করে দিবে।

বলেছে পাড়ার দাদারা,

অন্যপাড়া দিয়ে যাচ্ছি তাই”

খট করে অমিত ফোন তুলল। গানের শেষকথা গুলো জানা হলো না। আজকাল মার্ডার ছাড়া অন্য কিছু মানায় না। ভূড়িতে পোচ মারা, ব্লেড-লাঠি দিয়ে মাস্থানী করা এখন পেশাটার জন্য মান হানিকর হয়ে দাড়িয়েছে। কেন মার্ডার না করে ঠ্যাং খোড়া করে দিতে চাচ্ছে? বিষয়টা অদ্ভুত ঠেকছে। না জানার আফসোস থেকে গেল। অন্যকোন সময় জেনে নিতে হবে।

অমিত বলল, “কিরে মরছিলি নাকি?”

-হুম। নরক থেকে ঘুরে আসলাম। অল্পের জন্য পুড়িনি। আঁচের উপর দিয়েই পার পেয়ে গেলাম।

-ধুর বেটা। কি আবোল তাবোল বকিস? মেরে হাড়হাড্ডি গুড়া গুড়া করে দিব।

গলার স্বরে স্পষ্ট পুঠিয়ার জমিদারের টান। কি অমায়িক ভাষায় বলল, “হাড়হাড্ডি গুড়াগূড়া করে দিবে”। শুনে আমি মুগ্ধ। বললাম,

-যাক! স্বাগত সুরটা তাহলে মানিয়েছে। তুই হাড়হাড্ডি গুড়াগুড়া করে দিবি আর ওরা তোর ঠ্যাং খোড়া করে দিবে। লোহার ওজনে লবণ,সমান সমান ওজন।

-স্বাগত সুর মানে?

-আজ্ঞে, ওয়েলকাম টিউন। ফোন দিয়েছিলি কেন?

-মনে নেই? কাল যে আমার বুকের এক্স-রে টা করলাম,ওটার রিপোর্টটা আনতে হবে। বের হ। ১মিনিট সময় দিলাম।

“১ মিনিট সময় দিলাম” কথাটা সে অনেক জোর দিয়ে বলেছে। কাজ আদায় করতে এর চাইতে ভালো ডায়ালগ আর হয়না। এই না হলে পুঠিয়ার জমিদার।

এখন আমরা হাসপাতালের রেডিওলজী বিভাগের সামনে অপেক্ষা করছি। অপেক্ষা না বলে লাইনে দাঁড়িয়ে আছি কথাটা বেশী মানানসই। সামনে বিরাট লাইন। একেবারে জনসমুদ্র।

হাসপাতালের অদ্ভুত গন্ধ আর মানুষের চিৎকার এতো মায়াময় হয়, প্রথম আবিষ্কার করলাম। এমন জনসমুদ্রের মাঝেই কি কবি বরিস পাস্টেরনাক বলেছিলেন,

“মানুষের সমুদ্রে পেয়েছি এক

মায়াময় ছন্দ-

আমার সহধর্মিনী...

মানুষের দিকে তাকিয়ে আছি। সবাই অসহায় অসহায় ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পৃথিবীর দুই জায়গায় মানুষ বড্ড অসহায়। কোর্ট এবং হাসপাতাল। দালাল আর দালাল। এক ভদ্রলোক আমাদের দিকে এগিয়ে আসলেন। বললেন,

-এইযে দাদা, আপনারা কি এই মেডিকেলের ছাত্র? আমি উত্তর করলাম,

-আজ্ঞে জনাব। কি জানতে চান বলুন?

-দেখি, আপনাদের পাছা দেখি। সারাদিন চেয়ারে বসে পড়তে পড়তে আপনাদের নাকি পাছার মাংস ক্ষয় হয়ে যায়?

অমিত তো রাগে পুরো হতভম্ভ। রাগে মাথার চুল ছিড়বে ছিড়বে অবস্থা আর-কী। বোঝা যাচ্ছেনা, পুঠিয়ার জমিদার এবার কি জবাব দেয়। আমি চেষ্টা করেও রাগতে পারলাম না। সব রাগের মাঝেই অসম্ভব ভালো লাগার কিছু বিষয় থাকে। এই জায়গায় ভালো লাগার কি থাকতে পারে,এখনো বুঝতে পারছিনা।

ছোটবেলায় আমিও প্রচন্ড রাগী ছিলাম। নানার বাসায় বেড়াতে গিয়ে দেখি,এক বিখ্যাত পীর এসেছেন। আমার মা আমার হাতে ১০ টাকার একটা নোট ধরিয়ে দিয়ে তার কাছে পাঠালেন। পীরসাহেব আমার মাথায় মাথায় হাত বুলিয়ে দিবেন। মায়ের দৃঢ় বিশ্বাস তাতে আমার রাগ গলে পানি হবে। রাগকে পানি করতে আমিও পীর সাহেবের হাতধরে সালাম করলাম। টাকাও হাত বদলি করে দিলাম। এবার দূরে গিয়ে তার প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। দেখলাম, পাংশু মুখে তিনি এদিক-ওদিক তাকাচ্ছেন আর ফোৎ ফোৎ করে অদ্ভুত আর বিকৃত কিছু শব্দ করছেন। কারন টাকাটা আমি নিজের কাছে রেখে দিয়েছি। একটা সাদা কাগজে কিছু লিখে তার হাতের মাঝে ঢুকিয়ে দিয়েছি। তাতে লেখা ছিল,

“যে লোক মাথায় হাত দিলে মানুষের রাগ পানি হয়ে যায়, সে নিশ্চয়ই টাকা আর কাগজের পার্থক্য ধরতে পারে”।

ভীড় শেষ। আমাদের সময় আসল। অমিত কাউন্টারের মামাকে এক্স-রে টা দিতে বলল। মামা যেন কিছু বোঝে নি এমন ভাব করতে লাগল।অমিত আবার রাগ হয়ে গেছে। এবার ভয়ঙ্কর কিছু হতে পারে। আমরা পুঠিয়ার জমিদারের লোক। যেকোন মুহুর্তে পাইক পেয়াদা এসে এই গর্ধব লোকটাকে ধরে নিয়ে যেতে পারে। এমন কিছু ঘটল না। অমিত গলায় ঝাঁঝ নিয়ে বলল,

-আমরা এই মেডিকেলের স্টুডেন্ট। তাড়াতাড়ি দেন। নইলে খবর আছে।

মামা কথাটা গায়ে মাখল না। তার বদলে নাকের লোমগুলো টেনে টেনে ছিড়তে লাগল। ছেড়া লোমগুলো যে আমাদের চাইতেও গুরুত্বপুর্ন হতে পারে সেটাও বুঝিয়ে দিল। আমাদের অবাক করে দিয়ে তা গুনতেও লাগলেন। কি অদ্ভুত কান্ড।

একেকটা মানুষ একেকটা বিচিত্র চরিত্র নিয়ে জন্মায়। তারা নিজেরাও বুঝতে পারে না।

মানুষটাকে আমার ভালোও লেগে গেল। অস্বাভাবিক নয়, স্বাভাবিক ভাবেই।

অমিত প্রচন্ড রাগ হয়ে গেছে। রাগ হলে ও পায়ের আঙ্গুলের উপর দাড়ায়। অস্থির ভাবে ঘোরাঘুরি করে। আমারদেখা আরেকজন বিচিত্র মানুষ। আমাকে কিছু না বলেই ধুপধাপ করে হাটা দিল। বলল হাসপাতালের পরিচালককে বলে দিয়ে মামার বারোটা বাজিয়ে দিবে। আমি জানি ও আর আসবে না। রোগে মরে গেলেও এই এক্স-রে টা নিবে না।

আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখলাম। কি সুন্দর মোহনীয় ভঙ্গীতে হেটে গেল পূঠিয়ার শেষ জমিদার। একুশ শতকে জমিদারের হেটে যাওয়ার দৃশ্য সবার ভাগ্যে জোটেনা। আমার জুটেছে। আমি ভাগ্যবান।

অমিত চলে যাবার সাথে সাথে মনে পড়ে গেল, ঠ্যাং খোড়া করে দেবার কারনটা জানা হইনি। কিছু কিছু কথা না জানলেও জীবন চলে যায়। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে এই কথাটা আমাকে জানতে হবে। না জানলে আমার জীবন চলবে না।( To Be Continued)

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৫৪

ইমোশন বলেছেন: সুন্দর হইছে । :-B :-B :-B

০৩ রা জুলাই, ২০১৩ রাত ১১:২৭

রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: আপনার ইমোশনে আঘাত করে ভালো লাগাতে পেরেছি বলে আমারও ভালো লাগছে :P

২| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:০৪

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: ভালা হইছে

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:০৭

রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই :)

৩| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৫১

মাক্স বলেছেন: আগের পর্বের সাথে মিল পাই নাই, তবে ভালো হইসে :) :)

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:১৯

রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: একটু পরেই মিল চলে আসবে :)

৪| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৩:৫৩

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
প্রথম পর্বের লিঙ্ক এখানে দিয়ে দিলে ভাল হয়।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:২০

রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: তবে তাই হোক কান্ডারী :)

৫| ০৫ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ৯:৪৬

ল্যাটিচুড বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদের মত সাবলিল লিখা, পড়ে ভালো লাগলো........

আপনার ব্লগ অনুসরণে রাখলাম, সময় পেলে পড়ে দেখবো নিশ্চয়তা দিচ্ছি।

ভালো থাকুন। ভালো লিখুন সব সময়।

০৫ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৫১

রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: শুনে ভালো লাগল। :)

অসম্ভব ভালো লাগল। :)

অবশ্যই আসবেন। অপেক্ষায় রইলাম। :)

৬| ১৩ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৩

মাহী ফ্লোরা বলেছেন: ওহহো শুধু চলবে বলে মুলা ঝুলানো না? না চললে আপনার ঠ্যাঙ গুড়া করে দেব। X(( X((

১৩ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ৯:১৪

রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: আমার রুমমেট অর্থোপেডিক্সে এফ,সি,পি,এস। ঠ্যাঙ ভাইঙ্গা লাভ নাই :প :)

৭| ১৫ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:০৩

মাহী ফ্লোরা বলেছেন: সেকি! তাহলে কিসের ডাক্তার আপনার আশেপাশে নেই বলুন তো! :#)

১৫ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:১৮

রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: সাইকিয়াট্রিক নাই :)

৮| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:২৯

অশান্ত পৃথিবী বলেছেন: আমি খুব অলস । কি বোর্ডে হাত দিতেই ইচ্ছা করে না । কিন্তু আপনার লেখা পড়ে আর থাকতে পারলাম না। আপনার লেখার হাত ভালো । পড়তে অনেক ভালো লাগল । তাই ভালোলাগাটা জানিয়ে গেলাম যাতে আপনি আরো অনেক লেখা উপহার দেন । আপনার সাথে আছি ।

৯| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৩১

অশান্ত পৃথিবী বলেছেন: আপনার সবগুলো লেখা পড়তে শুরু করলাম । অনেক মিস করে গেছি, আর মিস হবে না । অনুসরিত

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:৪৭

রাজীব হোসাইন সরকার বলেছেন: অশান্ত পৃথিবীকে আরেকটু অশান্ত করলেন কিন্তু :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.