একটি ভূল... অতঃপর

১২ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৪২

টেবিলের উপর একটা ছোট্ট চিরকুট। সেখানে লেখা,

“আব্বু, আম্মু, তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও। তোমাদের সপ্ন আমি পুরণ করতে পারলাম না।’’

আমি এখন সিলিং ফ্যান এর সাথে ঝুলে আছি। গলায় পেচানো শক্ত দড়িটার চাপে আমার স্পাইনাল করড ছিড়ে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজা ভেঙ্গে আমার রুমে সবাই প্রবেশ করবে। আম্মু আমাকে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে অজ্ঞান হয়ে যাবে। আব্বু কাদবে। আপু কাদবে। বন্ধুরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কাদবে। পরদিন পত্রিকায় নিউজ হবে, এইচ এস সি তে খারাপ রেজাল্ট করায় ছাত্রের আত্নহত্যা।
আমার ধারনা ছিল গলায় ফাস লেগে দম আটকে মারা যাব। কিন্ত এখন বুঝতে পারছি আসলে তা হয় না। ফাসের চাপে মেরুদন্ডের ভেতরের স্পাইনাল করডটা ছিড়ে যায়। তখন চাইলেও আর শাস নেওয়া যায় না

মারা যাওয়ার পর অনেক কিছুই বুঝতে পারছি। কে কোথায় কি করছে কি ভাবছে সব বুঝতে পারছি। যেমন বাবা এখন তার ইজিচেয়ারে বসে আছেন। তার সামনে আমার জন্য কেনা নতুন ল্যাপটপ। তিনি নিশ্চিত ছিলেন তার ছেলে জি পি এ ৫ পাবে। তাই আগে থেকেই ল্যাপটপ কিনে লুকিয়ে রেখেছিলেন। এখন ভাবছেন এই ল্যাপটপ দিয়েই আমাকে সান্তনা দেবেন। একটা পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে তো কি হয়েছে? এটাইতো জীবনের সব নয়। বাবা যখন তার ছেলের অবস্থা জানবেন তখন কি হবে জানি না। খুব কষ্ট হচ্ছে বাবার জন্য।
আজ কলেজ থেকে আসার পথে আপু ভ্যানিলা আইসক্রিম নিয়ে এল। আমার প্রিয় আইসক্রিম। কিন্ত আমিতো রুমে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিয়েছি।
আপু কি জানে তার ভাই আর পৃথিবীতে নেই?
সুমন, রাফি, সোহেল সবাই আজ মাঠে এসেছে। জি পি এ ৫ পেয়েও সবার মন খারাপ। রাফি বলল, চল, তন্ময় এর বাসায় যাই। বেচারা নিশ্চই বাসায় বসে কাদছে। খুব খারাপ লাগছে ওর জন্য। ওকে সবাই মিলে একটা সারপ্রাইজ দিলে কেমন হয়? সুমন বলল। সোহেল লাফিয়ে উঠল, খারাপ না আইডিয়াটা! ভাল করে প্ল্যান করটে হবে……
ওরা সবাই আমাকে খুশি করার জন্য কত কি ভাবছে। আর আমি ভেবেছিলাম লজ্জায় হয়ত ওদের সামনে দাড়াতেই পারব না। কি বোকার মতই না মরে গেলাম। এখন বুঝতে পারছি কি ভূলটাই না করেছি।
আর আমার মা? মা তো দুপুর থেকেই আমার জন্য ভাত মাখিয়ে বসে আছেন। আমাকে খাইয়ে তারপর খাবেন। কিন্ত আমিতো এদিকে দরজা বন্ধ করে রেখেছি। একবার এসে ডেকেও গেছেন। কিন্ত কোন সাড়া মেলে নি। তিনি যখন আমার এই অবস্থা দেখবেন তখন কি হবে সেটা ভাবতেও পারছি না।

পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। মা আবার আসছেন আমার রুমের দিকে। খুব ইচ্ছা করছে চিতকার করে বলি,"মা! আমার রুমে এসো না! প্লিজ মা! তোমার পায়ে পড়ি! আমার রুমে এসো না!"

০ টি +০/-০