![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
If u want to know anything about me, just ask।
যারা এই লেখাটি পড়ছেন আমি নিশ্চিত তারা কেউই ছবির এই লোকটাকে চেনেন না। ইনি একজন বাঙ্গালী পদার্থবিজ্ঞানী, গবেষক ও গণিতবিদ। নাম ড. জামাল নজরুল ইসলাম। সংক্ষেপে জেএন ইসলাম। তার কীর্তির কথা শুনলে বাঙ্গালী এখন শুধু আফসোস করবে।
কেম্ব্রিজে অধ্যায়নকালে ইনি ছিলেন স্টিফেন হকিংয়ের সহপাঠী, রুমমেট এবং পরবর্তীতেতে তার সহকর্মী। ১৯৬০ থেকে ১৯৮০ পর্যন্ত হকিংয়ের সমস্ত গবেষণার সঙ্গী ছিলেন জেএন ইসলাম।১৯৮৩ তে তার একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয় "দি আল্টিমেট ফেট অফ দি ইউনিভার্স" যা হকিং এর "এ ব্রিফ হিস্টরী অফ টাইম" এরও ৩ বছর আগে। জাপানি প্রফেসর মাস্যাহিতো এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, "১৯৮৩তে জেএন ইসলামের লেখা "আল্টিমেট ফেট অফ দি ইউনিভার্স" যখন প্রকাশ হয় তখন হকিং মাত্র "এ ব্রিফ হিস্টরী অফ টাইম" লেখার কথা ভাবছেন। যারা বিজ্ঞানী মহলের কেউকেটা ব্যক্তি তারা ভাল করেই জানেন "ব্রিফ হিস্টরী অফ টাইম" এর থেকে জেএন ইসলামের "আল্টিমেট ফেট অফ ইউনিভার্স" অনেক বেশি নিখুত ও তথ্যবহুল। হকিংয়ের বই বেশি বিক্রি হয়েছে কারণ তার প্রচার বেশি করা হয়েছে। যদি মানের হিসাবে বই প্রচার করা হত তবে জেএন ইসলামের বই এর থেকে একশগুণ বেশি মার্কেট পেতে পারত।"
তার তিনটি গ্রন্থ সহ দুইটি জার্নাল বর্তমানে কেম্ব্রিজ, প্রিন্সটন, হার্ভার্ড সহ পাশ্চাত্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে। অথচ তার নিজ দেশের কোন প্রতিষ্ঠানে এর নামও উচ্চারিত হয় না। আসলে আমরা জানিই না।
সুন্দর না ব্যাপারটা?
শুধু তাই নয়, বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত "কৃষ্ণবিবর" গ্রন্থটির ইংরেজি অনুবাদ স্টিফেন হকিংয়ের ব্ল্যাক হোল থিউরীর অনেক আগে থেকেই কেম্ব্রিজে পাঠ্য হিসেবে স্বীকৃত। সেটাও আমরা জানি না।
ড. জামাল নজরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোন পর্যায়ের ছিলেন তার কয়েকটা নমুনা পাওয়া যায়। আশির দশকে নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী প্রফেসর আব্দুস সালাম যখন ঢাকায় এসেছিলেন তখন এসেই তিনি খোজ নিয়েছিলেন ড. জেএন ইসলামের। তিনি অবাক হয়েছিলেন যে তাকে এদেশের বেশিরভাগ মানুষই চেনে না! অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন যখন ঢাকায় আসতেন প্রতিবারই তিনি চট্রগ্রামে জেএন ইসলামের সাথে আড্ডা দিতে যেতেন। কেম্ব্রিজে আব্দুস সালাম আর অমর্তসেন ছিলেন জামাল নজরুলের সিনিয়র। আর স্টিফেন হকিং ছিলেন তার ব্যচমেট।
জেএন ইসলাম বিদেশের লোভনীয় চাকরী আর গবেষণার অফুরন্ত সুযোগ নিতে পারতেন। কিন্ত তা করে তিনি এই দেশে ফিরে এসেছিলেন। ড. জাফর ইকবালকেও তিনি পিএইচডি শেষ করার পর দেশে ফেরার তাগিদ দিয়েছিলেন। তার স্বপ্ন ছিল দেশে বিজ্ঞানের চর্চা বাড়ুক। বিজ্ঞানের এই যুগে দেশটা আরো এগিয়ে যাক।
আর তার প্রতি আমরা কি আচরণ করলাম? ২০১৩ সালে চিকিৎসার অভাবে যখন তিনি মারা গেলেন তখন মিডিয়ার সম্পূর্ণ মনযোগ ছিল হেফাজত, গণজাগরণ মঞ্চ আর জঙ্গীবাদের দিকে। মিডিয়া তাদের সবটুকু মেধা আর শ্রম খরচ করেছিল আমাদের দৃষ্টি এই দিকে ঘুরিয়ে রাখতে। আমরা কি পারতাম না তাকে দেশের মানুষের সামনে তুলে ধরতে?
স্টিফেন হকিংয়ের মৃত্যুতে পশ্চিমের মিডিয়া শোক প্রকাশ করছে। আর আমাদের দেশীয় মিডিয়া সেই শোকের উচ্ছিষ্ট ভক্ষণ করে আমাদের চিন্তাচেতনাকে ম্যানিপুলেট করছে।
কেন? আমরা কি মেধায় পশ্চিমের থেকে পিছিয়ে ছিলাম?
জামাল নজরুল ইসলামের "আল্টিমেট ফেট অফ দি ইউনিভার্স" হকিংয়ের বইয়ের থেকেও বেশি বিখ্যাত হতে পারত। কিন্ত হয়নি। সেটা কেন হয়নি? কারণ আমরা তা প্রচার করিনি। আজ বিশ্ব স্টিফেন হকিংকে তার মেধার জন্য যতটা চেনে তার চেয়ে বেশি চেনে মিডিয়ার প্রচারণার জন্য। তাকে চেনে কারণ সে ব্রিটিশ নাগরিক, অমুসলিম, অসুস্থ্য এবং চেনে তার নিজস্ব কল্পনার জন্য। তার জাতি তাকে মুল্যায়ন করেছে, নিজ দেশের মিডিয়া তার গবেষণা প্রচার করে বিশ্বকে জানিয়েছে।
জাতি হিসেবে আমরা খুব কিউট। এদেশে কবি সাহিত্যিক সাংবাদিক থেকে শুরু করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধারা পর্যন্ত বুদ্ধিজীবী হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের লেখাচুরি আর থিসিস নকল নিয়ে বিদেশে হাসাহাসি হয়। অথচ অসংখ্য বাঙ্গালী গবেষক আর বিজ্ঞানীরা দেশ বিদেশে ছড়িয়ে আছেন তারা লাইম লাইটে আসেন না। আমরা তাদের মুল্যায়ন করি না।
যেখানে আমরা নিজেরাই নিজেদের মুল্যায়ন করি না, বিদেশীরা কেন করবে?
প্রচারণা চালালে তো হিরো আলম ও জনপ্রিয় হয়, ব্লু হোয়েল গেমও ভাইরাল হয়, প্রচারণার জোরে শাকিব খান অপু বিশ্বাস তাহসান মিথিলারাও এই জাতিকে নেশাগ্রস্ত করে রাখতে পারে। আমরা কি পারি না দেশের প্রকৃত সুর্য্যসন্তানদের সামনে তুলে ধরে ঘরে ঘরে আইনস্টাইন আর স্টিফেন হকিং তৈরী করতে???
©somewhere in net ltd.