নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

রেজা ঘটক

ছোটগল্প লিখি। গান শুনি। মুভি দেখি। ঘুরে বেড়াই। আর সময় পেলে সিলেকটিভ বই পড়ি।

রেজা ঘটক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা সবাই তখন দিয়েগো ম্যারাদোনা!

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৪৪

১৯৮৬ সাল। আমাদের এসএসসি পরীক্ষা শেষ। সারাদিন ফুটবল নিয়ে মাঠে থাকি। ফুটবল তখন ধ্যান জ্ঞান। পড়াশুনা করার চেয়ে ফুটবল তখন এত বেশি প্রিয় যে ফুটবল নিয়ে তখন নানান কিসিমের বুদ্ধি করি। আশেপাশের দশ গ্রামের মাঠে তখন হায়ারে খেলতে যাই। দীঘিরজান, বরইবুনিয়া, মাটিভাঙ্গা, খাসেরহাট, চিতলমারী, কুমারখালী, ঘোষকাঠী, শাঁখারীকাঠী, শ্রীরামপুর। মাঝে মাঝে বড়দের সাথে খেলায়ও তখন চান্স পাই।
কিন্তু মুশকিল হল আমার চেয়ে আমার মেজো ভাই এমদাদ ভালো খেলোয়াড়। এমদাদ ভাই ডিফেন্সের খেলোয়াড় আর আমি মিডফিল্ডার। এমদাদ ভাই দলে ঢুকলে আমার আর চান্স হয় না। মিডফিল্ডে আমাদের গ্রামে সবচেয়ে ভালো খেলোয়াড় বিমলদা। বিমলদা খেললেও আমার তখন সাইড লাইনে বসে থাকতে হয়।
তবে ছোটদের মধ্যে আমরা যারা ভালো খেলতাম বিশেষ করে গোলরক্ষক হিশেবে প্রকাশ, স্টপারব্যাক হিশেবে বীরেন, সুখময়, সুনীল ও লংকেশ্বর, মিডফিল্ডে দীলিপ আর আমি, উইংয়ে নিতাই আর ভজন এবং আক্রমণভাগে কাঞ্জিলাল আর সদাই। এটা ছিল আমাদের বেস্ট টিম। কিন্তু আমরা দূরের অন্য কোনো টিমের বিপক্ষে খেলতে গেলে আমরাও কিছু খেলোয়াড় হায়ার করতাম।
যেমন মধ্য বানিয়ারী থেকে গৌতম এসে আমাদের মূল স্টপারব্যাকের দায়িত্ব নিতো। নিশি এসে আমাদের গোলরক্ষকের দায়িত্ব নিতো। প্রকাশ তখন সদাই'র স্থলে আক্রমণভাগে চলে আসতো। আর নিরোদ আক্রমণভাগে কাঞ্জিলালের জায়গায় খেলতো। কখনো সুনীল মিডফিল্ডে খেললে আমি চলে যেতাম ডিবক্সের ভেতরে। মূলত মিডফিল্ড-উইং আর আক্রমণভাগ মিলিয়ে আমরা বিপক্ষ দলকে সবসময় চাপে রাখতাম।
আর আমাদের রক্ষণভাগে বীরেন ছিল সবচেয়ে মারকুটে খেলোয়াড়। বিপক্ষ দলের কোনো খেলোয়াড় একবার বীরেনের নজরে পরলে তার পক্ষে সেদিন ফুটবল খেলা কঠিন হতো। রক্ষণভাগে গৌতম ছিল সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য। নিশ্চিৎ গোলের বলও গৌতম অসম্ভব দক্ষতায় সেভ করতে পারতো কর্নার বা থ্রোইন-এর মাধ্যমে। আবার গোল ব্যবধানে আমরা এগিয়ে গেলে লংকেশ্বর আক্রমণভাগে এসে দু-একটা গোল করে যেত।
আমরা যত বড় হতে থাকলাম আমাদের দলে ভালো খেলোয়াড়ের তত সংকট শুরু হতে থাকলো। কারণ বীরেন, সুখময় আর কাঞ্জিলাল ভারতে চলে যায়। তখন বড়দের কম্বিনেশানে আমরা দল গঠন করতাম। তখন দীঘিরজান থেকে সুজিতদা আর সুধর দুই ভাই দলে ঢুকতো। সুধর গোলরক্ষক আর সুজিতদা মূল স্টপারব্যাক। দারুণ কম্বিনেশন। তখন এমদাদ ভাই খেলতো সামনের স্টপারব্যাকে। বীরেনের জায়গায় সঞ্জীত, সুখময়ের জায়গায় গৌতম, মিডফিল্ডে বিমলদার সাথে কখনো আমি কখনো দীলিপ, কখনো সুনীল, আক্রমণভাগে প্রকাশ, লংকেশ্বর, সুবোধদা, কখনো সুভাসদা খেলতে চাইলে সুভাসদা মিডফিল্ডে দায়িত্ব নিতেন।
যদি আমরা বরইবুনিয়া ফারুকদের বিপক্ষে খেলতে যেতাম তখন ওরা ছবুর-সলেমানদের নামালে আমরাও এমদাদ ভাই বিমলদা, শাহীন নানা, বিলুদাদাদের দলে নামাতাম। মাটিভাঙ্গায় মিঠুলদের বিপক্ষে খেলতে গেলেও ওরা বড়দের নামালে আমরাও সেই সুযোগ নিতাম। আর সামন্তগাতী খেলতে গেলে আমরা স্বপন-তৌহিদদের দলে ভেড়াতাম। মোদ্দাকথা বিপক্ষ দল শুধু ছোটদের নামালে আমরা নিজেরাই নামতাম। বিপক্ষ দল দু'একজন বড় খেলোয়াড় নামালে আমরাও সে সুযোগ নিতাম। কারণ খেলতে গেলে বড়রাও আমাদের সাথে যেতো।
খেলার মাঠে তখন আমরা সবাই এক একজন ম্যারাদোনা। একবার কেউ বল পায়ে পেলে সে ম্যারাদোনার মত যতক্ষণ বল পায়ে রাখতে পারে সেই চেষ্টা করতো। তখন ব্যক্তিগত দক্ষতা দেখাতে আমরা সবাই কমবেশি চেষ্টা করতাম। এই চেষ্টায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিল বিমলদা, মিলন, মিঠুল, সুনীল আর আমি। তবে বাইরের মাঠে মিঠুলকে নিয়ে খেলতে গেলে আমার আর মিঠুলের মধ্যে দারুণ কম্বিনেশন হতো।
কর্নার কিক করায় মিঠুল ছিল ওস্তাদ। বিমলদাও কর্নার কিক ভালো করতো। তবে পেনাল্টি কিক বলে কিক নিতো বিমলদা বা সবুর বা এমদাদ ভাই। সাধারণত ডিফেন্সের খেলোয়াড়দের কিকে বেশি রেঞ্জ ছিল। পেনাল্টি কিক পেলে তাদের বেশি সুযোগ দেওয়া হতো। কিন্তু বিমলদার কিকে ছিল আলাদা মাত্রার রেঞ্জ।
ছোটবেলার ফুটবল খেলার সেই দিনগুলোর কথা দিয়েগো মারা যাবার পর থেকে আবারো স্ন্যাপশটের মত বারবার মনে পড়ছে। আহা ফুটবল খেলার সেই দিনগুলো কত আনন্দের ছিল। আবার যদি সেই তারুণ্যে ফিরে যেতে পারতাম! মিঠুল চল একদিন আবার ফুটবল খেলার আয়োজন করি। আগের চেয়ে দম ফুরিয়ে গেলেও খেলা তো আর ভুলিনি!

২৬ নভেম্বর ২০২০

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১১:৫৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


আবার খেলেন।
এখন বয়স কত?

২| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: বহু পুরোনো ঘন্টা। আমি অবাক হচ্ছি এখনও ভুলে যান নি!!!

৩| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৫:৫৯

সাহাদাত উদরাজী বলেছেন: সেই সময়ে ক্রিকেটেও এমন একটা ক্রেজ ছিল।

৪| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:৩৫

ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: সময়কালটা তো আর্জেন্টিনা আর ম্যরাডোনার । কার সাপোর্টার আপনি ?


আমাদের দেশের ফুটবলও জনপ্রিয় ছিল সে সময়, একটা সুযোগ নেয়া উচিৎ ছিল আপনার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.