![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আত্নকেন্দ্রীক মানুষের মিছিলে খোলামনে থাকতে চাওয়া যদি পাপ হয় তাহলে আমি খুব বড় ধরনের পাপী। আশেপাশের নোংরা, হিংসা, ঘৃণার জগতের কোলাহলে ক্লান্ত হয়ে অবচেতন মনের গভিরে নিজের অজান্তেই গড়ে তুলেছি এক কাল্পনিক জগত। অল্পসংখক প্রীয় কিছু মুখ আর চমৎকার কিছু আনুভূতি দিয়ে সাজানো জগতটি শুধুই ভাল লাগার। স্বপ্নের সেই জগতে আমি প্রায়ই দেখি ১৩/১৪ বছরের অসম্ভব দুষ্ট একটা ছেলে দৌড়ঝাপ আর লাফালাফিতে ব্যাস্ত । আমি অদ্ভুতভাবে লক্ষ করি ওটা আমি নিজেই। আমার অবচেতন মন খুব সচেতন ভাবেই আমার বর্তমান সময়কে প্রত্যাখ্যান করছে। প্রত্যেকটা মানুষেরই তার বাইরের কৃত্রিম আচরণের ভিতরে একটা বিল্ট-ইন স্বভাব থাকে যা সে খুব কাছের মানুষের সামনে মেলে ধরে, আমার মনে হয় ছেলেমানুষি আচরণটা আমার বিল্ট-ইন। পরিবারকেন্দ্রিক আমার জ্ঞানের হাতেখড়ি বাবার হাত ধরেই (যদিও হাতটা পিঠেও পড়েছে অনেকবার) । ব্যবসায়ী বাবার শত ব্যস্ততার মাঝেও গড়ে তোলা ছোট্ট লাইব্রেরিটা আমার চিন্তার খোড়াক জুগিয়েছে বহুবার। পৃথীবির শ্রেষ্ঠ জননী আমার মা সহ সূক্ষরসবোধসম্পন্ন পরিবারের সবার জন্য কিছু করার তৃষ্ণাটা আমাকে তাড়িয়ে বেড়ায় সব সময়। জোছনা রাতে চাঁদের স্নিগ্ধ আলোয় স্নান করে স্মৃতি রোমন্থন করা আমার প্রিয় শখ। সারা জীবন কল্পনা করে এসেছি পূর্ণিমা রাতে বিশাল দিগন্তহীন মরুভূমির মাঝে আমার বেখেয়ালি শরীরটাকে আকাশের দিকে মুখ করে বালিতে শুইয়ে দিয়েছি আর ইয়ারফোনে বাজছে প্রীয় কোন গান............ পুনর্জন্মে আমি বিশ্বাস করি না। যদি করতাম তাহলে চাইতাম জন্ম নিতে পৃথিবীর একমাত্র অসাম্প্রদায়িক দেশ বাংলাদেশে। যে দেশের মানুষেরা এখনও প্রাণ খুলে হাসতে জানে, অন্যের দু:খে কাঁদতেও জানে। আর দু বেলা দুমুঠো খেতে পেয়েই বলতে পারে ভাল আছি!!
রমিজ উদ্দিনের বয়স ৭০ পেরিয়েছে কিছুদিন আগে। অন্যান্য অবসরপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের মত তারও অখন্ড অবসর। শুধুমাত্র বিভিন্ন দিবসেই তাদের একটু কদর বাড়ে। আর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গেলেও যখন দেখেন তার প্রিয় স্বাধীনতাটাকে লুন্ঠনকারীদের অনেকেই সামনের সারিতে বসে আছে তখন নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেননা। তাই এখন আর ঐ সব অনুষ্ঠানেও যান না খুব একটা । সারাদিন বাসার ভিতরেই থাকেন সবসময়। হ্যা একদমই যে বেকার তা বলা যাবে না। তিনি একজন নামকরা আম্পায়ার । আশেপাশের যে কোন এলাকাতেই ক্রিকেট খেলা হলে উনার ডাক পড়ে সবার আগে। তরুণদের কাছে তার সম্মান অনেক বেশি। তিনিও সানন্দেই রাজি হন সবসময়। একসময় তিনিও ক্রিকেট খেলতেন। সেটা প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের কথা । তখন ছিল পাকিস্তান আমল। পূর্ব পাকিস্তানের নামকরা এক ক্লাবে বেশ ভালই খেলতেন তিনি। ঘরোয়া অনেক খেলাতেই পশ্চিম পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের ধরাসায়ীও করেছেন কখনও কখনও। শুধু তিনি কেন আরো অনেকেই ভাল খেলতেন। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় পূর্ব পাকিস্তান থেকে পাকিস্তান জাতীয় দলে কোন ক্রিকেটারই নেয়া হত সে সময়। দলে নেয়া তো দূরের কথা তাদেরকে কোন রকম মূল্যায়নই করা হত না। আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম থাকলেও খেলার কোন আয়োজনও করা হত না সে সময়। আমেরিকাতে সভ্য সমাজ শুরু হওয়ার আগে নিগ্রোদের সাথে সাদা চানড়ার লোকজন যে রকম কুকুরের মত আচরণ করত পশ্চিম পাকিস্তানিদের আচরণও তাদের সাথে ঠিক এ রকমই ছিল। শরীরে বাঙালি রক্ত প্রবাহিত হওয়া রমিজ উদ্দিন এগুলো সহ্য করতে পারতেন না একদমই। তিনি জানতে চাইতেন একই মানের খেলোয়ার হয়েও কেন তিনি খেলতে পারবেন না জাতীয় দলে? একই মানের স্টেডিয়াম থাকলেও তার মাঠে কেন খেলা হবে না কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ? একই দেশের বাসিন্দা হয়েও কেন তিনি হেবেন অচ্ছুত? তখন ৬৫ সালের কখা। পাকিস্তান জাতীয় দলের টিম গঠন করা হচ্ছে এবং বরাবরের মতই পূর্ব পাকিস্তান থেকে কাউকেই রাখা হয়নি দলে। এটা আর সহ্য করতে পারলেন না তিনি। তখনকার পাকিস্তানি এক কর্মকর্তার কাছে তিনি এর জবাব চাইলেন। ঘৃণ্য এক জবাব পেয়ে তিনি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেননি। তার মনে জমে খাকা সমস্ত ক্ষোভ একসাথে প্রকাশ করলেন ঐ পাকিস্তানী কর্মকর্তার কাছে। এবং শুধুমাত্র ঐ অপরাধেই তাকে ধরে নিয়ে দুই মাস নির্যাতন করা হয়েছিল। এতে তিনি শারিরীকভাবে যতটা না আঘাত পেয়েছিলেন তার চেয়েও বেশি আঘাত পেয়েছিলেন তার মনে। যে আঘাতই তাকে টেনে নিয়ে গিয়েছিল একাত্তরের যুদ্ধে। সে যুদ্ধ ছিল তার কাছে বাঙালিকে অবহেলা করার প্রতিশোধ নেয়ার যুদ্ধ, যে যুদ্ধ ছিল তার কাছে বাঙালির সম্মান পুনরুদ্ধারের যুদ্ধ। বাংলাদেশ স্বধীন হল আজ প্রায় চল্লিশ বছর। এই দীর্ঘ সময়টাতে পরিস্থিতি পাল্টেছে অনেক। বাংলাদেশ ক্রিকেটেরও উন্নতি হয়েছে অনেক। ইদানিং টিভি-পত্রিকায় একটা খবর দেখছেন বাংলাদেশ দল নাকি পাকিস্তান যাবে ক্রিকেট খেলার জন্য। পত্রিকায় ছবি দেখেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামাল দাড়িয়ে আছেন পাকিস্তানের এক মাঠে। তার আশেপাশে কমান্ডো বাহিনী ঘিরে রয়েছে, মাথার উপর দিয়ে সামরিক হেলিকপ্টার চক্কর দিচ্ছে নিরাপত্তার শতভাগ নিশ্চিত করার জন্য। ইদানিং নাকি বলাও হচ্ছে বাংলাদেশের খেলোয়ারদেরকে প্রেসিডেন্টের সমান নিরাপত্তাও দেয়া হবে। এই খবরগুলো পড়ে রমিজ উদ্দিন খুবই আনন্দ পান, যে আনন্দ তিনি পেয়েছিলেন একাত্তরে সেই একই আনন্দ। আশ্চর্য এক শিহরণ অনুভব করেন তিনি। তাঁর ঐ দিনটার কথা মনে হয়ে যায় দ্রুত, যেদিন পূর্ব পাকিস্তানর খেলোয়ারদের সামর্থ থাকা সত্যেও কেন দলে নেয়া হবেনা জানতে চাওয়ায় তাকে এক ঘৃণ্য জবাব দেয়া হয়েছিল। তখনই তাঁর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করে দেখ পাকিস্তানীরা দেখ যে বাঙালিদের নাম তোরা অতিরিক্ত খাতায়ও রাখতি না, যে বাঙালীদের তোরা পশুর মত ঘৃণা করতি আজ সেই বাঙালীদের বিপিএল এ খেলার জন্য তোদের দেশের ক্রিকেটাররা হা করে তাকিয়ে খাকে দলে নেবার আশায়। আর সেই বাঙালি খেলোয়ারদেরী তোরা তোদের দেশে প্রেসিডেন্টের সম্মান দিয়ে খেলতে নেওয়ার আশা প্রকাশ করেও বড় বড় চোখে তাকিয়ে থাকিস সম্মতি পাবার আশায়।
©somewhere in net ltd.