নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দু’একটা শব্দ খুঁজি/ দু’একটা কথার মালা/ মনের গভীরে যেন কোথায় বাজে সুর/ সে কোন বিষন্ন দুপুর /একলা পথ চেয়ে থাকে/ ধরা দেয়- ধরা সে দেয় না আবার -/ কেবলই আঁধারে লুকায়/ কেবলই মিলিয়ে যায় / এ জীবন তারই খোঁজে কাটে, অন্তঃহীন লুকোচুরিতে।

রুহুল গনি জ্যোতি

রুহুল গনি জ্যোতি

রুহুল গনি জ্যোতি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফেক আইডি, ছোটগল্প

০৭ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৩৪

রুহুল গনি জ্যোতি

ফেসবুকেই মেয়েটির সঙ্গে পরিচয়। সেই প্রথম ম্যাসেজ দিয়েছিল। আমিও প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই রেসপন্স করেছি। এমনিতেই আর দশটা ম্যাসেজের ক্ষেত্রে যা করি। হাই-হ্যালোর পর আর দু’একটা ডায়ালগ- এর পরে আর বিশেষ একটা আগানোই হয় না। কারণ, একটা না একটা কাজ নিয়েই তো আজকাল কম্পিউটারে বসা হয়। কাজের ফাঁকেই ফেসবুকে ঢু মারা। তার পর দু’একটা ম্যাসেজ করা বা রিপ্লাই দিতে দিতেই আবার কাজে ডুবে যাওয়া- এটাই আমার নিত্যদিনের রুটিন।

অনেকের সঙ্গেই চ্যাটিং করি। সবই হালকা কথাবার্তা। কারো সঙ্গেই ঠিক বন্ধুত্ব বলতে যা বোঝায় তেমন বেশী দূর আগানো হয় না। সেটা অবশ্য আগ্রহের অভাবে যতটা নয় তার চেয়ে বেশী সময়ের অভাবের জন্যেই ঘটে থাকে। সারাদিন অফিস আর নানা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। বাণিজ্যিক অফিসে নতুন চাকরি। এখনো কাজের চাপটা ঠিক ধাতস্থ হয়নি।

ছাত্রজীবনে পড়ালেখার ফাঁকে ফেসবুকে একটু সময় দিতে পারলেও এখন তা দিনে দিনেই কমে আসছে। কিন্তু ওর সঙ্গে কথা বলার পর থেকে কেন যেন তার ব্যতিক্রম ঘটলো। প্রথমদিন সে যখন নাছোর বান্দার মত একের পর এক আমার ব্যক্তিগত সব বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছিল তখন এক ফাঁকে আমি তার প্রোফাইল চেক করে দেখলাম একেবারেই ফাঁকা মাঠ। কোন তথ্যই নেই সেখানে। ছবিও দেয়নি ।

সারা প্রফাইল জুড়ে শুধু সুস্মিতা সুমি নামটাই জ্বলজ্বল করছে । ফলে, ধরেই নিলাম এটি কারো ভূয়া আইডি। হয়তো কোন ছেলে একটি মেয়ের নাম ধারণ করে ভুয়া আইডি খুলে বসে আছে। ফেস বুকে তো এমন ঘটনা হরহামেশাই চোখে পড়ে।

আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার প্রোফাইল ফাঁকা কেন? ছবিও নেই ইনফরমেশনও নেই। ভূয়া নাকি? ও জানালো, না, ভুয়া না। বললো, জানোই তো মেয়েদের কত ধরণের সমস্যা ফেস করে চলতে হয়। কনজারভেটিভ ফ্যামিলি। পরিবারের কেউ যদি জানতে পারে ফেসবুক একাউন্ট খুলেছি তাতেই অনেক বড় সমস্যা হবে। আর ছবি দেয়া মানে তো সাক্ষাৎ বিপদ ডেকে আনা।

কথাটা যৌক্তিকই কথা মনে হলো আমার কাছে। তাছাড়া, আইডি ভূয়া হলেই বা আমার কি আসে যায়। আমার তোর আর এখানে প্রত্যাশার কিছু নেই।

প্রথম দিনেই অনেক কথা হলো ওর সঙ্গে। ঢাকার অদূরের একটি জেলা শহরের বেশ নামি দামি সরকারি কলেজে অনার্স ফাইনাল ইয়ারে সে পড়ে বলে জানালো। ছাত্রী মোটামুটি ভাল হলেও হেলা ফেলা করে ভর্তি পরীক্ষা দেয়ায় বাংলা ছাড়া আর কোন সাবজেক্টে চান্স পায়নি।

জানালো, এখন পড়তে গিয়ে মনে হচ্ছে- তার ভাগ্য ভালই বলতে হবে, কারণ, বাংলা এখন তার কাছে সবচেয়ে প্রিয় আর মজার একটা সাবজেক্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। কথায় কথায় জানালো, জীবনে এত আনন্দ নিয়ে আর কখনো সে লেখাপড়া করেনি। এবারই সে পড়াশুনাটাকে এত বেশী এনজয় করছে। প্রতিটি পরীক্ষায়ই খুবই ভাল রেজাল্ট করছে। আগামীতে ফাস্টক্লাশ তো পাবেই ফাস্ট হওয়াটাই এখন ওর একমাত্র টার্গেট। শুনে ভালই লাগলো।

প্রথম দিনেই অনেক কথা হলো সেগুলোর প্রায় সবই ব্যক্তিগত তথ্য। যদিও ছবিসহ আমার সব ইনফরমেশনই প্রেফাইলে দেয়া আছে কিন্তু সুমি সব বিষয়ে কেমন যেন বেশ খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করছিল। এক পর্যায়ে আমি খুবই বিরক্ত হয়ে লগ অফ করে সেদিনের মত ফেসবুক ছাড়লাম।

আমার ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ওর এত আগ্রহ কেন তার কারণ খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মনে মনে ভাবছিলাম, কোথাকার কোন আপদ এসে জুটলো আবার।

তার পর অন্যান্য কাজ করতে করতে বিষয়টি ভুলেই গিয়েছিলাম অফিসের নানা ব্যস্ততায় বেশ কয়েকদিন আর ফেসবুকে ঢোকাই হয়নি। সেদিন বিকেল বেলা বাসায় ফিরে অলস সময় কাটাচ্ছিলাম হঠাৎ ফেস বুকে লগিং করলাম। ঢোকার কিছুক্ষণ মধ্যেই দেখি সুমির ম্যাসেজ। কুশল বিনিময়ের পর সহসাই আপনি থেকে তুমিমে নেমে সরাসরি প্রশ্ন আচ্ছা তুমি কি প্রেম করো?

এমন প্রশ্ন শুনে আমার প্রথমে খুব রাগ হলো পরে দুষ্টুমী করে বললাম না এখনো প্রেম করার মত কাউকে পাইনি। পেলে করবো। জবাবে সে বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বললো, ওয়াও- আল্লা, জা--নো, আমিও তাই। এখনো প্রেম করার মত তেমন কাউকে খুঁজেই পাইনি। তবে, তোমাকে না আমার খুব ভাল লেগেছে। তোমার ছবি দেখে প্রথম ভাল লেগেছিল। কথা বলার পর তো রীতিমত তোমার প্রেমেই পড়ে গেছি। এখন কী করি বলতো?

আমি বললাম, তুমি তো প্রেফাইল থেকে আমার ছবি দেখেছো, আমি তো এখনো তোমাকে দেখিনি, এমন কি ছবিও দেখিনি, কি করে বলি যে, তোমাকে আমার কেমন লেগেছে? তাছাড়া, আজ কাল ছবি দেখে কি আর সম্পর্ক হয় নাকি? সামনা সামনি দেখা-সাক্ষাত করতে হয়।

আমার কথা শুনে সুমি খুশী হয়ে বললো, বেশ, তাহলে চল আমরা দেখা করি। আমি একটু ভরকে গেলাম কেমন না কেমন মেয়ে দু’দিনের কথায় দেখা করতে গিয়ে আবার কোন বিপদে না পরি। আজকাল তো প্রায়ই এভাবে ডেকে নিয়ে ফাঁদে ফেলে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা ঘটছে।

আমি বললাম- না, আগে তোমার ছবি পাঠাও। সে বললো সামনা সামনি যাকে সহজেই দেখা যায় তার ছবি দেখে কি করবে? তার চেয়ে এস আমি তোমাকে সরাসরি দেখি তুমি আমাকে দেখ।

সুমি তখন ঢাকায়। বললো শীতের বন্ধ থাকায় ও ঢাকায় ফুপুর বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। বেশী দিন থাকবে না কারণ ছুটি প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। কাজেই দেখা করার জন্য বেশ জোরাজুরিই করছিল। কিন্তু কিছুতেই আমার মন টানছিল না। আমি বললাম আগে ছবি পাঠাও তার পর দেখা করবো। সে ই-মেইলে ছবি পাঠালো। ভারী মিষ্টি দেখতে- গায়েল রঙ ফর্সা, হালকা পাতলা গড়ন, মুখমন্ডল একটু লম্বাটে। উচ্চতা সে আগেই বলেছিল ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি - ছবি দেখেই তাই মনে হল। একেবারে প্রথম দর্শনেই প্রেমে পড়ার মত।

ছবি দেখার পর আমি মেয়েটির সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলাম। এর পর ফোনেই আমাদের কথা বার্তা চলতে লাগলো। ও বার বারই আমার সঙ্গে দেখা করার জন্য চাপ দিচ্ছিল কিন্তু আমার কেন যেন মন টানছিল না।

শেষ পর্যন্ত আমরা যেদিন দেখা করবো বলে ঠিক করলাম সেদিন কি কারণে যে বিরোধীদল হরতাল দিয়ে বসলো। সুমি আমাকে ফোন করে জানালো হরতালের দিন ও বাসা থেকে বের হতে পারবে না কারণ। কারণ, সেদিন ফুপু ওকে কিছুতেই বাসা থেকে ছাড়বে না।

আমার ও মনে হলো হরতালে ওকে নিয়ে বের হয়ে আবার কোথায় কোন বিপদে পড়তে হয়। সুমি অবশ্য খুব মন খারাপ করেছিল সেদিন আমাকে ফোন করে বেশ খানিকক্ষণ কান্নকাটিও করলো। ওর কান্নাকাটি শুনে আমারও খুব মন খারপ হলো। যদিও তখন পর্যন্ত তো আমাদের সামনা সামনি দেখাই হয়নি তবুও ওর ব্যথা আমাকে বেশ স্পর্শ করে গেল। ওকে স্বান্ত¦না দিয়ে বললাম হরতাল তো আর সারা জনম চলবে না আজ না হোক কাল তো দেখা করা যাবে। এ নিয়ে এত ভেঙে পড় তো, প্লিজ।

ওর সঙ্গে আমি নিয়মিত কথা বললেও তখনো ওকে আমার সেভাবে ওকে জানা হয়নি। কারণ, আমি ওকে তেমন কোন ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কখনো কোন প্রশ্নই করতাম না। সেটুকু ও আমাকে জানাতো এর বাইরে তেমন কিছু আমার জানার কোন আগ্রহও ছিল না। ওকে নিয়ে আমার সন্দেহের ঘোর তখনো কাটেনি।

সন্দেহের আরেকটি কারণ - ফোনে কথা বলার পরদিন থেকেই সুমি আমার কাছে নানা কৌশলে টাকা চাইতে লাগলো। প্রথম দিন বেশ আদুরে গলায় বললো, জান, তোমার সঙ্গে খুব গ্যাজাতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু ফোনে ব্যালাঞ্চ নেই। দাও না এক শ’ টাকা লোড করে! লক্ষী জান আমার।

এমন গাঢ় ভাষায় বললো যে আমার খুব মায়াই হলো। সঙ্গে সঙ্গে আমি টাকা পাঠিয়ে দিয়ে নিজেকে ধন্য করলাম।

পরদিন থেকে আর অনুরোধ নয় এবার আদেশ - ফোনে টাকা নেই একশ টাকা পাঠাও তো। এর পরন দু’একদিন পর পর আবার ফোন করে বলতো অনেক ফোন করতে হবে একটু বেশী করে টাকা দিও তো এভাবে বেশ কিছুদিন চলার পর সুমি একদিন বললো শুধু কি কথা বললে পেট ভরবে আমার হাত খরচ আছে না! প্লিজ পাঠাও না, জান! ধীরে ধীরে নানান অজুহাতে আবদারের টাকার অংকটা বেড়েই চললো। আমার তখন যে কি হয়েছে সুমি যা বলতো ঠিক তাই করতাম। আর ভাবতাম-যাক না কয়টা টাকা, তবুও ও একটু ভাল থাকুক।

ঢাকা থেকে চলে যাওয়ার পর সুমি আর দেখা করার প্রসঙ্গটি তুলতোই না। আমি কখনো বললে নানা পারিবারিক অসুবিধার কথা বলে ওর ওখানে যেতে নিষেধ করতো। বলতো তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে। তাছাড়া দু’দিন পর তো আমরা একসঙ্গেই থাকছি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না জান। মাঝে মাঝে এসব বলে কেঁদেই ফেলতো।

অথচ আমি বেশ কয়েক বার চেষ্টা করেও ওর সঙ্গে দেখা করতে কিন্ত ও বারবারই বলেছে এই তো আর তো মাত্র ক’টা দিন আমার অনার্স পরীক্ষাটা শেষ হোক তার পর আমি সোজা তোমার কাছেই চলে আসবো। আমার আর তোমাকে ছাড়া কিছুই ভাল লাগছে না। তুমি এর মধ্যে সব গুছিয়ে ফেল।

এমন মায়াবী গলায় এসব কখা বলতো যা শুনে আমার ওর জন্য খুব মায়া হতো। আহারে মেয়েটা কত দুঃখী। ছোট বেলায় মাকে হারিয়েছে। ঘরে সৎ মা। সারাক্ষণ জ্বালাতন করে । বাবা সবই চুপচাপ দেখেও কখনো কোন প্রতিবাদ করে না। এই দুঃখেই সুমির আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না। সব দিক দিয়েই কষ্ট ওর। না আছে টাকা-পয়সা না আছে স্বাধীনতা। মা ওকে কিছুতেই লেখাপড়া করতে দিতে চায় না। কোন টাকা পয়সাও দেয় না। অথচ ওদের বেশ স্বচ্ছল পরিবার। ব্যবসায়ী বাবার সংসারে ওর তো বোঝা হয়ে ওঠার কথা নয়। অথচ সে আজ পরিবারের বোঝা হয়ে উঠেছে। প্রতি মুহূর্তে সৎমা সেকথা মনে করিয়ে দিতে ভোলেন না।

ওর কষ্টের কথা শুনে আমি ওকে স্বান্ত¦না দিতাম। মনে মনে ভাবতাম যাই হোক আমার কারণে এত দুঃখী একটা মেয়ে যদি বাঁচার অর্থ খুঁজে পায় তো ক্ষতি কী।

দেখতে দেখতে বছর গড়িয়ে গেল। আমার আর্থিক সহায়তায় বেশ ভালভাভেই অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা শেষ করলো সুমি। অন্তত আমাকে সে ফোনে সেকথাই জানিয়েছিল।

পরদিন ওর ঢাকায় আসার কথা। আমাদের বহু প্রতীক্ষার অবসান হবে এবার। ও জানিয়েছিল এসেই আমাকে বিয়ে করে আমার কাছে চলে আসবে সুমি। নতুন জীবন শুরু হবে আমাদের।

যেদিন ওর ঢাকায় আসার কথা তার আগের রাতে ফোনে কথা হলো আমাদের। ও ঢাকায় এসেই আমাকে ফোন করবে, তার পর বিকেলে দেখা করবো আমরা। ফোনেই ঠিক করে নেব যে কোথায় দেখা করলে সুবিধা হয়। আ কিন্তু সারা দিনে ওর ফোন না পেয়ে সন্ধ্যায় আমি ফোন করলাম। ফোন বন্ধ। ফেসবুকে ঢুকে ম্যাসেজ দিলাম। ই-মেইল করলাম। কিন্তু কোন রেসপন্স পেলাম না। তারপর দিন- তার পরদিনও কোন উত্তর এলো না।

ক’দিন পর আমি অবাক হয়ে দেখলাম ওর নামে খোলা ফেসবুক আইডি টা ডিলিট করে দেয়া হয়েছে। ই-মেইলটাও আর যাচ্ছে না। প্রচন্ড বিস্ময়ে আমি চুড়ান্ত কারণ অনুসন্ধানের জন্য ওর কলেজে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। অফিস থেকে দু’দিনের ছুটি নিয়ে এক সকালে ওর কলেজের উদ্দেশে রওনা হলাম। ওর বেশ ক’কপি ছবিও সঙ্গে নিলাম যাতে কোন কারণে নামে না মিললেও ছবি দেখে যেন ওকে খুঁজে বের করতে পারি।

সেদিন কলেজ খোলা। ছাত্রছাত্রীদের কলকাকলীতে মুখরিত ক্যাম্পাস। ওর ডিপার্টমেন্টে গিয়ে আমি প্রথমেই একজন দারোয়ানের সঙ্গে ভাব জমিয়ে ফেলরাম। কিছু বখশীশও দিলাম জোর করে হাতে গুজে। তার পর সুযোগ বুঝে চুপেচাপে ছবিটি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, মামা, মেয়েটিকে চেনেন?

দারোয়ান মুহূর্ত দেরি না করে বললো, আরে এতো সুমি আপা চিনবো না কেন। আছে তো ডিপার্টমেন্টে। কথা বলবেন?

জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আমি কোন মতে বললাম একটু যদি ডেকে দিতেন -ততক্ষণে আমার বুক ধরফর করছে। কোন কিছু বলার শক্তিও যেন হারিয়ে ফেলছি। এখনই তার সঙ্গে আমার দেখা হবে-ভাবতেই কেমন রোমাঞ্চিত হলাম।

সুমি ডিপার্টমেন্টেই ছিল দারোয়ান গিয়ে খুঁজে নিয়ে এসে বললো, আপা, এই ভাইয়া আপনাকে খুঁজছে। ছবির চেহারার সঙ্গে ওর হুবহু মিল থাকায় আমি একপলক দেখেই চিনে ফেললাম এবং কি যে বলবো কোন ভাষাই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। মনে মনে ভাবছিলাম আজ কত দিন আর কত প্রতিক্ষার পর অবশেষে তোমার দেখা পেলাম তাহলে। দুরুদুরু বক্ষে অনেক কষ্টে সমস্ত আবেগ সম্বরণ করে বললাম, কেমন আছো সুমি?

সুমি আমার দিকে স্মৃতি রোমত্থন করার ভঙ্গিতে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো, আপনি, আপনাকে তো চিনলাম না!

আরে, আমাকে চিনলে না, আমি শফিক, তোমার ফেসবুক ফ্রেন্ড।

ও আচ্ছা এইবার বুঝতে পেরেছি আপনি তাহলে আরেকজন ধরা খাওয়া পাবলিক- ফিক করে হেসে দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে সুমি বললো।

কি বলছো তুমি আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। বুঝতে পরছেন না সেটা জানি। শুনুন, আমার কোন ফেসবুক একাউন্ট নেই। কোন এক বদমায়েশ, সে ছেলে না মেয়ে আমি জানি না কেমন করে আমার কয়েকটা ছবি পেয়েছে তাও জানি না, আমার নামে ফেস বুকে ভুয়া আইডি খুলে ছেলেদের ব্লাকমেইল করছে। এই ক’দিন আগে মাত্র আমি ব্যাপারটা টের পেলাম। আপনার মত আরেকজন এই রকম আমার খোঁজে কলেজে এসেছিলেন। আমি এই কলেজে অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি। নাচ-গান-আবৃত্তি-নাটক এসব নিয়েই সারাদিন ব্যস্ত থাকি। আমার ফেসবুক করার সময় কই?

ওর কণ্ঠ আর কথা বলার ভঙ্গিতেই ততক্ষণে আমি নিশ্চিত হয়ে গেছি যে এই সুমি সেই সুমি না। কিন্তু বিস্ময়ে আমি এতটাই হতবাক হয়ে পড়েছি যে কি করবো বুঝতেই পারছিলাম না।

সুমি বললো, আপনার কাছ থেকে আবার টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয় নি তো আবার। আগেরজনকে তো একেবার সর্বশান্ত করে ছেড়েছে। আমি পুলিশকে ইনফর্ম করেছি। আপনি একবার থানায় গিয়ে কথা বলে দেখতে পারেন তাতে যদি বদমায়েশটাকে ধরার ব্যাপারে কোন হেলপ্ হয়।

আমি ঢাকা থেকে এসেছি শুনে চা টাও খেতে বললো সুমি। ওর সঙ্গে বাসায়ও যেতে বললো। কিন্তু তখন আমি পালাতে পারলেই বাঁচি। এলোমেলো কি সব কথা বলে ওর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে হাফছেড়ে যেন বাঁচলাম।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:২০

প্রামানিক বলেছেন: ওর কণ্ঠ আর কথা বলার ভঙ্গিতেই ততক্ষণে আমি নিশ্চিত হয়ে গেছি যে এই সুমি সেই সুমি না। কিন্তু বিস্ময়ে আমি এতটাই হতবাক হয়ে পড়েছি যে কি করবো বুঝতেই পারছিলাম না।

দারুণ ভাল লাগল। ধন্যবাদ জ্যোতি ভাই। শুভেচ্ছা রইল।

২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:২০

রুহুল গনি জ্যোতি বলেছেন: ধন্যবাদ প্রামাণিক ভাই। শুভেচ্ছা আপনাকেও।

৩| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৩৯

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: কালো মেইল। পাজি মাইয়া। :P

৪| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪২

রুহুল গনি জ্যোতি বলেছেন: ধন্যবাদ দিশেহারা রাজপুত্র। ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.