![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঘুম আসে না
রুহুল গনি জ্যোতি
সারাদিন কঠোর পরিশ্রমের পর গভীর রাতে ক্লান্ত অবসন্ন দেহে বাসায় ফেরেন রীতা সামসী। যদিও তার বাসায় ফেরার তেমন একটা আগ্রহ নেই। কারণ, বাসায় তো আর তার জন্য কেউ অপেক্ষা করে বসে নেই। নতুন কোন চমকও নেই। একেবারেই একঘেয়ে সাদামাটা জীবন।
দিনের বেলায় তবুও আদালত এলাকা জুড়ে ছোটাছুটি করে আর মক্কেলদের নানা রকমের মামলার দেন দরবার নিয়ে একের পর এক ব্যস্ততায় কেটে যায়। সন্ধ্যার পরে পার্টি অফিসে একবার ঢুকতে পারলে দেশ জাতি উদ্ধারে এতটাই ব্যস্ত হয়ে উঠতে হয় যে সময়টা যেন টের পওয়ার আগেই দ্রুত মধ্য রাতের দিকে গড়িয়ে যায়।
দিনের বেলাটা যাই হোক বেশ আনন্দেই কেটে যায়। কিন্তু রাতে বাসায় ফেরার কথা মনে হলেই মনটা ভারী হয়ে আসে। কিছুতেই ফিরতে ইচ্ছে করে না। মাঝে মাঝে ভাবে ছেলেদের কত সুবিধা ঘরে ফেরার কোন তাড়া নেই। ফেরা বা না ফেরা নিয়ে কখনো কোন প্রশ্ন নেই। একটা ছেলে রাতে ঘরে না ফিরলে কিচ্ছু যায় আসে না। অথচ একটা মেয়ের ক্ষেত্রে এমনটি হলেই কত রকমের ঝামেলা। কতজনের কাছে যে জবাবদিহী করতে হয়।
প্রতিদিন কত ছেলেই পার্টি অফিসে রাত কাটিয়ে যায়। ওরও মাঝে মাঝে তেমনি অফিসেই থেকে যেতে ইচ্ছে করে। কথাটা একবার হাস্যোচ্ছ্বলে সাহস করে দফতর সম্পাদক ইমরান ভাইকে বলেওছিল। কিন্তু তিনি ব্যাপারটা হেসেই উড়িয়ে দিলেন।
কাজের মেয়ে রিমা আর ছোট বোন লিনাকে নিয়ে তার ছোট্ট সংসার। এক সময় বিয়েথা করেছিল, টেকেনি। পুরুষ মানুষটি যে কেন তাকে ছেড়ে চলে গেল এখনো সে ভেবে পায় না। পারিবারিক ভাবে ঠিক করা বিয়ে। রীতিমত আনুষ্ঠানিকতা করেই সেই বিয়েটা হয়েছিল। কত মানুষ যে দাওয়াত করেছিলেন ওর বাবা। আতœীয়-স্বজন কাউকে তিনি বাদ দেননি। অথচ সেই বিয়ে মাত্র ছয় মাসের মাথায় একেবারেই চুপচাপ ভেঙে গেল। সেই কষ্টের কথা কাউকে বলতে পারেনি। বাবা খুব কষ্ট পেয়েছেন। রীতার কাছে এ নিয়ে আর কোন কিছু জিজ্ঞেসও করেন নি। কি-ই বা বলার আছে। সবাই তো চোখের সামনে থেকেই দেখেছে।
বিয়ের পর থেকেই মাসুদ রীতার সঙ্গে কেমন যেন ছাড়াছাড়া ব্যবহার করতো কেবলই দূরে দূরে থাকতে চাইতো। রীতা তখন নতুন বউ। তাছাড়া মেয়ে হিসেবেও সে একেবারেই সহজ সরল। জীবনের জটিল সমিকরণ নিয়ে সে এর আগে কখনো ভাবেনি বুঝতেও পারে নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়লেই আর ছাত্ররাজনীতির নামে দু’চারদিন রাজপথে মিছিলে গেলেই তো আর জীবনের জটিলতা সম্পর্কে কোন ধারণা পাওয়া যায় না। এক জীবনে এত কিছু যে শিখতে হয় এত কিছু যে বুঝতে হয় সেটা সে জেনেছে আরো অনেক পরে, নানা প্রতিকূলতা আর প্রতিবন্ধকতার সঙ্গে ঠেকে ঠেকে ধাক্কা খেতে খেতে।
এর মধ্যেই বাবা-মাকে হারিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়েছে। ছোট বোনটিকে নিজের কাছে নিয়ে এসেছে। সে এখন স্কুল কলেজ শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষের ছাত্রী। আগামী বছরই হয়তো পাশ করে বেড়িয়ে যাবে। তখন ওর ঘর সংসার হলে সেটা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়বে। এখনি তো লিনা তার নিজস্ব জগতের বাইরে তেমন একটা বের হতে চায় না। সে আছে নিজেকে নিয়ে। এটা দেখে রীতার ভালই লাগে। তবু তো সে একটা কিছু নিয়ে ব্যস্ত আছে। ওকে একটুও বিরক্ত করতে আসে না। অথচ রীতাতো চায় লিনা তাকে বিরক্ত করুক, তার শান্তি ভঙ্গ করে যখন তখন ওর কাছে এটা ওটা আবদার করুক। কিন্তু সেটা সে কখনোই করে না। নিজেকে নিয়েই সারাক্ষণ যত ব্যস্ততা লিনার। আসলে পড়াশুনারও তো অনেক চাপ আজকাল অনকে পড়তে হয়। আবার নানা রকমের চাকরির ইন্টাভিউয়ের প্রস্তুতিও নিতে হয়। এসব করে ওর আসলে আর তেমন সময়ই থাকে না।
রীতা সামসী গায়ের রং কাল হলেও চেহারাটা ভারী মিষ্টি। উচ্চতাটাও গড়পড়তার চেয়ে একটু বেশীই হবে। বেশ পেটানো সুঠাম শরীর এই ৩৪ বছর বয়সে এসেও তারণ্যে টগবগে। চরাফেরায় সবসময় একটা বলিষ্ঠ ও ড্যাম কেয়ার ভাব যা তার শরীরের সঙ্গে একেবারেই মানানসই। এমন দৃঢ়চেতা নারী এই নগরীতে খুব কমই দেখা যায়। সবসময় হাসিখুশি আর কর্মব্যস্ত থাকতে দেখা যায় তাকে। আদলত পাড়া বা রাজনৈতিক অঙ্গন সবখানেই সবাই তাকে সমিহ করেই চলে। সারাক্ষণ একটার পর একটা কাজ নিয়ে ছুটছে সে। সব কাজই সে করে আনন্দের সঙ্গে। এই আনন্দই তার প্রাণশক্তি।
যখন যে কাজের দায়িত্বই এসে তার ঘাড়ে পরুক না কেন রীতার তাতে কোন পিছুটান নেই। সাহসের সঙ্গে সে যে কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তার জুড়ি মেলা ভার। যদিও কেউ কেউ আছে মেয়ে বলে তাকে একটু পিছিয়ে রাখতে চায়, একটু ছোট করে দেখতে চায়। কিন্তু রীতার তাতে কেয়ার করার মোটেও সময় নেই। কে কি বললো না বললো সে সব নিয়ে রীতার ভাববার অবসর খুব কমই পায়। তার কাছে কাজটাই আসল। সারাক্ষণ সে কাজ নিয়েই ছুটছে।
অথচ যার সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল সেই মানুষটি সেটা বুঝলো না। গায়ের রঙ কালো দেখতে সুন্দর না এটাই নাকি তার বিয়ে ভেঙে যাওয়ার কারণ সেটা সে পরে লোক মুখে শুনেছে। সে কথা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণও আছে। রীতা শুনেছে কিছুদিন পরেই তার ভেগে যাওয়া স্বামীটি একটি স্কুল পড়–য়া ফুটফুটে ফর্সা সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করেছে। এখন তারা বেশ সুখেই সংসার করছে।
বিয়ে ভাঙা নিয়ে রীতা লোকটির সঙ্গে ঝামেলা করতে পারতো, কিন্তু করে নি। এমনকি দেন মোহর বা খোরপোষের টাকার দাবিও সে তোলে নি। যে মানুসটা তাকেই চাইছে না তার সঙ্গে আর দরকষাকষি করে কি হবে। মিছেমিছি তাকে আটকে নিজের সময় নষ্ট করা কেন।
বিয়ের পর থেকেই দু’জনের মধ্যে একটা দূরত্ব তো ছিলই, কারণ বরের হাবভাব চালচলন সব কিছুতেই কেমন একটা ছাড়া ছাড়া আচরণ ছিল, যা থেকে বোঝাই যাচ্ছিল যে রীতাকে তার তেমন একটা পছন্দ হয়নি। তবে তা যে এত তাড়াতাড়ি একেবারে ছাড়াছাড়িতে গড়াবে রীতা তা কিছুতেই বুঝতে পারেনি।
আতকাই একদিন সকাল বেলা পিয়ন এসে তার হাতে একটি বাদামী খাম ধরিয়ে দিয়ে গেল। যা খুলে তো রীতা রীতিমত বিস্ময়ে হতবাক। এই খামের ভেতরেই ছিল ডিভোর্সের নোটিসটি। বিষয়টা যত না কষ্টের তার চেয়ে অনেক বেশী ছিল লজ্জার আর অপমানের। লজ্জায় সে যেন মাটিতে মিশে যাচ্ছিল। ভাগ্যিস চিঠিটা অন্য কারো হাতে পড়েনি। ছোটবোনটা তো সেই ভোরেই বেরিয়ে গেছে। কাজের মেয়েটা তখন রানাœ নিয়ে ব্যস্ত। ফলে চিঠি টা সেদিন সেই রিসিভ করেছিল। পরের নোটিশগুলোও তার হাতেই যাতে আসে পিয়নের সঙ্গে পরে যোগাযোগ করে সে বন্দোবস্ত করে রেখেছিল ।
এই কষ্ট সে একা একা নীরবে সয়ে গেছে, কারণ শেয়ার করার মত কেউ নেই। বাবা-মা ওর বিয়ের পর পরই স্থায়ীভাবে ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছেন। ছাত্রজীবনের বন্ধু-বান্ধবীরাও যার যার ধান্দায় ব্যস্ত। এখন আর কে কাকে সময় দেয়।
সে অবশ্য এসব দিয়ে এত বেশী ভাবেওনি অতি দ্রুতই জড়িয়ে গেছে নানা কাজের ব্যস্ততায় আর সেটাই তাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। আসলে দুঃখ-কষ্ট-যন্ত্রনা এসব নিয়ে এত ভাবাভাবির কিছু নেই। এসবকে যত কায়দা করে পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায় ততই মঙ্গল।
সেই ছোটবেলা থেকেই রীতা সংগ্রামী চেতনায় বিশ্বাসী। এই জীবন তো সে স্বেচ্ছায় বেছে নিয়েছে। কাজেই কাউকে তো এ নিয়ে আর দোষ দেয়ার কিছু নেই। কাউকে অবশ্য সে দোষ দেয়ও না। কারো বিরুদ্ধে রীতার কোন অভিযোগও নেই।
যে জীবনে চ্যালেঞ্জ নেই, ঝক্কি ঝামেলা নেই সেটা তো কোন জীবনই হলো না। জীবনের এইসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলাতেই তো তার আনন্দ। এই আনন্দ নিয়েই তার পথচলা।
অথচ ছোট বোন লিনাটা হয়েছে ওর একদম বিপরীত। জীবন-জগত- সংসার নিয়ে তার কোন ভাবনা নেই। দেশ-জাতি জাহান্নামে গেলে যাকগে তাতে আমার কি- এমন একটা ভাব তার একেবারে ছোটবেলা থেকে। মিটিং মিছিল রাজনীতি এসবের ধারে কাছেও নেই।
বড় বোন কি করছে কোথায় যাচ্ছে কিভাবে সংসারটা চালছে এ নিয়েও তার কোন কৌতুহল নেই। বোন তো সবই ঠিকঠাক মতই চালাচ্ছে। ব্যস এতেই সে খুশী।
লিনা বোনের মত অতটা পরিশ্রমী বা কষ্ট সহিষ্ণ হয়নি। বেশী রাত একবারেই জাগতে পারে না। ফলে অধিকাংশ রাতেই রীতার সঙ্গে ওর দেখাই হয় না। রীতার বাসায় ফেরার আগেই সে ঘুমিয়ে যায়। বিশেষ করে আজকাল প্রায়ই তো রীতার বাড়ী ফিরতে অনেক রাত হয়। এত রাতে সে জেগে থাকতেই পারে না।
গভীর রাত পর্যন্ত শুধু কাজের মেয়েটি একা জেগে বসে থাকে। ওকে তো থাকতেই হয়। কারণ এটা তো ওর চাকরি। চাকরি টিকিয়ে রাখতে হলে তাকে তো জেগে থাকতেই হবে এমন দায়িত্ব জ্ঞান লিমার নেই। ওর রাতের সময়টা কেটে যায় টিভিতে নানা রকমের সিরিয়ল দেখতে দেখতে। একার টিভির সামনে বসলে সময় যে কোন দিক দিয়ে কেটে যায় তা যেন বুঝতেই পারে না।
আসলে আজকাল টেলিভিশনের এত চ্যানেল আর এত্তসব সিরিয়াল যে সময় পার করা কোন ব্যাপার না। একটার পর একটা সিরিয়ল দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে যে সময় পর হয়ে যায় লিমা তা টেরই পায় না। ওর তো বেশ আনন্দেই কাটে। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে টিভিটা বন্ধ করতে বললেই বরং বিরক্তিতে লিমার মুখটা অন্ধকার হয়ে আসে। তখন বাধ্য হয়েই রীতাকে বলতে হয় আচ্ছা এই সিরিয়ালটা দেখার পর টিভিটা বন্ধ করে দিস।
রাতে সময় কাটানো নিয়ে রীতারই বরং সমস্যা। বাসায় ফিরলে সময় যেন আর কাটতেই চায় না। টিভির সিরিয়ালে ওর কোন আগ্রহ নেই। আগে মাঝে খবর বা টকশো দেখতো এখন একদমই ইচ্ছে করে না।
বলতে গেলে সারাদিনই তো তাকে এসব নিয়েই থাকতে হয়। শরীরটা এত ক্লান্ত থাকে যে এসব ভজর ভজর এখন আর ভাল লাগে না। প্রতিদিন একই বিষয় নিয়ে বিরক্তিকর প্যাঁচালের কোন মানেই খুঁজে পায় না সে।
মাঝে মাঝে রাতের খাবার খেতেও ইচ্ছে করে না। এত রাতে বাড়ী ফিরে একা খাবার টেবিলে বসতেই মনটা কেমন যেন হু হু করে ঁেকদে ওঠে। জীবনে যে এতটাই একা হয়ে যাবে সে কখনো ভাবে নি। সারা জীবন মানুষের কথা তাদের ভাল থাকার কথা ভেবেছে। কিভাবে মানুষের জন্য একটা কিছু করা যায় তা নিয়ে ভেবেছে। অথচ আজ সে বড় একা। তার কথা ভাবার মতও একজনও কেউ পাশে নেই যার সঙ্গে সুখ দুঃখের দু’টো কথা শেয়ার করা যায়।
এভাবে কি বেঁচে থাকা যায়? নিজেকে প্রশ্ন করে সে। কিন্তু কে এর উত্তর দেবে। কেন তার জীবনটা এমন হলো সেটা সে ভেবেই পায় না।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হয় রাতে ঘুমাতে গেলে। শরীরটা এত ক্লান্ত অথচ বিছানায় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন তার চোখের পাতা থেকে সব ঘুম নিমিষেই কোথায় পালিয়ে যায়। শত চেষ্টা করেও আর তাদের সে ফিরিয়ে আনতে পারে না। সারাটা রাত তার নিদ্রাহীন কেটে যায়।
মাঝে মাঝে ঘুমের পিল খেয়ে জোর করে একটু আধটু ঘুমাতে পারলেও ইদানিং সে সব আর তেমন ভাল কাজ না করায় পিল খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছে। সারারাত বিছানায় জেগে থেকে ছটফট করে আর সারাদিন ধরে কেমন যেন তার রেশ থেকে যায়। সেটা যে কি বিরক্তিকর তা সে কাকে বোঝাবে। ঠিকমত ঘুম না হলে সারাদিন ধরে এক ধরণের অস্থিরতা বয়ে বেড়াতে হয়।
আগে মাঝে মাঝে পত্রপত্রিকা বা বই পুস্তক পড়ে সময় কাটাতো এখন আর সেগুলোও ধরতে ইচ্ছে করে না। আর সে যে রাজনীতি ও ওকালতি করে সেখানে এত পড়ার দরকারটাই বা কোথায়?
অনেক বড় উকিল বা অনেক বড় রাজনীতিবিদ হতে গেলে হয়তো পড়শুনা করতে হয় কিন্তু রীতার জীবনে হয়তো তার কোনটাই আর সে হতে পারবে না। এক সময় সে ভাবতো রাজনীতি করে একদিন সে অনেক বড় হবে। এদেশের প্রধানমন্ত্রী না হতে পারুক অন্তত একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী যে হবে সে বিষয়ে তার কোন সন্দেহ ছিল না। অথচ আজ সেই স্বপ্ন যেন ক্রমেই ধুসর হয়ে যাচ্ছে। যতই দিন যাচ্ছে তার কাছে কেবলই মনে হচ্ছে মন্ত্রী-মিনিষ্টার তো দূরের কথা কথা রাজনীতিতেই শেষ পর্যন্ত টিকে থাকে পারে কিনা। আজকাল সবই স্বার্থপর আর তেলমারা চামচা টাইপের লোকদের দখলে চলে যাচ্ছে। ভাল ও সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যারা রাজনীতি করে এমন লোকদের বড় দুর্দিন শুরু হয়েছে। কারণ তাদের আর কেউ পাত্তা দেয় না।
দেখতে দেখেতে দেশের মানুষ যে এভাবে বদলে যাবে রীতা সেটা আগে কল্পনাও করতে পারেনি। দল ক্ষমতায় গেলে কতকিছু যে বদলে যায় চারপাশে নিত্য নতুন নেতাকর্মীর ভিড়। তারা কত রকম ভাবে নেতাদের পটিয়েপাটিয়ে কাজ বাগিয়ে নিয়ে চলে যায়। নানা উদ্ভাবনী প্রস্তাব নিয়ে আসে। নানা রকমের কমিশন-উপঢৌকনের প্রস্তাব থাকে তাতে। সরকারের যারা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আছেন তারা যেন এমন লোকই খুঁজে বেড়ান। ক্ষমতার বাইড়ে থাকতে যারা ত্যাগের মহিমা প্রচার করতে করতে সারক্ষণ দেশবাসীর কান ঝালাপালা করে ফেলেন। ক্ষমতায় গিয়ে তারাই ভোগবাদী, স্বার্থান্বেষী, সুবিধাবাদী ও আদর্শহীন কমিশন এজেন্ট খোঁজেন যাতে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে আখেরে ভোগের একটা পাকাপাকি বন্দোবস্ত করা যায়।
তারা সবাই বুঝে গেছে যে রীতাকে দিয়ে আজ যাই হোক ঘুষ-দুর্নীতির কমিশন এজেন্ট তাকে বানানো যাবে না। এ জন্যেই তার কপালটা আরো পুড়েছে। রাজপথের সেই বিপ্লবী নেতাদের কেউ এখন আর তাকে পছন্দ করেন না।
এ নিয়ে অবশ্য তার এক তিলও আফসোস নেই। সে বুঝে গেছে আর যাই হোক চোরের পথ তার পথ নয়। জীবনে আর যাই করুক কোন চোরকে সে কখনো ঈর্শা করে না ভবিষ্যতে কখনো করবেও না।
চোর যত বড় আসনেই বসুক না কেন সে যে চোর এই পরিচয় ছাপিয়ে সে কিছুতেই উঠতে পারবে না তাকে মাথা নিচু করে চলতে হবে। রীতার মাথা কখনোই নত হবে না। সে অন্তত তার বিবেকের কাছে পরিষ্কাার। চরিত্রের এই বলিষ্টতাই তাকে সাহস জোগায়। যা তাকে প্রতিবাদী করে তোলে।
অনেক কিছুরই প্রতিবাদ করে সে। এজন্য তাকে ভয় করা লোকের সংখ্যাও কম নয়। বিশেষ করে যারা নানা ধরণের চুরি আর দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তারা তাকে এড়িয়ে চলতে পরেেলই যেন তারা বাঁচে। দলের অনেক নেতাই চান না রীতা আর সামনে বাড়–ক। ওকে থামিয়ে দিতে হবে বলে যারা ভাবে আজকাল তাদের সংখ্যাই বেশী। তারা নানা ভাবে ওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। এরই অংশ হিসেবে ওরা রীতার বিরুদ্ধে নানা ধরণের কুৎসা রটনা করতে থাকে। যেহেতেু সে একটা মেয়ে, ফলে, তাকে নিয়ে নানা মুখ রোচক কুৎসা রচনা হতে থাকে একের পর এক লিফলেটও ছাড়া হয় সে সব লিফলেট বটতলার চটিকেও হার মানায় । নানা প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ননা দিয়ে সেসব লিফলেটে রীতার সঙ্গে বিভিন্ন নেতার দৈহিক মিলনের রগরগে বর্ণনা দিয়ে যতই তাকে পচানোর চেষ্টা করা হোক না কেন তাতে রীতা যে আরো সাহসী আরো তেজোদীপ্ত হয়ে ওঠে। রীতা এগিয়ে চলায় অনেকেই তার পাশে এসে দাঁড়ায় সাহস দেয়। প্লাবনের পানি যেমন বাঁধা পেয়ে ফুসে ওঠে রীতা ঠিক সেরকম ওদের বাধা পেয়ে ফুসে ওঠে। ওর দুর্বিসহ জীবনে যেন আনন্দ ফিরে আসে নতুন করে স্বপ্ন দেখার আনন্দ।
এখন সে প্রতিদিন রাত জেগে জেগে সেই স্বপ্নই দেখে আর ভাবে জীবনে যে সঠিক পথ চলতে পেরেছি এটাই অনেক বড় পাওয়া। যে চোরাবালিতে কত রথী- মহরথী প্রতিনিয়তই হারিয়ে যাচ্ছে। সেই চোবালি অন্তত তার চলার পথ রুদ্ধ করতে পারে নি সেটাই তার কাছে জীবনের সবচেয়ে বড় স্বান্তনা হয়ে ধরা দেয়।
২| ২৯ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৭
রুহুল গনি জ্যোতি বলেছেন: ধন্যবাদ জনাব মোঃ ইমরান কবির রুপম
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে মে, ২০১৫ দুপুর ১:৩৯
মোঃ ইমরান কবির রুপম বলেছেন: পুরোটাই খুব ধয্য সহকারে পড়লাম . খুব ভালোলাগলো । গল্পটা আর ও বড় হতে পারতো , এমনকি একটা ব ই ও হতে পারে