![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নাম রিদওয়ান। পিউর আকীকা দেওয়া নাম। অনেক বড় বড় স্বপ্ন দেখি। খেতে পছন্দ করি। গানও ভালবাসি। একটু অলস,বেশি না। ইচ্ছা হলেই লিখি। পছন্দের তালিকাটা বিশাল। অপছন্দের তালিকাটা খুব ছোট। খামাকা ত্যানা প্যাচান যারা তাদের অপছন্দ করি। অপছন্দ করি যারা যুক্তির বাইরে এরোগেন্স বা ওদ্ধত্যকে প্রকাশ করেন। আমার ব্লগে আসতে হবে এমন কোন কথা নেই। তবে পিলাস মাইনাস দেওয়ার আগে পোষ্টটা পড়তে হবে, এটা দাবি।\nফি আমানিল্লাহ।
প্রশ্নটা কয়েকদিন ধরে খুব বেশি পীড়া দিচ্ছে।
অনেক কাজের মাঝে কেন আমি এই কাজটাকে পছন্দ করা শুরু করেছি?
কেন আমি লিখছি?
কেন আমার লেখা দরকার?
উত্তর জানাটা আমার জন্য অনেক বেশি জরুরী হয়ে পড়েছে। নর্মালি আমরা প্রায় সময় নিজেদের প্রশ্ন করি,
কি লিখবো, কিভাবে লিখবো?
কিন্তু আমি আমার জন্য ঠিক করেছি কেন লিখবো?
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে, এই ‘কেন’-’র পিছনের কারণটাও একটু ব্যাখ্যা করা দরকার। বেশিদিন হবে না, একজনের ব্যক্তিগত ব্লগ পড়তে গিয়ে, একটা ভিডিও লিংক খেয়াল করলাম। প্রায় ১৯ মিনিটের একটা ভিডিও। টেড টকে ভিডিওটা আপলোড করা হয়েছে। সাইমন সাইনেক বা সিনেক একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিসে ক্লিক করেছেন। “Start with Why” এই ভিডিওটা দেখার সময় বারবার একটা হাদীস মনে পড়ছিলো। বুখারী শরীফের প্রথম হাদীস।
“প্রত্যেক কাজই নিয়্যতের উপর নির্ভরশীল।” আপনি কি করবেন, এটার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আপনি কেন করবেন।
রাসুল সা. ও এটা বলেছেন। তখন থেকে নিজেকে এই কেন-র মুখোমুখি দাড় করিয়ে যাচ্ছি।
প্রথম যে কবিতাটা লিখেছিলাম, সেটাকে কবিতা বলা যাবে না, ছড়া বলা যাবে। এক বন্ধুকে খেপানোর জন্য ব্ল্যাকবোর্ডে লিখে ফেলেছিলাম। অন্তমিলগুলো বানাচ্ছিলাম একটা একটা করে, আর ছড়ার একেকটা কলি লিখে যাচ্ছিলাম। একটা অন্তমিল হয়ে গেলেই সে কলিটা মুছে পরের কলি তৈরী করেছি। এভাবে জীবনের প্রথম ছড়াটা লিখেছি। এই ছড়াটা কোথাও লেখা নেই। কিন্তু, এখনও আনমনে আওড়ে যায়।
তারপর , রাফ খাতাটায় মাঝে মাঝে, টুকটাক লেখা শুরু করলাম। আবাসিক স্কুলে পড়ি। পাগল, জিনিয়াস, ব্রিলিয়ান্ট, সরল , দুষ্ট এই উপাধিগুলো অলরেডি জুটে গিয়েছে।। আরেকটা উপাধি বাকি ছিলো, যদি বাংলার কিশোর-সমাজ সে শব্দটা জানতো তাহলে নিশ্চিত আমার গায়ে অর্পণ করতো।
Freak. ফ্রীক ।
বইপোকা ছিলাম। বইয়ের পাগল ছিলাম। বই আসক্ত ছিলাম। আর এই আসক্তি সৃষ্টির পেছনে পরোক্ষভাবে আবু জাফর সাঈদ স্যার আর প্রত্যক্ষভাবে শামীম স্যার দায়ি ছিলেন। আবু জাফর স্যার এখন সউদিতে, উনি এখন শিক্ষক। আর শামীম স্যার ইন্তেকাল করেছেন।
একদিন আসরের নামাজ পড়ে স্কুলের লাইব্রেরীতে পত্রিকা পড়তে ডুকছি, এমন সময় একজন লম্বা চুলের ছোটখাট গড়নের একজন লোককে দেখলাম। হাতে দুটা বড় বড় নাইলনের ব্যাগ। সব বই ভর্তি। লোকটাকে দেখেই কেমন জানি একটু অভিভূত হলাম। ব্যক্তিত্ব এটাকে বলে হয়তো।
রাতে ডাইনিংয়ে খেতে গিয়ে শুনলাম, তিনি আমাদের নতুন বাংলা শিক্ষক। উনি লাইব্রেরীয়ানের দায়িত্বও পালন করবেন। তখন থেকে বইয়ের ভাজ দেখে হয়তো, বই পড়ার লোভ সামলাতে পারি নি। সেই শুরু।
পরের ঘটনা অন্যরকম। শামীম স্যার আসলেন। খুব বেশি ভালো পড়াতেন কিনা সেটা বলতে পারবো না। মনেও নাই। কিন্তু একটা জিনিস খুব মনে পড়ে, স্যার অনেকগুলো কবিতার লাইন আবৃতি করে শোনাতেন। মাঝে মাঝে কিছু শ্লোক শোনাতেন।
‘কবিতা চেয়েছো কে তুমি, আমি কি কবি?
কিরণ ছেয়েছো কে তুমি, আমি কি রবি?
সবাই মোরে পাগল বলেছে তুমি বলেছো মোরে কবি।”
অথবা
“খোকা ঘুমালো , পাড়া জুড়ালো
বর্গি এলো দেশে
বুলবুলিতে ধান খেয়েছে
খাজনা দেবো কীসে?
ধান ফুরালো, পাট ফুরালো
খাজনার উপায় কী?
আর কটা দিন সবুর করো
রসুন বুনেছি”
এগুলো এখনও কানে বাঁজে।
তিনি আমাদের অনেক গল্প শোনাতেন, ম্যাক্সিম গোর্কির মা উপন্যাসটার কথা বলেছিলেন। বলেছিলেন নজরুরে বিদ্রোহী কবিতার প্রত্যেকটি লাইন। তিনি আমাদের বইয়ের কথা বলতেন। বলতেন সক্রেটিসের বিষপানের কথা। হ্যারি পটার চিনিয়েছেন। পরে হ্যারি পটারের সব কটােই পড়েছি। বাংলা না পেয়ে শেষে ইংরেজিতে পড়েছি।
আরেক বাংলা শিক্ষকের কথা না বললেই নয়, তিনি আমাদের ইদ্রিস স্যার। এই স্যার আমার হাতের লেখাকে সুন্দর করার পেছনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনিএতো যত্ন নিয়ে যে আমার হাতের লেখার উন্নতি করিয়েছেন, তা এখনও মনে পড়ে। আল্লাহ তাকে উত্তম জাযাহ দিন। তিনি এখন একটি কলেজে বাংলার শিক্ষক।
তিনজন বাংলার শিক্ষক, তাদের প্রভাব আমার উপর এত বেশি পড়বে বুঝতে পারিনি।
তো এই তিনজন ব্যক্তির কারণে সাহিত্যে আমি আসল জীবন খুজে পাই। ব্যক্তি জীবনে আমি কান্না করি না। কিন্তু কবিতা , উপন্যাস আমাকে এতো বেশি নাড়া দেয়, মাঝে মাঝে উপন্যাসের নায়ক নায়িকার জন্য অনেক দিন মন খারাপ হয়ে থাকতো। বই পড়তে পড়তে আনমনে হেসে উঠেছি, কেদেঁছি অনেকবার।
এই সময়টাতে লেখালেখি তেমন করতাম না। এরপর এলো সেই যুগ যেটাকে জাফর ইকবাল বলে, ভাবালুতা। এই সময়, আবার একটু একটু করে কবিতা লিখা শুরু করলাম। এই সময় জীবননান্দ দাশ মাথার উপর ভর করেছে। পরাবাস্তবতা আমাকে পেয়ে বসেছিলো। আকাশের চাঁদকে তখন সবুজ দেখা শুরু করলাম, সূর্যটা সবসময় লাল দেখতাম। আর সাগরপাড়ে রাত একটা-দুটোর দিকে একাকী বসে থাকতাম।
অসম্ভব ভালো লাগা।
এখন সেগুলো পাগলামী মনে হয়।
কিন্তু তখন, এগুলো জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
এই সময়ে গান আর কবিতা অনেক বেশি নিজেকে দখল করে নিয়েছিলো। কবিতার খাতাটা (নোটবুক) লুকিয়ে রাখতাম। কেউ যেনো না পড়তে পারে। নিজের জন্য লিখতাম। কখনো ছাপাবো চিন্তাও করতাম না। মাঝে মাঝে নিজে নিজেই পড়তাম।
এরপর আবার জীবনটা এলোমেলো হয়ে গেলো। একটা বিশাল ঝড় এসেছিলো। আত্মগ্লানি যে কত খারাপ, সেটা যে সারভাইভ করতে পারে সে বুঝে।
কত রাত, নির্ঘম কেটেছে। এই সময় নিজেকে ঘুটিয়ে ফেললাম। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব , শিক্ষক –বড়ভাই, সবার চোখের আড়ালে চলে গেলাম।
এখন যে, এতো বড় শরীর নিয়েও আননোটিসেবল অবস্থায় চলাফেরা করতে পারি, এই সময়ের অভিজ্ঞতা খুব কাজে দিচ্ছে।
তারপর নিজেকে বারবার কষ্ট দিয়েছি। চুপচাপ থেকেছি, মাঝে মাঝে রাগে কেপেছি। মাঝে মাঝে অনেকদিনের জন্য নাই হয়ে গিয়েছি। দুয়েকজন মানুষ। তাদের নাম বলছি না। দুটো কারণ। এক , তারা মাইন্ড করবে। দুই, তারা নিজেরাও চাইবেন না , আমি তাদের প্রচার করে বেড়াই। সেই খোলসের আমিটাকে টেনে বের করে আনতে চাইলেন। অনেক চেষ্টা তারা করেছেন। তবুও মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি কি পুরোপুরি খোলসের বাহির হতে পেরেছি?
দিন গড়ালো।
নিজের ভিতরের অস্থিরতা বেড়ে চললো। আগের মতো নিজের ভেতরে ঘুটিয়ে না থাকলেও, মনের উপর দিয়ে বিশাল ঝড় বয়ে যেতো। মনে হতো, আমি দ্বিমুখিতার মধ্যে আছি কিনা?
জীবনে রহমত হিসেবে যেটা খুব কাজে দিলো সেটা হচ্ছে জেলখানা। এখানে আমাকে সেলে দেওয়া হলো। জেলে সবাই নিজের মতো আড্ডা আর খেলায় ব্যস্ত থাকতো। প্রথম প্রথম ,আমি চুপচাপ চিন্তা করতাম। আর মানুষের গল্প শুনতাম। কেন তারা খারাপ হয়েছে, কেন খুন করেছে, কেন ডাকাতি করেছে, এগুলো শোনতাম। আর মাঝে মাঝে কোরআন পড়তাম। এরপর একদিন সাঈদকে একটা চিঠিতে কয়েকটা বইয়ের ফরমায়েশ জানালাম। সে পৌছে দিয়ে গেলো। আল্লাহ মানুষকে পথ কোন দিক দিয়ে দেখান, সেটা বলা মুস্কিল।
আমি যে দ্বিমুখীতায় ছিলাম সে সমস্যা উত্তরণের একটা পথ পেলাম মনে হলো। অনেকবার বইটার ঐ পরিচ্ছদটা পড়েছি। একটা সাদামাটা গল্প। কিন্তু মনে হলো, একটা ধাক্কা দিয়েছে। লাইনগুলো মুখস্ত হয়ে গিয়েছে। অনেকবার পড়েছি গল্পটা। প্রথমের লাইনগুলো, খুব বেশি মাথায় বারি মেরেছে।
“Once upon a time, there lived in our city a prince who discovered that the most important question in life was whether to be, or not to be, oneself. It took him his whole life to discover who he was, and what he discovered was his whole life”
জীবনের সবচেয়ে মৌলিক প্রশ্ন এটি। To be, or not to be oneself.
আমি এই কথাগুলো নিয়ে অনেক চিন্তা করেছি। তারপর বুঝতে পেরেছি, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এটি। নিজস্বতা। স্বকীয়তা। যেটাকে আল্লামা ইকবাল ব্যাখ্যা করেছেন , খুদী বলে।
তাই আমি লিখি।
কেন, প্রশ্নটা আমাকে ভাবিয়েছে।
আমি যখন এই লেখাটা শুরু করি, তখন আমি নিজেও জানতাম না, আমি কেন লিখি।
তাই এই লেখার ক্ষেত্রে আমি কোন জড়তা রাখি নি।
নিজেকে মেলে ধরেছি।
তার আগে কয়েকজনের সাথে এই ব্যাপারে আলাপ করেছি।
জানতে চেয়েছি, তারা কেন লিখেন।
তাদের উত্তরগুলো একরকম।
কিন্তু কাছাকাছি, উত্তর পেয়েছি একজনের।
আমি এইজন্য লিখি, কারণ এটা আমাকে স্বাধীনতা দেয়। আমার চিন্তার স্বাধীনতা দেয়। আমাকে মুক্ত করে জাগতিক যাবতীয় ঝামেলা থেকে। আমাকে উন্মুক্ত করে। অনেককথা আছে, যেগুলো মানুষের সামনে বলতে পারি না, কিন্তু যখন লিখি তখন নির্দ্বিধায় লিখে যেতেপারি। আমার খুদীকে তুলে ধরতে পারি। আমার কাছে লেখাটা তাই নিজের খুদীর বিজয়।
আর, যতোক্ষণ না, আমি নিজেকে যাবতীয় দাসত্ব থেকে মুক্ত করতেপারছি, ততক্ষণ আল্লাহর দাসত্ব করতে পারা আমার জন্য অসম্ভব।
তাই আমি লিখি, পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার সাথে আল্লাহর আবদ্ হওয়ার জন্য।
আমি লিখে আমাকে চিনতে পারি, আমার আল্লাহকে চিনতে পারি।
আর আমার এই লেখা মানুষের চিন্তাজগতে পরিবর্তন আনবে কিনা আমি জানি না, কিন্তু আমার চিন্তাজগতটা কলুষমুক্ত রাখবে।
আমি, লিখি আমার স্বাধীনতার জন্য, আমার আমিত্বের জন্য, আমার খুদীর বিজয়ের জন্য, আমার আত্মপরিচয়ের জন্য।
৩০ শে জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:০০
রিদ্ওয়ান মাহমুদ বলেছেন: না , এগুলো বকাঝকা।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে জুন, ২০১৫ সকাল ৮:২০
চাঁদগাজী বলেছেন:
এগুলো লেখা?