![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটবেলায় আমরা মিজেরাই শহীদ মিনার বানাতাম, প্রতিযোগিতা হত যেন আমাদেরটাই সবচেয়ে বেশি সুন্দর হয়। বাসায় বাসায় চাঁদা তুলতাম, কেউ ৫ টাকা দিত, কেউ দিত ১০ টাকা, মোটামুটি ১০০ টাকা হলেই আমাদের হয়ে যেত। এখন যেমন বিশেষ দিবসকে উপলক্ষ করে ছাত্রনেতারা চাঁদা তোলে, বিশ্বাস করুন সেরকম কিছু না, মাত্র ১০০ টাকাতেই আমাদের সব আয়োজন হয়ে যেত। প্রথমে দরকার কলাগাছ, তিনটা কলাগাছ জোগাড় করে কেটে দুইটাকে সমান সাইজ করতাম, একটা থাকত একটু বড়। তারপর মাথাটা ভেঙ্গে এক টুকরো কাঠ দিয়ে মিনারের আদল দেয়া হত। বাসায় বাসায় গিয়ে পুরনো পেপার সংগ্রহ করে, সেই পেপারে কলাগাছকে মুড়ে দেয়া হত। অনেক রঙ্গিন কাগজ কেনা হত, লাল রঙের কাগজ দিয়ে পেছনের লাল সূর্য তৈরি করা হত। মাটি লেপে তিন-তলার সিঁড়ি বানানো হত।এরপর চারকোনায় চারটা লাঠি পুঁতে দড়ি দিয়ে সীমানা দেয়া হত, লাল-নীল কাগজ কেটে আঠা দিয়ে দড়িতে সেঁটে দেয়া হত। কী যে সুন্দর লাগত! ২০ শে ফেব্রুয়ারি সারা রাত জেগে থাকতাম আমরা, কিছু দুষ্ট ছেলে আছে এরা সুযোগ পেলেই সব নষ্ট করে দিবে। পরদিন আমরা পাশের গ্রামের ওদের শহীদ মিনার দেখতে যেতাম, ওরা আসত আমাদেরটা দেখতে। আমরা ওদেরটা দেখে ফিসফিস করে বলতাম- ধুর এটা কিছু হল! গর্বে আমাদের বুক এক হাত উঁচু হয়ে যেত। আমাদের শৈশব ওরকম রঙ্গিন হয়েছে যাদের রক্ত-রঙে সেইসব ভাষা শহীদদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার কোন সীমা নেই। তাঁদের আত্মদানে তারও ১৯ বছর আমরা যে দেশটি পাই, সেই দেশটির নাম হয়- বাংলাদেশ, ভাষার নামে দেশ। কী দারুন একটা ব্যাপার। তারও বহুদিন পর সেই দিনটি হয়ে উঠে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস"।হাজার হাজার ভাষা থেকে প্রতিনিয়ত ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে, সেই সব ভাষায় আমাদের পূর্ব-পুরুষেরা হাসি-আনন্দের কাব্য বিনির্মান করেছেন। কত শত মহৎ সাহিত্য, কত জ্ঞান লুকায়িত ছিল সেই সব ভাষায়। ২১ শের চেতনায় সারা বিশ্বে মাতৃভাষা লালিত হয় আজ। সালাম-বরকত-রফিক-জব্বার, আমরা আপনাদের উত্তরপুরুষ হিসেবে গর্ব-বোধ করি, আমাদের কী সৌভাগ্য আপনারা এ মাটিতে জন্ম-গ্রহন করেছিলেন।
আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি......
©somewhere in net ltd.