নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারণ একজন মানুষের কথা

রীফাত

রীফাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

এসএসসি পরীক্ষা- নাম্বার যুগ, গ্রেডিং যুগ

০৯ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৫:৫২

তখন নাম্বার যুগ। এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্ট ইন্টারনেট বা মোবাইলে কোনদিন জানা যাবে সেটা সে যুগে ভাবাও যায় নি। স্কুলের নোটিশ বোর্ড থেকেই রেজাল্ট জানতে হত। সকাল থেকেই স্কুল প্রাঙ্গনে রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা, রেজাল্ট আসতে আসতে বিকেল চারটা বেজে যেত। ভাল স্টুডেন্ট আর খারাপ স্টুডেন্ট উভয়েরই পেটে তুমুল প্রজাপতির নাচন, কেউ ভাবছে স্টার মার্কস আসবে তো, আর কারো চিন্তা পাশ হবে তো! তখন প্রতি স্কুলে দুই তিনজন আদু ভাই থাকত, আদু ভাইদের রেজাল্ট নিয়ে অত উৎকণ্ঠা নেই। আমাদের মফস্বলের স্কুল, মাঝে মাঝে স্কুলে দুই একজন থাকত যারা রীতিমত স্ট্যান্ড করে সবাইকে চমকে দিত, তারা এলাকায় অভিভাবক সমাজে নায়ক বনে যেত আর আমাদের কাছে ভিলেন। বাপ-মা উঠতে বসতে শুধু তার উদাহরণ টানত- অমুককে দেখে কিছু শিখতে পারিস না! যারা স্ট্যান্ড-প্রত্যাশী তারা কিভাবে কিভাবে যেন বোর্ড থেকে আগের দিন রাতেই রেজাল্ট জেনে যেত। উলটা’টাও ঘটত অমুক বড় ভাই খুব ভাল স্টুডেন্ট, রেজাল্ট এ দেখা গেল তার নামই নেই!

গার্লস স্কুল আর বয়েজ স্কুলের মধ্যে তুমুল কম্পিটিশন, আমাদের স্কুল থেকে স্টার বেশি, গার্লসে ফার্স্ট ডিভিশন বেশি। কে জিতল, সে এক অমীমাংসিত প্রশ্ন। রাতে আমরা বাসায় গিয়ে অপেক্ষায় থাকতাম কখন মিষ্টি আসবে, সাদা মিষ্টি অপেক্ষা কালো মিষ্টি আমার বেশি পছন্দ। কালো মিষ্টির চেয়ে মজার খাবার পৃথিবীতে আর নেই! পরের দিন পত্রিকায় মেধাবী ছাত্রদের ছবি ছাপা হত, বাপ-মা’র মাঝখানে মেধাবী ছাত্র হাসিমুখে বসে আছে। মেধাবী ছাত্ররা সময়ের পড়া সময়ে পড়ে, কখনো দিনের কাজ ফেলে রাখে না, তারা প্রাইভেট পড়ে না, তারা গাইড বই পড়ে না, মূল বই পড়ে। তাদের মানুষ মনে হত না আমার কাছে, মনে হত অতিমানব!

নাম্বার যুগ শেষ, গ্রেডিং যুগ আসল, আমরা গ্রেডিং যুগের সেকেন্ড ব্যাচ। আমাদের সময়ে কুমিল্লা বোর্ডে পাশের হার ছিল ২৯ শতাংশ, আর জিপিএ ৫ ছিল সারা বাংলাদেশে ৩৭৪, তখনো ফোর্থ সাবজেক্টের জিপিএ যোগ হত না। যে ৪.০০ পাইছে সে সবাইকে বলে A পাইছে, যে ৪.৮৮ ওই বেচারার মন মহা খারাপ, এমনিতেই অল্পের জন্য ৫ মিস হল, তার উপরে মুরব্বীদের মন্তব্য- তুমিও A পাইছ? মানুষ তখনো গ্রেডিং সিস্টেম ঠিক বুঝে উঠতে পারে নি। F পেয়েও মিষ্টি খাওয়ানোর ঘটনা এ ব-দ্বীপে কম ঘটে নি।

এই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিপ্লব সাধিত হয়েছে। বীজগানিতিক আর জ্যামিতিক হারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জিপিএ ৫ বেড়েছে। ৩৭৪ বেড়ে ৯১ হাজার হতে খুব বেশি সময় লাগে নি। আগে পুরো বাংলাদেশ মিলিয়ে স্ট্যান্ড বা জিপিএ ৫ যত পেত এখন এক স্কুলেই তার চেয়ে ঢের বেশি জিপিএ ৫ পায়। অবস্থা এমন এক ফ্রেমে তাদের জায়গা দিতে ক্যামেরাম্যানের জান প্রায় যায় যায়। সে যুগে ৩৭৪ জনের যে মান ছিল, এ যুগে ৯১ হাজারের সেই মান হলে আমাদের চেয়ে বেশি খুশি আর কেউ হত না। ২০ বছরেই আমরা অ্যামেরিকাকে ছাড়িয়ে যেতাম। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা একটা প্রহসন, এই বাচ্চা-কাচ্চাকে আমরা বিরাট স্বপ্ন দেখিয়ে অল্প কিছু কালের মধ্যে দুস্বপ্নের জগতে ছেড়ে দেই। যারা ৫ পেল না, আমরা তাদের ঘোষণা দিয়ে বলি- তোমাদের দিয়ে লাইফে কিছু হবে না। একটা ছেলে বা মেয়ে তার জীবনের শুরুতেই জেনে যায় তাকে দিয়ে লাইফে কিছু হবে না! একটা জাতির জন্য এর চেয়ে ভয়ংকর ঘটনা আর কিছু হতে পারে, আমি এরকম কিছু কখনো শুনি নি।

যারা ভাল রেজাল্ট করেছে আর যারা ভাল রেজাল্ট করে নি সবাইকে শুভ কামনা। আমার যদি ক্ষমতা থাকত আমি বাংলাদেশের সব এসএসসি পরীক্ষার্থীকে আজকের দিনে বলে আসতাম-

এই দিন দিন হয় আরো দিন আছে

এই দিনেরে নিব আমরা সেই দিনেরও কাছে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২২

পরোবাশি২০১৩ বলেছেন: Lat's go back. Then the results used to be published in newspapers. I saw mine in The Ittefaq. Also, then it was 1st Div 2nd Div ect. Only 432 got first div! in Dacca Coard. Gues which year it was?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.