নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারণ একজন মানুষের কথা

রীফাত

রীফাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রতিজ্ঞা

২২ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৯

ছোটবেলা থেকেই আমি ইংরেজিতে ভয়ংকর রকম কাঁচা। অন্য সব বিষয়ে যেমন তেমন, ইংরেজীর নাম শুনলেই আমার জ্বর চলে আসে। স্কুলে আমাদের ইংরেজীর শিক্ষক ছিলেন অমল বাবু। ব্যাটা দেখতে বিকট দর্শন, তার উপর পড়াতেন ইংরেজি। টেন্স, পার্টস অব স্পিচ, ন্যারেশন, ভয়েস চেঞ্জ আরো কত কিছু। সব কিছুই আমার মাথার উপর দিয়ে যেত। অমল বাবু Tense এর নানা নিয়ম শিখাতেন- ইতেছি, ইতেছিলাম.........।সব আমার মাথার উপর দিয়ে যেত, আর অমল বাবুর বেত যেত আমার পিঠের উপর দিয়ে। আমি সারাজীবন যত ধর্ম-চর্চা করেছি তার দশগুন করেছি অমল বাবুর ক্লাশে- হে আল্লাহ আমাকে এই শয়তানের হাত থেকে রক্ষ কর! অমল বাবু নিশ্চয় যমদূত বা আযরাইল কিছু একটা হয়ে থাকবে!

তাইরে নাইরে করে স্কুল লাইফ শেষ হয়ে গেল কখন টেরই পেলাম না, টেস্ট পরীক্ষা শেষ। আর কোন সাবজেক্ট নিয়ে আমার অত চিন্তা নেই, যত চিন্তা ইংরেজি নিয়ে। বিগত ১০ বছরের প্রশ্ন ঝাড়া মুখস্ত করলাম, আমার মুখস্ত-বিদ্যা ঈর্ষণীয়। টেন্স, পার্টস অব স্পিচ, ন্যারেশন, ভয়েস চেঞ্জ কম্পোজ করলাম, আমি বাদে এত ছোটলেখা আর কেউ পড়তে পারবে না; আমার মগজের ঘাটতি আল্লাহ চোখের জ্যোতি দিয়ে পুষিয়ে দিয়েছেন। ইংরেজি পরীক্ষার প্রিপারেশন নিতে গিয়ে আমার ইসলাম ধর্মের প্রিপারেশন হয়ে গেল, যাবতীয় দোয়া-দরূদ এখন আমার মুখস্ত, এই যাত্রায় রক্ষা কর আল্লাহ। হে আল্লাহ আমি আর কোনদিন আমাদের বাসার কাজের ছেলেটা যার নাম মফিজ কিন্তু আমি ডাকি মফিজ্জা, ওর মাথায় থাবা মারব না। জানি ওর মাথায় থাবা না মারলে আমার হাত একটু নিশপিশ করবে, তবু মারব না; তুমি তো জান আমি এখন ভাল হয়ে গিয়েছি। পাশের বাসার মেয়েটা যার নাম বিজলী, যাকে দেখলে আমরা বন্ধুরা রাস্তায় গান গাই- ও বিজলী চলে যেও না, তাকে আর কখনো টিজ করব না। শুধু আমি না, আমার কোন বন্ধুও ওকে টিজ করলে আমি বাধা দিব; তুমি তো জান আমি এখন ভাল হয়ে গেছি। আমাদের গ্রামের যে বিধবা মহিলাটি আছে, যার গাছ ভর্তি আম, সেই আম গাছে আমরা ঢিল ছুড়লে দুষ্ট মহিলা আমাদের দিকে তেড়ে আসে, তার গাছেও আর কখনো ঢিল মারব না, তুমি তো জান আমি এখন ভাল হয়ে গেছি। হে আল্লাহ, তুমি আমাকে রক্ষা কর; এই যাত্রায় ইংরেজিটা পাশ করিয়ে দাও।

পরীক্ষা দিয়ে বুঝলাম না পরীক্ষা কেমন হল, পাশ ফেলে টানাটানি। আজ রেজাল্ট দিবে, মফিজের মাথায় হাত দিয়ে বাসা থেকে বের হলাম, রাস্তায় বিজলীর সাথে দেখা- কিরে বিজলী কেউ কি তোকে রাস্তায় ডিস্টার্ব করে? করলে আমাকে জানাবি, পাশের বাড়ির সেই বিধবা চাচীকে বললাম- চাচী তোমার গাছে তো এবার আমের জন্য পাতা দেখা যাচ্ছে না!রেজাল্ট হল। আমি তিনটা লেটার নিয়ে ফার্স্ট ডিভিশন, ইংরেজিতে ৪০। রাম-শাম-যদু-মধুরা সেকেন্ড ডিভিশন পেলেও ইংরেজিতে আমার চেয়ে বেশি পেয়েছে! ধ্যাত!বাসায় গিয়ে মফিজ্জার মাথায় একটা থাবা মারলাম, হাতটা খুব নিশিপিশ করছিল। শুধু থাবায় এই হাত নিশপিশ বন্ধ হবে না, বন্ধুদের নিয়ে গেলাম আম গাছে ঢিল মারতে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে আম খাচ্ছি, হঠাত দেখি বিজলী- ও বিজলী চলে যেও না!

ইন্টারমিডিয়েটের সময়টা কোন ফাঁকে দিয়ে গেল টেরই পেলাম না। আবার ভয়- ইংরেজিতে পাশ হবে তো? হে আল্লাহ, তুমি আমাকে রক্ষা কর; এই যাত্রায় ইংরেজিটা পাশ করিয়ে দাও। আমি এবার সত্যি সত্যি ভাল হয়ে গেছি। পরীক্ষা দিয়ে বুঝলাম না পরীক্ষা কেমন হল, পাশ ফেলে টানাটানি। রেজাল্ট আনতে বাসা থেকে বের হচ্ছি, দেখি মফিজ আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, বিজলীও হাসছে, চাচীর গাছে একটা আমও নেই, তবু দেখি চাচীর মুখে হাসি। আমি রেজাল্ট আনতে চললাম!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৫:১৯

ফুরব বলেছেন: অসাম। আমার ইংরেজি টিচার ছিল রনজিত বাবু। এটা ছিল একটা[জানোয়ার] অসুর। ছাত্র/ ছাত্রিদের পিঠের উপর বেত দিয়া ধুলা উড়ানো ছিল উনার কাজ।তবে শেষ বয়সে প্যরালাইসড হয়ে মারা গেছেন উনি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.