নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারণ একজন মানুষের কথা

রীফাত

রীফাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

চলে গেলেন স্বপ্নের ফেরিওয়ালা

২৮ শে জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:১৩

নর্থ হল ৩২৫ নম্বর রুমে এক নিস্তরঙ্গ মধ্য দুপুর।
সময় কাটছে না। পাশের রুমে উকি দিলাম। সেখানে পড়ুয়া সুমন এর বাস। সুমনের সবচেয় উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য- এই ছেলের বেসিক ভালো, সে সারাদিন শুয়ে শুয়ে পড়ে, কেউ কোনদিন তাকে চেয়ার-টেবিলে দেখে নি, সে ২৪ ঘন্টাই প্যান্ট পরে থাকে, কেউ তাকে কোনদিন লুঙ্গি বা ট্রাউজার পরতে দেখে নি। সুমনের খাটের উপর একটা বই পড়ে আছে। বই এর নাম উইঙ্গস অব ফায়ার। সুমনের কাছ থেকে বইটা নিয়ে আসলাম।
আমার জীবনকে আমি মোটা দাগে দু'ভাগে ভাগ করতে পারি। উইঙ্গস অব ফায়ার পড়ার আগের জীবন ও পরের জীবন। একটু বাহুল্য করি। চুয়েটের প্রথম চার সেমিস্টারে আমার সিজিপিএ ছিল ৩.০৪, আর শেষ চার সেমিস্টারে সিজিপিএ ছিল ৩.৬৭। জীবনে রেজাল্ট বা সিজিপিএ যে খুব গুরুত্বপূর্ণ কোন ব্যাপার না- এটা এখন যতটা বুঝি, ওই সময় অতটা বুঝতাম না। সে সময়টায় এই বইটি আমাকে দারুণ অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। বইটির পরতে পরতে রয়েছে একটা স্বপ্নের বিনির্মাণ। একটা দরিদ্র সাধারণ কিশোর থেকে একজন বিজ্ঞানীর জন্ম চরিত। এই অকৃতদার মানুষ সমগ্র ভারতকে যে আত্মবিশ্বাস যুগিয়েছেন তা তুলনারহিত। নিজের ধর্মবিশ্বাসের যে অনুপম বর্ণনা তিনি দিয়েছেন, সেটা সকল বিশ্বাসীর জন্য উদাহরণ হতে পারে। এই ভদ্রলোক মাত্র একটা স্যুটকেস নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রবেশ করেছিলেন, ওই ভবন থেকে বিদায়ও নিয়েছিলেন একটা স্যুটকেস হাতে।
রকেট বিজ্ঞানের জনক এই উপমহাদেশ। মহীশুরের টিপু সুলতানের চিত্র নাসার সদর দপ্তরে অংকিত রয়েছে। কালাম তার বইয়ে আক্ষেপ করেছিলেন, টিপু সুলতানের উত্তরসূরীরা কত পিছিয়ে গেছে। শুধু আক্ষেপ করলে তিনি কালাম হবেন কেন, তার হাত ধরেই ভারতে রকেট বিজ্ঞানের পুনর্জন্ম হয়।
তিনি অবলীলায় তার দারিদ্র্য, ছোটবেলায় কষ্ট, পত্রিকা বিলি করে পাঠশালায় যাওয়ার জন্য জীবনপণ দৌড়ের কথা বলেছেন। মহান লোকেরা তার অতীত অস্বীকার করেন না।
এ পি জে আবদুল কালাম আর নেই। ইন্নালিল্লাহে ওয়াইন্নাইলাহে রাজিউন।
কাউকে জ্ঞান দেয়া, উপদেশ দেয়া আমার কাজ না। বলতে পারেন, তাহলে এত এত আজাইরা স্ট্যাটাস লিখি কেন। এগুলা যতটা না অন্যদের জন্য লিখি, তার চেয়ে বেশি লিখি নিজের জন্য। আমার জীবনের একটা দীর্ঘ সময় কেটেছে হতাশায়। আমার অনেকবার মনে হয়েছিল, আমাকে দিয়ে কিছু হবে না। কিছু পড়ি না, পড়লেও কিছু বুঝি না, যা কিছু বুঝি তাতেও নম্বর পাই না। অবস্থা এমন দাড়িয়েছিল যে, আমার সিজিপিএ ৩ পাওয়া নিয়েই টানাটানি। সে সময় কেউ আমার ঘাড়ে হাত দিয়ে কখনো বলে নি, তুমি পারবে। এক নিস্তরঙ্গ মধ্য দুপুর যেন পাকা লম্বা ঢেউ খেলানো চুলের সৌম্যদর্শন এক প্রৌঢ় সেদিন আমাকে কানে কানে বলেছিলেন, হারার আগে হেরো না। জ্ঞান বা উপদেশ কোনটাই না, ইচ্ছে হলে উইঙ্গস অব ফায়ার পড়ে দেখতে পারেন।
আমার প্রিয় উক্তিটা এই মহান মানুষের।
"স্বপ্ন তা না যা তুমি ঘুমের মাঝে দেখ, স্বপ্ন তা'ই যা তোমাকে ঘুমাতে দেয় না।"
আপনি নিশ্চিত থাকুন, যে স্বপ্ন আপনাকে রাতের পর রাত বিনিদ্র রাখে, সে স্বপ্ন কোন না কোনদিন পূরণ হবেই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.