![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার ছেলেটা যে স্কুলে পড়ে, কাজের ছেলেটাও সেখানে পড়ে (অবশ্য বাইরের মানুষের সামনে আমি ভুলেও কখনো ‘কাজের ছেলে’ শদটা উচ্চারণ করি না)। এ কারনে সবাই আমাকে বিশেষ সম্মানের চোখে দেখে, আমিও ব্যাপারটা খুব এনজয় করি। এসব কাজে ভাল নাম ফাটে, সমাজে স্ট্যাটাস বাড়ে। সকালে অফিসে যাওয়ার আগে আমি দু’জনকে গাড়িতে করে স্কুলে নামিয়ে আসি। ছেলেকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন, স্কুলের সবচেয়ে নামী টিচারকে হাউস টিউটর হিসেবে রেখেছি। ছেলে পড়তেই চায় না, সারাদিন ভিডিও গেম আর কম্পিউটার নিয়ে মেতে থাকে। আমি মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত হই, আবার ভাবি- খারাপ কী, হাইটেকের সাথে তো পরিচয় হচ্ছে। আমাদের সময়ে মায়েরা ছিল মূর্খ, কিন্তু সন্ধ্যার পর ঠিকই তারা সন্তানের পড়ার টেবিলে বসে থাকতেন। এখন মায়ের শিক্ষিত, কিন্তু সন্তানের জন্য তাদের সময় কই। আমার স্ত্রী ব্যস্ত তার জগত নিয়ে। সে জগতের বড় একটা অংশ জুড়ে আছে হিন্দী চ্যানেল আর শহরের নামী সব পার্লার। অবশ্য এখন যুগটাই প্যাকেজের, টাকা খরচ করলে ছেলের পড়াশোনা নিয়ে ভাবতে হবে না।
স্কুলের রেজাল্ট হবে, আমি আমার ছেলে আর কাজের ছেলে দুইজনকে নিয়ে রেজাল্ট আনতে গেলাম। রেজাল্ট দেখে রীতিমত চমকে গেলাম, কাজের ছেলেটা দেখি আমার ছেলের চেয়ে ভাল রেজাল্ট করেছে। সবাই এসে আমার খুব প্রশংসা করল- রনী সাহেব, আপনার কোন তুলনা হয় না। আপনি নিজের ছেলের সাথে কাজের ছেলের কোন প্রভেদ করেন না। সত্যি আপনার মত মানুষের সমাজে খুবই দরকার। আমি হাসিমুখে সব প্রশংসা শুনলাম, যদিও আমার ভেতরটা জ্বলে যাচ্ছিল। বাসায় ফিরে দেখি আমার স্ত্রী তার সিরিয়ালে মত্ত, মেজাজ আরও খিঁচে গেল। আমার মুখে স্পষ্ট বিরক্তি, স্ত্রী বলল- কী হয়েছে তোমার, এমন লাগছে কেন। আমি খুবই ঠান্ডা মাথার মানুষ, কখনো খুব বেশি উত্তেজিত হই না। নিরুত্তাপ কন্ঠে বললাম- ছেলেটা তো সারা জীবন আমাদের বাসায় থাকবে না, এক সময় না এক সময় ওর ঠিকই রিয়েলিটি ফেস করতে হবে। এসব পড়াশোনা করে ওর আসলে কোন লাভ হবে না। আর কাককে ময়ূরের পুচ্ছ পরালে সে’তো ময়ূর হবে না। সে না পারবে কাকের দলে থাকতে, না পারবে ময়ূরের দলে থাকতে। ওকে পড়াশোনা করানো মানে কাককে নকল ময়ূর বানানো। কি বল? আমার স্ত্রী আনমনে বলল- তুমি যা ভাল মনে কর, তার চোখ তখন ‘কাহানি ঘর ঘর কি’-তে
©somewhere in net ltd.