নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারণ একজন মানুষের কথা

রীফাত

রীফাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্যবসায় প্রতিযোগিতাহীনতাই বাজারে মনোপলি\'র সৃষ্টি করে

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১৫

যতবারই লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকা যাই বা ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুর যাই, বাস থেকে নামার পর আমার হাটুর গিটে টনটনে ব্যথা হয়।
লক্ষ্মীপুরের বাস সার্ভিসের মত বাজে বাস সার্ভিস আর একটিও হয় না। এক সারি আসনের সাথে আরেক সারির দূরত্ব এত কম যে আপনি কিছুতেই রিলাক্স হয়ে বসতে পারবেন না। আপনার হাটু সামনের আসনের সাথে রীতিমত লেগে থাকবে। আমার উচ্চতা ও শারীরিক গঠন এর দরুণ আমার ঝক্কি হয় সর্বোচ্চ।
এখানে মোটামুটি দুটি বাস কোম্পানি ঢাকা-লক্ষ্মীপুর পরিবহন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে ব্যবসার ধরন অনেকটা মনোপলিস্টিক। বাস মালিকেরা ইচ্ছেমত ভাড়া নির্ধারণ করেন। স্বাভাবিক সময়ে ভাড়া যেখানে ৩৫০ টাকা, ঈদের সময় এই ভাড়া গিয়ে দাড়ায় ৬০০ টাকা। আমি যে বাসে বসে এই স্ট্যাটাসখানা লিখছি এর ভাড়া ৫৫০ টাকা, অথচ ঈদের পর আজ তৃতীয় কর্মদিবস। ঢাকা টু চিটাগং (প্রায় ২৭০ কিমি দূরত্ব) এ হানিফ পরিবহনের ভাড়া যদি স্বাভাবিক সময়ে ৪৫০ টাকা হয়, ১৭০ কিমি দূরত্বের ঢাকা থেকে লক্ষ্মীপুর বাস সার্ভিসের ৩৫০ টাকা ভাড়া নি:সন্দেহে ওভার প্রাইসড।
ভোক্তা যদি কোন পণ্য বা সেবার মূল্য বেশি মনে করেন, তিনি তখন বিকল্পের অনুসন্ধান করেন। সমস্যা হল লক্ষ্মীপুর রেল-সেবার আওতার বাইরে। রেল সার্ভিসের জন্য নোয়াখালী যাওয়া কনভেনিয়েন্ট না। আবার ঢাকা- নোয়াখালী রেল সার্ভিসের মানও বিশেষ সুবিধের না। তাই যাত্রীদের একটা অংশ চাদপুর-ঢাকা লঞ্চ সার্ভিসে যাতায়াত করছেন। লক্ষ্মীপুর থেকে চাদপুর যাওয়া কম ঝক্কির না, প্রায় ঘন্টা দুয়েকের পথ। তারপরও অনেকেই ওইদিকে ঝুকছেন, কারন সব মিলিয়ে ৫ ঘন্টার ভ্রমনপথ। ভাড়াও সব মিলিয়ে ৩০০ টাকার বেশি হয় না, এমন কি ঈদের সময়ও একই ভাড়া। এর সাথে অগমেন্টেড ভ্যালু হল দৃষ্টিনন্দন নৌপথ।
ঢাকা-লক্ষ্মীপুর সড়কপথ ভালোই। মসৃন, ভাঙাচুরা নেই বললেই চলে। ফেরি পারাপারের ঝামেলা নেই। তাই সড়কপথই মোক্ষ। পরিবহন ব্যবসায়ীদের লোভ অসীম। যদিও আমি নীতিগতভাবে কোন নির্দিষ্ট পেশাজীবী শ্রেণির সভ্যগণকে বা নির্দিষ্ট কোন ব্যবসায়ী শ্রেণিকে এককভাবে একতরফা দোষারোপ করতে রাজি না। একটা দেশের সামষ্টিক জন-চরিত্রের চেয়ে কোন পেশাজীবী শ্রেণি বা ব্যবসায়ী শ্রেণি খুব উন্নত কিছু হবে- তেমনটা আশা করা যায় না। সে অন্য আলাপ।
মনোপলিস্টিক ব্যবসাই এই সমস্যার মূলে। লোভী ব্যবসায়ীরা পর্টারস ফাইভ ফোর্স মডেল পড়ুন আর না পড়ুন, তারা Threat of new entrant ও rivalry among the competitors সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল। বাজারে প্রতিযোগিতা থাকলে মনোপলিস্টিক ব্যবসায় টান পড়বে। সুতরাং তারা ব্যবসায় প্রতিযোগী চান না, নতুন কেউ বাজারে প্রবেশ করলে নানা বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করেন। প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসাই কেবল ভোক্তা-সেবার নিশ্চয়তা দিতে পারে, কারন এর উদ্দেশ্য হল ভ্যালু ক্রিয়েশন ও ভোক্তার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন। আর মনোপলিস্টিক ব্যবসার ওইসব বালাই নেই। গ্রাহক সেবা গোল্লায় যাক। গলা কাটো, পকেট ভরো। পকেট উপচে যা পড়বে তার কিছু প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসাকে কফিনে পাঠানোর কাজে ব্যয় কর, এরপর কফিনে পেরেক ঠুক।
পারফেক্ট মার্কেট সারা বিশ্বেই ইউটোপিয়া। সারা বিশ্ব যখন কম্পিটিটিভ মার্কেটকে অভীষ্ট করেছে, আমাদের কাছে কম্পিটিটিভ মার্কেটই ইউটোপিয়া। হা হতোস্মি! অথচ এটা এভিডেন্ট যে, প্রতিযোগিতামূলক বাজার বাজার-শৃঙ্খলার মূল নিয়ামক; এবং এর মধ্যেই একটি রাষ্ট্রের অনেক সমস্যার সমাধান নিহিত।
তাহলে সমাধান কী। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা যে, এদের সুমতি দাও। সে প্রার্থনা ইত্যবসরে অযুত নিযুত কণ্ঠে ধ্বণিত হয়েছে, কিন্তু এই ব্যবসায়ীদের দিলে সিল লেগে গেছে।
রাষ্ট্রযন্ত্রের দায়িত্ব ব্যবসায় প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করি। অতিশয়োক্তি করি, একতরফা রাষ্ট্রযন্ত্রকে দোষারোপ করে লাভ নেই। রাষ্ট্রযন্ত্রের চরিত্র ও জন- চরিত্র ভিন্ন কিছু নয়।
গুড় থাকলে পিপড়া আসবেই। মুনাফার সুযোগ থাকলে ব্যবসায়ীরা আকৃষ্ট হবেনই। রাষ্ট্রযন্ত্রের কাজ হল ব্যবসায় সুযোগের সমতা সৃষ্টি করা, সবাইকে নিয়মের পরিপালনে বাধ্য করা অন্যথায় শাস্তির নিশ্চিত করা। রাষ্ট্রযন্ত্র যদি দুষ্টের (খারাপ ব্যবসায়ী) দমন ও শিষ্টের (ভালো ব্যবসায়ী) পালন করতে পারে মুনাফার বিষম বন্টন অনেকাংশে রহিত হবে, আয় বৈষম্য কমবে, জনদুর্ভোগ লাঘব হবে।
আমার হাটুর গিটে টনটনে ব্যথা থেকেও মুক্তি মিলবে আশা করি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.