![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ তর্কযোগ্যভাবে দেশের সেরা বিজনেস স্কুল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সাফল্যের নিরিখে তর্কাতীতভাবে দেশের সেরা বিজনেস স্কুল। আইবিএ'র যে জিনিসটা আমাকে মুগ্ধ করেছে, সেটা পাঠদানের কৌশল কিংবা স্বাতন্ত্র্য না, শিক্ষকদের academic background। ভাবুন একবার দেশসেরা বিজনেস স্কুলের বেশিরভাগ ফ্যাকাল্টি স্নাতক পর্যায়ে বিজনেস ব্যাকগ্রাউন্ডের স্টুডেন্টই ছিলেন না। ইংরেজি, আইন, পদার্থ বিজ্ঞান, মেরিন ক্যাপ্টেন, EEE, CE, CSE, বায়োকেমিস্ট্রি- নানা ব্যাকগ্রাউন্ডের সমাহার এখানে। তারা এমবিএ তে সেরা ফল করেই ফ্যাকাল্টি হয়েছেন। আমার তো মনে হয় নানা ব্যাকগ্রাউন্ডের মিশ্রনে এখানে একটা সিনার্জিও তৈরি হয়।
এই যে অভ্র'র মাধ্যমে ইউনিকোডে বাংলা লিখছি তার মূল রূপকার কোন প্রোগ্রামার বা কম্পিউটার সাইন্টিস্ট না, তিনি একজন ডাক্তার, পড়েছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। তার নাম মেহদী হাসান খান।
প্রোগ্রামার এর কথা যখন আসলই, আপনি চাইলেই যে কোন বয়সেই প্রোগ্রামার হয়ে যেতে পারেন। দরকার শুধু গাণিতিক দক্ষতা ও ইচ্ছাশক্তির। এই তো সেদিন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী তার ফেসবুক পাতায় সুডোকু সমাধানের কোড প্রকাশ করেছেন।
ইচ্ছাশক্তি থাকলে আপনি ইতিহাসের ছাত্র হয়ে অর্থসচিব কিংবা ইংরেজির ছাত্র হয়ে অর্থমন্ত্রী হতে পারেন। আপনি কী ছিলেন বা কী আছেন সেটা বড় ব্যাপার না, বড় ব্যাপার হল আপনি নিজেকে কোথায় দেখতে চান।
আবার ইতিহাসের ছাত্র না হয়েও আপনি হতে পারেন ঐতিহাসিক। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অন্যতম খ্যাতিমান ঐতিহাসিক ডা: হাসান।
মাইক্রসফট বাংলাদেশের প্রধান, সোনিয়া বশীর কবীর যিনি কাজ করেছেন বিশ্বের নাম করা সব তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে, তিনি এসএসসি পাশ করেছেন আর্টস বিভাগ থেকে। যদিও বাংলাদেশে আর্টস বা কমার্স থেকে বিজ্ঞানের কোন ডিসিপ্লিনে স্নাতক করা যায় না, কিংবা বয়স ৩০ বা ৪০ এ কারো যদি মনে হয় সে মেডিক্যাল বা বুয়েটে পড়বে- সে সুযোগ যদিও আমাদের দেশে নেই, উন্নত দেশে কারো জন্য কোন সুযোগ কখনোই আজীবনের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয় না। সোনিয়া বশীর পরবর্তীতে আমেরিকাতে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।
বাংলা সাহিত্য বা ইংরেজি সাহিত্যে পড়াশোনা করে নামকরা সাহিত্যিক হয়েছেন এমন উদাহরণ বাংলাদেশে যত আছে, তার চেয়ে ঢের বেশি আছে ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিকেল এ পড়ে নামকরা সাহিত্যিক হয়েছেন এমন দৃষ্টান্ত।
বাংলাদেশে বহু নামকরা বিচারপতি আছেন, যারা স্নাতক সাধারণ কোন বিষয়ে করে পরবর্তীতে আবার আইনে স্নাতক হয়েছেন।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্রিয়া জটিল। এখানে আপনি আপনার পছন্দের বিষয়ে চান্স নাও পেতে পারেন। আবার এমনও হতে পারে আপনি পড়তে চেয়েছেন আইনে , পরিবারের চাপে হয়ে গেছেন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার। এই arrange marriage যদি সুখের হয় তাহলে তো খুবই ভালো, আর যদি না হয় তবে কি আপনি অসুখী দাম্পত্য টেনে নিবেন নাকি নতুন করে জীবন শুরু করার চেষ্টা করবেন। আব্বুর সাথে একবার সেগুনবাগিচায় সুপ্রীম কোর্টের এক আইনজীবীর চেম্বারে গিয়েছিলাম। আমি ইঞ্জিনিয়ার শুনে ভদ্রলোক আমার সাথে প্রকৌশল বিষয়ক নানা গল্প জুড়ে দিলেন। পরে তিনি আমাকে জানালেন তার আন্ডারগ্রেড বুয়েট থেকে। এরপর তিনি আইন বিষয়ে দ্বিতীয় স্নাতক করেন। এমবিএ তে একজন স্যার পেয়েছিলাম যিনি মূলত হতে চেয়েছিলেন আর্কিটেক্ট। কিন্তু তিনি হয়েছিলেন মেরিন ক্যাপ্টেন। ওই সময় বুয়েট বাদে কোথাও আর্কিটেকচার পড়া যেত না। মেরিন ক্যাপ্টেন হয়েও আর্কিটেক্ট হবার স্বপ্নতে তার ধুলো পড়ে নি। কিন্তু বুয়েটে যেহেতু এত বছরের ব্রেক অব স্টাডিতে ভর্তি হবার সুযোগ নেই, তিনি আইবিএ তে এমবিএ করে ভালো ফল করে ওখানেই ফ্যাকাল্টি হয়ে গেলেন। পেছনে পড়ে রইল তার প্রায় এক দশকের নাবিক জীবন।
জানি কী ভাবছেন। ভাবছেন, চাইলেই কি এই বয়সে এসে সব ছেড়েছুড়ে নতুন জীবন শুরু করা যায়। সমান্তরাল ক্যারিয়ারও গড়ছেন আজকাল অনেকে। অনেকে কি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করছেন না? কিংবা দিনে চাকরি আর রাতে আউটসোর্সিং করছেন না?
দেখুন অনু ভেঙে পরমাণু পাওয়া গেছে, আরো ভেঙ্গে পাওয়া গেছে ইলেকট্রন- প্রোটন- নিউট্রন, আরো ভেঙ্গে আরো ক্ষুদ্র কণা পাওয়া যাচ্ছে। প্রফেশনাল জগতেও নানা বৈচিত্র্য আসছে। Accounting এ পড়ে অনেকেই ইনকাম ট্যাক্স আইনজীবী হচ্ছেন। আবার যে আইনজীবীরা Apple আর Samsung এর আইনীযুদ্ধে লড়ছেন, তাদের তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞান অবাক করার মত। পৃথিবীর কোন জ্ঞানই মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ না- এটা আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
আমার একজন এক্স কলিগ, যিনি প্রায় তিন বছর শিক্ষকতা করেছেন। এরপর ব্যাংকে নতুন করে ক্যারিয়ার শুরু করেন, আমরা একসাথেই জয়েন করি। ব্যাংকে থাকা অবস্থাতেই তিনি বুয়েট থেকে CSE তে মাস্টার্স করেন, তার মাস্টার্স থিসিস পেপার খড়গপুর আইআইটি তে উপস্থাপনের জন্য মনোনীত হয়, ব্যাংকই তাকে স্পন্সর করে। মাস্টার্স শেষ করে তিনি বুয়েটেই পিএইচডি তে ভর্তি হন। সম্প্রতি তিনি দেশের নামকরা এক বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে জয়েন করেছেন।
আপনি যদি আপনার নলেজ ও স্কিলে সমন্বয় করতে পারেন, আপনি একাধিক ক্ষেত্রেও সমান্তরালে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। এক্ষেত্রে বিয়েটাও বাচল, প্রেমটাও হারিয়ে গেল না, আবার অবৈধ পরকীয়াও হল না। নুয়ান চমস্কি তার সার্থক উদাহরণ।
স্নাতক পর্যায়ে আমরা কম্পাইলার ডিজাইন কোর্সে ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং এ চমস্কির নাম প্রথম শুনি। কম্পিউটার বিজ্ঞানে তার নাম বাইনারী সংকেতের সোনালী হরফে লেখা থাকবে। উনি মূলত লিঙ্গুয়িস্টিক। এই ভাষাতত্ত্ববিদ যেভাবে যন্ত্রের ভাষা উন্নয়নে অবদান রেখেছেন, অনেক খ্যাতিমান প্রযুক্তিবিদের পক্ষেও তা সম্ভব ছিল না। এই কারনেই আমি বলি, কোন জ্ঞানই মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ না।
চমস্কি দিয়েই শেষ করি। তিনি আমেরিকার নামকরা বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, বিরুদ্ধ মতের অন্যতম প্রবর্তক।
জীবন আসলে তখনই স্থবির হয়ে যায়, যখন আপনি আপনার স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করেন। ওরা পেরেছে, কারন এই নয় যে ওরা আপনার আমার চেয়ে অনেক বেশি মেধাবী। বরং আসল কারন এটাই যে, ওরা আমাদের চেয়ে অনেক বেশি সাহসী।
এই বসুধা বীরভোগ্যা। পরম সাফল্য কিংবা দু:সাধ্য কোন স্বপ্ন পূরণে চাই চরম সাহস।
২| ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:২৮
মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অংকুরেই একটি স্বপ্নকে ধ্বংস করে!
৩| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৪১
আলাপচারী বলেছেন: অদ্ভূত, দারুণ, ইন্সপায়ারিং
৪| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:০১
তাপস কুমার দে বলেছেন: nice.
৫| ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:০০
সপ্নভূক বলেছেন: আমি ভালো লিখতে পারিনা, আপনার লেখার ধারা ওতি সুনদর। আমারও স্বপন আর পড়াশুনার তাল নেই... আছে শুধু স্বপ্ন। আপনার লেখা আমাকে আবারও উজ্জিবিত করল। ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:২০
দুর্মর একলব্য বলেছেন: কথা সত্য