![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার বাসা পশ্চিম নাখালপাড়া।
অফিস শেষে ফার্মগেট থেকে বাসায় যাবার সময় আমার হাতে তিনটা অপশন থাকে। ১. রিকশা (ভাড়া ২০ টাকা), ২. ইজি বাইক (ভাড়া ১০টাকা), ৩. পদযুগল (আপাত দৃষ্টিতে মূল্যহীন)।
আমার ক্রমস্ফীতমান ভূড়ি সাক্ষ্য দেয় শেষোক্ত অপশনটি খুবই বিরল আমার জন্য আজকাল।
আরামের দিক দিয়ে প্রথম অপশনটি আমার জন্য বেস্ট। ঝক্কি-ঝামেলা নেই। সত্যি কথা বলতে রিকশার চেয়ে দারুণ কোন ভ্রমন-বান্ধব যানবাহন আর হয় না। আর এটার জন্য আমার অপরচুনিটি কস্ট হল এই অপশন সবচেয়ে বেশি ব্যয়বহুল।
তাহলে দ্বিতীয় অপশনে আসি। ইজি বাইকের সুবিধা হল, এটা দ্রুততম অপশন। বৃষ্টির দিনে বেস্ট অপশন। প্রথম অপশনের চেয়ে সস্তা। কিন্তু সমস্যা হল, বাইক চালক পাঁচজন যাত্রী না হওয়া পর্যন্ত যাত্রা শুরু করবে না। সীট শেয়ার করা লাগে, এটাও অস্বস্তিকর। তবে আমার মত যাত্রী চালকের জন্য লাভজনক। এই বাইকগুলো ফার্মগেট থেকে পূর্ব নাখালপাড়া রেলগেট পর্যন্ত যায়। ভাড়া ওই দশ টাকাই। আমি যেহেতু মাঝপথে নেমে যাই, আর সময়টাও সবার ঘরে ফেরার সময়, তার খুব ভালো সম্ভাবনা আছে আমি নামার পর আরেকজন যাত্রী পেয়ে যাবার। এটা তার জন্য অতিরিক্ত দশ টাকা আয় করার সুযোগ। কিন্তু আমার মত সম্ভাব্য নতুন যাত্রীটিরও তখন তিনটা অপশন। ১. রিকশা (ভাড়া ২০ টাকা), ২. ইজি বাইক (ভাড়া ১০টাকা), ৩. পদযুগল (আপাত দৃষ্টিতে মূল্যহীন)। যদি তিনি দ্বিতীয় অপশনটি বেছে নেন, তা কিন্তু রিকশাচালকদের আয়ের সুযোগ আবারও কমিয়ে দিবে। ইজিবাইকের আয়ে ২০ টাকা যোগ হওয়া মানে, রিকশাচালকের আয়ে ৪০ টাকা হ্রাস। সেক্ষেত্রে ইজিবাইক চালক দাবী করতে পারেন, আমি তো পাঁচজন না হলে ফার্মগেট থেকে বাইক'ই ছাড়তাম না। তথাস্ত। আপনি যতক্ষন বাইক না ছাড়বেন, আপনার পরে যার বাইক সিরিয়ালে আছে, তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত ডেডলক এ পড়ে যাবেন। ডেডলক মানে সময় নষ্ট। আর সময় নষ্ট মানে ট্রিপ কমে যাওয়া। ফলে ইজিবাইক চালকদের সামষ্টিক আয়ও কিন্তু কমে যাবে। আর আগেই বলেছি, রিকশা'তে এই ঝক্কি নেই। বাইকে দেরি হবার সম্ভাবনা দেখলে, আমি অন্য দুইটা অপশনের কথা চিন্তা করব। সেক্ষেত্রে রিকশাচালকের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।
বাকী থাকল তিন নাম্বার অপশন। সুবিধা হল, হাঁটা অতি উত্তম ব্যায়াম। ভূড়ির লাগাম টেনে ধরার জন্য এর চেয়ে ভালো কোন দাওয়া হয় না। অতএব, "হেঁটে হেঁটে বহুদূর বহুদূর চলে যাই"। কিন্তু মুশকিল হল রাস্তা সংকীর্ণ, রিকশা আর ইজি বাইক পারলে গায়ে উঠে যায়। ধূলি-বালি তো আছেই। ক্লান্তি তো আছেই। হেঁটে যখন অবশেষে বাসায় পৌঁছালাম, মনে হবে আমার পকেটে তো ২০ টাকা আছে (আসলে কি ২০ টাকা? ইজি-বাইকে আসলে তো আমি মাত্র ১০ টাকা বাঁচালাম)। যাই হোক, শরীর থেকে অনেক ক্লোরাইড বের হয়েছে। সুতরাং একটা কোক খাওয়া যাক। হ্যাঁ, কেউ বলতে পারে- "টাকা বেঁচেছে ভালো কথা, তাই বলে কোক খেতে হবে? স্বাস্থ্যকর কিছুও তো খাওয়া যায়। এই যেমন ডিম কলা।" কিন্তু এই চিন্তা হল আদর্শ লিপির পাঠ। বাস্তব পাঠ হল, কোকই খেতে হবে। কোথায় হেঁটে স্বাস্থ্য রক্ষা হবে, উলটা কোক খেয়ে স্বাস্থ্যহানীর যোগাড়। আর নির্ঘন্ট হল, রিকশাওয়ালা কিংবা ইজি-বাইক চালক- কারো'ই আয় বৃদ্ধি হল না। আমারও ২০ টাকা সঞ্চয় হল না। যার এই আয় হওয়ারই কথা ছিল না, দোকান-মালিক- তারই আয় বৃদ্ধি হল।
এটাকে এনামুল স্যার সাবস্টিটিউট প্রডাক্ট হিসেবে পড়াতেন। আমরা বই পড়ে যেটা শিখেছি, চা এর সাবস্টিটিউট প্রডাক্ট হল কফি- স্যার আমাদের সেই ধারণা ভেঙে দেন। তিনি আমাদের বলেন, খালি চোখে হয়ত চালের দরবৃদ্ধির সাথে টেলিভিশনের চাহিদার কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু অর্থনীতির বিভিন্ন জটিল প্রক্রিয়ার চালের দরে হ্রাস-বৃদ্ধি টেলিভিশনের চাহিদায় প্রভাব ফেলতে পারে।
আমার ফার্মগেট টু পশ্চিম নাখালপাড়া যাত্রাও এভাবে নানা জটিল সমীকরণের সৃষ্টি করে। এই কারণে আমরা অ্যাডাম স্মিথের অর্থনীতির ধারণা থেকে সরে আসতে চাই, যা মনে করে ব্যক্তির উন্নয়নই সমাজের উন্নয়ন। বরং অ্যা বিউটিফুল মাইন্ড ন্যাশ যেমনটা মনে করতেন, সমষ্টির জন্য যা ভালো, সমাজের জন্যও তা ভালো; আমাদের অপশন নির্বাচনেও যদি আমরা সমষ্টিগত ভালো'র কথা চিন্তা করি, সমাজ এমনিতেই বদলে যাবে।
©somewhere in net ltd.