![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ম্যানেজেরিয়াল ইকোনোমিকস ক্লাসে এনামুল স্যার আমাদের পড়াতেন, Every behavior is rational behavior। প্রথম প্রথম আমাদের মানতে খুব কষ্ট হত। একজন ব্যবসায়ী পণ্যে ভেজাল দিচ্ছে, এটা কেন rational behavior হবে। স্যার এখন ক্লাশ নিলে হয়ত আলোচনা করতেন, সরকার যে শিক্ষার উপর ট্যাক্স আরোপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে- এটা যেমন rational behavior; আবার শিক্ষার্থীরা যে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে- এটাও rational behavior। তিনি যুক্তি দিতেন, ব্যক্তি মাত্রই তার উপযোগ সর্বোচ্চ চায়, এবং এটাই rational behavior। নৈতিক কি অনৈতিক- এটা গৌণ ব্যাপার।
কাল রাতে সিএনজি করে মোহাম্মদপুর থেকে ফার্মগেট আসলাম। মিটারের ভাড়ার চেয়ে প্রায় তিনগুণ ভাড়া। ব্যাপারটা নিয়ে আমি মহা বিরক্ত- এবং এটাই আমার rational behavior। আমার খরচের তুলনায় প্রাপ্ত উপযোগ এক-তৃতীয়াংশ।
আবার সিএনজিওয়ালা যে তিনগুণ ভাড়া নিচ্ছে- এটাও তার rational behavior। সে এক শিফটে সিএনজি চালায়। সরকার মালিকের ভাড়া ঠিক করে দিয়েছে ৬০০ টাকা। কিন্তু মালিক ক্ষেত্র বিশেষ ৮০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। এর বাইরে তার জ্বালানী খরচ আছে। মাঝে মাঝে তাকে রাস্তায় কিছু ঘুষ আর চাঁদাও দিতে হয়। সব কিছু মিলিয়ে তার আয় ব্রেক-ইভেন এ আসার পর নিজের পকেটের দিকেও তাকে নজর দিতে হয়। মালিকের অত কিছু বোঝার দায় নেই। তাই সিএনজিওয়ালা চায় যত বেশি হারে ভাড়া নিয়ে পিঠ ও পেট বাঁচানো যায়।
মালিক যে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত দাবী করে, সেটাও rational behavior। হুদা সাহেব যখন পরিবেশের দূষণ যুক্তিতে বেবি-ট্যাক্সি নিষিদ্ধ করে সিএনজি'র অনুমতি দিলেন তখন আমরা সবাই হাততালি দিয়েছিলাম। বুঝে হোক আর না বুঝে হোক। জনমানসে এই ধারণা ছড়িয়ে গিয়েছিল যে, তেল এর চেয়ে গ্যাস ভালো পরিবেশের জন্য। মূল বিষয় ছিল ইঞ্জিনের স্ট্রোক এ। বেবি-ট্যাক্সিগুলো ছিল টু-স্ট্রোক। ফোর-স্ট্রোক এর তুলনায় টু-স্ট্রোক এ জ্বালানীর অন্তর্দহন কম হয়। ফলে নির্গমন পথ দিয়ে বেশি হারে বেরিয়ে আসে আনবার্নড বা অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন। কেবলমাত্র ফোর-স্ট্রোক সিএনজির জন্য ওকালতি না করে ফোর-স্ট্রোক যেকোন থ্রি হুইলারের জন্য ওকালতি করাই ছিল যুক্তিযুক্ত। অন্তত আজ বাসা বাড়িতে রান্নাঘরে গ্যাসের চাপ আর গ্যাসের অভাবে ধুঁকতে থাকা বিদ্যুৎকেন্দ্র-সার কারখানা- শিল্প কারখানা তা'ই বলে। লোকে বলে, হুদা এই বেহুদা সিদ্ধান্তে ম্যালা কামিয়েছেন। অবশ্য লোকের কথায় কিছু প্রমান হয় না। অবশ্য তিনি যোগাযোগ মন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তার স্ত্রীর প্রতিষ্ঠানের নামে দেড় টাকায় রেলের কোটি টাকার জমির বন্দোবস্ত করে ফেলেছিলেন প্রায়। যাই হোক ওই সময় সিএনজি মালিকেরা উচ্চমূল্যে সিএনজি খরিদ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। ফলে তাদের পে ব্যাক পিরিয়ড চার-পাচ বছরে গিয়ে ঠেকে। এরা ক্ষুদ্র পরিবহন ব্যবসায়ী। তাই তারা PBP সময়কাল কমিয়ে আনতে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি হারে চালকদের কাছে দিনের ভাড়া আদায় করতে লাগলেন। বিভিন্ন ধরণের চাঁদার ব্যয় তো আছেই। তো কী বুঝা গেল? সিএনজি মালিকের ব্যবহারও rational behavior।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মাঝে মাঝে রাস্তায় কড়াকড়ি আরোপ করেন। সিএনজিওয়ালারা তাই যাত্রীকে অনুরোধ করেন, পুলিশ ধরলে বলবেন মিটারে আসছি। কিন্তু এই কড়াকড়িতে খুব বেশি কাজ হয় না। কারণ, সবাই তার অবস্থান থেকে rational behavior ই করছে। পুলিশও শেষ পর্যন্ত নিরুপায়।
গণপরিবহনে ট্যাক্সি লাগবেই। এমন কী প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাবলিক বাস রাস্তায় চলাচল করলেও রাস্তায় ট্যাক্সির প্রয়োজন ফুরোবে না। শুরু করতে হবে শুরু থেকেই। প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে রাস্তায় ট্যাক্সি নামানোর অনুমতি দিতে হবে। অমুক পরিবহন সমিতির নেতা, তমুক সংগঠনের নেতা- এই ভিত্তিতে ট্যাক্সি নামানোর অনুমতি দিলেই বাজারে প্রতিযোগিতা নষ্ট হয়। ভালো বিনিয়োগকারী নিরুৎসাহিত হোন। আবার অন্যদিকে ব্যবসায় ব্যয়ও বেড়ে যায়। চক্রাকারে rational behavior এর চূড়ান্ত বুধোর পিন্ডি পড়ে যাত্রীর ঘাড়ে।
এককভাবে কাউকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। সবার behavior-ই rational behavior, তাই সমস্যার সমাধান খুঁজতে চাইলে সমস্যার গোড়ায় যেতে হবে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৯
সুরা বলেছেন: আপনিও Rational কথাবার্তা বলেছেন এবং আমিও Rationally বুঝে নিয়েছি। ধন্যবাদ -------