![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"কত ধানে, কত চাল"- এই প্রবাদ বাক্যকে অনেক সময় ইংরেজিতে মজা করে বলা হয়- "হাউ মেনি পেডি, হাউ মেনি রাইস"। আর আমি এই মুহূর্তে চাইনিজ কমলা খেতে খেতে ভাবছি- "হাউ মেনি চাইনিজ কমলা, হাউ মেনি বিচি"।
এই কমলা আকারে ছোট, রসালো, বিচি নেই বললেই চলে। চীনাদের নিয়ে আমার বিস্ময়ের অন্ত নেই। ওরা সাইজে ছোট, কিন্তু বুদ্ধিতে বড়। আমার মনে আছে, আমি যখন ছোট ছিলাম, আমার ধারণা ছিল, কেবলমাত্র বড়লোক-দের বাসাতেই কালার টিভি আর ফ্রিজ থাকে। আজ আমার ছোটবেলার সংজ্ঞাতে বাংলাদেশে বড়লোক খুঁজতে গেলে সংখ্যাটা কোটি ছাড়াবে। আর এর পিছনে রয়েছে চাইনিজ পণ্যের ব্যাপক অবদান। স্যামসাং বা আইফোন এর মত দামী স্মার্টফোন ইউজ করার সাধ্য আমার কোনদিন হবে কিনা জানি না, তবু যে আমি একটা স্মার্টফোন ব্যবহার করতে পারছি সেটাও তো চাইনিজ।
বিজনেসে প্রাইসিং স্ট্রাটেজি'তে আগে কস্ট এস্টিমেট করে, তার উপর মার্ক-আপ বসিয়ে প্রাইস নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু চীনাদের হিসেব আলাদা, তারা আগে বায়ারকে জিজ্ঞেস করবে, তুমি কোন দামে কিনতে রাজি আছ? তারপর তারা কস্ট এস্টিমট করে। চীনারা একইসাথে ইনোভেটর এবং কপিয়ারও। জার্মানি আর জাপান বুলেট ট্রেন বানিয়ে ভয়ে ভয়ে থাকে কখন চীন কপি করে ফেলে। কিন্তু চীনের কাছে বিক্রি না করেও উপায় নেই, ১৩০ কোটি লোকের দেশের বাজার। কেনার ৬ মাসের মধ্যেই সেই প্রযুক্তি কপি করে ফেলবে, আর ৩ মাসের মধ্যে ইনোভেট করবে । চীন এখন আর Ape Syndrome এ ভোগে না, ওরাও ব্রান্ডিং ও ইনোভেশন বুঝে গেছে। লেনোভো আর আলিবাবা এখন ডেল আর আমাজনকে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছে।
সুতরাং চীনকে আমাদের দরকার। আবার চীন আমাদের ভয়ের কারন। চীনের কারনে আমাদের ক্ষুদ্র প্রযুক্তি শিল্প দাঁড়াতে পারছে না। এতদিনে আমাদের ইউপিএস, আইপিএস, ব্যাটারি শিল্প দাঁড়িয়ে যাবার কথা ছিল। কিন্তু চীনের মত সস্তায় পণ্য উৎপাদন আমাদের দ্বারা সম্ভব না। ধোলাইখালকে কেন্দ্র করে আমরা একটা ভাইব্রেন্ট ইলেকট্রনিক শিল্প গড়ে তুলতে পারি। আর যে পণ্যগুলো আমরা বানাতে পারি, সেগুলো চীন থেকে আমদানি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা যেতে পারে। আমরা না হয় একটু বেশি দামেই কিনলাম।
আগে আমাদের কপি শিখতে হবে। কপি করতে করতে আমাদের একটা শিল্প দাঁড়িয়ে যাবে। এরপর আমরা আইসি বেসড প্রডাক্ট, ডিউরেবল প্রডাক্টে যাব। ততদিনে আমাদের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এ যাবে। এম আই টি, হাভার্ড থেকে আমাদের গ্রাজুয়েটরা ফেরত আসবে। ততদিনে আমরা ইনোভেশনে চলে যাব। নামকরা বিজনেস স্কুলের ছেলে-পেলে কাজ করবে ব্র্যান্ডিং এর।
চীনের জিডিপি'র ৯০ ভাগ আসে শিল্প ও সেবাখাত থেকে,বাংলাদেশের জিডিপি'র ৮৪ ভাগ আসে এই দুটি খাত থেকে, এর মধ্যে সেবাখাতের অবদান প্রায় ৫৪ শতাংশ। বিশ্বের সব উন্নত দেশের জিডিপি'র মেজর কন্ট্রিবিউশন আসে সেবাখাত থেকে। সবেমাত্র আমরা নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের কাতারে প্রবেশ করেছি , কিন্তু আমাদেরও জিডিপি'র মেজর কন্ট্রিবিউশন আসে সেবাখাত থেকে। কারন, শিল্প খাতে ফোকাস না করেই আমরা সেবাখাতে চলে গেছি। সেবাখাতকেন্দ্রিক আমাদের এমন একটা ইকনোমি গড়ে উঠছে, যেটা শিল্পখাত-ভিত্তিক না। আর এর ব্যাকওয়ার্ড ইন্টিগ্রেশনে রয়েছে সস্তার চীনা পণ্য। আমাদের সেবাখাত মূলত সওদাগরি, আমরা চীন থেকে সস্তায় পণ্য কিনে এখানে বিক্রি করছি। আমাদের বাজার রয়েছে, সে বাজারে চাহিদা রয়েছে, সে চাহিদার যোগানও হচ্ছে, কিন্তু সেটা হচ্ছে সওদাগরির মাধ্যমে। আমাদের উৎপাদনে যেতে হবে, সেটা কপি করেই হোক আর যেভাবেই হোক। উৎপাদনে গেলে শিল্প-ভিত্তিক একটা সেবাখাত পাব, যেটা হবে অনেক বেশি সাসটেইনেবল। বড় ধরনের এমপ্লয়মেন্ট হবে, রিসার্চ হবে, নিজের বাজারের গন্ডি পেরিয়ে আমরা অন্য বাজারে প্রবেশ করব।
চীন আমাদের আইডল হোক। কিন্তু আমরা যেন চীনের ডল না হয়ে যাই। আগামীর প্রস্তুতি শুরু হোক এখন থেকেই।
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৭
মহা সমন্বয় বলেছেন: চীন আমাদের আইডল হোক। কিন্তু আমরা যেন চীনের ডল না হয়ে যাই। আগামীর প্রস্তুতি শুরু হোক এখন থেকেই।
ইয়েস তাই যেন হয়।