নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি প্রযুক্তি প্রিয় মানুষ; ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি ভালোবাসি। এছাড়াও ভালোবাসি বই আর লেখালেখি পড়তে। মাঝে মাঝে লিখতেও ইচ্ছা করে। এখানে যোগ দিয়েছি হঠাৎ কোন কিছু লিখে ফেললে সেটা সবার মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য।

রিহানুর ইসলাম প্রতীক

রিহানুর ইসলাম প্রতীক › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রিয় ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার সমাচার

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:০৭



ত কিছুদিন আগে আমার হোস্টেল থেকে শিক্ষা সফরে বান্দরবান হয়ে কক্সবাজার গিয়েছিলো। আমার বাসে বমি হওয়া জনিত সমস্যার কারনে যাওয়া হয়নি। শিক্ষা সফর থেকে ফিরে আসার পর বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পারলাম সেখানে যাবার পথে হিমছড়িতে জাফর ইকবাল স্যারের সাথে দেখা হয়েছিল। কথাটি শোনার পর থেকেই আমার মনে হচ্ছে আগে জানলে বাসের ছাদে করে হলেও যেতাম। তারপর থেকেই কেমন এক ঘোরের মধ্যে আছি আমি। কল্পনা করছি আমিও সেই সফরে ছিলাম, হিমছড়িতে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ সামনে এক জায়গায় দেখি জাফর ইকবাল স্যার। চিনতে খুব একটা অসুবিধে হলনা, যতটুকুও হয়েছিল এজন্যে যে শুনেছি এখন তাঁর সাথে সবসময় সশস্ত্র দুজন গার্ড থাকে, কোনো কারণে তাঁর উপর হত্যার হুমকি এসেছে অথচ এখানে কোন গার্ড নেই। চিনতে পারা মাত্রই সবাইকে অবাক করে দিয়ে তাঁকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম, এতে অনেকে এতটাই অবাক হয়েছিল যে পরে জানতে পারলাম তাঁকে নাকি তারা চিনতেই পারেনি কেউ নাকি কখনো নামও শুনেনি। ইতোমধ্যে চোখে পানি চলে এসেছে। উত্তেজনার আতিশয্যে মুখ থেকে কথাও বেরুচ্ছেনা। এরইমধ্যে অনেকে এসে সেলফি তোলা শুরু করেছে, অনেকে ফটোগ্রাফ, কেউ কেউ অটোগ্রাফ। ফরমাল কিছু কথাবার্তা শেষে সবাই আশেপাশে ঘুরতে চলে গেল। কিন্তু আমি স্যারকে ছাড়লাম না। একাধারে সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি গুলোর একজন আর প্রিয় চারজন লেখকের তালিকায় শীর্ষে থাকা জনকে এভাবে কাছে পেয়ে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ছেড়ে যাওয়াটা হতেই পারেনা।
"তোমার নাম কী?"
"প্রতীক, রিহানুর ইসলাম প্রতীক। স্যাস...স্যাস...স্যার আমি সম্ভবত ক্লাস এইট নাইন থেকেই আপনার বই গুলোর একজন পাঠক বিশেষ করে সায়েন্স ফিকশনের, আর তার পর থেকেই আমি আপনার খুব ভক্ত। শুরুর দিকে আপনাকে আমি জাফর ইকবাল বলেই ডাকতাম, কিন্তু আস্তে আস্তে একটা সময় আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ এতোটাই গভীর হলো যে উপলব্ধি হতে থাকলো আপনাকে শুধু নাম ধরে ডাকাটা ঠিক হবেনা। তারপর থেকেই আমি আপনাকে স্যার বলে ডাকি। আপনার অনেক বই-ই আমি পড়েছি। এই মুহূর্তে যেকয়টার নাম মনে পড়ছে তারমধ্যে রুহান রুহান, নায়ীরা, বিজ্ঞানী অনিক লুম্বা, বেজী, সায়রা সায়েন্টিস্ট, দীপু নাম্বার টু, আমেরিকা, নিউরনে অনুরণন খুব ভালো লেগেছে।"
"তোমার তাহলে বই পড়ার ভালোই নেশা আছে দেখছি।"
"তা আর বলতে। জানেন স্যার, আমার খুব ইচ্ছা এমন একটা দিন আসবে যেদিন আমি নিজেকে বলতে পারবো আজ পর্যন্ত জাফর ইকবাল স্যারের প্রকাশিত সমস্ত বই পড়া শেষ।"
"এত উঁচুতে উঠিয়ে দিওনা আমাকে। ততটার যোগ্য আমি নই। আমার চেয়ে অনেক ভালো লেখকও আছেন। তাদের বইও পড়ো"
"সেটা আপনার মতামত স্যার। আমার কাছে আপনিই সেরা। আমার চারজন প্রিয় লেখকের তালিকায় আপনি প্রথমে। বই ছাড়াও আপনার মাঝে মাঝে প্রকাশিত বিভিন্ন লেখাও আমি পড়ি। ফেসবুকে আপনার নামে একটা পেইজ আছে যেটা শুনেছি আপনার একজন তরুণ সহকর্মী চালায়। সেখানে মাঝে মাঝে আপনার যেসব লেখা পোস্ট হয় সেগুলোও পড়ি খুব ভালো লাগে। সেসবের বেশিরভাগ লেখাই থাকে সাম্প্রতিক সময়ের কোন আলোচিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে। অনেক আগে সেই পেইজে "ছোটদের জন্যে লেখা" শিরোনামে আপনার একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে আপনি আপনার প্রায় চার বছর বয়সী বাচ্চার অনর্গল বই পড়ার ঘটনা বর্ণনা করেছিলেন। যেটা সম্ভব হয়েছিল কয়েকমাস বয়স থেকেই আপনার স্ত্রীর বাচ্চাকে বই পড়ে শোনানোর কারণে। সেটা পড়ার পর থেকেই আমার কেমন যেন খুব দ্রুতই বাবা হওয়ার শখ জেগেছে। আমারো খুব ইচ্ছা আমরাও আমাদের বাচ্চাকে এভাবে অল্প কয়েকমাস বয়স থেকেই বই পড়ে শোনাবো।"
"হা হা হা (একটা হাসি দিয়ে), খুব মজা পেলাম তোমার কথা শুনে। তা তোমার চারজন প্রিয় লেখকের বাকি তিনজন কে কে?"
"দ্বিতীয়তে স্যার আর্থার কোনান ডয়েল, তৃতীয়তে ভিক্টর হুগো এবং সর্বশেষ হুমায়ূন আহমেদ।"
"বাহ! চমৎকার। বিদেশী লেখকদের বইও তাহলে তুমি পড়ো দেখছি।"
"জ্বী স্যার।"
"তা কোথায় আছো এখন? কী করছো?"
"আপাতত নারায়ণগঞ্জ মেরিন টেকনোলোজিতে আছি, ওখানে দুই বছরের একটা কোর্স করতেছি।"
"আপাতত মানে?"
"আসলে স্যার ছোটবেলা থেকেই আমার বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে ঝোঁক অনেক বেশী। বিভিন্ন প্রযুক্তিপন্য গুলো সবসময় আমার আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতো। বাবা দেশের বাইরে থাকায় যখন দেশে আসতো তখন প্রচুর খেলনা নিয়ে আসতো আমার জন্যে। কিছুদিন খেলে আবার যখন বাবা দেশের বাইরে চলে যেত তখন সেই খেলনাগুলো খুলে ভেতরের মেকানিজমটা বোঝার চেষ্টা করতাম, কিভাবে কাজ করে খুঁটিয়ে দেখতাম, বাবাকে খুব ভয় পেতাম তাই থাকতে তেমনটা করতাম না। তারপর আবার রিএসেম্বল করতাম। মাঝে মাঝে কোনটা নষ্ট হয়ে গেলে সেটা খুলে ঠিক করার চেষ্টা করতাম, আর যেটা ঠিক করতে পারতাম না সেটার মোটর, সাউন্ড সিস্টেম ইত্যাদি ইত্যাদি খুলে নতুন কিছু বানানোর চেষ্টা করতাম। জানেন স্যার, আমার পড়ার টেবিলের উপরের ড্রয়ার বা নিচের পাটাতনের কোনটাতেই বই থাকতোনা। সব থাকতো এসবের ইলেক্ট্রনিকসে ভর্তি। কোন মোবাইল ফোন পেলে সেটার প্রতিটা ফাংশন দেখে দেখে চেক করতাম কোনটাতে কী হয়। শুধু একদিন মামা দেখিয়ে দিয়েছিলেন 'ওকে' আর 'ব্যাক' বাটনটা। তারপর যা জানি প্রায়সব নিজে নিজেই। তারপর থেকেই আলাদাভাবে কম্পিউটার আর তথ্য-প্রযুক্তির প্রতি বিশেষ ঝোঁক। মেরিনে টেকনোলজিতে আসার একবছরের মাথায় সেটা উপলব্ধি করেছি হাড়ে হাড়ে। আমার এক বন্ধু আমাকে বোঝাতে সমর্থ হলো যে আমার কম্পিউটার ও তথ্য-প্রযুক্তি নিয়েই আগানো উচিৎ। আমিও ততদিনে বুঝতে পেরেছি যে মেরিন সেক্টরে থেকে আমার দ্বারা কিছুই হবেনা। শেষমেশ বাড়িতে বুঝিয়ে সুঝিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে এই কোর্সটা শেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে বিএসসি করবো। তাই 'আপাতত' শব্দটা ব্যবহার করেছি।"
"সুন্দর সিদ্ধান্ত। তারপরেও যা করো ভালোভাবে ভেবে চিন্তে করো।"
"দোয়া করবেন স্যার।"
"শুভ কামনা রইলো।"
"স্যার, এদিকে কতক্ষণ বা কয়দিন আছেন? উহ!!! অবশেষে আপনার সঙ্গটা মনে হয় ত্যাগ করতেই হচ্ছে এখন স্যার (ওদিক থেকে বন্ধুদের ডাক আসায়)। বাস সম্ভবত এখনই কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। যাই হোক, আপনাকে এতটা সময় জ্বালানোর জন্য দুঃখিত স্যার।"
"সেটা সয়ে গেছে আমার। তুমিইতো আর প্রথম না। আর জ্বালাতন ভোগ করিনি আমি, ভালোই লেগেছে কথা বলে (একটা হাসি দিয়ে)।"
" আমার সাথে কথা বলে আপনার মত মানুষের ভালো লেগেছে জেনে অহংকারে আমার উড়তে ইচ্ছা করছে।"
আবারো স্যারের মুখে একটা হাসির রেখা দেখা গেলো।
"তাহলে আসি স্যার, বাই, ভালো থাকবেন।"
হাতটা একটু উঁচিয়ে সাধু-সন্ন্যাসীদের মত স্যারও আমাকে বিদায় জানালেন।"
স্যারকে নিয়ে আরো অনেক কিছুই আমার কল্পনায় এসেছে, তাই বলেতো সবকিছুই আর লেখনিতে রূপ দেওয়া সম্ভব না।
স্যারের মত ভালো, জ্ঞানী-গুণী ও দেশপ্রেমিক মানুষ বর্তমানে আমাদের দেশে খুব কমই আছে। অনেকে অবশ্য আমার সাথে একমত নাও হতে পারে। তবে কথাটা আমি সাম্প্রদায়িক চেতনার উর্ধ্বে থেকেই বলছি; সাম্প্রদায়িকতাকে এখানে আনতে রাজী নই আমি। আর অবশ্যই স্যারকে নিয়ে আমার জানার গন্ডির ভেতর থেকেই বলতেছি।
উনি ১৯৬৮ সালে বগুড়া জিলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৭০ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইসএসসি পাস করেন। এরপর ১৯৭২ সালে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৭৩ সালে অনার্সে দুই নম্বরের ব্যবধানে প্রথম শ্রেণিতে ২য় স্থান অধিকার করেন এবং ১৯৭৪ মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর মেধার জোরেই যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার আমন্ত্রন পান এবং অবশেষে ১৯৭৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করার জন্য যান, সাবজেক্ট ছিল 'প্যারিটি ভায়োলেশন ইন হাইড্রোজেন এটম'। ১৯৮২ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বিখ্যাত ক্যালটেক (ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট আব টেকনোলজি) থেকে তাঁর ডক্টরেট-উত্তর গবেষণা সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৮৮ তেই বিখ্যাত বেল কমিউনিকেশনস রিসার্চ-এ গবেষক হিসাবে যোগদান করেন। সেখানে তিনি অনেক ভালো অবস্থাতে থাকা সত্বেও দেশ ও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে ১৯৯৪ সালে দেশে এসে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদান করেন।
বাঙালি জাতিকে গল্পের মাধ্যমে বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলতে স্যারের অবদান অনস্বীকার্য। একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টি করেছিলেন তিনি। ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের গণিতে আগ্রহী করার জন্য তিনি শুরু করেন 'গণিত অলিম্পিয়াড' কার্যক্রম। উৎসাহ দেওয়ার জন্য লিখেছেন 'আমি তপু'র মত গল্প। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে অনেকে আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড-এ অংশগ্রহন করছে। তিনি বাঙালিদের মনে গণিতের প্রতি ভয় দূর করে সৃষ্টি করেছেন ভালোবাসা। তিনি একাধারে লেখক, পদার্থবিদ, শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী।
শুধুমাত্র দেশেই নয়, দেশের বাইরেও তিনি একটি পরিচিত নাম। আর তাঁর সে পরিচয়টা বিজ্ঞানী হিসাবে। এক্সপেরিমেন্টাল পদার্থবিদ্যায় তাঁর দক্ষতা ও মেধার স্ফূরণ দেখে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড্যামলেট তাঁকে নিজের সঙ্গে কাজ করার আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন। বারোজন নোবেল লরেট তাঁর সহকর্মী ছিলেন বেল ল্যাবরেটরিতে কাজ করার সময়। তিনি নিযুক্ত ছিলেন ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ে তৈরির কাজে। তাঁর উদ্ভাবিত টাইম প্রজেকশন সুইজারল্যান্ডের এক পাহাড়ের নিচে বহুদিন যাবত ডাটা সংগ্রহের কাজ করছে। বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার ইলেক্ট্রনিকস, কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, বাংলা কম্পিউটারাইজেশন, নেটওয়ার্কিং, নন-লাইনার অপটিক্‌স এবং পদার্থ বিজ্ঞানের ওপর বিভিন্ন গবেষনণামূলক কাজ করেন।
তাঁর মত কয়েকজন গুনী ব্যক্তিদের জন্য আজ বাংলাদেশ বিশ্বের দরবারে সুপরিচিত। অথচ আমরা বাঙালিরা আজ তাঁকে হত্যার হুমকি দেই, বোমা মারি তাঁর বাড়িতে, পাঠানো হয় কাফনের কাপড়। তাঁকে আখ্যা দেওয়া হয় নাস্তিক হিসাবে। আমরা অনেকেই আদৌ জানিনা তিনি সত্যি নাস্তিক কিনা। তবে এটুকু জানি যে তিনি কোনদিন নিজেকে নাস্তিক দাবী করেননি। তিনি সব রোজা রাখেন। সাস্ট (শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়) সিএসই তে যারা প্রোগ্রাম অর্গানাইজ করে তাদের অনেকেরই একটা অভিজ্ঞতা আছে যে যখন কোন ট্রিপের ফাইনাল প্লান নিয়ে স্যারের সাথে কথা বলতে যায় তখন স্যার প্লান শুনে বলেন, "নামাজ যারা পড়বে তাদের জন্য তোমরা কিভাবে সুযোগ দিচ্ছ?" স্যার কখনো ধার্মিক বা ধর্ম নিয়ে কোন বিরুপ মনোভাব পোষণ বা প্রকাশ করেছেন বলে আমার জানা নেই। আমি জীবনে স্যারের অনেক বই পড়েছি, কোথাও ধর্ম বিদ্বেষী মন্তব্য পাই নাই। বরং যেই কথাটি উনার কাছ থেকে সবসময় শোনা যায়, "তোমরা যারা ধর্ম পালন করো এবং যারা করো না তারা বিবাদে না জড়িয়ে নিজেদের জায়গায় নিজে ঠিক থাক না কেন? আমার মা সবসময় নিজের মত ধর্ম পালন করেন, এবং কেউ তাঁর সাথে ধর্ম নিয়ে অহেতুক তর্ক সৃষ্টি করতে চাইলে তিনি সেগুলোতে কখনোই অংশ নেন না।" এসব জানার পরেও উনাকে যারা যেকোন যুক্তিতে নাস্তিক আখ্যা দিতে প্রস্তুত তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, তিনি নাস্তিক হয়ে থাকলেও সেটা উনার ব্যক্তিগত ব্যাপার, আমি ঐসব নিয়ে ভাবছিনা। আমি উনার ব্যক্তিত্ব এবং লেখার ভক্ত। উনার ধর্ম বিশ্বাসের অনুসারী নই। তাঁরমত সূর্য সন্তানেরা কিন্তু দেশে বার বার জন্মায় না। আর তাছাড়া যার যার ধর্ম বিশ্বাস তার তার কাছে, আমাদের আঘাত না করলেই হলো। আমাদের প্রাণের ধর্ম ইসলাম এবং প্রাণের নবী মোহাম্মদ (সাঃ) কে নিয়ে কোন কটুক্তি না করলেই হলো। তথাকথিত নাস্তিক (আসলে ইসলাম বিরোধী) ব্লগারদের মততো আর উনি ইসলামকে অবমাননা করে কখনো কিছু লিখেননি, অন্তত আমার চোখে পড়েনি। আমাদের দেশের অনেক উত্তরাধিকারসূত্র আস্তিকদের থেকেও উনি নাস্তিক (কথা প্রসঙ্গে) হাজারগুন শ্রেয়। তাই বলে এই নয় যে আমি নাস্তিকতাকে সমর্থন করি, আমি সমর্থন করি উনার মানসিকতাকে, উনার মত মানসিকতাকে। যে মানসিকতা একজন মানুষকে নিজের জন্য না ভাবিয়ে দেশ-দেশের মানুষের জন্য ভাবায়, যে মানসিকতা অন্য দেশের লোভনীয় প্রস্তাব উপেক্ষা করিয়ে নিজের দেশের জন্য কাজ করার উৎসাহ প্রদান করে, যে মানসিকতার বলে কেউ রাজার হালে থাকার সুযোগ উপেক্ষা করে সাধারন মানুষের মত জীবনধারা বেছে নেয়, যে মানসিকতা অন্যায়ের বিরুদ্ধে-সত্যের পক্ষে কথা বলার শক্তি যোগায়।
আমরা অনেকেই তাঁর ব্যাপারে সঠিকটা জানিনা। অন্যদের মুখে তার ব্যাপারে খারাপ কিছু শুনে সেটা যাচাই না করেই লাফাই এবং সেটাই মনে-প্রাণে লালন করি। তাকে গালমন্দ করি। কারো কাছ থেকে হঠাৎ কিছু শুনেই সেটা যাচাই বাছাই না করে কোন মন্তব্য করা উচিৎ নয়। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা তাকে সামনে পেলে স্যার স্যার করি, অথচ পেছনে গেলে গালমন্দ করি। এমন ঘটনাও ঘটেছে যে তাঁকে সামনে পেয়ে তাঁর গায়ে গা লাগিয়ে ছবির পর ছবি উঠেছে, সেলফি তুলেছে, স্যার স্যার বলে কুশল বিনিময় করেছে, অথচ কিছুক্ষণ পর পাহাড়ে দৌড়াতে গিয়ে হোচঁট পেয়ে গড়াগড়ি খেয়ে আহত হওয়াই তাঁকে শয়তান বলে সম্বোধন করে তাঁর সাথে ছবি উঠাকে দোষারোপ করেছে। এটা কী ধরনের মানসিকতা আমাদের? আদৌ এর কি কোন ভিত্তি আছে? এই মানসিকতার বলেই কি আমরা আরেকজনের ব্যক্তিত্বকে বিচার করি? ধিক্কার জানাই তাদেরকে যারা নিজেদের খামখেয়ালীপনার ফলকে অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়।
ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারদের মত ব্যক্তিরা যদি আজ দেশের শীর্ষস্থানীয় পর্যায়ে থাকতেন তাহলে হয়ত আমাদের প্রতিনিয়ত এতো ভোগান্তি পোহাতে হতনা। তথাকথিত দেশ ও জনগনের বন্ধুদের কাছে থেকে হয়তো বন্ধুত্বসুলভ আচরণই পেতাম। রক্ষকরা হয়ত আমাদের রক্ষায় করতেন, ভক্ষণ নয়। উচ্চশিক্ষা ও জীবিকার তাগিদে হয়ত দেশের বাইরে যেতে হতনা, বরঞ্চ দেশের বাইরে থেকেই মানুষ উক্ত প্রয়োজনে এ দেশে আসতো। জনসংখ্যা বোঝা না হয়ে থেকে হয়ত জনশক্তিতে রুপ নিত। তাই আমাদের উচিৎ সাম্প্রদিয়কতাকে মনে পোষণ না করে নিরপেক্ষ ও নির্বিশেষে দেশের জন্য কাজ করা এবং যোগ্যদের যোগ্য মর্যাদা দেওয়া। তবেই একটি সুন্দর দেশের কথা ভাবতে পারবো আমরা।

রিহানুর ইসলাম প্রতীক
০৭/০২/২০১৬

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১০

একটি পেন্সিল বলেছেন: যারা বিজ্ঞানকে ভাল বাসে, বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করা যাদের পছন্দ, তাদের আমি পছন্দ করি। সে হিসেবে জাফর ইকবাল স্যারও আমার একজন প্রিয় ব্যক্তিত্ব। তবে তুলনামূলক বেশি। অনেক সুন্দর একটা পোস্ট করেছেন স্যারকে নিয়ে। আর আপনার কল্পনা করার শক্তিও বেশ চমৎকার। সামুতে প্রথম পোস্ট, congratulation.

১১ ই অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৮

রিহানুর ইসলাম প্রতীক বলেছেন: আর আমার প্রথম পোস্টে অভিনন্দন জানিয়ে মন্তব্য করায় আপনাকেও অভিনন্দন। :-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.