নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি প্রযুক্তি প্রিয় মানুষ; ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তি ভালোবাসি। এছাড়াও ভালোবাসি বই আর লেখালেখি পড়তে। মাঝে মাঝে লিখতেও ইচ্ছা করে। এখানে যোগ দিয়েছি হঠাৎ কোন কিছু লিখে ফেললে সেটা সবার মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য।

রিহানুর ইসলাম প্রতীক

রিহানুর ইসলাম প্রতীক › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি অরনিমার

২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:২৯


অরনিমাকে আজ মাত্রাতিরিক্ত আবেদনময়ী লাগছে।
আমি সচরাচর আবেদনকে গ্রাহ্য করি না। কিন্তু আজ এড়িয়েও যেতে পারছি না। ওর দিকে চোখ পড়তেই একরাশ আবেদন এসে মনের ভেতর হানা দিচ্ছে। এই হানার প্রতিশোধ নিতে উদ্বেলিত হচ্ছে বিশেষ কিছু। কিন্তু না, উত্তেজনাকে দমিয়ে রাখতেই হবে। সারাজীবন দমিয়ে রাখলাম, আজ হঠাৎ এর কাছে বশীভূত হওয়ার কোন মানেই হয় না।

অরনিমা আমার বর্তমান প্রেমিকা। ওর গায়ের রঙ শ্যামলা বর্ণের হলেও ওকে এক নজর দেখে আরেক নজর দেখার জন্য চোখ ফেরাবে না এমন ছেলে বোধহয় খুব কমই আছে। ওর চেহারায় আছে অন্যরকম এক মায়া। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো আমি ওর চেহারার মায়ায় পড়ে সম্পর্কে জড়ায়নি। কোনভাবে সম্পর্কে জড়ানোর পর আস্তে আস্তে আমি ওর চেহারায় মায়ায় আটকে গেছি। আজ একবছর পূর্ণ হলো আমাদের সম্পর্কে। ওর সাথে আমার পরিচয়টা কিছুটা কাকতালীয় হলেও সম্পর্কের শুরুটা ছিল সিনেমাটিক।

ওর ইউনিভার্সিটির সাথে আমার ইউনিভার্সিটির একটা বিতর্ক প্রতিযোগীতা ছিল। বিতর্কের বিষয় ছিল- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ধনী-দরিদ্র বৈষম্য বৃদ্ধিতে সহায়ক ভুমিকা রাখছে। আমাদের ইউনিভার্সিটি এর পক্ষে ছিল। সবাই মিলে আমরা এই বিষয়টির পক্ষে খুব বেশি যুক্তি দাঁড় করাতে পারিনি, যেজন্যে হেরে গিয়েছিলাম। তবে মজার বিষয় হচ্ছে আমি সেদিন সেরা বিতার্কিক নির্বাচিত হয়েছিলাম। বিষয়টি আমার জন্যে আনন্দদায়ক হলেও ইউনিভার্সিটিকে জেতাতে পারি বলে মনটা খুব খারাপ ছিল। অনুষ্ঠান শেষে সবাই যখন বেড়িয়ে যাচ্ছে আমি তখন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে কললিস্ট চেক করছিলাম যে এই সময়ের মাঝে কে কে কল দিয়েছিল। হঠাৎ পেছন থেকে একটা মেয়ে কন্ঠ বলে উঠলো, আপনি ভীষণ বাগপটু, চমৎকার বিতর্ক করেছেন। সামনাসামনি এসে প্রশংসা না করে পারলাম না। আমি ঘুরে দেখি অরনিমা, ওদের দলের প্রধান বক্তা ছিল।
'ধন্যবাদ। আপনিও কিন্তু অনেক ভালো বিতর্ক করেছেন। যুক্তিগুলো চমৎকার ছিল।'
'জিততে পারেননি বলে মন খারাপ করবেন না। আসলে বিষয়টির পক্ষে দেওয়ার মত যুক্তি সত্যিকার অর্থেই তেমন ছিল না। ভাগ্যটা আমাদের দিকে ছিল বলেই হয়তো বিষয়টির বিপক্ষ বলার সুযোগ পেয়েছিলাম। তা নাহলে নির্ঘাত হেরে যেতাম। আর পক্ষের হয়েও আপনি কিছু কিছু যেসব যুক্তি উপস্থাপন করলেন তাতে আমরা প্রায় ভয়ই পেয়ে গেছিলাম যে হেরে যাই কিনা। অস্বীকার করার উপায় নেই আপনার যুক্তিগুলো মারাত্মক ক্ষুরধার ছিল, আমরা ওরকম যুক্তি চিন্তাও করিনি।'
'থাক, সেসব বলে আর লাভ নেই অরনিমা।'
'ওমা! আপনি আমার নামটা এখনো মনে রেখেছেন মিস্টার প্রলু?'
'মাত্রইতো শুনলাম, এতো তাড়াতাড়ি ভুলি কি করে?'
'তা বটে।'
'হুমম, আর আপনিওতো আমার নাম ভুলে যাননি।'
'আপনার নাম আপাতত ভুলতে চাইলেও পারছি না। সবাই আপনার নামই বলাবলি করছে। যা দেখিয়েছেন না জনাব।'
আমি কোনকিছু না বলে কেবল একটা মুচকি হাসি দিলাম। অরনিমা আবার বললো,
'আজ তাহলে আসি। ভবিষ্যতে আবার দেখা হলে উপভোগই করবো সেটা। ভালো থাকবেন।'
আমিও কেবল ভালো থাকবেন বলেই বিদায় দিলাম। এই ছিল আমাদের কাকতালীয়ভাবে পরিচয়ের কাহিনী। সেদিন অরনিমার প্রতি আমি বিন্দু পরিমান আকর্ষণবোধও করিনি। অবশ্য এর পেছনে একটা কারণও ছিল বটে। সেই সময় আমার সম্পর্ক ছিল তিয়াশা নামের একটা মেয়ের সাথে। একই কলেজে পড়তাম আমরা। সেকেন্ড ইয়ারে সম্পর্কের শুরু। সবই ভালো ছিল। ওর আমার মত পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স না হওয়ার ও একটা প্রাইভেট ভার্সিটিতে ভর্তি হয়। তখন থেকেই আমাদের মাঝে শারীরিক একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়। কিন্তু শারীরিক দূরত্ব সৃষ্টি হলেও ভার্সিটির প্রথম বছরটায় আমাদের মাঝে মনের নৈকট্য এতটুকুও কম ছিল না। আমি ওকে ভীষণ ভালোবাসতাম। ওর সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর আমি কখনো অন্য মেয়ের দিকে অপ্রয়োজনে দ্বিতীয়বার তাকাতাম না। তাছাড়া ও নিজেও মজা করে বলতো, অন্য মেয়ের দিকে তাকালে নাকি আমার চোখ তুলে যত্ন করে ওর কাছে রেখে দিবে। আমি শুধু হাসতাম আর মনে মনে ভাবতাম, অনেক ভালোবাসে বলেই কিনা হয়তো ওর এই হিংসাটা হয়। সমস্যা দেখা দিল সেকেন্ড ইয়ারের শুরু থেকে। খেয়াল করতাম ও আর আমার প্রতি তেমন একটা উৎসাহী না। আগে প্রতি সপ্তাহে ও নিজেই ডেকে অন্তত দুইবার করে দেখা করতো আর এখন দেখা করার ব্যাপারে ওর কোন আগ্রহই দেখি না। তবে আমি বিষয়টাকে তেমন সিরিয়াসলি নেইনি। কেননা ও ফোন দিলে ভালোভাবেই কথা বলতো। আর ও নিজেও যদিও আগের চেয়ে কম কিন্তু মাঝে মাঝে ফোন দিত। প্রতিদিন রাত্রে দশটার দিকে একবার কথা হতো কয়েকমিনিট। তখনই গুড নাইট বলে বিদায় নিয়ে সেদিনের জন্য রেখে দিতাম। রাত জেগে আমরা কখনো কথা বলতাম না। ওটা কেবল টাকা আর সময়ের অপচয় ছাড়া কিছুই না আমার কাছে। রাত জেগে কথা বলায় ভালোবাসার নয়, যৌনতার প্রকাশ পায় কেবল। আমি ওকে ভালোবেসেছিলাম ভালোবাসার জন্য, যৌনতাকে চরিতার্থ করার জন্যে নয়।

একদিন হঠাৎ রাত বারোটায় পড়তে পড়তে আমার খুব অস্থির লাগছিল। ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম কিন্তু ঘুমও আসছিল না। আমি জানতাম রাত একটা পর্যন্ত পড়ার পর তিয়াশা ঘুমায়। তাই ভাবলাম ওর সাথে একটু কথা বলি যদি কিছুটা ভালো লাগে। এই ভেবে ফোন দিলাম। কিন্তু একি! নাম্বার যে বিজি। ভালো লাগাতে যেয়ে অস্থিরতা বেড়ে গেলো বহুগুণ। এরপর সেদিন প্রায় আরো আধঘন্টা ট্রাই করেছি কিন্তু ওকে পাইনি। কেবলই ওদিক থেকে একজন বলেছে, 'আপনি যে নাম্বারে ফোন করেছেন তা এই মুহুর্তে ব্যস্ত আছে।' ওর কল ওয়েটিং সার্ভিস চালু না থাকায় ও টেরও পায়নি যে আমি ওকে ফোন দিয়েছিলাম। পরদিন সকালে ঠিকই কথা হয়েছে আমাদের মাঝে কিন্তু আমি ওকে এ ব্যাপারে কিছুই বলিনি। এরপর আরো টানা চারদিন এভাবে ঐ সময়ে কল দিয়ে ব্যস্ত পেয়েছি আমি ওকে। আমার যা বুঝার বুঝা হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু আমি ওকে তারপরেও কিছু বলিনি। বলেই আর কী হত! ওতো আর আমার তখন ছিল না। হাজার বলেও ওকে একটুও ঘোরানো যেত না আমার দিকে। সম্পর্কের ফরমাল সমাপ্তিটা যে একটা একটা সময়ের ব্যাপার ছিল মাত্র তা হারে হারেই টের পাচ্ছিলাম আমি। কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম সম্পর্কটা ও নিজেই বলে শেষ করুক। কারণ আজ ও আমাকে ঠকিয়ে অন্যজনের সাথে সম্পর্ক করছে মানে হলো ও নিজেও একদিন এই ছেলে কিংবা অন্য কোন ছেলের কাছে ঠকবেই। সেদিন যাতে আমাকে বিন্দু পরিমাণও দোষ দিতে না পারে এখনকার সম্পর্ক সমাপ্তি করার জন্য তাই আমার এই চাওয়া। বেশিদিন অপেক্ষা করতে হলো না আমাকে। কয়েকদিনের মাঝেই একদিন ও আমাকে ফোন দিয়ে বলছে,
'প্রলু, আমাকে ভুলে তুমি সামনে এগিয়ে যাও।'
আমি এই কথার জন্য প্রস্তুত ছিলাম, তাই উত্তরটাও রেডি করেই রেখেছিলাম। আমি বললাম,
'আমি তোমাকে কিভাবে ভুলবো যেখানে বাইরে বের হয়ে ডাস্টবিন ও কুকুরের মত বাজে জিনিসগুলা দেখলেই তোমার কথা মনে হয়?'
ও বিস্ময়ের সাথে বলেছিল, 'মানে কী!!!"
এরপর আমি ওকে যা বলেছিলাম সেসবই ওকে বলা আমার শেষ কথা ছিল।
'তিয়াশা, তুমি যে এখন অন্য আরেকজনের সাথে সম্পর্কে আছো আমি সেটা জানি। আমাকে ঠকিয়ে, আমার বিশ্বাসকে ঠকিয়ে তুমি বিগত মাসখানেক থেকেই অন্য আরেকজনের সাথে নিয়মিত কথা বলে আসছো। আমার ধারণা যদি ভুল না হয় তবে আমি নিশ্চিত এ তোমার ডিপার্টমেন্টের তোমার সেইম ইয়ারেরই কেউ। নিয়মিত একসাথে ক্লাস করায়, পাশাপাশি বিচরণ করায় তুমি তার প্রতি এক ধরনের নিষিদ্ধ আকর্ষনে জড়িয়ে গেছো। সেখান থেকেই সম্পর্কের উৎপত্তি। আমার প্রতি তোমার ভালোবাসাটা যদি সত্য হতো তাহলে তুমি কখনো তার প্রতি আকর্ষণ অনুভব করলেও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে না। তুমি আমার সাথে প্রতারণা করলে তিয়াশা। অবশ্য এই জন্যে আমার কোনো আফসোস নেই, বরং ভালোই লাগছে। কয়জনের জীবন থেকে এভাবে একটা প্রতারক স্বেচ্ছায় চলে যায় বলো? অনেক বড় বাঁচা বাঁচিয়েছেন খোদা। তবে আমি তোমাকে কোন অভিশাপ দিচ্ছি না। বরং ধন্যবাদ এবং তোমাদের দুজনের জন্য শুভ কামনা থাকলো। খোদা হাফেজ।'
এরপর কয়েক সেকেন্ড আমি ফোনটা ধরে রেখেছিলাম, ওদিক থেকে আর কোনো কথা আসছিল না। আমি তারপর কেবল আস্তে করে লাইনটা কেটে দিয়েছিলাম।

তিয়াশার সাথে বিচ্ছেদের আরো প্রায় চারমাস আগে অরনিমার সাথে আমার পরিচয় হয়েছিল সেই বিতর্ক অনুষ্ঠানে, কিন্তু সেদিনের পর আর কখনো কথা হয়নি। মাঝে মাঝে অরনিমাকে দেখতাম আমাদের ভার্সিটিতে ওর কয়েকটা ফ্রেন্ডের সাথে ঘুরতে আসতে। কিন্তু আমি কখনো কাছে গিয়ে কথা বলিনি। তিয়াশার সাথে বিচ্ছেদের আরো প্রায় চারমাস পর একদিন ভার্সিটির মুখেই একটা চায়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম অরনিমা আরো কয়েকজনের সাথে আমার পাশ দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু আমাকে খেয়াল করেনি। ঠিক সেই সময়েই কানে আসলো একটা ছেলে বলছে, দেখ দোস্ত, মালটা শ্যামলা হলেও কিন্তু ব্যাপক সেক্সি। কথাটা কানে আসা মাত্রই মাথায় রক্ত উঠে গেলো, ফিরে সেদিকে তাকিয়ে দেখলাম ভার্সিটিরই এক জুনিয়র। চায়ের কাপটা রেখে উঠে গিয়ে বাম হাত দিয়ে ছেলেটার ডান গালে দিলাম কষে এক চড় আর রাগের কারণে অনেকটাই জোরেই বলে ফেললাম, এই শিখেছিস এতো বছর বয়সে? মেয়েদের কিভাবে সম্মান করতে হয় জানিস না? উত্তেজনা উঠেছে তবে আস্তে আস্তেই বলতি, অন্য মানুষের কানে কেন গেল? চড়ের শব্দে আর কথার ধরনে ততক্ষণে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে গিয়েছে আর তখনই খেয়াল করলাম অরনিমাকে আমার দিকে আসতে। আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েই জিজ্ঞেস করলো,
'কী হয়েছে প্রলু? মারলেন কেন ছেলেটাকে?'
আমি বললাম, 'মারার পর ছেলেটাকে যা বললাম তাতে নিশ্চয় আপনার বুঝে যাওয়ার কথা কেন মেরেছি। তারপরেও না বুঝলে বলছি ছেলেটা আপনাকে নিয়ে বাজে কমেন্ট করেছিল।'
অরনিমা বলল, 'তাই ধারণা করেছিলাম। কিন্তু আপনি এভাবে কতজনকে মারবেন বলুন? প্রতিদিন এরকম কত কথা শুনতে হয় আপনার কোনো ধারণা আছে? এভাবে মেরে নয়, মেরে কিছু হবে না, এদের পরিবর্তনটা ভেতর থেকে আনতে হবে। এই ধরনের কথা বলার পর না মেরে এই ধরনের কথা যাতে না বলে এমন শিক্ষা এদের দিতে হবে। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম।'
'আপনার কথা ঠিক আছে। আসলে আপনার মত একটা ভালো মেয়েকে নিয়ে এভাবে বাজে কথা বলায় আমার মাথায় রক্ত চড়ে গিয়েছিল, নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি।'
'এটুকুতেই এমন নিয়ন্ত্রণ হারা হলে চলবে জনাব? আর কত কিছুইতো ঘটতে পারে।' এটা বলেই অরনিমা ছেলেটির দিকে তাকালো। ছেলেটি এতক্ষণ মুখ নিচু করে পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। অরনিমা ছেলেটিকে বলতে শুরু করলো,
'খুব পছন্দ হয়েছে আমাকে? এখনই যাবে নাকি হোটেল রুমে? নাকি তোমার কোনো বন্ধু আছে লিটন যার ফ্লাটে নিয়ে যেতে চাও।'
ছেলেটি কাচুমাচু করে বললো, 'সরি আপু, ভুল হয়েছে।'
অরনিমা আবার বলল, 'এই যে মাত্র আপু ডাকলে, অথচ এই আপুকে নিয়েই কিছুক্ষণ আগে না জানি কত বাজে চিন্তা করেছে। পারো কিভাবে যাকে আপু ডাকো তাকেই আবার কল্পনায় বিছানা পর্যন্ত নিয়ে যেতে? নিজের বোন হলে পারতে? অন্য মেয়েদেরকে নিজের বোনের মত ভাবো না কেন? যাও, এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে ক্লাসে যাও।'
ছেলেটি তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে চলে গেল। আমি কেবল মুগ্ধ হয়ে অরনিমার কথা শুনছিলাম। অরনিমা যেভাবে কথাগুলো বললো আমি নিশ্চিত এই ছেলে জীবনে আর কোনো মেয়েকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করবে না। অরনিমা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, চলুন কোথাও গিয়ে বসি। অনেকদিন পর আপনার সাথে দেখা হলো।
এরপর সেদিন অরনিমার আমার ভার্সিটিতে পড়া কয়েকজন ফ্রেন্ড, অরনিমা আর আমি মিলে এক জায়গায় বসে ঘন্টাখানেক গল্প করেছিলাম। অরনিমার সেদিন ক্লাস না থাকায় ও আমাদের ভার্সিটিতে ঘুরতে এসেছিল। আমার ভার্সিটিতে পড়া ওর ফ্রেন্ডদের ক্লাসের টাইম হওয়ায় ওরা অরনিমা আর আমাকে রেখে চলে গিয়েছিল। কাকতালীয়ভাবে সেদিন আমার ক্লাসগুলো বাতিল হওয়ায় দীর্ঘক্ষণ ঘুরে বসে অরনিমার সাথে গল্প করেছিলাম সেদিন। সামনা সামনি বসেই একজন আরেকজনের ফেসবুক আইডিতেও এড হয়েছিলাম। ও চলে যাওয়ার আগে অনেক কাচুমাচু করে আমার ফোন নাম্বারটা চেয়েছিল। আমি সাথে সাথে দিয়ে দিয়েছিলাম এবং ফোন নাম্বার চাওয়া নিয়ে ওর অস্বস্তি অবস্থা কাটানোর জন্য বলেছিলাম, আরেহ, আমিওতো মাত্র আপনার নাম্বার চাইতে যাচ্ছিলাম। দেখো দেখিনি কী মিল! এইটুকু বলেই দুজনের সেকি হাসি সেদিন।

এরপর থেকে আমাদের মাঝে নিয়মিতই কথা ও চ্যাটিং হতে শুরু করলো। আমি ফিল করছিলাম ও আমার প্রতি দুর্বল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু মেয়েদের বুক ফাটেতো মুখ ফাটে না অবস্থার জন্যই যে ও কিছু বলছিল না তা আমি ভালো করেই বুঝতে পারছিলাম। এদিকে আমি তখনো ততটা দুর্বল হয়নি। দুর্বল হয়নি বললে অবশ্য ভুল হবে, আমার অতীত অভিজ্ঞতার কথা মনে করে আর নতুন করে সম্পর্কে জড়াতে ইচ্ছা হচ্ছিল না। তারপর ক্রমে ক্রমে আমারো থাকতে না পারার মত অবস্থা শুরু হলো। এর মাঝে একসাথে অনেকদিন দেখা করেছি, ঘুরেছি, রেস্টুরেন্টে খেয়েছি। এতে খরচ যা হতো তা সবসময় আমিই দিতে চাইতাম কিন্তু ও আমাকে দিতে না দিয়ে সব নিজেই দিতে চাইতো। আমিও ওকে দিতে দিতাম না। পরে ও নিজেই সুন্দর একটা সমাধান দিল। খাওয়া-দাওয়া, ঘুরাঘুরি, মজা যেহেতু দুজনেই করছি সুতরাং খরচটাও দুজনেই সমানভাগে ভাগ করে দিব। অগত্যা আমাকে রাজিই হতে হয়েছিল তাতে। এই ঘোরাঘুরির মাঝেই আমি ওকে অনেক কাছে থেকে দেখেতে পেয়েছি। সবসময়ই দেখেছি কখনো সামনে কোন পথশিশু এসে দাঁড়ালে আশেআশে দোকান থাকলে কিছু কিনে দিতে আর আর না থাকলে টাকা দিতে। ওর কাছে থেকেই শিখেছি কিভাবে রিক্সাওয়ালাদের বয়স অনুযায়ী কিভাবে চাচা কিংবা ভাই ডেকে সুন্দরভাবে কথা বলতে হয়। ওর কাছ থেকেই শিখেছি একটা রিকশাওয়ালা চাচাকে কিভাবে পাঁচটা টাকা বেশি দিয়ে মুখে হাসি ফোটাতে হয়। সুখ যে কতটা সহজ তা ওই আমাকে দেখিয়েছে। কেবল নিজের ভালো করে নয়, অন্যের ভালো করেও যে সুখ পাওয়া যায় তা ওকে দেখেই শিখেছি। মাঝে মাঝে পার্কে ওকে নিয়ে বেঞ্চিতে বসে থাকতে গিয়ে দেখতাম, কোন ছোট বাচ্চা সামনে এসে আমাদের কাছে ভিক্ষা চাইতো তখন ও বলতো, ভিক্ষা করবি না, এটা অনেক খারাপ। যা কোথাও থেকে খুঁজে যেকোন একটা ফুল নিয়ে আয়, তর কাছ থেকে একশো টাকা দিয়ে কিনবো। এরপর পিচ্চিটা যদি একটা পুরোনো ময়লা পড়ে থাকা ফুলও নিয়ে আসতো ওকে দেখতাম সেটা সাদরে গ্রহণ করে একশো টাকা দিয়ে কিনতে। আর তখন সেই পিচ্চিগুলোর মুখে যে হাসি দেখতাম তার দাম এক পৃথিবী বিক্রি করেও মেটানো সম্ভব নয়!
ও জীবনে আসার পর দুঃখ জিনিসটাকে আমি ভুলেই গিয়েছি। শেষ কবে আমার দুঃখ হয়েছে ঠিক মনে করতে পারছি না। আমার যেকোন সমস্যাতেই ও কিভাবে যেন খুব সুন্দর সমাধান দেয়, আমি ওর সমাধান ফলো করে ঠিকই সমস্যা থেকে উত্তরণ পাই। সবমিলিয়ে এরকম একজনকে জীবন সঙ্গিনী না করার মত ভুল আর জীবনে দ্বিতীয়টি কিছু হতে পারে না। তাই একদিন সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলাম ওকে আমার সিদ্ধান্তের কথা জানাবো। ফোনে কিংবা মেসেজে নয়, সামনা সামনি ওকে আমি আমার ভালোলাগার কথা জানাতে চাই। তাই একদিন ওকে বললাম পরেরদিন ধানমন্ডি লেকে দেখা করার জন্য। পরেরদিন আমি গিয়ে দেখি ও ইতোমধ্যে এসে পড়েছে। ওর এই ব্যাপারটা আমাকে খুবই মুগ্ধ করতো। দেরিতো নয়ই, বরং সবসময় যেকোন জায়গায় আমার আগেই এসে পড়ে ও। কতক্ষণ আগে এসেছে জিজ্ঞেস করলে বলে এইতো মাত্র এসে বসলাম। কোন দিন যদি আমার দেরি হয় তাহলে আমি আসার সাথে সাথেই আমাকে কোনকিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিজে নিজে আগে বলতে শুরু করে, আজ আমারও একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল, ভাগ্যিস তোমারও দেরি হয়েছে তাই বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। মাত্রই এসে বসলাম আর তুমিও এলে। কথাগুলো আমার মিথ্যা মনে হত, হয়তো আমাকে অস্বস্তি থেকে মুক্তি দিতেই বলতো এসব। তো একদিন আমি এটা যাচাই করার জন্য নির্ধারিত সময়ের আধঘন্টা আগেই এসে একটু আড়ালে দাঁড়িয়ে ওর অপেক্ষা করতে লাগলাম। দেখলাম যে নির্ধারিত সময়ের পনের মিনিট আগে এলো ও। আমি ইচ্ছা করেই তখনো গেলাম না সামনে। এরপর নির্ধারিত সময়ের আরো পনের মিনিট পর ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখি যে সেই একই কথা ওর মুখে, "আজ আমারও একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল, ভাগ্যিস তোমারও দেরি হয়েছে তাই বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। মাত্রই এসে বসলাম আর তুমিও এলে।" সেদিনই আমি বুঝেছিলাম মেয়েটা অন্যদের জন্য কতটা ভাবে, ওর মানসিকতাটা কতটা উন্নত। তবে সেদিন আমি আমার আধঘন্টা আগে আসার কথা ওকে বলিনি। কিন্তু এরপর থেকে আমিও পনের মিনিট আগেই আসতে শুরু করেছিলাম। অথচ দুঃখের বিষয় নিয়মিত পনের মিনিট আগে এসেও দেখি ও আমার আগে থেকেই এসে বসে আছে। সেদিনও পনের মিনিট আগেই গিয়েছিলাম। ওর পাশে বসার সাথে সাথেই ও বলতে শুরু করলো,
'কী ব্যাপার জনাব? আজ এতো জরুরী তলব কেন?'
এরপর আমি সরাসরি বলতে শুরু করলাম, 'আমার জীবনটা পূর্ণ করার জন্য একজন জীবন সঙ্গিনী দরকার, তুমি চির জীবনের জন্য আমার সেই সঙ্গিনী হয়ে আমার পরিপূরকের ভূমিকাটা নিবে?'
ও বললো, 'আমি আরো আগে থেকেই তোমাকে আমার জীবন সঙ্গী ভাবতে শুরু করেছি। আজ তোমার এই প্রোপোজালটার মাধ্যমে আমার ভাবনাটা পূর্ণতা পেলো। হ্যাঁ, আমি তোমার পরিপূরকের ভূমিকাটা নিতে চাই এবং নিলাম।'
অরনিমা এটা বলা শেষ করতেই আমি আমার পকেট থেকে একটা আংটি বের করে ওর ডান হাতের অনামিকায় পরিয়ে দিলাম। এরপর সেদিন ও আমার কাধে মাথা রেখে আমার বাম হাতটা ওর হাত দুটো দিয়ে ধরে রেখে দীর্ঘক্ষণ বসে ছিল, কোনো কথা বলেনি। মাঝে কয়েকবার মনে হয়েছিল কাধটা কী যেন ভিজিয়ে দিচ্ছে। তারপর সেদিন ও চলে যাওয়ার আগে আমি ওকে এক তোড়া গোলাপ উপহার দিয়েছিলাম।
সেদিন থেকেই আমি নিজেকে অরনিমার ভাবি। হ্যাঁ, আমি অরনিমার। তবে আমি ওকে আমার ভাবতে যাই না, কেননা ও সেটা নিজেই ভাবে।

আগেই একবার বলেছি আজ আমাদের সম্পর্কে এক বছর পূর্ণ হলো। আজ ও শাড়ি পরে এসেছে। তো আমার মনে হয় এই কারণেই হয়তো আজ ও শাড়ি পরে এসেছে। বরাবরের মতই ও আজও মুখে কোন প্রসাধনী ব্যবহার করেনি। তারপরও কেবল এই শাড়িটাতেই ওকে মাত্রাতিরিক্ত আবেদনময়ী লাগছে। আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলতে পারবো এই আবেদনময়তার কাছে যেকোন সৌন্দর্যই হার মানবে।
আজ অনেক ঘুরবো আমরা। ওকে নিয়ে একটা রিকাশায় উঠলাম। বরাবরই ওকে আমার বাম পাশে বসিয়ে রিকাশার হুড উঠিয়ে দিতে বললাম চাচাকে। বাম হাত দিয়ে পেচিয়ে ধরলাম ওর কোমর। আর ডান হাত দিয়ে ধরলাম ওর ডান হাত। ওর বাম হাত ওর ভ্যানিটি ব্যাগ আগলে রেখেছে। ভ্যানিটি ব্যাগটাকে ধন্যবাদ দিতেই হয় দুটো কারণে। এক, ব্যানিটি ব্যাগ থাকায় ওর বাম হাত এটা ধরে রাখা ব্যতিত অন্য কিছুতে বাধার কারণ হতে পারছে না। আর দুই নাম্বার কারণটা হচ্ছে, না থাক এটা বলা যাবে না, অব্যক্তই থাক।

লিখায়: রিহানুর ইসলাম প্রতীক

ফেসবুকে লেখক: Rihanoor Protik

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৯:৪৩

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: ভালো লাগলো গল্প।

'অরনিমা আপনার বর্তমান প্রেমিকা'! উক্তিটি ভালো লাগলো।

২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:০০

রিহানুর ইসলাম প্রতীক বলেছেন: হা হা হা, এতো উক্তি রেখে এটাকেই আপনার ভালো লাগলো!

২| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:৩৮

নাঈম জাহাঙ্গীর নয়ন বলেছেন: সবাই এত সহজে নতুনকে গ্রহণ করতে পারেনা। যেহেতু বর্তমান বলেছেন, সেহেতু পুরাতন কেউ ছিল। পুরাতন ভুলে নতুনভাবে নিজেকে মানিয়ে নেয়া আমার কাছে বড় গুণের ভাই।

ভালো থাকবেন, শুভকামনা রইল।

৩| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১০:১৯

ধ্রুবক আলো বলেছেন: গল্প ভালো লাগলো।

তবে রিকশায় হুড তুলে ঘুরাঘুরি না করাই ভালো। বিয়ে করে সংসারী হওয়াটা সবচেয়ে ভালো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.