নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমরা বাঙ্গালি অন্ন্য যে কোন জাতির থেকে একটু বেশী আবেগপ্রবণ। আবেগি হওয়া টা দোষের কিছু না, কিন্তু বিবেক বুদ্ধি বর্জিত আবেগ অনেক ভয়ানক হতে পারে। ধর্মীয় অনুভূতি আমাদের মধ্যে অনেক প্রবল এবং সেটা হওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু তা যদি এতই সংবেদনশীল হয় যে আমরা নিজেদের বিবেক বুদ্ধি হারিয়ে ফেলি তবে তা সংশ্লিষ্ট ধর্ম সম্পর্কে অন্যদের কাছে ভুল ধারনার জন্ম দিতে পারে। বিশ্বে সব থেকে বেশী ভুল ধারনা ইসলাম সম্পর্কে এবং তা শুধু অমুসলিমদের মধ্যেই নয়, মুসলমানদের মধ্যেও বিদ্যমান। কিছু মানুষের গোঁড়ামির কারণেই মানুষ ইসলামকে ভুল বুঝছে ও এত বিভক্তি সৃষ্টি হচ্ছে।
প্রায় ৯০ ভাগ মুসলিম এর এই দেশে বেশীরভাগ ই আমরা নিজেদের ধর্ম সম্পর্কে জানি না এবং জানতে চেষ্টাও করি না। কারণ আমরা জন্ম সূত্রে মুসলমান, বাপ দাদা মুসলমান তাই আমরাও মুসলমান। আমাদের থেকে একজন সত্যিকারের নাস্তিক ই ভালো, কারণ একজন সত্যিকারের নাস্তিক ই একজন সত্যিকারের আস্তিক হতে পারে সঠিক পথের সন্ধান পেলে।
আমাদের দেশের খুব জমজমাট একটা ব্যাবসা হল মাজার ব্যাবসা। যেখানে প্রতিনিয়ত চলছে ধর্মের নামে অধর্মের চর্চা ।অল্প কিছু দিন আগে জামালপুরের দুরমুঠে গিয়েছিলাম, সেখানে মাসব্যাপী এক মেলা হয়। মানুষ একে গাঁজার মেলাও বলে থাকে। গাঁজার আবার মেলাও হয়,খুব আগ্রহ তৈরি হল। গিয়ে তো আমার চোখ কপালে, যা ভবেছিলাম তার চেয়েও বেশী। যারা মেলায় আসছে তারা বড় বড় সাউন্ডবক্সে হিন্দি গান বাজিয়ে গাঁজা খেতে খেতে আসছে। ভেতরে গিয়ে দেখি জটাধারী বাবারা খেলনা বিক্রি করার মত গাঁজা ও গাঁজা খাবার সরঞ্জামের পসরা সাজিয়ে বসে আছে। আপনি চাইলে কিনতে পারেন আবার সেখানেও খাবার সু-ব্যাবস্থা করা আছে। একটু এগিয়ে গিয়েই পেলাম একটা মাজার, যেখানে হাজার হাজার মোম জ্বলছে। আর আমার কাছেও সব পরিস্কার হয়ে গেলো যে এই মহাযজ্ঞ আসলে এই মাজার কে ঘিরেই। খাবার জন্নে খিচুড়ির অভাব নেই, আর থাকা? এলাকার চেয়ারম্যান সাহেব এই ধর্মপ্রাণ মানুষ গুলোর থাকার জন্ন্যে নিজের বাড়ী ছেড়ে দিয়েছেন। কাউকে কোনদিন এর বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করতে শুনলাম না।
ইসলাম একটি শান্তির ধর্ম। আমাদের নবী (সাঃ) পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। এটা শুধু আমাদের কথা না, একজন বিধর্মী মাইকেল এইচ হার্ট যিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ১০০ জন মানুষের মধ্যে সবার প্রথমে রেখেছেন আমাদের প্রিয় নবী(সাঃ) কে। তিনি তার মহিমান্বিত গুনের মাধ্যমে পৃথিবীর সব থেকে খারাপ সময় কে পৃথিবীর সব থেকে ভালো সময়ে পরিবর্তন করেছিলেন। আর সেই নবী(সাঃ) এর উম্মত হয়ে তার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে কি অশ্রাব্য ভাষায় আমরা অন্যকে গালিগালাজ করি, কত রকমের ঘটনার জন্ম দেই। একবার ও কি আমরা বুজতে চেষ্টা করি এই বিবেক বুদ্ধি বর্জিত আবেগ আমাদের ধর্মের কত বড় ক্ষতি করছে? কিছু মানুষ আছেন যারা সবসময় ই চেষ্টা করেন ইসলাম কে সন্ত্রাসীদের ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে, আর আপনারা তাদের রসদ যোগার করে দিচ্ছেন।
অথচ কোনো মুসলিম যদি কোনো অমুসলিমের প্রতি অন্যায় করেন, তবে রোজ কিয়ামতে খোদ নবী(সাঃ) তার বিপক্ষে লড়বেন বলে হাদীসে এসেছে
'সাবধান! যদি কোনো মুসলিম কোনো অমুসলিম নাগরিকের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তার অধিকার খর্ব করে, তার ক্ষমতার বাইরে কষ্ট দেয় এবং তার কোনো বস্তু জোরপূর্বক নিয়ে যায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তার পক্ষে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ উত্থাপন করব।’ [আবূ দাঊদ : ৩০৫২]
মুসলিম বিশ্বের অন্যতম নেতা আধুনিক মালয়েশিয়ার রুপকার ডঃ মাহাথির মুহাম্মাদ ১৯৯৩ সালে ইসলাম ও শিল্পায়ন শীর্ষক একটি সম্মেলনে বলেন, মুসলমানরা একসময় সারা বিশ্ব নিয়ন্ত্রণ করতো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য সংকীর্ণ চিন্তার উপর ভিত্তি করে ফতোয়া এবং ধর্মের ব্যাখ্যা নিয়ে কলহে আজ আমাদের এই অবস্থা। তুরস্ক যখন একটি বিশ্বশক্তি ছিল তখন দেশের ধর্মগুরুরা সৈন্যদের প্যান্ট পরার উপর আপত্তি তোলেন। আজ প্যান্ট পরা কোন ধর্মীয় বিতর্কের বিষয় নয়। কিন্তু এই তর্কে বিতর্কে তুরস্কের প্রতিরক্ষা আধুনিকীকরন সম্ভব হয় না ও বহিঃশত্রুর আক্রমণ জোরদার হয়ে উঠে। শুধু তাই নয় কুরআনকে ছাপানো ও মসজিদে বিদ্যুতের ব্যবহার হারাম মনে করা হত।
যে কোন ধর্ম অবমাননাই শাস্তিযোগ্য এবং তার প্রতিবাদ অবশ্যই করতে হবে কিন্তু তা তো অন্য ভাবেও হতে পারে। আর দেশের প্রচলিত আইনেও এর বিচারও সম্ভব।গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৪১ নং ধারায় প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার ধর্ম পালন ও সংরক্ষণের অধিকার দেওয়া হয়েছে। অন্য কোনো ধর্ম বা কোনো ধর্মের নেতার বিষয়ে কটূক্তি করা সংবিধান তথা রাষ্ট্রবিরোধী কাজ। সুতরাং যারাই এ কাজটি করবে তারা রাষ্ট্রদ্রোহীতার অপরাধে অপরাধী।দুঃখের বিষয় আমরা আজ যখন আজ একে অপরকে আস্তিক নাস্তিক প্রমানে ব্যাস্ত তখন পশ্চিমা বিশ্ব ভাবছে কি করে মঙ্গলে বসতি স্থাপন করা যায়।ইসলামকে বুঝতে হবে তবেই শান্তি,সমৃদ্ধি আসবে।
©somewhere in net ltd.