নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আগে যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতাম সেখানকার ছাত্র হোস্টেলের গার্ড কামাল ভাই। তার ছোট্ট একটা ফুটফুটে মেয়ে আছে। পেশায় গার্ড হলে কি হবে প্রতিটা বাবার কাছেই তার মেয়ে তার রাজকন্যা। একবার কলেজে গণ্ডগোলের সময় কারোকাছে শুনেছে তার বাবাকে পুলিশ মারছে। ওমনি বাড়ী থেকে দৌড়ে এসে বাবার কোলে উঠে গলা জড়িয়ে কান্না করছে। বাবাকে ছেড়ে কোনভাবেই বাড়ী ফিরবে না, যদি আবার পুলিশ আসে তার বাবাকে মারতে। তার সেই ছোট রাজকন্যাটি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত। প্রতি মাসে এই ছোট মেয়েটির রক্ত বদলাতে হয়। একজন সামান্য গার্ডের জন্যে এ তো আর যা তা কথা নয়। ছোট মেয়ে তার রোগটাও বোঝেনা, যখন রক্ত নষ্ট হতে শুরু করে বাবা মাকে বলে তাকে অনেক মশা কামড়াচ্ছে। কামাল ভাই বললেন, “স্যার চিকিৎসা করে আর কুলাতে পারিনা, এবার বুঝি ছেড়েই দিতে হবে”। কতটা অসহায় হলে একজন পিতা তার রাজকন্যাকে মৃত্যুর মুখে ছেড়ে দিতে পারে
অন্য দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ এর বারান্দায় লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত এক পিতা বাঁচার জন্যে লড়াই করছে, সাথে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান। তৃতীয় সন্তান আমি নিজে, থাকি মেডিকেলের পাসেই এক মেসে। সামনে পরীক্ষা তাই আমার বেশী সময় হাসপাতালে থাকা নিষেধ। জীবন মৃত্যুর পার্থক্য কতটা সুক্ষ হতে পারে, বাঁচার জন্যে লড়াই কতটা নির্মম হতে পারে এটা হাসপাতালে নিজের বাবাকে না দেখলে বুঝতাম না। যেখানে মৃত্যুর জন্যে দিন গুনতে থাকা একজনের পাশের বেডের রোগীটা তার চোখের সামনে মারা যায়,সেখানে একটি ভোরের আলো মানে তারকাছে আরেকটা দিন বেঁচে থাকার আনন্দ। সেদিন সকালে পরের দিনের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, হঠাৎ হাসপাতাল থেকে ফোন আসলো। গিয়ে আর বাবার সাথে কোন কথা বলতে পারিনি। গল্পটা আজ থেকে প্রায় ৯ বছর আগের।
জীবন সৃষ্টিকর্তার এক অমূল্য উপহার। যখন শুনি কেউ আত্মহত্যা করেছে তখন আমি ভেবে পাইনা জীবন নিয়ে মানুষ এমন বিলাসীতা কি করে করতে পারে? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি ৪০সে. কোন একজন আত্মহত্যা করে। জাপানে একটি পাহাড়ের নাম ই দেয়া হয়েছে Suicide Mountain যেখানে মানুষ একা ও দলবেঁধে আত্মহত্যা করতে যায়। আমরাও পিছিয়ে নেই, প্রতিদিন গড়ে ২৮ জন করে বছরে প্রায় ১০,০০০ মানুষ আত্মহত্যা করে বাংলাদেশে। অবাক করার বিষয় হল গুগলে সার্চ দিয়ে দেখি ০.৪৭সেকেন্ডে ৫,১১,০০০ টি পেজ পাওয়া গেলো যেখানে বলা আছে কি করে সহজে, কম খরছে, ব্যাথা মুক্ত উপায়ে আত্মহত্যা করা যায়। এর নতুন সংযোজন মনে হয় সিংহের খাঁচায় লাফিয়ে আত্মহত্যা করা।
আত্মহত্যা হল জীবন সংগ্রাম থেকে মুক্তি পাবার সবচে কাপুরুসচিত উপায়। যে অবস্থাই তৈরি হোক না কেন চারপাশে একটি বার তাকিয়ে দেখুন আপনার থেকেও কত কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছে কত মানুষ। বরং না মরে আপনার মত কষ্টে থাকা অন্তত একটি মানুষের কষ্ট মুছে দিতে চেষ্টা করুন। আমার বিশ্বাস জীবনের নতুন অর্থ খুজে পাবেন। মুহূর্তের কষ্ট টা সাময়িক, সময় মানুষের মনের অনেক বড় বড় ক্ষত পূরণ করে দিতে পারে...............
©somewhere in net ltd.