নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নির্জন বিকেল

রিপন ঘোষ

যেতে চাই বহুদুর

রিপন ঘোষ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঘন্টু মামা (পর্ব-৩)

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৩৭



রিসিপশনের মেয়েটি খটমট করে আমাদের দিকে তাঁকাচ্ছে। মেয়েটির চাহনীতে স্পষ্টত বিরক্তি। কিন্তু ঘন্টু মামার সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। তিনি পা নাড়ানো ও পান চিবুনো দুটোই সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি ঈশারা করেও তাঁকে থামাতে পারিনি। অনেকক্ষণ পান চিবোনোর পর এদিক-ওদিক তাঁকিয়ে বললেন, ধুস! এতো বড় অফিস, সব আছে অথচ পানের পিক ফেলার কিছু নেই! মানুষগুলোর কমনসেন্স নেই বললেই চলে!



আমি ফিসফিস করে বললাম, কমনসেন্স তো নেই তোমার। এতো বড় অফিসে এসে কেউ এভাবে জাবর কাটে! তোমাকে নিয়ে আর পারা গেলোনা। ওপাশে বোধহয় ওয়াশরুম আছে। যাও পিক ফেলে মুখ ধুয়ে এসো।



ঘন্টু মামা উৎসাহ নিয়ে বললেন, কী যে বলিস! পিক ফেললে পানের মজা আছে?



আমি রেগে বললাম, “তাহলে আর কী করবে! গিলেই ফেলো।”



রিসিপশনের মেয়েটি ঠোঁটে কাঠহাসি ফুটিয়ে ভেতরে যাওয়ার ইঙ্গিত করতেই আমরা উঠে দাঁড়ালাম। ঠিক তখনই ঘটলো বিপত্তি। তাড়াহুড়ো করে উঠতে গিয়ে ঘন্টু মামার পা লেগে একটা বড় ফ্লাওয়ার ভাস মেঝেতে পড়ে ভেঙ্গে গেলো। ভাঙ্গার শব্দে পাশের রুম থেকে দু-জন ছুটে এলো। আমি আর ঘন্টু মামা অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ঘন্টু মামা আমতা আমতা করে বললেন, স্যরি। আমি দেখতে পাইনি।



একজন মোটামতো লোক ঘন্টু মামার দিকে বিকটভাবে তাঁকিয়ে বলল, ইটস ওকে। কোথায় যাচ্ছিলেন, যান।



বিশাল রুম। চারদিকে দামী দামী আসবাব ছড়িয়ে আছে। সবগুলো জিনিসই চকচক করছে। একপাশের দেয়ালে বড় একটা পেইন্টিং। মেঝে এতোটাই স্বচ্ছ যে একটা ছোট্ট সুঁচ পড়লেও অনায়াসে খুঁজে পাওয়া যাবে। একটা বড় চেয়ারে একজন সুদর্শন লোক বসে আছেন। লোকটির বয়স বড়জোর পঁয়ত্রিশের কোটায়। কিন্তু এর মধ্যেই যে তিনি নিজেকে ঘুচিয়ে নিয়ে ভালো একটা অবস্থানে আছেন তা উনাকে দেখেই অনুমান করা যায়। তিনি ঘন্টু মামার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, কী ব্যাপার ঘনাচরন বাবু? অনেকদিন পর দেখছি। হঠাত কী মনে করে বলুন তো?

ঘন্টু মামা একগাল হেসে বললেন, আপনাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো। তাই চলে এলাম।



লোকটি বললেন, আপনি মশাই নিজের স্বার্থ ছাড়া কোনদিকে এক পা বাড়ান না। এবার কীসে স্পন্সর করতে হবে! বলে ফেলুন চট করে।



ঘন্টু মামা হেসে বললেন, এজন্যই আপনাকে আমার এতো পছন্দ।



লোকটি বললেন, পছন্দ করে কী করবেন! আমার বারোটা বাজানোই তো আপনার কাজ। এইতো এসেই এতো দামী একটা ফ্লাওয়ার ভাস ভেঙ্গে ফেললেন! আচ্ছা বলুন তো আপনি এতো দুর্ঘটনা প্রবন কেন?



ঘন্টু মামা লজ্জ্বিত হয়ে বললেন, কী করবো বলুন। ইচ্ছে করে তো দুর্ঘটনা ঘটাতে চাইনা। তো যে কাজে এসেছিলাম....



লোকটি ঘন্টু মামাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন, এসব কাজ-টাজ পরে হবে। আগের বারের কথা আমি ভুলিনি। আমি এখন খুব ব্যস্ত। চা দিতে বলছি, খেয়ে বিদেয় হোন।



লোকটির কথায় আমি অপমানিতবোধ করছি। ঘন্টু মামার মুখ দেখে কিছু আন্দাজ করা যাচ্ছেনা। তিনি মুখে হাসি ঝুলিয়েই বললেন, কী যে বলেন! এক কাপ চা খাওয়ার জন্য এতো টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে এখানে এসেছি নাকি! মান্নানের পাঁচ টাকা দামের চায়ের চেয়ে ভালো চা কী আপনার এখানে বানায়?



লোকটি বললেন, বাজে কথা রাখুন। আপনার কোন কাজে আসতে পারলাম না বলে দুঃখিত। প্লীজ আসুন।



ঘন্টু মামা রহস্যের হাসি হেসে বললেন, যেতে বললে আর কী যাওয়া যায়! আমার হাতে আপনাকে বধ করার একটা গোপন অস্ত্র আছে নিশ্চয় ভুলে যাননি?



লোকটিকে খানিকটা অপ্রস্তুত দেখালো তবে যথাসমভব গাম্ভীর্য্য বজায় রেখে বললেন, এই একটা ইস্যু নিয়ে আর কতোকাল ব্ল্যাকমেইল করবেন। এবার নতুন কিছু ভাবুন। এসব আমার কোন মাথাব্যাথা নেই।



ঘন্টু মামা মাথা চুলকে বললেন, ঠিক বলছেন তো?



লোকটি বললেন, সবকিছুর লিমিট আছে। আপনি নিজের সীমা অতিক্রম করছেন। আমি আপনার কোন বিষয়ে স্পন্সর করতে পারবোনা। গতবার আমার শিক্ষা হয়ে গেছে। টাকা গাছে ধরেনা। অনেক কষ্ট করে রোজগার করতে হয়।



ঘন্টু মামা বললেন, কী করবো বলুন! গতবার কমিটির মধ্যেই একটা গন্ডগোল ছিল। এবার কোন সমস্যা হবেনা। আপনার প্রচারনা ঠিকমতো হবে।



লোকটি বললেন, আমার কোন প্রচারনা চাইনা। দয়া করে আপনি আসুন।



ঘন্টু মামা উঠে দাঁড়ালেন। দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার পেছন ফিরলেন। লোকটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, সত্যি যাচ্ছি।



লোকটি ঘন্টু মামার কথাকে কোন পাত্তা না দিয়ে ফাইলে মনোযোগ দিলেন। ঘন্টু মামা আর আমি বেরিয়ে এলাম। বেরিয়ে আসার সময় রিসিপশনের মেয়েটি এমনভাবে আমাদের দিকে তাঁকাচ্ছিল যেন পারলে গিলে খায় আর কি!



সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে আমি ঘন্টু মামাকে জিজ্ঞেস করলাম, এ কী গো! তুমি যে লোকটাকে রীতিমতো ব্ল্যাকমেইল করছিলে? কী ব্যাপার বলো তো?



ঘন্টু মামা হেসে বললেন, সে অনেক কাহিনী। তোর জেনে কাজ নেই।



আমি বললাম, কিন্তু লোকটি তো কোন স্পন্সর করবেনা। এখন কী করবে? হাতে খুব একটা সময় নেই। শীঘ্রই টিম এন্ট্রি করতে হবে।



ঘন্টু মামা আবার রহস্যের হাসি হেসে বললেন, চিন্তা করিস না। কালকের মধ্যে দেখিস ঠিকই যোগাযোগ করবে। শোন, এদিকে কোন একটা দোকানে খুব ভালো বিরিয়ানী বিক্রি করেনা? এদিকে যখন এসেছি বিরিয়ানীটা খেয়েই যাই।



এই একটা ব্যাপারে ঘন্টু মামার কোন ক্লান্তি নেই। একটু আগেই যে পরিমাণ অপমানিত হয়ে এসেছেন তারপরও একজন মানুষ এতো নির্দ্বিধায় খাওয়ার কথা বলে কীভাবে! অপমান গিলে আমার পেট এমনিতেই ভরে গেছে তবুও ঘন্টু মামার পেছনে আমাকেও ছুটতে হলো।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:২৯

মদন বলেছেন: +++++++++++++++

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৪২

রিপন ঘোষ বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৩:৩৬

নিলু বলেছেন: লিখে যান

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৪২

রিপন ঘোষ বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৯

রহস্৪২০ বলেছেন: মাম চালায় যান

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৪৫

রিপন ঘোষ বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৭:৪২

জাফরুল মবীন বলেছেন: ২য় ও ৩য় পর্ব একসাথেই পড়লাম।ভালই লিখছেন :)

শুভকামনা জানবেন।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:১৯

রিপন ঘোষ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ জাফরুল মবীন ভাই।

৫| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১৪

অঘটনঘটনপটীয়সী বলেছেন: ভালই চলছে দেখি গল্পটা। শুভকামনা রইল।

৬| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩১

প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার, আগের পর্বও পড়েছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.