নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
স্বপ্নময় পথিক। দেখা, শোনা ও জানাগুলিকে ব্লগের পাতায় রেখে যেতে চাই।
ছবি:অন্তর্জাল
১০ জানুয়ারি ১৯৭২। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে আসেন স্বাধীন বাংলাদেশে। ১৯৭২ সালের এদিন বেলা ১টা ৪১ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। তিনি পাকিস্তান থেকে ছাড়া পান ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি। এদিন ভোর রাতে বঙ্গবন্ধুকে বিমানে তুলে দেয়া হয়। সকাল সাড়ে ৬টায় তিনি লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছান। ৯ জানুয়ারি তিনি বৃটিশ বিমান বাহিনীর একটি বিমানে দেশের পথে যাত্রা করেন। বাংলাদেশে ফেরার পথে বিমানটি দুই ঘণ্টার যাত্রা বিরতি করে দিল্লীতে।
বঙ্গবন্ধু আসবেন বলে বিমানবন্দর থেকে রেসকোর্স মাঠ পর্যন্ত রাস্তা ছিল লোকে লোকারণ্য। যেন মানুষের এক মহাসমুদ্র। বিমান থেকে বঙ্গবন্ধু নামার সাথে সাথে এক আবেগঘন ও আনন্দমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। শ্লোগান, ফুলের মালা আর পুষ্প বৃষ্টিতে বঙ্গবন্ধুকে বরণ করে নেয়া হয়। বিমান বন্দর থেকে রেসকোর্স পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু গাড়িতে দাঁড়িয়ে হাত নাড়তে নাড়তে রাস্তার দু’পাশের লাখ লাখ মানুষের অভিবাদন গ্রহণ করেন। বিকাল পাঁচটায় রেসকোর্স ময়দানে দশ লাখ মানুষের সামনে তিনি ভাষণ দেন। এই সেই রেসকোর্স ময়দান, ৭ মার্চ যেখানে দাঁড়িয়ে তিনি স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। উপস্থিত মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা আর শ্রদ্ধায় আবেগাপ্লুত বঙ্গবন্ধু ভাষণ দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন।
বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১৭ মিনিট জাতির উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন। যা ছিল জাতির জন্য দিকনির্দেশনা। বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তি কী হবে, রাষ্ট্র কাঠামো কী ধরনের হবে, পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে যারা দালালী ও সহযোগিতা করেছে তাদের কী হবে, বাংলাদেশকে বহির্বিশ্ব স্বীকৃতি দেয়ার জন্য অনুরোধ, মুক্তিবাহিনী, ছাত্র সমাজ, কৃষক, শ্রমিকদের কাজ কী হবে, এসব বিষয়সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে নির্দেশনা। তিনি ডাক দিলেন দেশ গড়ার সংগ্রামে। রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত মন্ত্রমুগ্ধ জনতা দু’হাত তুলে সেই সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
যাদের প্রাণের ও ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সেদিন বঙ্গবন্ধু ভাষণের শুরুতে বলেন, ‘স্মরণ করি আমার বাংলাদেশের ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, বুদ্ধিজীবী, সিপাই, পুলিশ, জনগণকে, হিন্দু, মুসলমানকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের আত্মার মঙ্গল কামনা করে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে আমি আপনাদের কাছে দুই একটা কথা বলতে চাই।’
তিনি বলেন, আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই, এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি আমার বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়, এই স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না। যদি এ দেশের মা- বোনেরা ইজ্জত ও কাপড় না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণতা হবে না যদি এ দেশের মানুষ, যারা আমার যুবক শ্রেণী আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়।’
দেশের উন্নয়নের জন্য ডাক দিলেন এভাবে- ‘যথেষ্ট কাজ পড়ে রয়েছে। আপনারা জানেন, আমি সমস্ত জনগণকে চাই, যেখানে রাস্তা ভেঙ্গে গেছে, নিজেরা রাস্তা করতে শুরু করে দেও। আমি চাই জমিতে যাও, ধান বোনাও, কর্মচারীদের বলে দেবার চাই, একজন ঘুষ খাবেন না, আমি ক্ষমা করব না।’
রেসকোর্সের জনসভায় তিনি মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে শিশুর মতো কান্নায় ভেঙে পড়েন। ভাষণে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, বিশ্বকবি তুমি বলেছিলে ‘সাত কোটি সন্তানের হে মুগ্ধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি।’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তুমি দেখে যাও, তোমার আক্ষেপকে আমরা মোচন করেছি। তোমার কথা মিথ্যা প্রমাণিত করে আজ ৭ কোটি বাঙালী যুদ্ধ করে রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছে। হে বিশ্বকবি তুমি আজ জীবিত থাকলে বাঙালীর বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে নতুন কবিতা সৃষ্টি করতে।’
ভাষণের এক পর্যায়ে বলেন আমার সেলের পাশে আমার জন্য কবর খোঁড়া হয়েছিল। আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম। বলেছিলাম, আমি বাঙালী, আমি মানুষ, আমি মুসলমান, একবার মরে দুইবার মরে না। আমি বলেছিলাম, আমার মৃত্যু এসে থাকে যদি আমি হাসতে হাসতে যাব। আমার বাঙালী জাতকে অপমান করে যাব না। তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইব না এবং যাবার সময় বলে যাব, জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালী আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।’
বাঙালী জাতির প্রতি অবিচল আস্থা ছিল তাঁর। স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে সেদিন বলেছিলেন এই বাংলাদেশে হবে সমাজতন্ত্র ব্যবস্থা, এই বাংলাদেশে হবে গণতন্ত্র, এই বাংলাদেশ হবে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র।’
মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান যেমন সত্য তেমনি এ দেশের মাটিতে ভারতীয় সৈন্যের অনির্দিষ্টকালের অবস্থানের ফলে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়াও ছিল এক বাস্তব সত্য। আর তা ভেবে বঙ্গবন্ধু দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন, ‘যারা জানতে চান আমি বলে দেবার চাই, আসার সময় দিল্লীতে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে যে সময় আলোচনা হয়েছে। আমি আপনাদের বলতে পারি, আমি জানি তাকে। তাঁকে আমি শ্রদ্ধা করি। সে পন্ডিত নেহেরুর কন্যা, সে মতিলাল নেহেরুর ছেলের মেয়ে। তারা রাজনীতি করছে। ত্যাগ করছে। তারা আজকে সেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছে। যেদিন আমি বলব সেই দিন ভারতের সৈন্য বাংলার মাটি ছেড়ে চলে যাবে। এবং আস্তে আস্তে কিছু সৈন্য সরায়ে নিচ্ছে।’
তিনি জনগণকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার আহ্বান জানিয়ে বলেন আমি দেখায় দেবার চাই দুনিয়ার কাছে শান্তিপূর্ণ বাঙালী রক্ত দিতে জানে, শান্তিপূর্ণ বাঙালী শান্তি বজায় রাখতেও জানে।’
মহান মুক্তিযুদ্ধে বহির্বিশ্বের সমর্থনকে অকুণ্ঠ চিত্তে স্বীকার করেন এ ভাষণে। পাশাপাশি তিনি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানান ভারত সরকার, সে দেশের জনগণ ও তাদের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে। কৃতজ্ঞতা জানান ব্রিটেন, জার্মান, ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়নকে। আবার বঙ্গবন্ধু মার্কিন জনগণকে ধন্যবাদ জানান, সরকারকে নয়।
যুদ্ধাপরাধীদের গণবিরোধী ভূমিকা পালন করার ফলে মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর প্রতিহিংসাপরায়ণবশে অনেক সহিংস ঘটনা ঘটে। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু সর্তকবাণী উচ্চারণ করেন, ‘আজ আমার কারও বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা নাই, একটা মানুষকে তোমরা কিছু বলো না, অন্যায় যে করেছে তাকে সাজা দেবো। আইনশৃঙ্খলা তোমাদের হাতে নিও না।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণে সেদিন সবাইকে দেশ গড়ার ডাক দেন। সে ভাষণটি হচ্ছে নতুন দেশ পুনর্গঠনের নকশা ও ভবিষ্যত বাংলাদেশের রূপরেখা। পূর্বপ্রস্তুতিহীন এ সংক্ষিপ্ত ভাষণে অনেক বিষয়ের প্রতি বঙ্গবন্ধু দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। যা রাষ্ট্র ও জাতি গঠনে তাৎপর্য বহন করে। পাশাপাশি বহন করে বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্রনায়কোচিত দূরদৃষ্টির। ভাষণটি ছিল সংক্ষিপ্ত। এ সংক্ষিপ্ত ভাষণেই বাঙালী জাতি ও ভবিষ্যত বাংলাদেশ গড়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে সক্ষম হন বঙ্গবন্ধু।
(রি-পোস্ট)।
২| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৫৫
রাজীব নুর বলেছেন: বঙ্গবন্ধুর ফিরে আসা ছিলো অবিশ্বাস্য।
৩| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২১ ভোর ৫:২০
জগতারন বলেছেন:
আমি তখন ক্লাশ সিক্স থেকে অটো প্রমোশন পেয়ে সেভেন-এ উঠেছি। তখন আমাদের দেশের বাড়ী, শংকরদী গ্রামে থাকতাম। শংকরদী গ্রাম উল্লেখ যোগ্য বন্দর (মাদারিপুর ও বরিশাল যেতে) টেকের হাটের কাছে অবস্থিত। এই টেকেরহাটে পৃথিবীর নিকৃষ্ট ও নরপশু পাকি আর্মিদের ক্যাম্প ছিল।
আমি একবার এই নরপশুদের ক্যাম্পে গিয়েছিলেম। ঐ খানে যাওয়ার ছোট্ট একটু ইতিহাস আছেঃ
তখন বর্ষাকাল, আমাদের গ্রাম বর্ষাকালীন পানিতে চারিদিকে টইটুম্বুর। মনে হয় জুলাই-এর শেষের দিকে হবে। আমাদের গ্রামের আওয়ামী লীগ পন্থী প্রাক্তন চেয়্যারম্যানের বাড়ীতে টেকেরহাট পাকি আর্মিদের আমাদের দেশীয় জারজ ও নিকৃষ্ট দোশর একদল রাজাকার নৌকা নিয়া এসে লুটতরাজ করে ণৌকা করে ভরে যাওয়ার সময়ে পর্র্যায়প্ত প্রশিক্ষণ না পাওয়া সদ্য যুবক মুক্তিযুদ্ধারা পর্যাপ্ত অস্র ও গোলা ব্যাতিত আক্রমণ করে নেমক-হাড়াম রাজাকারদের নৌকো ফুটো করে দিয়েছিল। তখন দূরথেকে আমাদের বাড়ীর সিমানা থেকে দেখেছিলেম রাজাকার হাড়ামীদের কী করুন দশা (!)
সেই সময়ে মুক্তিযোদ্ধা দলের হাতে পর্যাপ্তসংখ্যক গোলা-বারুদ থাকলে হাড়ামী রাজাকাররা একটাও প্রান নিয়া ফিরে যেতে পারতো না। কিন্তু ঐ হাড়ামীরা শুধু প্রান নিয়া কোন প্রকারে পাকি'দের ক্যাম্পে ফিরে গিয়েছিল। কিন্তু দুঃখের বিষয় পরের দিন নিকৃষ্ট, নরপশু পাকি'পাঞ্জাবী সৈন্যদল ভাড়ি অস্র নিয়া আমাদের গ্রামে ঢুকেছিল। চারিদিক পানি থাকায় তেমন কোন দিকে যেতে পারে নি ও তেমন কিছু ক্ষতি করতে পারে নি। আমাদের বাড়ী গ্রামের প্রথম বাড়ী হওয়ায়, শুধু আমাদের বাড়ীতেই ঢুকে লুট করেছিল। ঐ নিকৃষ্ট আর্মিরা আসার আগেই আমাদের বাড়ী সহ আসেপেশের প্রায় সকল লোকসকল গ্রামের উত্তর পাশ দিয়ে প্রবাহিত কুমার নদী হাসেন ভাইয়ের বড় নৌকাযোগে পার ওপার তাতিকান্দি গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল। পরের দিন বড়চাচা ও গ্রামের মুক্তি যোদ্ধারা বয়সের তুলনায় দেহাকৃতি ছোট্ট খাট হওয়া আমাকে ও অন্য এক চাচাতো ভাইকে পাঠিয়েছিল টেকের হাটের ঐ পাক'রাজাকারদের ক্যাম্পে। প্রধান উদ্দেশ্য পাকি-রাজাকারদের খবরাখবর আনা ও বাবা-চাচাদের মামাতো ভাই স্থানীয় মুসলিম লীগ নেতা যে ঐ সময়ে পাকি ও রাজাকারদের ক্যাম্পে থাকিত। তার কাছে নালিশ দেওয়ার জন্য যে কেন পকি'আর্মিরা আমাদের বাড়ী লুট-তরাজ ও আমাদের শান্তি নষ্ট করতে আসিলো।
১৯৭৩ সালে আমি ঢাকায় এসে লালমাটিয়া বয়েজ হাই স্কুলে ক্লাশ এইটে ভর্তি হই। থাকতাম মামাদের বাসায় নানুর কাছে শুক্রাবাদ শহরে। শুক্রাবাদ বঙবন্ধুর বাড়ীর সামনে ধানমন্ডির ৩২ সড়কের পূর্ব পার্শে অবস্থিত। বঙবন্ধুর বাড়ীর দক্ষিণে যে ধানমন্ডি লেইক অবস্থিত সেই লেইকের পাড় ও ধানমন্ডি ৩২ সড়কে সকাল বিকাল ঘুরা-ফিরা ছিল নিত্যকৃত্য কাজ। সেই সময়ে সদ্য স্বাধীন দেশের দেশের বহু ইতিহাস এবং বঙবন্ধুর দেশগঠনে কর্মময় ঘটনা, কর্মদ্যোগ আমি প্রতক্ষ্য করেছি। সেই সময়ে আওয়ামী লীগের নেতা, এমপি, মিনিষ্টার ও ব্যাবসায়ীরা বহুওবিদ দুর্নীতি করতো। দুর্নীতি করায় তারা দেশেরটান বা দেশের প্রশাসনের ভয় বা বঙবন্ধুর তোয়াক্কা তেমন করতো না।
১১ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:০৯
র ম পারভেজ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার চোখে দেখা ইতিহাস ও অভিজ্ঞতা জানানোর জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৫০
ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: শ্রদ্বা, দোয়া ও ভালবাসা মহান নেতার জন্য।