![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রেমিকার চিরশত্রু
দীর্ঘ একমাস গ্রামে ছুটি কাটানোর পর আজ বাসায় ফিরছি। যাত্রাসঙ্গী ট্রেন, আন্তঃনগর সুন্দরবন এক্সপ্রেস। দেশের সবচেয়ে অবহেলিত ট্রেন এটি! নির্দিষ্ট সময় থেকে সাড়ে চার ঘন্টা লেট ট্রেন! বড়াল ব্রীজ থেকে ট্রেনে উঠেছি। ট্রেন মোটামুটি ফাঁকাই আছে! সুন্দরবন ট্রেন যেদিন বেশি লেট হয় সেদিন অনেকটা যাত্রীশূণ্যই থাকে! ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে খুব ক্ষুধার্তবোধ করা শুরু করেছি! এখন ঈশ্বরদী জংশনে না পৌঁছানো পর্যন্ত কিছু কিনতে পারছি না!
যাই হোক, ট্রেন হেলে দুলে চলতে চলতে ঈশ্বরদী জংশনে থামলো। হালকা খাবার কেনার জন্য প্লাটফর্মে নেমেছি মাত্র সেই সময়েই অন্য প্লাটফর্মে সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস দারালো! রাতের বেলায় স্টেশন কিছুটা ফাঁকা ফাঁকাই থাকে! "রেলওয়ে স্ন্যাক্সবার" দোকান থেকে পানি, কলা, পাউরুটি কিনে ট্রেনে উঠে নিজের সিটে বসলাম। কি মনে করে যেন ডানদিকে তাকালাম! তাকাতেই দেখি খুব চেনা একটা মেয়ের চেহারা! ভাল করে খেয়াল করে দেখি মেয়েটি আলপনা! আমি সিট চেঞ্জ করে জানালার পাশের সিটটায় বসলাম! কতদিন পর আলপনাকে দেখছি! বিধির কি খেলা! সামনাসামনি দেখা পাই না অথচ বিপরীত যাত্রাপথে দেখা পেয়ে গেলাম! "এক্সকিউজ মি ভাইয়া, আমার সিটটা?" সিটের মালিক বললেন। "ভাইয়া প্লিজ কিছুক্ষণের জন্য আপনি আমার সিটটায় বসুন, জাস্ট পাঁচ মিনিট!" ভদ্রলোকটিকে আমার সিটে বসিয়ে আমি আবার আলপনার দিকে তাকালাম! ফেরিওয়ালা, মুড়িওয়ালা এদের ভিড়ে আমি আলপনাকে দেখতেই পাচ্ছি না! না এভাবে হয় না! "ওকে ভাইয়া আপনি আপনার সিটে বসুন!" এই বলে ট্রেনের দরজায় গেলাম! গিয়ে দেখি দরজা লাগানো! মেজাজটাই বিগড়ে গেল! অনেক কষ্ট করে দরজাটা কোনরকম খুলতেই, "এই যে, কি করছেন এটা? এখন রাত, দরজা বন্ধ করেন! চোর ডাকাত ঢুকলে জানমালের হেফাজতের দায় কে নেবে?" ট্রেনের টিটি এসে আমাকে ইচ্ছামত শাসিয়ে গেল! মনে মনে বললাম, "সালা ঘুষখোর!" টিটি আবার দরজা লাগিয়ে দিয়ে গেল! আমি টয়লেটে ঢুকার বাহানা করলাম। টিটি চলে যেতেই আবারও দরজার খোলার জন্য জান প্রাণ লাগিয়ে দিলাম! দরজা খুলেই আলপনার স্পষ্ট মুখটা দেখতে পেলাম! মোবাইল ছিল, নোকিয়া ১১০০, ক্যামেরাওয়ালা মোবাইলের অভাবটা হারে হারে টের পাচ্ছি! যদিও ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল কেনার সামর্থ্য আমার ছিল না! যতদুর পারা যায় আলপনাকে মাথা উঁচু করে দেখার চেষ্টা করছিলাম! হঠাৎ ট্রেন হুইশেল বাজিয়ে নড়েচড়ে যাত্রা শুরু করলো! ধীরে ধীরে আলপনার মুখটা ট্রেনের জানালায় ঢেকে যাচ্ছে! ঠিক যেন সিনেমা হলের পর্দার মত করে! ট্রেনের দরজা না লাগিয়েই চলে গেলাম। যদি সুপারম্যানের মত শক্তি থাকতো তবে গোটা ট্রেনকে তুলে ঈশ্বরদীর লাইনে বসিয়ে দিতাম! কিছুক্ষণ আগের জার্নিটা খুব সহজেই পার হয়ে গেল কিন্তু এখনের যাত্রাসময়টা কাঁটতেই চাচ্ছে না! ইচ্ছা করছিল ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে দৌড়ে ঈশ্বরদী স্টেশনে চলে যাই...
.
১৫ই মে ২০০৮,
আজ আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন! এস.এস.সি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে এবং আমার পয়েন্ট ৪.৬৯!! আমার হিসাবে অনেক বেশি! আব্বু আম্মু তো আমার চেয়ে আরও বেশি খুশি! তারা যা ভাবে নি তাই আমি করেছি! আল্লাহর অশেষ রহমত! যে ছেলের পাশ করতে কষ্ট হয়ে যেত সে এ গ্রেড পেয়েছে! রেজাল্টের দিন আলপনা আসে নি! মনে মনে বললাম, "আগের রেজাল্টে রেজাল্ট কার্ড ছুড়ে মেরেছিলি, এবার তোর হাতটাই না হয় আমার গালে ছুড়ে মার!! তবুও একবার আয়....!" অনুভূতি তো অনুভূতিই! যা উপভোগ করলে মাঝে মাঝে মন শান্তিতে ভরে যায় আবার কষ্টে জরাজীর্ণও হয়ে যায়! অঙ্কন এসেছে নকশার রেজাল্ট জানতে! নকশার কি পয়েন্ট আমার জানা নাই আর জানারও কোনো ইচ্ছা নেই! অঙ্কন আমাকে বললো, "কিরে! তো রেজাল্ট কি? পাশ হইছে?" আমি একগাল হাসি আর প্রতিশোধের আগুন নিয়ে হেসেই বললাম, "যা হয়েছে সেটা তোদের চেয়ে ভাল হইছে..... ৪.৬৯, ইটস বেটার দ্যান ইউ...." মনে মনে ফুর্তি থাকলে দুই চারটা ইংরেজিও মুখে চলে আসে! অঙ্কন আর নকশার চেহারাটা দেখার মত ছিল! হয়তো নকশাকে বুঝাবে যে আয়াত নকল করে এত পয়েন্ট পাইছে...! যাক গা মুড়ি খাক ওরা।
আমার বাসায় আনন্দের জোয়ার, ঝড়, বন্যা, ঘূর্ণিঝড় সব চলছে! আব্বু গ্রামের মসজিদে দোয়া মাহফিল, জিকির, গরীব দুঃখিদের একদিন খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছে! আমার পৃথিবীটাই পালটে যেতে থাকলো! এখন টার্গেট একটা সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়া। সেটাও হব নতুন পরিবেশে, নতুন জায়গায়!
.
আমি হোস্টেল বা মেসে থেকে পড়ালেখা করতে চাই কিন্তু আব্বু আম্মু রাজি নন! তাদের কথা হল, "আমাদের নজরে থেকেই পড়ালেখা কর না, বাইরে গেলে যে মনোযোগী হবে তার কি গ্যারান্টি!" যুক্তি ঠিক! কিন্তু আমিও আমার কথায় অটুট! বাইরেই পড়ালেখা করবো। এই শহরে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে!
.
১লা জুলাই, ২০০৮
পাবনা এডওয়ার্ড কলেজে আমি হলাম। এই কয়েক সপ্তাহে কতবার যে পাবনা যাওয়া আসা করা লেগেছে তা ভুলেই গেছি! এক কথায় পাগল হয়ে গেছি! ফর্ম তোলা, জমা দেয়া, ভর্তি হওয়া, মেস ঠিক করা সবকিছু করতে করতে আমি খুবই টায়ার্ড
আমার কলেজ লাইফ খুব ভালভাবে শুরু হল। ক্লাসের মাঝামাঝি বসতাম। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভীড়ে নিজেকে খুব ভাল লাগে! ড্রেস পরে এক কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে কলেজে যাই আবার ফিরি! নিজের মাঝেই এক প্রকার অজানা ভালোলাগা কাজ করে! কেমন ছিলাম আমি আজ কোথায় আছি! কলেজে মাঝামাঝি প্রকৃতির ছেলেদের কাতারে আমি। বেশি দুষ্টুমিও না আবার বেশি শান্তও না! কথায় আছে কলেজে উঠলে ছেলেমেয়ের মাঝে নতুন হওয়া লাগে! অর্থাৎ প্রেম!! ফ্রেন্ড সার্কেল অতটা ক্লোজ তখনও হয়নি আমার। তবুও জিজ্ঞেস করতো গার্লফ্রেন্ড আছে কিনা, প্রেম করবি কিনা আরও নানান কথা! ক্লাসে সুন্দরী মেয়ের অভাব নেই। কিন্তু তার পরও তাদের মধ্যে কারও দিকে তাকাতে ভাল লাগে না! কারণ মন পরে আছে ঈশ্বরদী-রাজশাহী লাইনে! ভালবাসার ব্যাপারটা নিজের মনের মাঝেই গোপন থাক।
দিন যায় রাত যায়, কলেজের প্রতিটা সময় আমার ভালই যাচ্ছে! নতুন কোচিং, মেস লাইফ দারুন সব অভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে একটা পারফেক্ট জীবনের নিয়মে আমি হেটে চলছি! শুধু দরকার একটা হাতের! যেটা আমাকে যেকোনো আঘাতে শক্ত হয়ে দাঁড়াতে সহায়তা করবে, ব্যস এতটুকুই!
.
আমি এখন হালকা হালকা ক্লাস ফাঁকি দেয়া শুরু করেছি! ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অন্য কোথাও ঘুরবো সে সাহস আমার হয় নি, তাই ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কলেজের কমন রুমেই আড্ডা দেয়া শুরু করলাম! ক্যারাম আর টেবিল টেনিসে গ্যাপ আর ফাঁকি দেয়া ক্লাস গুলোর সময় পার করতাম!
.
দিন তারিখ দিয়ে লিখে কি হবে? এরচেয়ে ভাল দিন তারিখ ছাড়াই লিখি! আলপনার কথা আজ খুব ভাল করে মনে পরছে! দেড় বছর হল আলপনার সাথে আমার কোনো কথা হয় না! আমার না, আমি তো কথা বলতেই চাই কিন্তু আলপনা চায় না! ঘৃণা করতে শুরু করেছিল এবং আজও সেটা বর্তমান! পাবনা থেকে বাসায় যাওয়ার সহজ রাস্তা হল বাসে যাওয়া। বাস ভাল না, বিআরটিসির সেই লক্কর ঝক্কড় বাস! তবুও আমি ঘন্টা ব্যয় করে ঈশ্বরদী আসি শুধু একটাই আশা নিয়ে! যদি আমার যাত্রাসঙ্গী হিসাবে আলপনার দেখা পাওয়া যেত! ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে দুই দিন হয়েছে! মেসে থাকতে থাকতে আমার বিরক্ত লেগে যাচ্ছে! বাসায় যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করছি। ভাবার সাথে সাথেই স্টেশন চলে গেলাম থেকে টিকেট নিলাম। স্টেশনের এ মাথা ওমাথা হাটাহাটি করছি! কোনকিছুই ভাল লাগছে না। সূর্যের প্রখর তাপে স্টেশনের কবুতরগুলো এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে! আমার চিন্তা ভাবনায় শুধু আলপনার বিচরণ! না এখানে আর থাকবোই না.... দ্রুত বের হওয়ার জন্য ব্রিজের দিকে পা বাড়ালাম! কিন্তু পা সেখানেই আটকে গেল! তাকিয়ে দেখি ব্রিজের প্রত্যেক গেটে রেলওয়ের লোক দারিয়ে আছে! অন্যদিকে তাকিয়ে দেখি একটা ট্রেন আসছে! মেজাজটাই বিগড়ে গেল! আমার সততার কোন মূল্যই এরা দিবে না সেটা আমার জানা আছে। যতই বলি আমি যাত্রী না তবুও এরা আমার কথা বিশ্বাস করবে না! আমি আর দেরি না করে অন্য রাস্তা দিয়ে বের হয়ে আসলাম।
.
ব্যাগ পত্র নিয়ে স্টেশনে বসে আছি। আজও মনের মাঝে সেই ইচ্ছাটাই আছে। আলপনা যেন আমার ট্রেনে থাকে। দেখতে দেখতে সময় পার হচ্ছে। স্টেশন থেকে জানানো হল অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রেন আসবে!
ট্রেন ধীরে ধীরে প্লাটফর্মের থামলো। দশ মিনিটের ব্রেক দেয় ঈশ্বরদীতে! আমিও বেশি তাড়াহুড়া করলাম না। রিল্যাক্স করে ধীরে সুস্থে বগিতে উঠলাম। পুরো বগি খুঁজলাম কিন্তু কপাল খারাপ ছিল, আমি পাই নি আলপনাকে! ট্রেনে যাত্রীদের চাপ কম। বেশ কয়েকটা সিট ফাকা। আমি আমার সিটে না বসে সিঙ্গেল সিটটায় বসলাম।
হুইশেল বাজিয়ে ট্রেন আবার চলতে শুরু করলো! এতবার ট্রেন জার্নি করছি কিন্তু ভাগ্য একবারও আমাকে আলপনার সাথে দেখা করার সুযোগ দিচ্ছে না! আমি সেই সময়টা ফেরত চাই যেসময়টায় আলপনা আমাকে ভাল জানতো। আমার প্রত্যেকটা কথা ও মনোযোগ দিয়ে শুনতো! আলপনাকে খুবই ভালবাসি! ক্লাসের কত ছেলে যে ওপর প্রত্যেকদিন নতুন করে ক্রাশ খায়! সিনিয়র ছেলেরাও তো চান্সে থাকে! এলাকার চায়ের দোকান, রাস্তার মোড়, হতেও পারে ওর কাজিনগুলোও একটু চান্স খুঁজে! আমিও ভালবাসি, সেই ছোটবেলা থেকে! ছোট সময় ভালবাসা কি না জানলেও আলপনাকে দেখলেই মন খুশি হয়ে যেত! খুব ভালো লাগতো আলপনাকে! সেই ভালোলাগা যে কবে ভালবাসায় রুপ নিয়েছে সেটা আমার জানা নাই! হুম, ভালবাসি কথাটাই আমি আজও কারও সাথে শেয়ার করতে পারি নি! সেই ভালবাসাকে আজ প্রতি ট্রেন জার্নিতে খুঁজে বেড়াই! ক্লাসের সামনের বেঞ্চে খুঁজি, হাটার সময় পাশে খুঁজে বেড়াই.... কিন্তু সে একথা জানে না। আমি জানাতেও চাই না! তবে ইচ্ছা হয় চিৎকার দিয়ে বলি তোকে ভালবাসি!! এতটা চিৎকার দিয়ে বলতে ইচ্ছা যেন সেই আওয়াজ রাজশাহী পর্যন্ত পৌঁছাক! জানুক সবাই কেমন ভালবাসি আলপনাকে!
মোবারকগঞ্জ এসে ট্রেন থেমে আছে প্রায় ২০মিনিটের মত! ক্রসিং হবে, আমিও আর সিটে না বসে ট্রেন থেকে নেমে গেলাম! হাটাহাটি করছি রেল লাইনের উপর। বসে থাকতে থাকতে শরীরটা ব্যথা হয়ে গেছে! বেশি হাটতেও ভাল লাগছে না! সূর্যটাও ডুবতে বসেছে! তাই আবারও ট্রেনে উঠলাম। উঠার পাঁচ মিনিট পরই ট্রেনের ক্রসিং হল! ট্রেন আবারও নিজের গতিতে চলা আরম্ভ করলো! রাতের আধারে পরে গেছে প্রকৃতি! বোরিং হচ্ছি খুব! উঠে ট্রেনের দরজায় দাঁড়ালাম! আমার আঁচড়ানো চুলগুলো বাতাসের সাথে না পেরে এদিক সেদিক হয়ে গেল! ভালই লাগছিল সময়টুকু।
শেষ পর্যন্ত ট্রেন তার শেষ স্টেশনে থামলো! আমি নামলাম, ধীরে ধীরে গেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। প্লাটফর্মের ভাঙা পিচে আমার ব্যাগটা আটকে হাত থেকে ছুটে যায়! ব্যাগটা তুলতেই দেখি সেই ট্রেন থেকে আলপনা বের হলো! দেখলাম ঘ বগি থেকেই নামলো! কিন্তু ঘ বগিতে তো আমিও ছিলাম! আমার টিকেটেও তো ঘ বগি লেখা ছিল! তাহলে কি আমিই ভুল বগিতে উঠেছে! আর উঠলাম কিন্তু সেই সিটটার মালিককেও দেখলাম না! পরে মনে পরল আমি তো সিঙ্গেল সিটটায় বসেছিলাম! কি ভাগ্য! এমন ভাগ্য তো সিনেমাতেও হয় না!আমি মানতে পারছি না, আবারও টিকেট বের করে দেখলাম! কোচ নং ঘ!!!! আহারে কপাল! একটা বার দেখলেই হয়তো আজ আলপনা আমার যাত্রাসঙ্গী হয়ে যেত! খুবই কান্না পাচ্ছে! এটা কাঁদবার সঠিক জায়গা না! স্টেশনের বাইরে আব্বু দারিয়ে আছে আমাকে নেয়ার জন্য। নিজের ইমোশনকে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করে আব্বুর সামনে গেলাম! সারা রাস্তায় আব্বু ভাল মন্দ অনেক কিছু জিজ্ঞেস করলো কিন্তু আমি শুধু হ্যাঁ হু করে যাচ্ছি! আমি ভাবছি আজকের কথাটা! কি হল আজ এটা!
.
বাসায় পৌঁছে দেখি আম্মু আমার পছন্দের খাবার রান্না করে রেখেছে! গোসলের নাম করে বাথরুমে গিয়ে সব ট্যাপ ছেড়ে দিলাম, ঝর্ণাও ছাড়লাম। ট্যাপের নিচে বালতিও দিলাম! সাথে সাথে শুরু হল পানির আওয়াজ! এর সাথে চালু হল আমার চোখের পানি ঝরা!! খুব করে কাঁদলাম! চোখ মুখ লাল হয়ে গেল! দ্বিতীয়বার কাঁদলাম এভাবে! আমার জানা নেই কোনো ছেলে কি আমার মত এভাবে জীবনে কেঁদেছে কিনা! সবকিছুই ঠিক আছে কিন্তু চোখ যে লাল হয় আছে সেটাই বড় সমস্যা। অনেকক্ষণ বাথরুমে থেকে গোসল করে নিলাম। আয়নায় নিজেকে দেখে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে লাগলাম! খাওয়া দাওয়া করে নিজের রুমে আসলাম।
.
বাসায় এসেছি আজ চারদিন হল! বাসা থেকে বের হচ্ছি না। সারাদিন রুমে থাকি, রাত হলে ছাদে যাই। তারা দেখি। আনমনে এক কোণায় দারিয়ে থাকি! ভাবতে থাকি আলপনাকে! সেদিন রাতেই সিদ্ধান্ত নিলাম আলপনার এলাকায় যাবো। দেখি ওর দেখা পাই কিনা!
পরেরদিন বিকালে,
সাইকেল চালানোর ইচ্ছা হচ্ছে কিন্তু সাইকেলের চাকা লিক হয়ে আছে! আব্বুকে বলে টাকা নিয়ে সাইকেল ঠিক করতে বের হয়ে গেলাম। উদ্দেশ্য, অনেক জায়গায় যাবো একটি মুখের জন্য!
প্রথমেই স্কুলটাতে গেলাম! কয়েকজন বন্ধুকে দেখলাম খেলছিল! হালকা আড্ডা জমিয়ে দিলাম সেখানে। অনেকের খোজ খবর নিলাম। তবে সবার আগে অঙ্কনের খবর নিলাম! অঙ্কন এখন প্রাইভেট কলেজে ভর্তি হয়েছে আর নকশা মহিলা কলেজে! এখনও নাকি তাদের রিলেশন কন্টিনিউ আছে! বাহ! ভালো তো! আড্ডা দিয়ে আবার বের হলাম। খুব ধীরে ধীরে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি! পায়ে তেমন একটা শক্তি পাচ্ছি না! আস্তে আস্তে আলপনার বাসার সামনে চলে এসেছি! গেটের সামনে যাওয়ার সাহস হল না। এমন একটা প্লেস দরকার যেখান থেকে আলপনাকে ঠিক ভালভাবে দেখা যাবে! না, আজ না, কাল আবার আসবো! এই সময়ে, এইখানেই!
.
পরেরদিন,
আমি সেখানে গিয়েছিলাম, এখন ফিরে আসছি সেখান থেকে! জানতে পারি আলপনা আবার রাজশাহী ফিরে গেছে! হাটতে হাটতে একটা চায়ের দোকানে বসলাম। চায়ে চুমুক দিচ্ছি আর আলপনার কথাগুলো আমার কানে গানের মত বাজতে থাকে! আলপনাকে খুব দেখতে ইচ্ছা করছিল! হয়তো আমি কিছু একটা ভুল করছি যেটা আমি ধরতে পারছি না! আমার খুব কাছাকাছি আছে যা আমি দেখতে পাচ্ছি না! চায়ের দোকান থেকে বের হয়ে আবার হাটছি! পকেটে হাত ঢুকিয়ে পথে পরে থাকা ইট পাথরের টুকরাগুলোকে লাথি দিয়ে দুরে পাঠিয়ে দিচ্ছি! কোনটা ড্রেনে গিয়ে পরতো আবার কোনটা ড্রেনের উপর দিয়ে চলে যেত! এমন সময়, "আরে আয়াত তুমি! কেমন আছো?" ইবলিস দম্পতির আগমন! তাকিয়ে দেখি নকশা আর অঙ্কন! মনের মধ্যে আকাশ ভরা বিরক্তি নিয়ে নকশাকে বললাম, "এই তো আছি! তোমরা?" অঙ্কনের মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝে গেলাম উনি আমার দর্শন পছন্দ করছেন না! মনে মনে কতই না গালি দিচ্ছে আমাকে! "যা মন চায় বল, দিন শেষে আমিও বলবো same to you!!!!" মনে বললাম! না সে জানলো না নকশা জানলো! "তারপর কোথায় ভর্তি হয়েছো?" "সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ, পাবনা। তোমরা?" "আমি মহিলা কলেজে, আর অঙ্কন ইসলামিয়া কলেজে....." আমার প্রতিটা প্রশ্নে তোমরা শব্দটা থাকলেও উত্তর শুধু নকশার কাছ থেকেই পাচ্ছি! অঙ্কনের মুখ দিয়ে এক অক্ষরও বের হচ্ছে না! অনেক কষ্টে অঙ্কন বললো, "নকশা চল আমরা যাই, আয়াত থাক তাহলে, গেলাম আমরা!!" এই বলে নকশাকে নিয়ে গেল! ছেলেটা কলেজে ঠিকই পড়ে কিন্তু ভিতরের বাচ্চা বাচ্চা অভ্যাসটা এখনও যায় নি!
.
পাবনা ফিরে যাচ্ছি, তবে এবার ট্রেনকে আর কষ্ট দিতে চাই না। বাসেই যাই! লক্কর ঝক্কড় বাস আর ইঞ্জিনের বাজে গন্ধ! সব মিলিয়ে এক বিধ্বংসী বাজে অভিজ্ঞতা! প্রথম সারির জানালার পাশের সিট নিলাম যাতে প্রকৃতির হাওয়াটা পরিস্থিতি সামলে নেয়!
মেসে ফিরে আবার বোরিং জীবনের সময় শুরু হল! তবে এবার কেন যেন ঠিকমত খাওয়া হচ্ছে না! মাসের প্রথমেই চলে এসেছি আর সাথে সাথেই ছেলেপেলে ম্যানেজারিং আমার হাতে তুলে দিল! এত এত সিনিয়র থাকতে আমাকেই বা কেন ম্যানেজার হতে হবে!
.
ম্যানেজারিং এর দায়িত্ব যত কঠিন মনে করেছিলাম ততটা নয়, একটু কঠিন কিন্তু অনেক মজাদার! তবে প্যারা হল বাজার করা! যাই হোক তাও নিজেকে মানিয়ে নিলাম! মেস লাইফটা ভালই আগাচ্ছে! পড়ালেখা ভালই চলছে! ফেল করা আমি এই প্রথম কলেজের কোনো পরীক্ষায় ফেল করি নি!! রেজাল্ট এ মাইনাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ! এতে আত্মীয়দের মাথা ব্যাথা থাকতে পারে কিন্তু আমার নাই। আমার টার্গেট ডাবল এ থাকলেই ইনশাআল্লাহ আমি ভাল ভার্সিটিতে ফর্ম তুলতে পারবো। সেভাবেই পড়ালেখা করে যাচ্ছি। সাইন্সের সাবজেক্ট গুলোতে ভালই মনোযোগ দিয়েছি। কিন্তু পদার্থবিদ্যা খুব ঝামেলা করছে! যখনই কোনো কিছু ঝামেলা করে তখনই আলপনার কথা মনে আর তখনই মন খারাপ হয়ে যায়! পড়তে আর ভালো লাগে না! তখনই ছাদে চলে যাই আর দেবদাসের মত আকাশের তারা দেখি!!
.
ইন্টার পরীক্ষা শুরু হয়েছে কিছুদিন আগে! আমার না, আলপনার! আমি জানি মেয়েটার প্রস্তুতি খুবই ভাল এবং রেজাল্টও খুব ভাল হবে! আমিও তাই চাই! মেয়েটা সবসময় বলতো ওর ডাক্তার হবার খুব শখ! মেয়েটার লক্ষ্যের কাছে আমার লক্ষ্য খুবই নগণ্য! একটা সরকারি চাকরি পেলেই আমার জন্য যথেষ্ট! এর চেয়ে বেশি কিছু আমার লাগবে না! আমার এক ক্লাসমেটের বোন রাজশাহী মহিলাতে পড়ে! ওনার কাছ থেকে এ+ এবং গোল্ডেনের খবর নেয়া লাগবে! আমার বন্ধুকেও বললাম খবর নিতে। পরীক্ষার রেজাল্ট দেবার পর আলপনার কলেজের প্লাসপ্রাপ্ত কয়েকজন ছাত্রীর রোল নিলাম! কিন্তু কোনটাই আলপনার রোল না! পরে মনে পরলো বোর্ড, রোল আর সাল দিলেই তো ইন্টারনেটে রেজাল্ট দেখা যাবে! পরেরদিনই গেলাম সাইবার ক্যাফেতে! গিয়েই দেখি কোনো পিসি ফাঁকা নেই! সবাই রেজাল্ট নেয়ার জন্য ব্যস্ত! আর সবচেয়ে ব্যস্ত হলো ক্যাফের ম্যানেজার! রেজাল্ট বের করা, অনলাইন আবেদন, চাকরির আবেদন আরও কত কি!!!! এক ঘন্টা সময় নিয়ে সব রোল গুলো একে একে দিয়ে রেজাল্ট চেক করা শুরু করলাম! মোটামুটি একশোর বেশি রোল চেক করা হয়ে গেছে কিন্তু আলপনার রেজাল্ট এখনও পাই নি! আরও খোজা শুরু করলাম! এক সময় পেয়েও গেলাম! মেয়েটা এবারও গোল্ডেন পেয়েছে!!!! আমিই মনে হয় সবচেয়ে বেশি খুশি আজ! আলপনার রেজাল্টের খুশিতে আমার চোখ দিয়ে অশ্রুও বের হল! আমি ওর রোল আর রেজিস্ট্রেশন নাম্বার একটা কাগজে লিখে নিলাম! সাথে ওর রেজাল্টও প্রিন্ট আউট করে নিলাম!
.
আলপনার রেজাল্টের খুশিতে আমি আমার দুই ক্লোজ ফ্রেন্ড সাহান আর হিমুকে একটা সারপ্রাইজ ট্রিট দিলাম! ওরা অবাক হয়ে গেল আর বারবার বললো, "দোস্ত এইটা কিসের ট্রিট? কি উপলক্ষে দিলি? কিছু তো বল ভাই......"
সেই জার্নির পর থেকে আমি আর আলপনাকে যাত্রাসঙ্গী হিসাবে চাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করি নি! ট্রেনেই যেতাম কিন্তু আলপনার কথা মাথায় আনতাম না। যেভাবে আছে সেভাবেই যাক! এদিকে আলপনার মেডিকেল পরীক্ষা! আলপনা কোথায় আছে সেটাও জানা নেই! সম্ভবত ঢাকায় থাকার কথা! ওর খালা আছে সেখানে। আর আমিও আমার নিজের মতই যাচ্ছি! কলেজ, প্রাইভেট, মেস এর মধ্যেই আমি নিজেকে গুটিয়ে ফেলেছি!
শীতের সকালগুলোতে ভোরে উঠে প্রাইভেটে যেতাম আর যেদিন প্রাইভেট থাকতো না সেদিন বিশ্বরোডের আশেপাশে হাটাহাটি করতাম! প্রকৃতি কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে! প্রকৃতির সৌন্দর্যটা সম্পূর্ণ আলপনার মতই! ভেবেই নিই আমি আলপনার মধ্যে আছি! ওর সাথেই হাটছি! আমি এর মধ্যে একটা খারাপ সংবাদ পেলাম যে আলপনা মেডিকেলে চান্স পায় নি!! আমি জানি সে চেষ্টার ত্রুটি রাখে নি তবুও কেন ওর চান্সটা হল না বুঝতে পারছি না! জানি না ওর কেমন লাগছে তবে এতটুকু জানি ওর চেয়ে আমার বেশি খারাপ লাগছে! যেটা আমি বলে বুঝাতে পারবো না! ওর চান্স না পাওয়ার এই কষ্টটা আমার বুকে খুব ভালভাবে বিঁধেছে! আমি চিন্তা করছি ওর সাথে হালকা যোগাযোগ রাখবো কিনা! কিন্তু আলপনা এটার অন্য কিছু না ভাবলেই হয়!!!!
.
আমার এইচ এস সি শেষ হল! দুই এক দিন রেস্ট নিয়ে বাসায় ফিরবো! আমি চাই না এই শহরে আমার বাকি চার বছর কাটাতে হোক! সরকারি কলেজে পড়ার সুযোগ আল্লাহ আমাকে দিয়েছে! এপর্যন্ত আল্লাহ আমার সকল চাওয়াই পূর্ণ করেছে! এখন শুধু দুইটাই চাওয়া, একটা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া আর জীবনসঙ্গিনী হিসাবে আলপনার হাত! আর আমি নিশ্চিত আলপনা মেডিকেলের জন্য দ্বিতীয়বার চেষ্টা করবে! সে হাল ছেড়ে দেয়ার মত মেয়ে না!
আমি মেস ছেড়ে দিয়ে বাসায় চলে যাই! বাসায় থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেব! যেভাবেই হোক ঢাকায় আমার সেটেল হতে হবে। ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফর্ম তুলবো ঠিক করেছি! আম্মু বললো, "তোর রেজাল্টে যেখানে যেখানে হবে সেসব জায়গায় পরীক্ষা দেওয়াবো, যত দুরেই হোক!" আমিও ভর্তি কোচিং করা শুরু করি! ভালই চালছে সব কিছু। কিন্তু রেজাল্টের দিন খুব তাড়াতাড়ি ঘনিয়ে আসছে! শুধু দোয়া করি রেজাল্ট যাই হোক কিন্তু এ গ্রেড এর নিচে যেন না পাই! রাতগুলো আবার ভোর বানানো শুরু করলাম! এভাবে রেজাল্টের দিনও ঘনিয়ে আসছে! দেখতে দেখতে রেজাল্টের দিন এসে গেল! দুপুরের দিকে আল্লাহর নাম নিয়ে মোবাইলে ম্যাসেজ করলাম! ফিরতি মেসেজে যা দেখলাম তা আমার একদমই বিশ্বাস হচ্ছে না! পয়েন্ট ৪.৫০! খুশিতে আমার নাচতে ইচ্ছা করছে! আম্মু আব্বুকে চিৎকার দিয়ে ডেকে রেজাল্টের কথা বললাম! বাসার সবাই খুব খু্শি রেজাল্ট নিয়ে! আমি প্লাস পাই নি কিন্তু আগের গ্রেড ধরে রেখেছি তাই প্লাস না পাওয়ার আফসোসটা আব্বু আম্মুর মাঝে নাই। এমন সময় আম্মুর মোবাইলে একটা কল আসলো! মামার কল!!!! কল দিয়েই খু্শিতে বাকবাকুম হয়ে বললো তার মেয়ে গোল্ডেন পেয়েছে! আমার রেজাল্ট জানানোর পর এমনভাবে মামা মনের ভাব প্রকাশ করলো যেন ৪.৫০ পাওয়া কোনো ব্যাপারই না!!!! হুম ব্যাপার তো না! কারণ তার মেয়ে অনেক কষ্টে গোল্ডেন পেয়েছে! আর আমার মত ভুলে খাওয়া স্টুডেন্টরা দেখাদেখি আর নকল করে এ গ্রেড তুলতে পারে!! আম্মু আব্বুর মুখের ভাবটা দেখে আমার একদম ভাল লাগছিল না! ভাল সময়টা খুব কম সময়ের জন্যেই থাকে! ঠিক তেমনটাই হল আমার সাথে! আপন মানুষের খু্শি আপন মানুষই দেখতে পারে না আর পরের কথা পরের চিন্তা! আমার টোটাল পয়েন্ট অনুযায়ী আমি ব্যুয়েট ব্যতীত সব খানেই পরীক্ষা দিতে পারবো। ব্যুয়েট!!!! মামা এটাও বলেছিল, " পারলে ব্যুয়েটে পরিয়ে দেখা! আমার বড় ছেলেকে তো ইঞ্জিনিয়ার বানালাম, দেখি তোর ছেলে কি হয়!!" আর সে কি হাসি!!! প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়া লাগে না, যে যেটা ভাল পারে সেটাই তাকে প্রতিষ্ঠিত করে তোলে! মামার কথা কানে নিলাম না! আমি পরতে লাগলাম নিজের মত করে! ঢাকার তিনটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিলাম! এর মধ্যে জগন্নাথের পরীক্ষা ভালই দিয়েছি! পরবর্তী পরীক্ষা রাজশাহীতে! ট্রেনেই যাচ্ছি, সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস! যেটায় আলপনাকে পেয়েও পেলাম না!
.
মোটামুটি অনেক ভার্সিটিতেই পরীক্ষা দিলাম! কিন্তু পজিশন পাচ্ছি না! জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে মোটামুটি একটা পজিশন পেয়েছি কিন্তু টোটাল সিট চিন্তা করলে চান্স পাওয়ার কথা মাথায় আসে না! এখন ঘরে বসা আছি। আর কোথাও পরীক্ষা দেয়ার ইচ্ছা নাই। শেষের দিকের পরীক্ষাগুলোতে দুর্নীতি বেশি হয় তাই চান্স পাওয়ার সম্ভবনা খুবই ক্ষীণ!
.
সকালের ঘুম ভাঙলো রাকিনের (আমার বন্ধু) ফোন পেয়ে! বললো, "দোস্ত, তুই কিছু জানস?" আমি চোখ কচলাতে কচলাতে বললাম, "কেন কি হইছে?" "আরে ব্যাটা আলপনা ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাইছে!!!!!" কথাটা শুনেই লাফিয়ে উঠলাম! এত ভাল লাগছে যেন মনে আমিই চান্স পেয়েছি! কিন্তু পরক্ষণেই আমার মনটা খারাপ হয়ে গেল। কারণ সে এখন মেডিকেল স্টুডেন্ট!! আমার কোন লাইন এখনও হয় নি! সে আমার কাছ থেকে দুরে সরে গেল নাকি আমিই ওর কাছে যেতে পারছি বুঝতে পারছি না! সেদিন সকালে আর ভাল লাগছিল না! হাটতে বের হলাম! ঘন্টাখানেক এদিক সেদিক হাটার পর বাসায় ফিরলাম। টেবিলে রাখা পত্রিকা পড়া শুরু করলাম। ভিতরের পৃষ্ঠায় হঠাৎ খেয়াল করে দেখলাম জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ২য় অপেক্ষমাণ তালিকা প্রকাশ!!!! খবর দেখেই আমি জলদি সাইবারের উদ্দেশ্য বের হই! আম্মু রান্নাঘর থেকে বললো, "আয়াত কোথায় যাস? খেয়ে তারপর যা!!!" সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললাম, "আম্মু খাওয়া রেডি কর আমি দশ মিনিটের মধ্যে আসছি!" তাড়াতাড়ি সাইকেল নিয়ে রওনা দিলাম! এত দ্রুত চালাচ্ছি যে নিজেকে মহাসড়কের ক্ষ্যাপা ড্রাইভার মনে হচ্ছে! অহরহ সাইকেল, রিক্সা, ভ্যান অভারটেক করে যাচ্ছি আমি! সাইবার ক্যাফেতে পৌঁছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ঢুকে পিডিএফ ডাউনলোড করে নিলাম! ২য় অপেক্ষমাণ তালিকায় আমার রোল মাঝামাঝি অবস্থানে আছে! বাসায় এসে আম্মুকে জানালাম, আম্মু আব্বুকে জানালো। কিন্ত আত্মীয়স্বজনদের জানাতে আম্মু আব্বুকে মানা করলাম! বললাম, "আগে চান্সটা হোক, তারপর সব হবে!" উপরওয়ালা এবার একটা সুযোগ দিয়েছেন, যদি কাজে লাগাতে পারি তাহলে আর কোনো দুঃখ নাই....
.
ভাইভা বোর্ডে আমার সামনে চারজন শিক্ষক বসে আছেন। তাদের দিকে তাকাতেই আমার জানের পানি ঢুকিয়ে যাচ্ছে! গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে! এরপর একেকজন একেক প্রশ্ন করা শুরু করলেন! মাঝে মাঝে ইংলিশেও প্রশ্ন করছেন! ছাত্রছাত্রীদের ভুল ধরার জন্য তারা ফিশিং গেমের মাছগুলোর মত হা করে আছেন! আমি আমার তরফ থেকে সভ্যতা ভদ্রতার কোনো কমতি রাখি নি। এবার বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা! যা ইচ্ছা ভাল বুঝে তিনিই করবেন! আব্বু বললো, "আচ্ছা সমস্যা নাই, নেক্সট টাইম ভাল করবে।"
.
আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়েছি! সেই নাইন ফেল ছেলেটা আজ জগন্নাথের ছাত্র! প্রাণিবিদ্যা বিভাগে পড়ালেখা করছে! আজ অঙ্কন আর নকশার কথা মনে পরছে! না জানি ওরা কোথায় আছে! তবে একটা জিনিস এখন ভাল লাগছে যে আমি কারও চেয়ে পিছিয়ে নেই! সেই মামাতো বোন এবছর কোথাও চান্স পায় নি! শুনলাম দ্বিতীয় বার ট্রাই করবে! করুক, আমার কোন মাথাব্যথা নেই। আত্মীয়স্বজনরা আমাকে এখন অনেক গুরুত্ব দিচ্ছে! এখন কেউ বলবে না কয় সাবজেক্টে প্লাস পাইছো বা কয়টায় ফেল করছো কিংবা জিপিএ কত অথবা প্লাস গোল্ডেন নাই কেন ইত্যাদি ইত্যাদি! এসব কথার একটাই উত্তর, "দেশের এত এত প্লাস গোল্ডেন স্টুডেন্টরা কোন ভার্সিটিতে আছে?" এখন আলপনার মুখোমুখি হতে কোন ভয় নেই আমার। কালই যাবো ঢাকা মেডিকেলে, ঘুরবো এই গেট থেকে ওই গেট। দেখি কিভাবে আমার আলপনাকে আমি না পাই!"
.
প্রতি সপ্তাহে দুই দিন ওর ক্যাম্পাসে যাই। কিন্তু ভাগ্য একদমই সহায় হয় না। না দেখে বারবার ফিরে আসি! এদিকে ভার্সিটিতে সিনিয়রদের র্যাগ খেতে খেতে আমার ধৈর্য্যের সীমা ভেঙে যাচ্ছে! কিন্তু সিনিয়রদের সাথে ফ্রি হতে চাইলে এটা তো সহ্য করতেই হবে!
মেডিকেলের সামনে দিয়ে হেটে টিএসসির দিকে যাচ্ছি। ফ্রেন্ড সার্কেলের আড্ডা আছে আজ। এমন সময়, "আয়াত" বলে একজন ডাকলো! পিছনে তাকিয়ে দেখি স্কার্ফ দিয়ে মুখ বাধা একটি মেয়ে দারানো!
"জ্বি, আমাকে বলছেন?" এগিয়ে গিয়ে বললাম।
মেয়েটির কণ্ঠটাও চেনা চেনাই লাগছে! কাছে যেতেই বললো, "কেমন আছিস?" হুম কণ্ঠটা আসলেই অনেক চেনা! আর মেয়েটা তুই করে কথা বলছে! আলপনা নাকি সেটাও বুঝতে পারছি না! তারপরও ধীর স্বরে বললাম, "আলপনা?" "হুম" বলেই আলপনা স্কার্ফ খুললো! আমি আকাশ থেকে পরলাম! এযে আলপনা! যাকে এত খুঁজেছি সে আজ আমার সামনে!
"দোস্ত, তুই কেমন আছিস? কত খুঁজলাম তোকে? কোথাও পাই নি!!!!" আমি একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকলাম। হাজার বছরের প্রশ্ন একসাথে করা শুরু করলাম! আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আলপনা বললো, "একটু হাটি?" "হুম চল..." তার আগে আমি বন্ধুদের কল দিয়ে বলে দিই আমি আসতে পারছি না!
আলপনার সাথে হাটছি! কিন্তু ও কিছু বলছে না! কেমন চুপ হয়ে আছে! "কিরে চুপ করে আছিস কেন?"
"একটা কথার সত্য উত্তর দিবি?"
এবার আমিই একটু চুপ হয়ে গেলাম সাথে দুইটা ঢোকও গিললাম! বললাম, "বল...."
"রাগ করছিস আমার উপর?"
"আরে না! কি বলিস! কোনো রাগ নেই! আর রাগ করবোই বা কেন?"
"স্কুল লাইফে তোর রেজাল্ট কার্ডটা নাক বরাবর মারছিলাম...."
"ধুর!! ওসব কথা আমি মনেই রাখি নি। আর তুইও ভুলে যা সেসব!"
সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত ওর সাথে গল্প করলাম। নাম্বারও নিলাম। তারপর ওকে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে আসলাম। কেমন যেন মনের মাঝে অজানা ভাল লাগা কাজ করছে! সেদিনের পর আলপনার সাথে আমার উঠাবসা শুরু হল। ক্লাস শেষ হলেই ফোন দিয়ে বলতো ক্যাম্পাসের সামনে আয় বা টিএসসির সামনে আয়, কোথাও ঘুরে আসি আরও কত কি! স্কুল লাইফের পর দুই বছর গ্যাপের ফ্রেন্ডশিপ হঠাৎ এত মজবুত হল কেমন যেন স্বপ্নের মত লাগছে আমার! ফ্রেন্ডসার্কেল আমাকে বারবার বলতো আলপনা মেয়েটা কে? এত কথা কিসের ওর সাথে? যদিও আমি কাউকে বলি নি আলপনার কথা আর বললেও আমার মনে হয় না এখন কোনো ওভার রিয়াকশন হবে! যাই হোক ধীরে ধীরে হাতে গোনা কয়েকটা বন্ধুকে জানালাম। ওদের সাজেশন হল আলপনাকে মনের কথাটা বলে দেয়া! সায়েম বললো, "আলপনা যখন তোর খোজ খবর নেয়া শুরু করছে সেটাও আগের চেয়ে বেশি! তার উপর ও ওর বান্ধবীদের চেয়ে তোর সাথে বেশি কথাবার্তা হাটাচলা করে সেক্ষেত্রে কোনো কনফিউশন নাই যে আলপনাও তরে ভালবাসে! এক কাজ কর, কাল বিকালে ওরে নিয়া আশেপাশে কোথাও নিরিবিলি জায়গায় যা! সময় আর মন মানসিকতা বুঝে ভালবাসি বইলা দেখ, আমি শিওর ও রাজি হইবো!! আর যদি তোর কপাল বেশি ভাল থাকে তাহলে ওই তরে আগে ভালবাসার কথা বলবে!"
সায়েম কথাটা মন্দ বলে নি! কিন্তু ভয় একটাই যদি ফ্রেন্ডশিপটা ভেঙে যায়! .
.
যা হয় হবে, আগে মনের কথাটা বলেই ফেলি তারপর পরের কথা! মোবাইলে আলপনার নাম্বার তুলে কল দিলাম,
"হুম আয়াত বল!"
"কি অবস্থা তোর?"
হুম ভালই... আচ্ছা কাল ফ্রি আছিস?"
যা আমি বলবো সেটা আলপনাই বলে দিল!!!
"হুম আছি..."
"গুড, আসলে কালকে ক্লাস করার একদমই ইচ্ছা নাই তাই ভাবলাম কোথাও ঘুরে আসি। তাই বললাম!"
"আচ্ছা ঠিক আছে.."
ঘটনা উল্টা হয়ে গেল! আমিই বলবো তা না সেই বললো! ব্যাপার না! একই কথা...
.
পার্কে হাটছি আর গল্প করছি! বাদাম নিয়েছিলাম সেটাও শেষ হয়ে গেল! "আয়াত থাম আর হাটার শক্তি নেই আমার, কোথাও বসি!" আলপনা আদেশ। এক আম গাছের নিচে দারালাম আমরা। চারদিকে বসার কোন জায়গা নেই! "আচ্ছা একটা কথার সত্য উত্তর দিবি?"
কি যে বলবে কে জানে! ফ্রেন্ডরা কিছু বললোই নাকি!
"আচ্ছা বল..."
"তুই কি আমাকে ভালবাসিস?"
কথাটা শোনার সাথে সাথে আমি আলপনার দিকে তাকালাম!
"যা বলার সত্যি বলবি, ভালবাসলে হ্যা বলবি না বাসলে না বলবি। কিন্তু মিথ্যা কিছুই বলবি না!"
আমার মুখ দিয়ে কিছুই বের হচ্ছে না আর ও অনর্গল কথা বলেই যাচ্ছে!
"যদি না বাসিস তাহলে আমার বাসার আশেপাশে ঘুরঘুর করিস কেন? ক্যাম্পাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হেটে হেটেও ক্লান্ত হোস না কেন? আমার জন্য খুলনা ছাড়লি কেন?"
"না আসলে...."
"কি আসলে?"
"সত্যিটাই বলি... তোকে ছোটকাল থেকেই পছন্দ করতাম আর খুব ভাললাগতো তোকে! এখন সেই ভালোলাগা কবে ভালবাসার রুপ নিছে আমার জানা নাই!
আর তোর বাসা, ক্যাম্পাস এসবের আশেপাশে ঘুরঘুর করার একটাই লক্ষ্য হল তোকে এক নজর দেখা!"
এত কথা কিভাবে বললাম বুঝে পাচ্ছি না! ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও অন্যদিকে তাকিয়ে আছে!
"তোকে ভালবাসি বলেই তো...." আলপনা আমাকে বলার সুযোগ না দিয়ে বললো, "আই লাভ ইউ...!!!!!"
শব্দটা আমার কানে বারবার খেলছে! সেকেন্ডের মধ্যে আলপনা সবকিছু বলে ফেললো! আমি কিছুই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না!
খানিকক্ষণ পর আলপনা আবার বললো,
"উত্তরটা দিলি না যে?"
"আমার উত্তর তো তুই বলে দিলি! আমি আর কি বলবো?"
"তাই বলে চুপ থাকবি?"
"আরে পাগলী ভালবাসিতো, আজ থেকে আরও বেশি ভালবাসবো তোকে!!"
জীবনটা কত সুন্দর সাজানো গোছানো মনে হচ্ছে! কোনো কিছুর কমতি নেই এখন! আল্লাহর রহমতে শেষের সব চাওয়াই পূর্ণ হল! সব কিছুই ভালো লাগে এখন। আলপনার সঙ্গ, ওর কথার জাদুতে নিজেকে হারিয়ে ফেলে ওর পাগলামির মাঝে নিজেকে ডুবিয়ে দেই। ইচ্ছা হয় হাজার বছর বেচে থাকি আমরা! বেচে থাকুক পৃথিবীর সকল ভালবাসা!
.
ভার্সিটি লাইফ শেষ করে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি! চাকরীর ইন্টার্ভিউ দিয়েছে! প্রত্যেকবার কোনো না কোনো কারণে বাদ পড়ে যাই। হতাশার যত মেঘ সব আমার আকাশে জমা হয়! কিন্তু আলপনা সেসব কিছু ফু দিয়ে উড়িয়ে দিত! নতুন ভাবে বাচার আশা জাগাতো! অনেক ঘুরাঘুরির আমার কপালে একটি চাকরি জুটলো! বন বিভাগে! সবচেয়ে বড় কথা হল চাকরীটা সরকারি! আর আলপনাকে নিয়ে আমার কোনো চিন্তা নেই। আজ হোক কাল হোক আমার পরীটা ডাক্তার হবেই!
.
.
আব্বু আম্মু আলপনাকে আগে থেকেই চিনতো! এমন একটা মেয়ে তাদের ছেলের বউ হবে ভাবতেই অবাক লাগে! আর আলপনার মত মেয়ে একটা এফ গ্রেড স্টুডেন্টকে ভালবাসবে এটাও অনেকটা অবাক হওয়ার বিষয়! আমাদের কম্বিনেশন খুবই ভাল। আন্ডার্স্ট্যান্ডিং, রেস্পেক্ট, সবই আছে আমাদের মাঝে। একটা কথা জানানো হয় নি, অঙ্কন এখন এক্টিং লাইনে আছে! নকশার সাথে ব্রেক-আপ হয়ে গেছে! এক্টর লাইনে টিকে থাকা কতটা কষ্টকর সেটা অঙ্কন ভাল ভাবে টের পাচ্ছে! এফ গ্রেডের স্টুডেন্টের মত সন্তুষ্ট থাকলে হয়তো এমনটা আজ ওর হতো না! নকশার কথা আমার জানা নাই। সম্ভবত সে এখন ফ্যাশন ডিজাইনার! তবুও খারাপ না! যাক আমার তাদের নিয়ে মাথা ব্যথা নেই। আলপনাকে আমার বাকি পথের সঙ্গী হিসাবে পেয়েছি এটাই বড়! আর আমার কন্ট্রোলে আরও তিনটা অফিস আছে! কর্তৃপক্ষ আমাকে একটা পাজেরো স্পোর্টস জীপ দিয়েছে এরচেয়ে আর বেশি কি লাগে! দুই চার বছর পর প্রমোশন পেলে আরও উপরের পদে যাবো নিজের ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে! কেমন ছিলাম আর আজ কেমন আছি!
.
জীবনটা গল্পের মত হলে কতই না ভাল হতো! গল্পের মত জীবনকে বানানো যাবে, শুধু একটা কথা মাথায় রাখতে হবে কখনও হার মানা যাবে না। রেজাল্ট খারাপ, ফেল এসেছে এগুলো কোন ব্যাপার না। পৃথিবীর বুকে জিরো থেকে হিরো হওয়ার অনেক উৎকৃষ্ট উদাহরণ আছে। চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। ব্যর্থ হয়েছেন বলে হাল ছেড়ে দেবেন বা লোকজনের কথায় আত্মহত্যা করবেন এগুলো করা একদমই বোকামি। স্বপ্নের পরিচর্যা করবেন আপনার চেষ্টা দিয়ে! আজ আপনি আত্মহত্যা করলেন কিন্তু হয়তো ভার্সিটি প্রথম দিকের সাবজেক্ট আপনার অপেক্ষায় থাকতো! স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখে তার পরিচর্যা করে বাস্তবে রুপ দিয়ে আপনি নিজের একদিন আপনার সফল হওয়ার গল্প বলে আরও দুইচারজন কে সফল হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করবেন। আপনাদের মত স্বপ্নিলদের জন্যেই এই গল্প.....
স্বপ্নিল তুমি...
১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ২:০১
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:০৮
আপনার আপন বলেছেন: valo laglo....... you are right..... kokhono harte nei