নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বুকের মাঝে হলুদ একটা পাতার দীর্ঘশ্বাস.. ..

রুমানা বৈশাখী

আমি মানুষ। শুধু এটুকুই পরিচয়... ...

রুমানা বৈশাখী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসা যখন-তখন

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:১০

আমার লেখালেখি জীবনের শুরু হয়েছিল ভালোবাসার গল্প দিয়ে। মানুষের সাথে মানুষের,সম্পর্কের সাথে সম্পর্কের,কষ্ট আর সুখের সাদামাটা বুনোনের গল্প দিয়ে। গল্পের ছোট্ট শরীরে আমি এঁকে রাখার চেষ্টা করতাম আমার অনুভব গুলোর চেহারা। এবং ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত আমার প্রথম গল্পটির নাম ছিল “ভালোবাসা যখন-তখন”।

এই শিরোনামে পরবর্তীতে আমি আরও অনেক গল্প লিখেছি। এখনও লিখি। লিখবোও ভবিষ্যতে। পাঠকের কাছে সবিনয় অনুরোধ-গল্প গুলোকে একজন বোকাসোকা কিশোরীর সাদামাটা লেখা হিসাবেই বিবেচনা করবেন। এ চাইতে বেশী কিছু নয়।



পথের শেষে ঃ

১)

শালটা আমাকে সেই-ই দিয়েছিল। পুরুষালী,গাঢ় রঙের একটা শাল-শেষ দেখা হবার দিনটিতে নিজের শরীর থেকে খুলে আমাকে জড়িয়ে দিয়েছিল সে।

সে.. .. ..আমার ভালোবাসার একমাত্র পুরুষ!

জীবনের নিষ্টুরতা যাকে নিয়ে গেছে আমার সীমারেখার বাইরে। জানিয়ে গেছে যে এই জীবনে তাকে আর পাওয়া হবে না কোনোদিন।

কিন্তু আমি জানি.. ..

আমি জানি যে আজও তার হৃদয়েই বসবাস আমার,ঠিক যেমন করে আমার হৃদয়ে তার। জীবনের বাস্তবতা আমাদের পৃথক তো রাখতে পারবে,কিন্তু কি করে আলাদা করবে আমাদের অভিন্ন স্বত্তাকে? কি করে মেটাবে পরষ্পরের জন্যে আমাদের ব্যকুলতা?

পরিবারের সীমারেখা তাকে বাধ্য করেছিল আমার হাতটাকে ছেড়ে দিতে। কিন্তু ওয়াদা করে গেছে-যেখানেই থাকুক,ভালোবাসবে কেবল আমাকেই। তার হৃদয়ের অধিশ্বরী আমি। ছিলাম,আছি,থাকবো।

নিজেকে তাই মাঝে মাঝেই ভীষণ ভাগ্যবতী মনে হয় আমার। কাউকে ভালোবাসা নিজেকে উজার করে,আর তার বিনিময়ে পাওয়া সেই মানুষটির সত্যিকারের নিখাদ আবেগ.. .. ..এর চাইতে বেশী আর কি পাওয়ার থাকতে পারে??

তবুও যখন কখনও বিষন্নতা আঁকড়ে ধরে আমার অস্তিত্বকে,পৃথিবীটাকে মনে হতে থাকে নির্মম আর নিষ্ঠুর-

তখন এই কংক্রীট নগরীর পথে পথে হাঁটি আমি। কোলাহল ভরা এই নগরী আচমকাই নিঃশব্দতম হয়ে আসে আমার শ্রবণ সীমায়,বুকের মাঝে পরতে পরতে জমে শুকনো পাতার মতো দীর্ঘশ্বাস,হৃদয়ের শীতলতা কুয়াশা হয়ে ঘিরে ধরে আমার চারপাশ।

ঁহাটি আমি।একাকী বহক্ষন।

হাঁটছি আমি.. .. ..একাকী বহুটা ক্ষণ যাবত!

শীতের ঝরা পাতারা আলতো উড়ে স্পর্শ করে যাচ্ছে আমার পদযুগল, অভিমানীর মতো অবহেলায় নিজেকে ছুঁড়ে ফেলছে ফুটপাতের শরীরে। কখনও কখনও বৃরে মমতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ঝরে পড়ছে আমার ওপরে,ঠিক যেমন করে শ্রাবণের বর্ষণ।

ভালোবাসার পুরুষের দেয়া সর্বশেষ উপহারটি শরীরে আঁকড়ে পথ চলি আমি।শালের উষ্ণতা আমাকে মনে করায় তার আলিঙ্গনের অনুভব।হৃদয় বিদ্রোহী থেকে বিদ্রোহীতম হয়.. .. ..

তবু পথ চলি আমি। চলতেই থাকি।এই কংক্রীট নগরীর পথে পথে বোকার মতো খুঁজে ফিরি আমার বিধাতাকে।যদি তাঁকে পেয়ে যাই.. ..পেয়ে যাই যদি জীবনের কোনো মোড়ে!

আজকাল সত্যিই মনে হয়-

আমার বিধাতা বুঝি আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন। পরিত্যাগ করেছেন আমাকে।

২)

তবে বন্ধুরা যা বলেছিল,সে সবই সত্যি কেবল???

শুধু সে সব সত্যি,আর বাকি সমস্ত মিথ্যা? মিথ্যা আমার ভালোবাসা, আমার বিশ্বাস,আমার প্রেম কাহিনীর একটা একটা ইঁট?

মিথ্যা যে সবই,আমার মনের ভ্রম-তা তো দেখতেই পাচ্ছি বেশ। ফুটপাতে দাঁড়ানো আমাকে অতিক্রম করছে একটা ইয়েলো ক্যাব। আর ক্যাবের শরীর গহবরে আমার ভালোবাসার পুরুষটি,তাকিয়ে আছে আমার দিকেই। তার বুকের নিরাপদ উষ্ণতায় মাথা রেখে বসে বড় রূপবতী এক তরুনী। ঠিক যেমনটি করে ছয় মাস আগে আমিও থাকতাম.. ..এমন কোনো প্রেমময় বিকালে।

ক্যাব অতিক্রম করে চলে যায় চরম অবহেলায়। আর আমার দৃষ্টির একরাশ অবিশ্বাসের বদলে তার দৃষ্টি শুধু উপহাসই উপহার দেয় আমাকে। না মা,না ব্যাখ্যা.. .. .কেবল আর কেবল উপহাস।

লোকে আমায় ঠিকই বলেছিল-

পরিবার নয়,নতুন প্রেমের মোহে আমায় সে ছেড়ে গেছিলো।নতুন নারীর মোহে পুরানো জনকে ছুঁড়ে দিয়েছিল অতীতের বুকে।আর নিজেকে নিষ্কলঙ্ক রাখতে বাহনা খুঁজেছির পরিবারের।

হ্যাঁ,ভালোবাসার প্রতিজ্ঞা গুলো বাহনা ছিল তার। নিজেকে নিষ্কলঙ্ক দেখাবার কৌশল মাত্র।

একজন মেরুদন্ডহীন মানুষের কাপুরুষোচিত কৌশল!



৩)

রুনা বলে-‘মাফ করে দে,দোস্ত।’

রবিন বলে-‘ভুলে যা। স্রেফ ভুলে যা।’

ফাহমা বলে-‘আগেই তো বলেছিলাম.. .. ..’

আর আমি ফাস্টফুড শপটা ছেড়ে নেমে আসি রাস্তায়। মুক্ত বাতাসে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। ঘৃনা করার গ্লানিতে,মা করতে না পারার বেদনায় পৃথিবীসম ভারী অন্তর আমার। ঘৃনা বোধহয় সেই অনুভব,যা মনকে সবচাইতে বেশী ভোগায়।সবচাইতে বেশী ভারী করে।

আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকাতেই মনে হয়-কোথায় আমার বিধাতা?কতদূরে?.. .. ..

কতদূরে তিনি আমাকে ছেড়ে গেছেন????

.. .. ..সন্ধ্যা নামছে আশ্চর্য দ্রুততায় এই কংক্রীট নগরীর বুকে। রাস্তার দুপাশে ঝুপড়ীতে থাকা পরিবার গুলো তাই উচ্ছিস্ট কাগজের আগুনে ঝটপট সেরে নিচ্ছে যথসামান্য রান্নার আয়োজন-দিনের আলো ফুরিয়ে যাবার আগেই.. .. .

প্রায় উলঙ্গ শিশুগুলো বিবর্ন বসনা মাকে ঘিরে বসে আছে সামান্য আগুনগুলোর কাছাকাছি।শীতের নির্মমতায় একটু উত্তাপের প্রত্যাশায়।

আর একটি ছোট্ট মেয়ের হাতে ছেঁড়াখোড়া এক পুতুল। নোংরা জামা পরনে,জায়গায় জায়গায় ছিঁড়ে তুলো বেড়িয়ে গেছে,উঠে গেছে মাথার সোনালী চুলগুলোও।তবুও তাকে পরম মমতায় বুকে আগলে বসে আছে মেয়েটি।অণ্য কাউকে স্পর্শ করারও অনুমতি দিচ্ছে না।

হয়তো কুড়িয়ে পেয়েছে কোনো ডাস্টবিনে। কোনো ধনী পরিবারের কণ্যার চাহিদা মিটে যাবার পর পুতুলটির আশ্রয় হয়েছে ফুটপাতের এই ছোট্ট মেয়েটির কোলে। হয়তো অন্যের ফেলে দেয়া এই পুতুলটিই মেয়েটির শৈশবের একমাত্র পুতুল.. .. ..

সহসাই মনে হয় আমার নিজের পুতুল গুলির কথা।আমার অবহেলায় ফেলে দেয়া সমস্ত পুতুলই কি এভাবে পরিণত হয়েছে অন্য কোনো বালিকার ভীষন প্রিয় সম্পদে?আমার বাতিল করা জামা গুলো পরেই শৈশব কাটিয়েছে সমবয়সী অন্য কোনো মেয়ে?

এবং বুঝতে পারি.. .. ..

বুঝতে পারি যে বিধাতা আমাকে ছেড়ে যাননি।বরং তাঁর অসীম কৃপা আমার ওপরে।যে কৃপার জন্যে কোনোদিন তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়নি। ভালো পরিবারে জন্মগ্রহন করেছি,ধণ না হলেও আর্থিক কষ্ট কখনও চোখে দেখিনি। তিনবেলা আহারের সংস্থান তিনি করেছেন,শিক্ষার আলোয় আলোকিত হবার সুযোগ দিয়েছেন,পৃথিবীর বুকে আসিনি কোনোরকম শারীরিক-মানসিক ত্রুটি নিয়ে।

এর চাইতে বেশী আর কি চাওয়ার আছে বিধাতার আছে?তবু অকৃতজ্ঞের মতো সারাটা জীবন শুধু চেয়েই গেছি তাঁর কাছে আমি,কষ্ট পেলেই খুলে বসেছি অভিযোগের ঝাঁপি।

বড় অকৃতজ্ঞ এই আমি!!!

পরিশিষ্ট ঃ

এখনও আমার শরীরে জড়ানো তার সেই শালটা.. .. ..ভালোবাসার সর্বশেষ চিহ্ন।

ভালোবাসার,না ধোঁকার?

জানি না আমি,জানতে চাইও না।শুধু এটুকু জানি যে নিজেকে ফিরে পেয়েছি আজ এ মুহূর্তে.. ..তাকে ভালোবাসতে গিয়ে যে আমাকে না জানি কোথায় হারিয়ে ফেলেছিলাম!

শালটা হাতবদল হয়ে পৌছায় পুতুল কোলে ছোট্ট সেই মেয়েটির হাতে।আর নিজের গন্তব্যে পা বাড়াই আমি।

তাকে ভালোবাসার গ্লানি থেকে মুক্ত হয়ে!

মন্তব্য ১৭ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৭) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:১৬

পারভেজ বলেছেন: ভালোই লাগলো।
আবেগটা একটু বেশী জড়ানো। :)

২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:১৭

রাতমজুর বলেছেন:
যাক, তবু শীতার্ত কারো কাজে লাগলো জিনিসটা।

৩| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:১৭

পথিক!!!!!!! বলেছেন: ভাগ্য আছে বলেই
বেঁচে থাকার জন্য কাউকে দোষারোপ করা যায় এবং বাঁচা যায় আও কিছু...

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:২০

রুমানা বৈশাখী বলেছেন: সেইটাই... .. ..আমরা এত ভাগ্যবান যে নিজেকে অপরাধী মনে হয় আজকাল

৪| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:৩৮

মুহম্মদ জায়েদুল আলম বলেছেন:
আপনার কোন একটা পোষ্টে মনে হয় এমন একটা কবিতা লিখে দিয়ে এসেছিলাম। এমনিতে কবিতা টবিতা আমার আসে না। কিন্তু কেন জানি সেদিন বোকা মেয়েটির কষ্টে নিজে কবি হয়ে গিয়েছিলাম।

নিয়মিত লেখার জন্য ধন্যবাদটা না দিয়ে পারছি না।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:৫৫

রুমানা বৈশাখী বলেছেন: কবিতাটা আবার দিন প্লিজ...ঠিক মনে আসছে না

৫| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:৪০

খুশবু বলেছেন: :(

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:৫৭

রুমানা বৈশাখী বলেছেন: থাক...মন খারাপ করে না।দুঃখিত,আপনার মন খারাপ করলাম বলে

৬| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:৪৪

বিপ্লব কান্তি বলেছেন: ভালোবাসার গল্পের প্রতি এলার্জি আছে, তাই পড়তে পারলাম এই গল্পটা।

৭| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:০৭

রেজওয়ান শুভ বলেছেন: নতুন ব্লগ চাইলে আসেন

Click This Link

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১:৩১

রুমানা বৈশাখী বলেছেন: ঘুরে এলাম.....ভাবার মতো বিষয়।ধণ্যবাদ আপনাকে

৮| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ২:৪১

স্বপ্ন নীল বলেছেন: আচ্ছা, ভালবাসাতে এত কষ্ট থাকে কেন?

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১২:০৬

রুমানা বৈশাখী বলেছেন: এই প্রশ্নের জবাব সবাই জানতে চায়....যারা ভালাবাসে-তারা!

৯| ০৪ ঠা মার্চ, ২০০৯ রাত ২:৩৭

সন্দীপন বসু মুন্না বলেছেন: আমি অনেক আগ থেকেই আপনার ফ্যান । রহস্যপত্রিকায় আবদুল কাদের বাবুদের টিন @টিনে আপনার লেখা পড়েছি। ব্লগে আপনাকে দেখে ভালো লাগছে।
আশা করছি আপনার লেখা পড়ে মুগ্ধ হবার অনেক সুযোগ পাব।

০৭ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ১২:৫৪

রুমানা বৈশাখী বলেছেন: আমি এখনো এত বড় হতে পারিনি েয কেউ আমার ফ্যান হতে পারে। তবুও....
....ধন্যবাদ.....
.....অনেক......

১০| ১০ ই এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১:১৫

দুর্বলতার অমিত বলেছেন: পড়া শেষ হওয়ার পর দেখি চোখ ভরে গেছে জলে।
ভালোবাসা মানে কষ্ট নিয়ে পরে থাকা কষ্টের অতীত রোমন্থন করা।
ভালোবাসার জন্য সারাজীবন কষ্টই কি পেতে হবে শুধু?

আশা করছি অনেক ভালো থাকবেন।

১১ ই এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১:৩৫

রুমানা বৈশাখী বলেছেন: আপনার অশ্রুতেই সার্থক আমার গল্প....
কিংবা কে জানে...হয়তো সত্যি কাহিনী....

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.