নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লিখতে ভালোবাসি। তাও আবার শুধুই বাংলায়..........

রুপালী তারা

রুপালী তারা › বিস্তারিত পোস্টঃ

এবং তনুজা

০১ লা মার্চ, ২০১৭ ভোর ৫:৪০

৪।।
শেষ পর্যন্ত তনুজা বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো। নাহ, বিয়েতে রাজি হয়ে গেলো না বলে বরং এটা বলা যায় যে, রাজি হতে বাধ্য হলো। সারা দিন রাত বাড়ির মানুষদের হুল ফোটানো কথা, তনিমার পালিয়ে বিয়ে করার খোঁটা, মায়ের গো ধরে থাকা সবকিছু ওকে ভেতরে ভেতরে পিষে ফেলছিল। একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে সে। এতদিন যাও বা একটু রাখঢাক ছিল, এখন সবাই সরাসরি বলতে শুরু করে দিয়েছে। দুই দিন আগে চাচা তনুজাকে ডেকে বললেন,
- তুই নিজেকে কি মনে করিস? হ্যা...? তুই দেখতে কালো। তোকে কে বিয়ে করবে? কোন রাজপুত্র আসবে তোকে বিয়ে করতে?
চাচী পাশ থেকে যোগ করলেন,
- রাজপুত্র যদি আসেও, দুই দিন পরে তোকে লাত্থি দিয়ে চলে যাবে। আজকাল ছেলেরা বিয়ে করতে গেলে ফরসা মেয়ে খুঁজে। সেদিক থেকে তো তোর কপাল অনেক ভালো যে, আবির তোকে অনেক পছন্দ করেছে। আর সে রাজপুত্রের থেকে কম কিসে?
তনুজা চুপচাপ শুনে গেলো। কোন কথা বলল না। চাচা আবারো বলতে শুরু করলেন,
- এই যে এরকম গো ধরে বসে আছিস... তোর বাবা নাই। কে দেখবে তোকে? তোর মা না থাকলে কোথায় থাকবি তুই? কে দায়িত্ব নিবে তোর?
আম্মা পাশেই ছিল। চাচা এবারে আম্মাকে শুনিয়ে দিলেন,
- ভাবী, আপনার মেয়েকে বলেন, তার নিজেরটা নিজের বুঝতে। আমরা তো চেষ্টা করলাম। ভাই নাই; ভাইয়ের মেয়ের জন্য একটা ভালো ছেলে খুঁজে এনে দিলাম। তাও আপনার মেয়ে রাজি না। তার নাকি আরো ভালো ছেলে লাগবে। কে খুঁজবে আরো ভালো ছেলে? আমরা খুজতে পারবোনা। এই বিয়েটা নাকচ হলে আমরা আর কোন দায়িত্ব নিতে পারবোনা। অনেক হয়েছে। মেয়ে এখন শিক্ষিত, চাকুরিজীবি। আমাদের মতামতের কোন দাম নাই তার কাছে। তারটা সেই ভালো বুঝুক।
তনুজা নীরবে সবকিছু শুনে গেলো। টু শব্দ করলো না। মাথা নিচু করে থাকলেও সে বুঝতে পারলো, আম্মা খুব ক্ষেপে গিয়েছে চাচার এসব কথা শুনে। এখন ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। আম্মা চোখের দিকে না তাকিয়েই সে বুঝতে পারলো, চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। চাচার এসব কথা হজম হতে না হতেই পরেরদিন ফুপু এসে হাজির। আবির নাকি অস্থির হয়ে গেছে বিয়ের জন্য। ওকে লন্ডনে ফিরতে হবে। সে সুমনকে বারবার ফোন করে তনুজার ব্যাপারে জানতে চাচ্ছে। তনুজা তখন মাত্র অফিস থেকে ফিরেছে। ডাইনিংয়ে দাঁড়িয়েই সে এসব শুনতে পেল। পাত্তা না দিয়ে আম্মার সামনা সামনি হতেই ফুপু এবার তনুজাকে ইঙ্গিত করে আম্মাকে শোনালো, মেয়েদের বেশি পড়ালেখা শিখায়ে শিক্ষিত করতে নেই। তাহলে বিয়ে দেয়া মুশকিল। শুনেই তনুজার মনে হল, ওর কানে কেউ গরম সীসা ঢেলে দিচ্ছে। সে তাড়াতাড়ি নিজের ঘরে চলে আসলো। কি বুঝাতে চাইলো ফুপু? এটাই যে, বেশি পড়াশুনা করে তনুজা এখন অতি শিক্ষিত হয়ে গেছে তাই এখন নিজের মতামত প্রকাশ করতে শুরু করেছে। মুরব্বীদের কথার কোন দাম নেই। চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্তি করলো তনুজা। এসব এখন আর ওর জন্য নতুন কিছু না। শুনতে শুনতে ওর গা সওয়া হয়ে গেছে। যদিও এখন পর্যন্ত একেকটা কথা ওর গায়ে হুলের মত বিঁধে। তারপরেও সে চুপচাপ সহ্য করে।
এতকিছুর পরেও সে নিজের সিদ্ধান্তেই ঠিক থাকতে চেয়েছিল। শেষ পর্যন্ত পারলোনা মায়ের জন্য। ওকে বিয়েতে রাজি করাবার জন্য আম্মা ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বসলেন। আত্নহত্যার হুমকি দিলেন। বিষ খেয়ে আত্নহত্যার হুমকি। তনুজা এই বিয়েতে রাজি না হলে নাকি তিনি বিষ খেয়ে আত্নহত্যা করবেন। এই কথার পর আর কিছু লাগেনা বিয়েতে রাজি হতে। আর তনুজার জন্য তো মায়ের এই একটা কথাই যথেষ্ঠ ছিল। বাবা মারা যাবার পর থেকেই সে বলতে গেলে এক রকম এতিম হয়েই গেছে। মাথার উপরের ছায়াটা আর নেই। সংসারের যতরকম ঝামেলা সবকিছু সহ্য করতে হয়েছে। সংসারের হাল ধরতে গিয়ে সে বুঝেছে, পড়াশুনাটা বন্ধ করা যাবেনা। যে ভাবেই হোক, চালিয়ে যেতে হবে। নাহলে বেশিদুর যাওয়া যাবেনা। হুমড়ি খেয়ে পড়তে হবে। সংসারের কথা ভেবে, মায়ের কথা ভেবেই সে পড়াশুনা, চাকরি সবকিছু একসাথে চালিয়ে গিয়েছে। এখন যদি আম্মা উলটা পালটা কিছু করে বসে... ভাবনাটা শেষ করতে পারেনি তনুজা। রাজি হয়ে গেছে বিয়েতে। সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পরে এই মায়ের মুখ দেখার জন্যই তো বাসায় ফিরে সে।
তনুজা হ্যা বলার পর থেকেই বাসায় বিয়ের আনন্দ শুরু হয়ে গেছে। চারদিকে কেমন যেন একটা অদৃশ্য সানাই বাজছে। সেই সানাইয়ের সুর শুধু সেই শুনতে পায়। আর কেউ না। যতই দিন যাচ্ছে, সুরটা কেমন করুন হয়ে যাচ্ছে। আবিরদের বাসা থেকে ওর ভাইয়েরা এসেছিল তনুজাকে দেখতে। এই প্রথম ওদের পক্ষ থেকে কেউ আসলো বাসায়। আবিরের দুই ভাই তো ওকে দেখে মহাখুশি। বারবার বলতে লাগলো, মনে মনে আবিরের জন্য ঠিক এরকম সুন্দর একটা বউ খুঁজছিল তারা। এক ভাইয়ের কথায় মনে হলো, পারলে আজকেই বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক করে ফেলে। আবিরও নাকি বাসায় জানিয়েছে, বিয়ে করলে সে তনুজাকেই বিয়ে করবে। ওকে বিয়ে করতে না পারলে সে নাকি আর বিয়েই করবেনা। শুনে ওর খুব হাসি পেয়েছিল। এহ!! এত্ত ভালোবাসা জমিয়ে রেখেছে মনে মনে? সেদিন তো কথা বলার সময় এত ভালোবাসা চোখে পড়লোনা।
আরো সাতদিন পরে আবিরের বাসা থেকে আবারো তনুজাকে দেখতে আসলো। তনুজা খুব বিরক্ত। কি শুরু করেছে এইসব। দুইদিন পর পর দেখতে আসে। এটা নাকি ঢাকাইয়া ফ্যামিলির রীতি রেওয়াজ। দুই তিনবারে তারা মেয়ে দেখে। কত বার এভাবে ওকে সেজে গুজে পাত্র পক্ষের সামনে যেতে হবে??? তবে এবারে একটু স্বস্তি পাওয়া গেলো। সবাই এসেছে। আবির, ওর বাবা মা, ভাইয়েরা, তাদের বউয়েরা......তনুজার মনে হল পুরো ফ্যামিলি শুদ্ধ চলে এসেছে। সে মনে মনে হাঁফ ছাড়লো। এবারেই হয়ত দেখাদেখি শেষ। তারপরেও মনের মধ্যে একটা খটকা রয়েই গেলো। আবিরদের বাসা থেকে সবাই এসে শুধু দেখেই গেলো। বিয়ের দিন তারিখ নিয়ে তো কোন কথা হলোনা। তবে কি দিন তারিখ ঠিক করতে আরো একদিন??......ঊফ, তনুজার মনে হল এক্ষনি মাটি খুড়ে মাটির তলায় সেধে যেতে পারলে সে বেঁচে যেত।
পরের দিন আসল কারন জানা গেলো। আবিরের বাসা থেকে জানিয়েছে তনুজাকে তাদের খুব পছন্দ হয়েছে কিন্তু সমস্যা হচ্ছে দেশের বাড়ি নিয়ে। তনুজাদের গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর। এখানেই তাদের সমস্যা। আবিরের বাবা মায়ের ইচ্ছা, তাদের মতই কোন একটা ঢাকাইয়া ফ্যামিলি থেকে ছেলের বউ নিয়ে আসবেন। ঢাকার বাইরের মেয়েকে বউ বানাতেই ওদের যত আপত্তি। যদিও তনুজা ছোট বেলা থেকে ঢাকাতেই বড় হয়েছে, তারপরেও বাপ দাদার বাড়ি তো লক্ষীপুরেই। ওরা ফুপুকে ফোন করে জানিয়েছে। ফুপু মুখ গোমরা করে ডাইনিংয়ে দাঁড়িয়ে সবাইকে সেটা জানালেন। তনুজাও ছিল সেখানে। শুনে ওর এত্ত খুশি লাগলো। ইচ্ছে করলো, সেখানেই নাচতে শুরু করে। কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব না। তাই সে আস্তে করে সবার সামনে থেকে চুপচাপ সরে গেলো। নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। তারপর শুরু করলো নাচ। তনুজা নাচতে জানেনা। তাতে কি? আজকে ওর খুশির দিন। সে পুরো ঘরময় এই কোনা থেকে ঐ কোনা তালে তালে নাচতে শুরু করলো। মাথা থেকে বিয়ের ভুত দূর হয়ে গেছে। আবিরের চ্যাপ্টার এখানেই সমাপ্ত। অন্য কোন বিয়ের প্রস্তাব না আসা পর্যন্ত সে নিজের মত করে স্বাধীন। চাচীর ঘ্যানর ঘ্যানর, ফুপুর ক্যাচর ক্যাচর, মায়ের ভ্যাজর ভ্যাজর, ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল সব বন্ধ!!!!! আহা কি আনন্দ আকাশে আর বাতাসে......নাচের সাথে সাথে গুন গুন করে গানও শুরু হলো। (চলবে)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.