নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জাপানের জন্য শোক

লিবিয়ায স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরে আসুক।

আফরিন জাহান

You must remember that, you fighting against destiny. You have to make your own future.

আফরিন জাহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

নারী শ্রমিকদের বঞ্চিত করে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়

০১ লা মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৮

প্রতি বছর মে মাসের প্রথম দিনটি শুরু হয় মে দিবসের তাৎপর্য বর্ণনার নানান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। সব কণ্ঠে সমস্বরে উচ্চারিত হয় শ্রমিকদের ন্যায্য হিস্যা আদায়ের সাতকাহন। দিনটি আসলেই জেগে ওঠেন শ্রমিকের পক্ষকণ্ঠ। দিন শেষ তো সবই আগের মতো। তবুও পহেলা মে শ্রমিক সমাজের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচনের দিন। শ্রেণী বৈষম্যের অবসানের লক্ষে সংকল্পবদ্ধ হবার দিন। দাসত্ব মুক্তির অনুপ্রেরণা। ধনতান্ত্রিক নিষ্ঠুর শাসন মুক্তির বারতা। মে দিবস শুধুমাত্র ৮ ঘন্টা কাজের দাবি নয়, শ্রমিক শ্রেণীকে শোষণ মুক্তির পথে এগিয়ে যাবার চেতনাও বটে।



শ্রমিক নেতা স্পাইজ, পার্সনস, ফিসার ও এঞ্জেলর প্রাণদণ্ড আর হে মার্কেট চত্বরের রক্তাক্ত অধ্যায় শেষে ১৮৯০ সালে শ্রমিকদের দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের ন্যায্য দাবি সারাবিশ্বে স্বীকৃতি পায়। ১৮৯০ সালে গ্রেট ব্রিটেনের হাইড পার্কে সমবেত লাখ লাখ শ্রমিকের অংশগ্রহণে মে দিবস পালিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে দিনটি পালিত হয় ধর্মঘটের মাধ্যমে। মিছিলের নগরীতে পরিণত হয় ফ্রান্সে। রাশিয়া, চীন, জার্মানিতেও স্বতস্ফূর্তভাবে মে দিবস পালিত হয়। তবে বাংলাদেশে ১৯৭২ সাল থেকে সর্বসম্মতভাবে মে দিবস পালিত হয়ে আসছে। ১৯৭২-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মে মাসের ১ তারিখ দেশব্যাপী সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন।

সমাজ কাঠামোর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনাচারণ, পারস্পরিক সম্পর্ক ও মূল্যবোধ। সমাজ এক অবস্থা থেকে অন্য অবস্থায় পরিবর্তিত হওয়ার মাধ্যমে প্রতিনিয়তই বদলে যাচ্ছে সামাজিক সম্পর্কের মাত্রা ও তার ব্যঞ্জনা। বাংলাদেশে বেশিরভাগ অঞ্চলে নারী শিক্ষার হার আনুপাতিক হারে কম হওয়ায় বিভিন্নভাবে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ অধিক মাত্রায় বিস্তৃত ও স্বীকৃত হয়েছে মূলত শ্রমিক হিসেবে। তবে বাংলাদেশের শ্রমিক শ্রেণীর বৃহত্তম অংশ এখনও বুর্জোয়া নির্ভর ট্রেড ইউনিয়ন নেতাদের নেতৃত্বের বলয় থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি।

নারী শ্রমিকদের আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে কিছু দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়নের কোন কার্যকর পদক্ষেপই গ্রহণ করা হয়নি। যথাযথ আইন এবং মানসিকতার অভাবে দুর্ঘটনা কবলিত নারী শ্রমিকেরা ক্ষতিপূরণ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন।

বাংলাদেশের নারীরা শ্রম বাজারে যুক্ত হয়েছেন বহু পূর্বেই। তবে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ ও দারিদ্র্যের চাপে প্রান্তিক নারীরা শ্রমবাজারে উপস্থিত হয়েছিলেন অপরাপর বছরের তুলনায় অধিক। তারপর থেকে শ্রমবাজারে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েই চলছে। এই হতদরিদ্র ও প্রান্তিক নারীদের সংগঠিত করে ১৯৭৮ সালে এদেশে পোশাক শিল্প যাত্রা শুরু করে। অর্থাৎ পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের মধ্যে শতকরা ৯০ শতাংশই নারী।

কাকডাকা ভোরে দেশের বিভিন্ন স্থানের রাস্তাঘাটে নারী শ্রমিকদের মিছিলের মতো ছুটে চলতে দেখা যায়। সঙ্গে থাকে ছোট্ট একটি খাবারের ব্যাগ বা বাক্স। এদিক ওদিক তাকিয়ে সময় নষ্ট করার যেন ফুরসৎ নেই তাদের।কারণ নির্দিষ্ট সময় (প্রবেশের) শেষ হওয়ামাত্র বন্ধ করে দেয়া হয় প্রধান বা মূল গেট।শোষক শ্রেনী সবচেয়ে বেশি অধিকার বঞ্চিত করেছে নারী শ্রমিকদের।নারীদের অধঃস্তন করে রাখার পাশাপাশি সর্বত্রই নারীকে ঠকানোর এক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। শোষক শ্রেনীর বিভিন্ন নির্যাতন মেনে নিয়েই কাজ করতে বাধ্য হয় তারা। অথচ দেশের শ্রমবাজারের প্রায় অর্ধেকই নারী। তৈরি পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ। শ্রমবাজারে তাদের অংশগ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ হলেও অধিকারের বিষয়টি কখনোই সেভাবে গুরুত্ব পায়নি। একই ধরণের কাজে নারী শ্রমিক পুরুষ শ্রমিকের তুলনায় ৫৬ শতাংশ কম মজুরি পান। এছাড়া মাতৃত্বকালীন ছুটি, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ, ইত্যাদি অধিকার ও সুযোগ-সুবিধা থেকে কর্মজীবী নারীরা আজও বঞ্চিত। তার পরও মে দিবসের উৎসবে যোগ দিয়ে তারা যেন এই প্রত্যয়ই ঘোষণা করেন যে, একদিন সুদিন আসবেই। শোষণ-বঞ্চনা থেকে তাদের মুক্তি মিলবেই।

গত কয়েক দশক ধরে আমাদের দেশের শ্রম বাজরে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গত এক দশকে এক কোটি ত্রিশ লক্ষ বাড়তি শ্রম শক্তি যুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৫০ লক্ষই নারী। কর্মক্ষেত্রের প্রায় সকল স্তরেই নারীরা শিকার হচ্ছে তীব্র মজুরী বৈষম্যের। শহর এবং গ্রামভেদে এ বৈষম্য আরো প্রকট। এক হিসাবে দেখা যায়, নারী শ্রম শক্তির ৮৩ শতাংশ হচ্ছে অবৈতনিক গৃহস্থালী শ্রমিক, ১০ শতাংশ আত্ম কর্মসংস্থান, ৪ শতাংশ বেতনভোগী শ্রমিক এবং ৪ শতাংশ দিনমজুর। শহরাঞ্চলে ম্যানুফ্যাকচারিং কৃষি উৎপাদক খাতে বেশিরভাগ নারীরা কর্মরত। মাত্র ১•৭ শতাংশ নারী কারিগরি ও পেশাদারি খাতে নিয়োজিত। ২০১০ সালে বেসরকারি সংগঠন শ্রম বিকাশ কেন্দ্রের পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, গার্মেন্ট সেক্টরে ৯০ ভাগ, নির্মাণ কাজসহ বিভিন্ন সেক্টরে ৮৪ ভাগ নারী শ্রমিক কাজ করে।

সাধারনত দেখা যায় অপ্রাতিষ্ঠানিক বা অসংগঠিত খাতেই নারীদের অংশগ্রহণ বেশি। কৃষিকাজে বাংলাদেশের নারীদের অংশগ্রহণ ব্যাপক। কিন্তু তার কোন স্বীকৃতি নেই। অন্যদিকে গৃহকর্মে নিয়োজিত নারীরাও সব ধরনের অধিকারবঞ্চিত। এদের কোন সার্ভিস রুল নেই কিংবা নেই অন্য কোন বিধিবিধান। ফলে শ্রম আইনের সুবিধা থেকে এরা বঞ্চিত।শ্রমজীবী-কর্মজীবী নারীদের সংগঠিত করা এবং তাদের নূ্যনতম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার জন্য কিছু দাবিদাওয়া নিয়ে সরকারসহ বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে দরকষাকষি করা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু এক্ষেত্রে তেমনভাবে কেউ এগিয়ে আসছে না।



পোশাক শিল্প ও কৃষি কাজ ছাড়াও, নির্মাণ, চাতাল, চিংড়ি চাষসহ আরও কিছু ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ক্রমাগত বাড়ছে। এসব ক্ষেত্রেও নারী শ্রমিকের নিম্নতম মজুরি, কাজের সময়সীমাসহ অন্য কোন সুযোগ-সুবিধার কোন নির্দিষ্ট বিধিবিধান নেই। চাকরির নিরাপত্তা ও নিশ্চয়তা নেই। মালিকপক্ষ যেভাবে নির্ধারণ করেন সেভাবেই হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নারী শ্রমিকদের কাজের কোন সময়সীমা নির্দিষ্ট না থাকায় ক্ষেত্রবিশেষে তাদের ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয় নামমাত্র মজুরিতে। অথচ বাংলাদেশের সংবিধান, জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা, আইএলও, সিডও সনদে নারীদের অধিকার ও দাবিদাওয়ার বিষয়ে বৈষম্যহীন অবস্থানের পক্ষে সুস্পষ্ট বক্তব্য আছে। বাস্তবে বৈষম্য চলে আসলেও তার কোন প্রতিকার হয় না। প্রধানত মালিক বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অবহেলা বা বৈরী মনোভাব, প্রচলিত শ্রম আইনের দুর্বলতা এবং ট্রেড ইউনিয়নের অনুপস্থিতি অথবা দৃঢ় অবস্থান নিতে না পারার কারণেই শ্রম আইনের সকল সুযোগ-সুবিধা থেকে নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হন।তাইতো নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, ‘বৈষম্যমূলক আচরণের জন্য কর্মক্ষেত্র থেকে বহু দক্ষ মেয়ে হারিয়ে যাচ্ছে।’

চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের জন্য সরকার ঘোষিত কোটা পদ্ধতিও অনেক ক্ষেত্রেই মানা হয় না। সরকারী, আধাসরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতেই এই সংরক্ষণ ব্যবস্থা বেশি উপেক্ষা করা হয় বলে মনে হয়। এমনও দেখা যায় যে, একটি প্রতিষ্ঠানে ছয় শতাধিক কর্মজীবীর মধ্যে নারীর সংখ্যা মাত্র ১২-১৪ জন। হাতেগোনা এই নারীদেরও হয়ত প্রায়ই সহকর্মীদের কটাক্ষ, গঞ্জনাসহ নানা অসৌজন্যমূলক আচরণের সম্মুখীন হতে হয়। আমাদের দেশে অধিকাংশ কর্মক্ষেত্র নারীবান্ধব নয়। যৌন হয়রানির ঘটনা ছাড়াও পুরুষ সহকর্মীদের মনমানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণে শ্রমজীবী-কর্মজীবী নারীদের নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। অন্যদিকে শ্রমজীবী-কর্মজীবী নারীদের কর্মক্ষেত্র ছাড়াও গৃহস্থালি কাজেও অনেক সময় দিতে হয়। খাবার তৈরি করা, সন্তান লালন-পালন করা, ঘরদোর পরিষ্কার করা, কাপড় ধোয়া এসব কাজ থেকে কর্মজীবী নারীদের রেহাই নেই। ফলে ৮ ঘণ্টা কাজের সময়সীমা তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয় না। পোশাক শিল্পসহ অনেক শিল্প কারখানাতেই কর্মপরিবেশ এমন যে, ওসব জায়গায় ৪/৫ বছর কাজ করলে নারী শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়ে। টয়লেট সুবিধা না থাকায় কিডনিসহ নানা দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হতে দেখা যায় নারী শ্রমিকদের। মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাস করেছে সরকার। এটা নিঃসন্দেহে একটা ভাল পদক্ষেপ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এই সুযোগ কি সব কর্মজীবী-শ্রমজীবী নারীর জন্য প্রযোজ্য হচ্ছে? নাকি তৈরি হয়েছে বৈষম্যের নতুন ক্ষেত্র? অনেক প্রতিষ্ঠানেই গর্ভবতী হলে নারী শ্রমিককে চাকরিচ্যুত করা হয়। তাছাড়া মাতৃত্বকালীন ছুটির সময় বেতন-ভাতা-বোনাস ইত্যাদির সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করা হয়।

একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, নারী শ্রমিকদের শোষণ-নিপীড়ন ও বৈষম্যের মধ্যে রেখে দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়ন সম্ভব হবে না। জাতিসংঘের মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের ২৩নং ধারায় উল্লেখ আছে, কোনরূপ বৈষম্য ছাড়া সব কাজের জন্য সমান বেতন পাওয়ার অধিকার প্রত্যেকের আছে। আর তাই সব ক্ষেত্রেই কর্মরত নারীদের কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা নিশ্চিত করা, যথাযথ বিশ্রামের সময় এবং সাপ্তাহিক ছুটি, কাজের ক্ষেত্রে নারী শ্রমিকদের সমকাজে সম বেতন বা মজুরি এবং সময়মতো তা পরিশোধ নিশ্চিত করা ব্যাতীত নারীদের প্রতি মজুরী বৈষম্য কমানো সম্ভব নয়। একই সাথে নিয়োগ, পদোন্নতি, দায়িত্ব ও কাজ বণ্টনে সকল ধরনের বৈষম্য রোধে যথাযথ আইন প্রণয়নের পাশাপাশি নারী শ্রমিকদের সব ক্ষেত্রেই ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এই অধিকার অর্জনে শ্রমজীবী সংগঠনগুলোর পাশাপাশি সোচ্চার হতে হবে প্রতিটি সচেতন নাগরিককে। তবেই স্বার্থ্ক হবে মে দিবসের তাৎপর্য্। কারণ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলে গেছেন পৃথিবীর যা কিছু সৃষ্টি সুন্দর চির কল্যাণকর, অর্ধ্কে তার করিয়াছে নারী অর্ধকে তার নর।’







মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মে, ২০১৪ রাত ৮:০৩

সজল আহমদখ বলেছেন: লেখাটির জন্য লেখকের প্রতি সাধুবাদ রহিল।

২| ০২ রা মে, ২০১৪ রাত ১২:১০

আফরিন জাহান বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.