![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
You must remember that, you fighting against destiny. You have to make your own future.
পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু এ পানি যদি প্রয়োজনের অধিক হয়ে যায় তখন সে ধারণ করে এক ভয়ানক রূপ। তাইতো বলা যায় পানি শুধু জীবন নয় অনেক সময় এটা জীবন হরণকারী হিসেবেও দাঁড়ায়। বর্ষাকালে অতিবৃষ্টি এবং হিমালয়ের বরফ গলে যাওয়ার কারণে নদ-নদীগুলো পানিতে ভরে গিয়ে সেই পানি চলে আসে লোকালয়ে, আর এটাই আমাদের কাছে বন্যা বলে পরিচিত।
প্রকৃতির দুই রূপ- সৃষ্টি ও ধ্বংস। প্রকৃতি একদিকে গঠন করছে, অন্যদিকে বিনাশ করছে। বিভিন্ন কারণে প্রকৃতি ধবংস হচ্ছে। এসব ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে রয়েছে বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়, টর্নেডো, নদীভাঙ্গন, খরা, ভূমিকম্প ইত্যাদি। তবে সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বন্যার আঘাতই সবচেয়ে বেশি। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ সাধারণত: কিছু কিছু এলাকায় আঘাত এনে ক্ষতিসাধন করে থাকে এবং এর স্থায়ীত্বকাল অল্প সময় হয় কিন্তু বন্যা প্রায় সমগ্র দেশে আঘাত এনে প্লাবিত করে থাকে। এর স্থায়ীত্ব বেশিদিন থাকে। তখন অসহায় হয়ে পড়ে গোটা জাতি। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতিবছর বাংলাদেশের প্রায় ২৬,০০০ বর্গ কিমি অঞ্চল অর্থাৎ ১৮ শতাংশ ভূখন্ড বন্যা কবলিত হয়। ব্যাপকভাবে বন্যা হলে সমগ্র দেশের ৫৫ শতাংশের অধিক ভূখন্ড বন্যার প্রকোপে পড়ে। প্রতি বছর বাংলাদেশে তিনটি প্রধান নদীপথে মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত আর্দ্র মৌসুমে ৮৪৪,০০০ মিলিয়ন কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়।
বাংলাদেশটি মূলত: পলিবাহিত বিস্তীর্ণ এক সমতল ব-দ্বীপ। ভূমি বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এটি পাহাড়, সমতল থেকে সামান্য উঁচু ভূমি ও সমতল প্লাবন ভূমি, এই তিনটি অঞ্চলে বিভক্ত। পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা এই তিন নদী অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে ৪,৬৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ অনন্য বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ভৌগোলিক অঞ্চল গঠন করেছে বাংলাদেশ। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে এদেশকে প্রায়ই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে হয়।
তবে ভাবনার বিষয় হল-সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ বন্যা। এই কারনে মানুষের জন জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিসহ। বাংলাদেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারন করেছে। এবারের বন্যায় এই পর্যন্ত দেশের প্রায় ১ কোটি লোক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং ৭ লাখ ১১ হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে।
শুধু কি গ্রামেই? ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলও বন্যায় কবলীত। ঢাকার যে সকল অঞ্চলে বন্যার পানি এসেছে সেই সকল অঞ্চলে বন্যার পানি ও সুয়ারেজ লাইন একসাথে মিশে গিয়েছে। সেই কারনে দেখা দিয়েছে নানা রোগ ব্যাধি। স্বাভাবিক জীবন যাত্রা অব্যহত রাখার জন্য মানুষকে এই দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা ড্রেনের পানি দিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে সঙ্গে বেড়েছে মশার প্রদুর্ভাব । তাছাড়া বন্যার সুযোগে দাম বেড়েছে খাবার স্যালাইনসহ ঔষধ ও চাল, ডালের এবং অন্যান্য সকল প্রয়োজনীয় জিনিসের।
এছাড়া যেসব অঞ্চলে বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে সেখানে দেখা দিয়েছে পানি বাহিত রোগের। যেই কারনে ছড়িয়ে পড়েছে ডায়রিয়া, কলেরাসহ বিভিন্ন ভয়ানক রোগের। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ অসুস্থ হচ্ছে এবং নিয়ে যাওয়া হচ্ছে হাসপাতালে। কিন্তু তারা পাচ্ছে না সুচিকিৎসা এবং ঔষুধ।
এসকল বন্যার্ত মানুষদের জন্য প্রয়োজন আশ্রয়, সাহায্য এবং সু-চিকিৎসা। দেশে সরকারী এবং বে-সরকারী ভাবে বিভিন্ন সাহায্য প্রদান করা হচ্ছে। নারী জীবন ও তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে বন্যাকবলীত মানুষের দিকে। নারী জীবন ও বানার্ত শিক্ষার্থী, ষ্টাফ এবং অন্যান্য বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রান বিতরন করছে। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। বিত্তবান ধনী ব্যাক্তিদের সাহায্যের হাত বাড়ানো উচিত।
বন্যায় বাড়ি ঘর শুধু ভেসেই যায়না সঙ্গে পদ্মার ভাঙ্গনে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া ফেরিঘাটের তিন নম্বর ঘাটটি সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে গেছে। এতে করে ওই এলাকায় ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দুপ্রান্তে সৃষ্টি হয়েছিল তীব্র যানজট। বন্যার কারণে বিভিন্ন সময়ে এদেশের আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও কম নয়। ১৯৭০, ১৯৯১, ১৯৮৭, ১৯৮৮ ও ১৯৯৮ এবং ২০০৭ সালে বাংলাদেশে যে বন্যা হয়, তাতে জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। ২০০৭ সালের বন্যায় সরকারী হিসেব মতে, প্রায় ২৯৮ জন মানুষ মারা যায় এবং ১০,২১১,৭৮০ জন আহত হয়। প্রায় ৫৮,৮৬৬ বাড়িঘর সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়। দক্ষিণ দিকের প্রবল বায়ু প্রবাহের কারণে এদেশের ভূমি পানিতে প্লাবিত হয়।
বন্যা নিয়ে বিভিন্নজন কথার ফুলঝুড়ি ফুটালেও এটা থেকে পরিত্রাণের কথা ভাবছেন না অনেকেই। বন্যার আঘাত হানার আগে তাই বন্যা সর্ম্পকে তাৎক্ষণিক ভাবে প্রাক-সতর্কীকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ত্রাণ সামগ্রী মজবুত রাখতে হবে। প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে বহুতল আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। বর্তমানে যেসব বেড়িবাধ আছে সেগুলো উঁচু করতে হবে। ভরাট নদী-নালা সংস্কারের মাধ্যমে পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। আর্ন্তজাতিক সহযোগিতা গ্রহণের মাধ্যমে বৃহৎ নদ-নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। নদীর পাড়সহ সারাদেশে প্রচুর গাছ লাগাতে হবে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
বন্যাদুর্গতদের জন্য আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে যাতে তারা দুর্যোগের সময় এখানে আশ্রয় নিতে পারে। খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর-দিঘী ও হাওর-বাঁওড় খনন/পুনঃখনন বা সংষ্কার করে জলাশয়ের গভীরতা বৃদ্ধি করতে হবে।
বন্যা সমস্যার প্রতিকারেরই উপরই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। বন্যার স্থায়ী সমাধানের ওপর নির্ভর করছে এ দেশের মানুষের স্বস্থি ও শান্তি। তাই সবার আগে মরণ ফাঁদ ফারাক্কাকে রুখতে হবে। সে জন্য চাই জাতীয় উদ্যোগ ও সুষ্ঠুু পরিকল্পনা সরকারের পাশাপাশি জনগণেরও।
তবে আশার কথা হল, সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি পরিশোধ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে। ক্ষুদ্রঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরএ) এ বিষয়ে সোমবার ক্ষুদ্রঋণ বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সার্কুলার দিয়েছে। সার্কুলারে বলা হয়, বন্যা চলাকালে ও বন্যা-উত্তর দুমাস কিস্তি পরিশোধ স্থগিত থাকবে। সার্কুলারে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকদের অর্ন্তবর্তী ও দুর্যোগকালীন নতুন ঋণ দেয়ার জন্য গ্রাহকদের আগের খেলাপি ঋণ নবায়ন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্থদের ঋণ থাকা অবস্থায় তাদের শতভাগ সঞ্চয় তুলে নেয়ার সুবিধা এবং প্রতিষ্ঠানের দুর্যোগব্যবস্থাপনা তহবিল ও উদ্বৃত্ত তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্থ গ্রাহকদের খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করার নির্দেশ দেয়া হয়। এমআরএর পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের নির্দেশে এসব ব্যবস্থা নিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধানদের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানানোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমন মহতি উদ্যোগের জন্য তাঁদেও সাধুবাদ জানাই।
সবচেয়ে বড় বিষয় প্রাকৃতিক দুযোর্গ থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে প্রচুর পরিমান বৃক্ষ রোপন। যদি আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হ্রাস করতে চাই তাহলে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে তাই প্রয়োজন অধিক বনাঞ্চল। গাছপালার পরিমান ঠিক থাকলে পৃথিবীর ভারসাম্য সঠিক থাকবে।
২| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৯
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: পোষ্টে জোড়ালোভাবে সহমত পোষণ করছি আপু +
ভালো থাকবেন ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:০৪
আহমেেদ শাফি খান বলেছেন: আফসোস সবাই যদি বুঝত। যাদের বোঝার দরকার তারা বোঝেও না বোঝার ভান করে।