নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমিও একদিন কথা বলবো, মানুষের পক্ষ থেকে মানুষের জন্যে।

আমিও একদিন মানুষের কথা বলবো, মানুষের পক্ষথেকে।

সাব্বির শাহরিয়ার

আমিও একদিন কথা বলবো, মানুষের পক্ষ থেকে মানুষের জন্যে।

সাব্বির শাহরিয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

তারা

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:১০

কয়েক বছর আগে আমি আমার ইউনিভার্সিটির কিছু স্টুডেন্টদের সাথে একটা কাজে পঞ্চগড় গিয়েছিলাম। ১০ থেকে ১২ দিনের জন্যে সেখানে গিয়ে থাকতাম একটা স্কুলের ক্লাসরুমে।

সেখানে যে কাজে গিয়েছিলাম তার মধ্যে প্রধান একটা কাজ ছিল মাটি কাটা। আমরা ১৪ জন ছিলাম, তার মধ্যে আমার খুব ভাল বন্ধুদের মধ্যে দুইজন ছিল রিফাত আর শোভন। আমরা সকালে উঠে মাটি কাটা শুরু করতাম আর শেষ হত মাগরিবের আজানের কিছুটা সময় আগে।

সারাদিন মাটি কাটাকাটি-টানাটানি করার পর মাগরিবের কিছুটা আগে আমরা সবাই মিলে লাইন দিতাম টিউবওয়েলের সামনে গোসল করার জন্যে। আমাদের মধ্যে পাল্লা লেগে যেত কে কার আগে ফ্রেশ হবে তা নিয়ে। কারন আগে ফ্রেশ হওয়া মানেই নিজের জন্যে একটু বেশী সময়। যাইহোক, আমরা যে স্কুলে ছিলাম সেটা ছিল পঞ্চগড়ের শেষ মাথার দিকে। ইন্ডিয়ান বর্ডার থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দূরে। সন্ধ্যার পর চারিদিক শুমশান হয়ে যেত। স্কুলের সামনে অনেকবড় মাঠ আর চারিদিকে গাছপালা। আমরা থাকতাম দেড়তলায়। কিভাবে? স্কুলটার দোতলায় ২ টা ক্লাসরুম ছিল, আর বাকী অর্ধেকটা ছিল খালি।

আমার ব্লগ মাটি কাটা নিয়ে না। আমার ব্লগটা তারা নিয়ে। মাটি কাটাকাটির মধ্যে তাঁরা কিভাবে আসলো এখন সেই কথায় আসি...

কাজেরপর সন্ধ্যায় বাজার থেকে চা-টা খেয়ে এসেই পাটি নিয়ে চলে আসতাম ছাদের খোলা অংশে। সেখানে শুয়ে থাকতাম ঘন্টার পর ঘন্টা। শরীরে অনেক ক্লান্তি কিন্তু রুমে গিয়ে ঘুমাতে ইচ্ছে করত না। আমাদের ছাদে ধরে রাখার প্রধান কারন ছিল তারা। অনেক তারা, হাজার তারা, লক্ষ লক্ষ তারা। ছাদে পাটিতে শুয়ে পরলে আকাশটা অনেকটাই গোল লাগতো। আর সোজা আকাশের দিকে তাকালে আকাশটা মনে হয় অনেকটাই নিচে নেমে আসতো। তখন চারপাশে আর কিছু দেখা যেত না, কানে আসতো শুরু বাতাসের শব্দ আর গাছের পাতাদের খসখস শব্দ। পাশে কেউ কথা বললে হয়তো কান পর্যন্ত আসতো কিন্তু তা মন পর্যন্ত পৌছাতে পারতো না। কারন ইন্দ্রয় গুলো ব্যস্ত অনেক। হবেই না কেন? চোখ ব্যস্ত তারার চাদরে সবচেয়ে সুন্দর আর উজ্বল তাঁরাটা খোজা নিয়ে। কানে শুধু বাতাসের ঝাপ্টাঝাপ্টি, আর মন যে কই সেটার খবর নেয়ার চেষ্টা করাই বৃথা কারন তা দৌড়ের ওপর।

আমরা অনেক সময় ধরে তাঁরা দেখতাম। তাকালেই তাঁরার ছোটাছুটি দেখা যেত। ছিটকে পড়া তারার দিকে আঙ্গুল তাক করে রাখতাম, যতক্ষন না সেটা আকাশের কোন এককোনায় হারিয়ে যায়। আর মাঝে মাঝে বিড়বিড় করে রিফাত অথবা শোভনের সাথে যেকথা কোনদিন কাউকে বলা হবে না সেই কথা বলতাম। আর বারবার মুগ্ধ হতাম তাঁরা দেখে। ভাবতাম এত তাঁরা একসাথে দেখা কিভাবে সম্ভব? জীবনেতো এততাঁরা দেখিনি। এত চিকমিক আর উজ্বল তাঁরা যে তা কখনো কল্পনাতেও আসে না। আমার মনেহয় আমি সারাজীবনের তাঁরা একসাথে পঞ্চগড়েই দেখে ফেলেছি। যেখানে ছিলাম সেখানে অনেক ভাল-খারাপ সময় কেটেছে, অনেক মজা হয়েছে আবার অনেক মানুষের সাথেও পরিচয় হয়েছে। কিন্তু যখন ফিরে আসি তখন আমি কোন কিছুই আর মিস করতে পারিনি শুধু তারা ছাড়া। খুব আজব মনে হলেও আমি ফিরে আসার সারাটা পথ শুধু তারার কথাই চিন্তা করেছি। ভেবেছি, আবার এততারা একসাথে দেখতে পাবোতো?

এর পর অনেক সময় কেটেছে, অনেক জায়গায় ঘুরেছি কিন্তু যেখানেই যেতাম মনে মনে সেই তারার চাদর খুজতাম। রাত হলেই চোখ চলে যেত আকাশেদিকে, যদি এততারা দেখার সৌভাগ্য আবার হয়। কিন্তু সেই তাঁরা আর দেখা হল না।

বান্দারবানে পাহাড়ে গিয়েছিলাম, মনে অনেক শখ ছিল হয়তো পাহাড়ে গেলে পরিষ্কার আকাশে সেই তাঁরা দেখা যাবে। কিন্তু যায়নি। নোয়াখালির নিঝুম দ্বীপে সাগরের পাশে অনেক সময় অপেক্ষা করেছি, যদি তাঁরা দেখা যায়। সেখানেও তাঁরা ছিল না। যদিও সেখানে চাঁদের আলো ছিল মন ভেজানোর মত। কিন্তু মন ভিজলেও চোখের শখ যে মিটলো না। নিঝুমদ্বীপ থেকে ফেরার সময় লঞ্চে ছিলাম ১৭-১৮ ঘন্টার মতন। বারবার আকাশে দিকে তাকিয়েছি যদি নদীতে থাকলে আবার পঞ্চগড়ের মতন তাঁরা দেখা যায়। নাহ্‌ সেখানেও নাই।

তবে আমি এখনো আশা ছেড়েদেইনি। আজকে হয়তো দেখা হবে না কিন্তু বেচে থাকলে হয়ত সেই ১২ দিনের তাঁরা দেখার সেই চরম অনুভুতিটা আবার অনুভব করতে পারবো।

গতকাল আর আজকের আকাশ অনেক সুন্দর। সবসময় হয়তো আকাশে দিকে তাকানো হয়না তাই জানি না এত সুন্দর আকাশ ঢাকায় বছরে কতবার দেখায় যায়। আমি সৌভাগ্যবান যে গত দুইরাত আমার আকাশে দিকে চোখ গেছে আর ঢাকার আকাশও যে খুব একটা খারাপ না সেটার উপলব্ধি হয়েছে। যারা এইদুইদিন আকাশে দিকে তাকানো সময় পাননি তারা মনে হয় অনেককিছু মিস্‌ করলেন। জীবনে মনে রাখার মত সুন্দর জিনিস সবসময় চোখে পড়ে না। যদি সুযোগ হয় তাহলে সময় নিয়ে আকাশে দিকে একটু তাকাবেন। হতে পারে, এই আকাশ হয়তো আর কোনদিন চোখে নাও পড়তে পারে।



** আমার অনুভুতি হয়তো অন্যকাউকে স্পর্শ করবে না। তাই কোন কমেন্ট আশা করছি না। তবুও যারা আমার এতবড় ব্লগটা পড়লেন তাদেরকে ধন্যবাদ :)

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৩:৩৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনার স্মৃতিচারণ দারুন লাগলো।
তবে তাঁরা না , মনে হয় তারা হবে।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৬

সাব্বির শাহরিয়ার বলেছেন: তাঁরা আর তাঁরা ব্যাপারটা নিয়ে আমি ভাল রকম কনফিউজ হয়েছিলাম। আপনার কমেন্টে সিউর হলাম। আপনাকে ধন্যবাদ।

২| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ৭:০৬

নীল আকাশ আর তারা বলেছেন: ++++++++++

৩| ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:০৬

স্বপ্ন নীল বলেছেন: আমি দেখেছিলাম সেন্ট মাটিন এ এত তারা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৬

সাব্বির শাহরিয়ার বলেছেন: কোনদিন গেলে অবশ্যই মিলিয়ে দেখবো।
ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.