নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম \'বোধ\'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবি

সাদাত হোসাইন

লিখি, ফিল্ম বানাই, ছবি তুলি। বই প্রকাশিত হয়েছে ৫ টি। উপন্যাস, ছোট গল্প আর (অ)কবিতার বই। প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের নাম 'বোধ'। ২০১৩ তে জিতেছে জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড। স্বপ্নের সবটা জুড়ে গল্প। সেই গল্প বলতে চাই লেখায়, চলচ্চিত্রে, ছবিতে...

সাদাত হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

হুমায়ূন আহমেদ, অমরত্বের কাল...

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৫৫

আম্মা বইটা আমার হাতে দিয়ে বললেন, 'নে, পড়'।



আমি বই উল্টে প্রথমেই কভার দেখি, খা খা শুন্য মরুভূমি, 'এহ! এইটা কি কভার! এই বই কি পড়বো!!'



আম্মা বললেন, 'ঘরেতো আর বই নাই, এইডা পাশের বাড়ির কালামের বউয়ের কাছ থেকে আনছি। সে বলছে এইটা খুব ভালো বই'।



আমি চূড়ান্ত বিরক্তি নিয়ে বইয়ের পাতা ওলটাই। এইটা নাকি উপন্যাস! কিসব ছাইপাশ লেখা। বিজ্ঞান-ফিজ্ঞানের নানান টার্মস দিয়া ভরা। চরিত্রগুলার নামও জানি কেমন। 'হেহ! এইডা কি দিছেন আম্মা?'



আম্মা তেড়ে ওঠেন, তেনার বিখ্যাত বকবকানি স্টার্ট, 'তোর যন্ত্রনা আর সহ্য হয় না। যখন তখন জ্বর জারি বাঁধাইয়াই রাখস। কয়দিন পর বৃত্তি পরীক্ষা, এহনই জ্বর বাধান লাগলো। ফাইভের বৃত্তিডাও দিতে পারলি না। এহন এই এইটেরডাও পারবি না। তোরে নিয়া আমি আর পারি না'।

গায়ের সব শক্তি দিয়ে ঘর ঝাঁট দিতে থাকেন আম্মা। যেন আমার কিংবা আমার জ্বরের উপর যে রাগ সেগুলো মাটির উপর ঝাড়ছেন, -' আর জ্বর হইছে, হারাদিনতো শুইয়া শুইয়াই থাকস। ইট্টু ক্লাশের বই পড়লে কি হয়? কই, শুইয়া শুইয়া গল্প-নভেল পড়নের সময়তো আর হুঁশ থাকে না। সেইগুলাতো ঠিকই পড়তে পারস। খালি ক্লাশের পড়ার কথা কইলেই শরিল কাঁপাইয়া জ্বর আহে!!'



আমি কথা বলি না। চুপচাপ হাতের বইখানার পৃষ্ঠা উল্টাতে থাকি। বিচ্ছিরি লেখা। এর চেয়ে নিশাত চৌধুরী, এমডি মুরাদদের বইগুলা অনেক ভালো। কভার জুড়ে কত্তসব নায়ক-নায়িকাদের ছবি। সেসব বই আমাদের হাঁটেও পাওয়া যায়। এক লোক প্রতি হাঁটবারে সেসব বই নিয়ে হাঁটে আসে। হাঁটের এককোনায় স্কুলের মাঠ। সেখানে মাদুর বিছিয়ে বিক্রি করে। আমার কেনার টাকা নেই। তো কি হয়েছে? আমি ঠিকঠিক মাদুরের পাশে বসে প্রতি হাঁটবারে একটা দুইটা বই পড়ে সাবাড় করে দেই। সুযোগ বুঝে দু-এক খানা মেরেও দেই। কি সুন্দর প্রেম ভালোবাসায় টইটুম্বুর একেকটা বই।

পাশের বাড়ির কালাম ভাইয়ের বউয়ের কাছ থেকে আনা বইখানা হাতে নিয়ে শুয়ে থাকি। একপাতা পড়ি তো দুইপাতা পেছনে যাই। কি লিখছে এই লোক! মাথায়ই ঢুকে না। ধুর! বই রেখে দেই। কিন্তু এই বই না পড়ে উপায়ও নেই। সেই অজগাঁয়ে তখন ইচ্ছে মতো যখন তখন বই পাওয়া সহজ কথা না! আমাদের ঘরেতো আরও না। দিন তিনেকের চেষ্টায় সেই বই শেষ করি। এক কথায় জঘন্য বই। ফিনিশিং বলতে যে এক জিনিস, সেই বইতে তাও নাই। হঠাৎ কই থেকে কই আইসা বই শেষ। ধুত্তোর!



বইটা আমাদের ঘরের কোন এক চিপাচাপায় অবহেলায় পড়ে থাকে। নিঃশব্দে। নীরবে। আমি বইয়ের পোকা। যেখানে যা পাই, গপগপ পড়ে সাবাড় করে দেই, শুধুমাত্র সেই বইয়ের লেখকের বই ছাড়া। তার কোন বই দেখলে নাক মুখ কুঁচকে দূরে ছুড়ে ফেলি। যাহ, ভাগ!



সেদিন সন্ধ্যেবেলা। মেঝখালাদের বাড়ীতে গেছি। তখন সন্ধ্যা। বড় আপার টেবিলের ওপর মলাট ছেড়া একখানা বই। কি মনে করে পাতা ওলটাই, পাতা ওলটাই আর ওলটাতেই থাকি। সন্ধ্যার আজান হয়, কেরোসিনের কুপিতে টিপটিপ করে বাতি জ্বলে, সেই বাতিতে উবু হয়ে আমি হারিয়ে যাই কোন এক অদেখা ভুবনে। কোন এক না ছোঁয়া স্পর্শে। আমি ডুবে যাই আর ডুবে যাই। ডুবে যেতে যেতে যেতে আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে, নাকি আমি নিঃশ্বাস নিতে ভুলে যাই?



শেষ পৃষ্ঠায় এসে আমি থমকে যাই। বুকের ভেতরটা কেমন মোচড় দিয়ে ওঠে। কি এক অদ্ভুত কান্নায় ভিজে যেতে থাকে বুক, গলা, গাল আর বুকের ভেতর। চোখ সেখানে নির্বাক দর্শক।

আমি বড় আপাকে ফিসফিস করে বলি, এই বইয়ের নাম কি?



বড় আপা বলেন, ‘তাকাই দেখ, প্রত্যেক পাতার নিচে লেখা আছে’।

আমি পাতার নিচে তাকাই, বইয়ের নাম ‘অপেক্ষা’।



- আপা, এই বই কে লিখছে?



আপা আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন, গাধা নাকি! পুরা বই শেষ কইরাও বুঝস নাই, এই বই কে লিখছে?’



আমি আরও অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি, বই পড়েই লেখকের নাম বলে দেয়া যায়?

বড় আপা বলেন, যায়, মহাগর্দভ না হলে যায়। এই বইয়ের লেখকের নাম হুমায়ূন আহমেদ।

আমি একবার বড় আপার দিকে তাকাই, একবার মলাট বিহীন ছেড়া বইয়ের দিকে! সেই হুমায়ূন আহমেদ! সেই বইয়ের হুমায়ূন আহমেদ!! নাহ! ইম্পসিবল! আমি বড় আপাকে বলি, হুমায়ূন আহমেদ নামের একজনের আরেকটা বই পড়ছিলাম, পুরাই ফালতু।



- কি নাম সেই বইয়ের?



- - ইরিনা। বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী।



বড় আপা চোখচোখ গোলগোল করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। ‘ইরিনা ফালতু বই? কাল থেকে দুই বেলা গরুর ঘরে গরুর সাথে খৈল ভুষি খাবি। ভাত খাওয়া বন্ধ’।

- কেন?



- বড় আপা কথা বলেন না। তিনি উঠে চলে যান। কিছুক্ষণ পর ফিরে আসেন। তার হাতে আরেকটা বই। আমি বইয়ের নাম দেখি, ইরিনা!



বড় আপা বইটা আমার সামনে ছুড়ে দেন, নে পড়। কেন এই বই ফালতু আমারে বল। কোথায় ফালতু। আর কোথাও না বুঝতে পারলে আমারে বল। এইটা সায়েন্স ফিকশন। কিন্তু তোর মতো গাধারওতো এইটা বোঝার কথা’।



আমি সেই ইরিনা নিয়ে আবার বসে যাই। আমি জানি না কেন। কি হয়েছিল জানি না। কিন্তু এবার আমি মন্ত্রমুগ্ধের মত ডুবে যাই। ডুবে যাই এক জাদুকরের লেখনীর অসাধারণ জাদুতে। ইরিনা শেষ হয়। কিন্তু আমার তৃষ্ণা হয়ে যায় অসীম। সীমাহিন। এই তৃষ্ণার নাম হুমায়ূন আহমেদ। এই তৃষ্ণা আর শেষ হয় না। ক্রমশ বাড়তে থাকে। বাড়তেই থাকে... শঙ্খনীল কারাগার, কোথাও কেউ নেই, অমানুষ, এইসব দিনরাত্রি, এপিটাফ, জোছনা ও জননীর গল্প... আসলে, এই গল্পের আর শেষ নেই। এ এক অদ্ভুত সম্মোহন। এই সম্মোহনেরও শেষ নেই। এই যাত্রা অসীমের যাত্রা। এই যাত্রায় মনে হয়, এই পথ যদি না শেষ হয়...’



কিন্তু পথে শেষ হয়ে যায়। হুমায়ূনের একহাজার বছর বাঁচার ইচ্ছে পূরণ হয় না। তার কি ইচ্ছেটাই না ছিল হাজার বছর বাঁচবার। কিন্তু হোল কই? মাত্র ৬৪ বছর! কিন্তু হুমায়ূন যে বলতেন, প্রকৃতি নাকি মানুষের সব বড় ইচ্ছে গুলো পূরণ করে, তাহলে তার হাজার বছর বাঁচবার ইচ্ছেটা সে কেন পূরণ করেনি?

আসলেই কি করেনি?



হাজার কেন, হুমায়ূন যে বেঁচে রইলেন অনন্তকাল... অমরত্বের কাল...



শুভ জন্মদিন, জাদুকর!

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:০২

কুমার মিজান বলেছেন: খুব ভালো লাগল। লেখককে ধন্যবাদ।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:০৭

সাদাত হোসাইন বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ২:২০

পরাজিত মধ্যবিত্তের একজন বলেছেন: রাম ছাগল। এই জন্যই বোধ হয় এক বইয়ের পাঠক সম্পর্কে সাবধান করা হয়েছে।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৭

সাদাত হোসাইন বলেছেন: জ্বি ভাইয়া, ঠিক বলেছেন। খুশি হয়েছেন তো?

৩| ১৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ২:৫০

উপপাদ্য বলেছেন: দারুন লিখেছেন তো।


বড় আপা চোখচোখ গোলগোল করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। ‘ইরিনা ফালতু বই? কাল থেকে দুই বেলা গরুর ঘরে গরুর সাথে খৈল ভুষি খাবি। ভাত খাওয়া বন্ধ’। B:-/ B:-/

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:২৮

সাদাত হোসাইন বলেছেন: ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.