নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Dr. Fahim Ahasan Al Rashid, MBBS

আমি সাজিদ

Dr Fahim Ahasan Al Rashid blog

আমি সাজিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মনস্তাত্ত্বিক ব্যবচ্ছেদের ফাঁদে যখন অ্যাডলফ হিটলার

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:১২

অফিস অব স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিসেস ( ও এস এস) - এর পরিচালক বিল ডেনোভান অনেকক্ষন যাবত নিজের কক্ষে একাকী পায়চারী করছেন। মে মাসের আকাশ দেখা যাচ্ছে তার জানালার ওপাশে। একটা গুমোট ভাব যেন জুড়ে আছে সারা আকাশটায়। সময়টা ১৯৪৩। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে চলেছে চারপাশে। দরজায় শব্দ হলো। ভেতরে ঢুকলেন মধ্যবয়সী আরেক ভদ্রলোক।

- 'ওহ মি: ল্যাংগার! ' হেসে অভ্যর্থনা জানালেন ডেনোভান। 'আপনারই অপেক্ষা করছিলাম।'
একটা চেয়ার টেনে নিয়ে বসে ল্যাংগার কৌতুক স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, ' জরুরি তলব কেন?'
- সাহায্যের জন্য। জবাব দিলেন ডেনোভান।
- অবশেষে সাইকোএলালিস্টের সাহায্য স্পাই সার্ভিসে দরকার পড়লো!
- অস্বীকার করার উপায় নেই কারন আপনার সাবজেক্ট স্বয়ং 'এডলফ হিটলার'।

হয়তোবা এমনই কাল্পনিক কথোপকথন ছিলো ও এস এস ( বর্তমান সি আই এ) এর চিফ ডেনোভানের সাথে সাইকোএনালিস্ট সি ল্যাংগারের, যা পরবর্তীতে উন্মোচিত করেছিলো ইতিহাসের এক নতুন পাতা। যে মানুষটি মানবসভ্যতার এ যাবতকালের সবচেয়ে বড় ও ভয়ংকর যুদ্ধ শুরুর নেপথ্যে ছিলেন, সেই জার্মান লৌহমানব এডলফ হিটলারের আগুন চোখের আড়ালে লুকিয়ে থাকা কিছু অন্ধকারকে আলোর সামনে নিয়ে আসায় যে পাতা অবদান রেখেছে পরবর্তী বিভিন্ন সময়গুলোতে।

১৯৪৩ সালের শুরুর সময়টায়ও অক্ষ শক্তির কাছে নাজেহাল হচ্ছিলো মিত্র বাহিনী। এর মধ্যেই জার্মান সেনাবাহিনী প্রবেশ করেছে রাশিয়ায়, হিটলারকে থামানোর জন্য সম্ভাব্য সব পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নেমেছে মিত্রবাহিনীর সদস্যদদেশগুলো। যুদ্ধের এমন অবস্থায় ও এস এস জানতে চায় হিটলারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সমন্ধে। এরজন্য প্রোপাগান্ডা মেশিন হটিয়ে সাধারন মানুষ হিটলারের নানা চারিত্রিক দিক ও সিদ্ধান্ত বিশ্লেষন করতে ও এস এস ডেকে পাঠিয়েছে একদল সাইকোএনালিটিস্টদের। যারা পাঁচ মাস পরে একটি রিপোর্টও জমা দিয়েছিলো ওএসএস অফিসে। কি ছিলো সে রিপোর্টে? কোন মনস্তত্ত্বীয় দিকগুলোর কারনে হিটলার হয়ে উঠেছিলেন নৃশংস ও ভয়ানক? জানতে হলে ফিরে যেতে হবে অনেক আগের প্রেক্ষাপটে, ফুয়েরারের 'ফুয়েরার' হয়ে উঠার আগের জীবনটায়।

হিটলারের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষন করতে গিয়ে ল্যাংগার বেছে নিয়েছিলেন ফ্রয়েডের বিশ্লেষন পদ্ধতিকে। যার শুরুটা হয়, হিটলারের ক্যাস্ট্রেশন এনজাইটিতে ভোগার সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে। ক্যাস্ট্রেশন এনজাইটি হচ্ছে এমন এক ধরনের মানসিক অবস্থা যেখানে একজন বালক তার যৌনাঙ্গ নিয়ে ভীত হয়ে উঠে। ল্যাংগার হিটলারের নিজের রচিত বই ' মাইন ক্যাম্ফ' - এ বারবার ' সিফিলিস' শব্দটির অতি প্রয়োগ দেখে ধারনা করেন হিটলার শৈশবকাল থেকে ক্যাস্ট্রেশন এনজাইটিতে ভুগছিলেন।

হিটলারের শৈশবকাল থেকে উঠে আসে, তার বাবা দ্বারা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার নানা অভিজ্ঞতা। এরফলে হিটলার শৈশবে যতোটা না তার জন্মদাতা পিতাকে ঘৃনা করতে ঠিক ততোটাই নির্ভার হয়ে পড়েছিলেন তার মায়ের প্রতি। যাকে ফ্রয়েডীয় ভাষায় ' এডিপাস কমপ্লেক্স' বলা হয়। একদিকে বাবার প্রতি তীব্র বিদ্বেষ তাকে ঠেলে দেয় মায়ের প্রতি এই অসচেতন নির্ভরতার এই এডিপাস কমপ্লেক্সে। অপরদিকে সেসময়ের যৌনমনস্তাত্ত্বিক এই পরিবর্তনকালে বাবাকে ভয় পাওয়া নিয়ে হিটলারের তৈরী হয় ক্যাস্ট্রেশন এনজাইটি। যা পরবর্তীকালে তার চিন্তা চেতনায় প্রভাব বিস্তার করে। যার প্রমান এই ' সিফিলিস' শব্দটাকে আত্নজীবনীতে বারবার ব্যবহার করা।

ফ্রয়েডীয় বিশ্লেষনের আরেকটি পর্যায়ে দেখা যায়, হিটলারের নৃশংসতার কারন হিসেবে ল্যাংগার তুলে এনেছিলেন
শৈশবে যৌনমনস্তাত্ত্বিক বিকাশের 'এনাল ফেজ' - এ হিটলারের অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতাকে। এ বিশ্লেষনটি গতি পায় যখন ল্যাংগার ও তার সহযোগীরা দেখা পান হিটলার পরিবারের একসময়ের ব্যাক্তিগত চিকিৎসক ফ্রেডরিক ব্রচের। ব্রচের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তারা এডলফের মায়ের শুচিবায়ুতা সমন্ধে জানতে পারেন যা এডলফকে পরবর্তী সময়ে এনাল রিটেন্টিভ ব্যক্তিতে পরিনত করেছিল। ফ্রয়েডের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষনে এনাল রিটেন্টিভ ব্যক্তিদের নৃশংস, যৌনস্পৃহাহীন অথবা যৌনবিকৃত সাডিস্ট বলে সংগায়িত করা হয়। যার প্রমান পাওয়া যায়, হিটলারের হোমোসেক্সুয়ালিটি নিয়ে নানা তথ্যের উপর ভিত্তি করে বা বান্ধবী ইভা ব্রাউনের সাথে তার দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের অদ্ভুত বর্ণনা শুনার পর।

ল্যাংগারের মতে, হিটলার তার মানসিক অসংগতিগুলো ঢাকার জন্য বেছে নিয়েছিলেন ' এন্টি সেমিটিজম ' আদর্শ। যা থেকে সৃষ্টি হয় হলোকাস্ট। ভাইদের মৃত্যুর পরেও হিটলার তার নিজের বেঁচে থাকাকে ' বিশেষ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য ' বলে ধরে নিয়েছিলেন। ফ্রয়েড যাকে ' মসীহা কমপ্লেক্স' বলে নামকরন করে গেছেন আগেই। এই ' মসীহা কমপ্লেক্স' এর ছায়া দেখা যায় হিটলারের উচ্চাভিলাষী সিদ্ধান্ত, একরোখা মানসিকতা ও নিজেকে ভুলের উদ্ধে দাবী করা থেকে।


ল্যাংগার ও তার সহযোগীরা হিটলারের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষনের পর, হিটলারের ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্তগুলো কেমন হতে পারে তার কিছু সম্ভাব্য সম্ভাবনা দেন। যেমন -

১) যুদ্ধে চাপে পড়া মাত্রই হিটলার জনসম্মুখে আসা বন্ধ করে দিবেন। পরবর্তীতে রাশিয়ায় জার্মান বাহিনীর পরাজয়ের পর হিটলারকে জনসম্মুখে খুব কম দেখা যায়।

২) ক্যাস্টেশন এনজাইটি, মসীহা কমপ্লেক্স সহ আরো পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারে ভোগা হিটলার যুদ্ধের পরিনাম বিজয় অথবা মৃত্যু এই দুই শব্দের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছিলেন।

৩) হিটলার পরাজয় বরণকালে বরং আত্নহত্যা করবেন।

ল্যাংগার ও তার টিমের প্রতিটি সম্ভাব্যতা সত্য প্রমাণিত হয়েছিল। এবং ১৯৪৩ এর ঠিক দু বছর পর ১৯৪৫ এ হিটলার পরাজিত হয়ে নিজ ব্যাংকারে আত্নহত্যা করেন।


মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: হিটলার খুব ভালো ছবি আঁকতেন।

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৫

আমি সাজিদ বলেছেন: জ্বি। এইটা খুব ভালো লেগেছে।

২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:১৬

আবু তালেব শেখ বলেছেন: এতো নৃশংহ মনের মানুষ কিভাবে এতো ভাল ছবি আকতে পারে?

৩| ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১১

বিদেশে কামলা খাটি বলেছেন: মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট সেবা দেয়ার নামে চলছে হরিলুট আর সরকারী টাকার শ্রাদ্ধ। সরকারী টাকা যে কত সস্তা তা এখানে একবার না গেলে কেউ বুঝতে পারবে না। তাদের দেশের প্রতি দরদ দেখে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম।


প্রায় বছর দুয়েক আগে অনেক ঢাক-ঢোল পিটিয়ে প্রবাসী জনগণকে আরো বেশী করে পাসপোর্ট সেবা দেয়ার আব্দার করে দূতাবাসে খোলায় হয় পৃথক পাসপোর্ট বিভাগ। সেখানে বরাদ্দ করা হয় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। দূতাবাসে পর্যাপ্ত জনবল থাকার পরও পাসপোর্ট বিভাগে ঢাকা থেকে আনা হয় প্রশাসন ক্যাডার থেকে এক জন সিনিয়ার সহকারী সচিব যিনি কিনা এখানে প্রথম সচিব নামে পরিচিত। সেই সাথে ঢাকা থেকে পাঠানো হয় আরো চার জন পদস্থ কর্মচারী। ফলে দূতাবাসে অতিরিক্তি জন বল হিসাবে যোগ হয় আরো ৫ জন। সরকারের খরচ বেড়ে যায় কোটি কোটি টাকা।

এছাড়া ঢাকার আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিস থেকে প্রায় প্রতি মাসেই কর্মকর্তারা নানা ছল ছুতোয় মালয়েশিয়া সফর করছেন। বিদেশ সফরের সময় কর্মকর্তারা নিয়মিত বেতন ভাতার বাইরেও প্রতিদিন প্রায় ৩০০ মার্কিন ডলার করে ভাতা নেন সরকারের কোষাগার থেকে। ফলে শ্বেতহস্তী পোষতে সরকারকে গুণতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

জানা গেছে, আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসের বড় কর্তারাই নন, প্রায় সময়ই সেখান থেকে ১০/১৫ জন কর্মচারী বিশেষ সেবা দেয়ার নাম করে মালয়েশিয়া সফর করেন। প্রতিবার সফরে তারা ১ মাস বা তার চেয়েও বেশী সময় কাটান। ফলে তাদের পেছনে নিয়মিত বেতন ভাতা ছাড়াও ডলারে ভাতা দিতে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা নষ্ট হচ্ছে।

চলতি মাসে ঢাকার আগারগাঁও থেকে সেবার দেয়ার নাম করে আবার পাঠানো হয়েছে ২৫ জন কর্মচারী আর ২ জন কর্মকর্তা।তারা নাকি ২ মাস ধরে প্রবাসী জনগণকে সেবা প্রদান করবে।
এদিকে তারা পাসপোর্ট অফিসে সেবা দেয়ার নাম করে রাষ্ট্রের টাকার শ্রাদ্ধ করে চলেছেন। কারণ এই মুহূর্তে প্রায় ৩০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়মিত বেতন ভাতা দেয়া ছাড়াও তাদেরকে প্রতিদিন জন প্রতি ২/৩ শত মার্কিন ডলার করে বিদেশ ভাতা দিতে হচ্ছে। যা আসছে গরীব দেশের গরীব মানুষের জন্য বরাদ্দ করা বাজেট থেকে। এর বিনিময়ে সাধারণ মানুষ কি পাবে। লাভের মধ্যে লাভ হবে এই সব কর্মকর্তা কর্মচারী সরকারী টাকায় বিদেশে ঘুরবে আর শপিং করে লাগেজ ভর্তি করবে। খুব্ই আনন্দের বিষয়।

সেবা দেয়ার নাম করে এতো মানুষ এক সাথে মালয়েশিয়াতে আসার কোন রেকর্ড নেই বলে জানা গেছে। কারণ দূতাবাসে এক সাথে এতো গুলো মানুষ কাজ করার মতো কোন জায়গা, মেশিন বা অবকাঠামোগত কোন সুযোগই নেই।

এ ব্যাপারে ভালো জানেন এমন এক জন সাবেক সরকারী কর্মকর্তার সাথে আলাপ করে জানা গেছে যে, পৃথিবীর অনেক দেশের দূতাবাসে মোট স্টাফ সংখ্যাএ ৩০ জন হয় না।অথচ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের পাসপোর্ট অফিসে জনগণের টাকার শ্রা্দ্ধ আর হরিলুটের জন্য নানান রাজনৈতিক তদবির করে তাদেরকে পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে যে অফিসে থেকে পাঠানো হয়েছে সেই অফিসের কাজ কর্ম কি করে চলে এটাও একটা বিরাট প্রশ্ন। কারণ কোন একটি অফিস থেকে এক সাথে ২৫/৩০ জন কর্মকর্তা, কর্মচারী ২ মাসের জন্য বিদেশে চলে গেলে সেই অফিসটি কি ভাবে চলে।

এই লুটপাট আর সরকারী টাকার শ্রাদ্ধ দেখার মতো কোন লোক নেই বাংলাদেশে?

৪| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:২৪

*কুনোব্যাঙ* বলেছেন: তোমার লেখাটি আগেই পড়া ছিলো বলে লেখা নিয়ে এখন আর কোন মন্তব্য করলাম না। ব্লগ পোষ্টে ভালোলাগা জানিয়ে গেলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.