নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Dr. Fahim Ahasan Al Rashid, MBBS

আমি সাজিদ

Dr Fahim Ahasan Al Rashid blog

আমি সাজিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফোরপ্লাস, পর্ব ১

০৬ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:০৩

হামিদ স্যার আমাদের এভাবে পাকড়াও করবেন, আমরা দুঃস্বপ্নেও ভাবিনি। প্ল্যানটা আমাদের মধ্যেই ছিল। আমরা চারজনেই হাতে হাত রেখে শপথ নিয়েছি, আমরা একে অন্যের কাছে বিশ্বস্ত। এই ভরদুপুরে কে এই বিশ্বস্ততাকে নির্দয় চোখে খুন করলো তা খুঁজতেই যেন আমরা সন্দেহে চারপাশে তাকালাম। আমাদের চোখে চোখে কথোপকথন হচ্ছে, হামিদ স্যার এদিকে চারজনের ব্যাগই একে একে উপুড় করা শুরু করলেন। কোচিং এ উপস্থিত সবার চোখ তাতেই ছানাবড়া।
আমাদের লিডার দুই ব্যাচ সিনিয়র পিয়াস ভাইয়ের ব্যাগ উপুড় করতেই ম্যাজিকের মতো কার্পেট পাতানো মেঝেতে হাজির হল কোরবানির গরু বাধার শক্ত মোটা দড়ি, টর্চ, দুই হালি পেন্সিল সাইজ ব্যাটারি, একটা মাঝারি সাইজ চাকু। এইবার পাভেলের পালা, ধমকের চোটে পাভেল নির্দোষ সাজার অভিনয় শুরু করে দিয়েছে। আমি আর ত্রিদিব ওর দিকে গটমট করে তাকাচ্ছি। পাভেলের ব্যাগ উগরে দিল দুইটি মাঝারি সাইজের চাকু, গ্যাস লাইটার, স্ক্রু ড্রাইভার, রেনকোট। পর্যায়ক্রমে ত্রিদিব আর আমার ব্যাগ থেকে বের করে আনা হল ফল কাটার চাকু, টর্চ, গ্যাস লাইটার।
ক্লাস সিক্স-এইটে পড়া ছেলেরা প্রাইভেট কোচিং এ বইখাতা ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে আসবে, হামিদ স্যার স্বপ্নেও কল্পনা করেন নাই। প্রথম দশ মিনিট জেরা হল, এরপর সপাৎ সপাৎ মার। হামিদ স্যার রোগা পাতলা মানুষ, তার মারের এত জোর থাকবে আমরা ভাবতেই পারি নাই। জালিবেতের মারের চোটে আমি ঘামছি, নিতম্ব জ্বলে যাচ্ছে, বার বার মাফ চেয়ে নিচ্ছি। আমাকে এক দফা মেরে স্যার যখন বাকিদের সাথে বোঝাপড়া করতে যাচ্ছেন, তখন আশে পাশে তাকিয়ে দেখে নিচ্ছি, সঙ্গীদের কার কি অবস্থা। দেখলাম আমি ছাড়া বাকি তিনজনই কেঁদে দিয়েছে। ওদের চোখে পানি আসলো আমার কেন আসলো না সেটা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই পালাবদলের স্বাদ পেতে লাগলাম।


আমাদের এই দলটার নাম ফোর প্লাস। নামটা সেসময়ের ভারতীয় আকাশ বাংলা চ্যানেলটির একটা টিভি সিরিজ থেকে ধার করা। আমাদের অনুপ্রেরণা আবার সেবা প্রকাশনীর কিংবদন্তি চরিত্র তিন গোয়েন্দা। আমি আর পিয়াস ভাই মূলত তিন গোয়েন্দার পাঠক, বাংলাদেশের সেই প্রান্তের মফস্বলটিতে কিশোর গোয়েন্দা দল গড়ে তোলার পরিকল্পনাকারী। ত্রিদিব আর পাভেল আমার ব্যাচমেট হলেও, ওরা স্বেচ্ছায় অংশগ্রহণকারী সদস্য। আমাদের উদ্দেশ্য কি ছিল, কিভাবেই বা আমরা এক জোট হলাম এগুলো বর্ণনা করতে হলে আগে আমাদের চারপাশের একটা বর্ণনা দিয়ে নেওয়া উচিত। খরস্রোতা নদীটির তীর ঘেঁষে বিখ্যাত একটি কারখানা কেন্দ্র করে একটি বিশাল আবাসিক এলাকা হচ্ছে আমাদের মফস্বলটি। এর মাঝেই স্কুল, বিশাল পাহাড়ের বুক চিড়ে উঠে যাওয়া মোটর-রোডস, সমতল ও পাহাড়ে আবাসিক ভবনগুলো, বিশাল খেলার মাঠগুলো। বাংলাদেশের অন্য দশটি মফস্বলের সাথে কোনভাবেই আমাদের এলাকাটিকে মেলানো যেন যায় না, এ যেন বাংলাদেশের ভেতরেই আরেকটি বাংলাদেশ। প্রায় প্রতিটি জেলা থেকে কর্মের সুবাদে আগত মানুষের মিলন-মেলা। এইখানের পশ্চিমদিকে কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের থাকার আলাদা আলাদা ব্লকগুলো আর পূর্বে পাহাড়গুলোর গায়ে সেই স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে গড়ে উঠা এমডি বাংলো এলাকা। এমডি বাংলোতে হাই-প্রোফাইল অফিসারেরা থাকেন, অনেক নতুন পুরনো ভবন আছে, নদীর ধারে সুন্দর একটা ভিউ ক্লাব আছে।

তো, আমাদের লক্ষ্য ছিল সেই এমডি বাংলো এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ভবনে ঢোকা, যেখানে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। সে ভবনটির বন্ধ দরজাটিই আমাদের কাছে বিরাট রহস্য হয়ে উঠেছিল।
সব পরিকল্পনা এমনকি আঁকা ম্যাপও আমাদের কাছে গুছানো ছিল। আমরা চারজন পরিকল্পনাটি নিয়ে আগেও বেশ কয়েকবার কোচিং-এর পরে মাঠে মিলিত হয়েছি। এই পরিকল্পনাটি মূলত করেছে পিয়াস ভাই, কিভাবে টহল রত আনসারের মনোযোগ সরিয়ে ভবনটির মূল ফটকের ভেতরে ঢুকা যায় তার মহড়াও করে নিয়েছি আমরা কয়েকবার। আজকেই ছিল আমাদের অভিযানের বিশেষ সেই দিনটি। কথা ছিল, দশ মিনিট অন্তর অন্তর একে একে কোচিং থেকে বের হয়ে যাবো। কিন্তু স্যারের কাছে এভাবে ধরা পড়ে যাবো আমরা কেউই ভাবিনি।

চলবে। সত্য ঘটনা অবলম্বনে। প্রতিযোগিতার জন্য নয়।

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:২১

ভুয়া মফিজ বলেছেন: পাকরাও.........পাকড়াও।
মহরা.........মহড়া।

অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, আপনার ''ড়'' এর সাথে দুষমনী আছে। সত্য ঘটনা বুঝলাম, এটা কি আপনার বাল্যকালের ঘটনা? ইন্টারেস্টিং!!

হামিদ স্যার শুধু নিতম্বেই মারলো দেখে দুঃখ পেলাম। এমন বৈষম্য করা উনার ঠিক হয় নাই। সব জায়গার সমান দাবী থাকে। যাই হোক, আশা করি পরের গুলো আরো ইন্টারেস্টিং হবে। কয় পর্ব?

০৬ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:৩২

আমি সাজিদ বলেছেন: বানান সংশোধন করে নিলাম। একটু তাড়াহুড়ো হয়েছে। টাইপো। এটা ২০০৪ সালের ঘটনা। ক্লাস সিক্সে উঠেছি মাত্র। ফাইভের বৃত্তি পরীক্ষার পরের ছুটি থেকে তিন গোয়েন্দা পড়া শুরু হয়েছে।

তিন পর্ব যাবে।

২| ০৬ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৩

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: দূরন্ত শৈশবের স্মৃতি সে এক অনন্য অনুভূতি, স্মৃতিকথা পড়ে ভালো লাগলো।

০৬ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১২

আমি সাজিদ বলেছেন: ধন্যবাদ ব্লগার জ্যাক স্মিথ।

৩| ০৬ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০৯

মিরোরডডল বলেছেন:



সাজিদের লেখা ফিকশন আগে পড়িনি।
তাও আবার সত্য ঘটনা অবলম্বনে।
শুরুটাতো ভালো লেগেছে, চলুক।
ছবিটা পারফেক্ট হয়েছে।



০৬ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৩

আমি সাজিদ বলেছেন: ধন্যবাদ মিড আপু

০৬ ই জুন, ২০২৩ রাত ৯:৪৪

আমি সাজিদ বলেছেন: আমার লেখা একটা ছোট গল্প - হঠাৎ একদিন...

পাঁচ/ ছয় বছর আগের লেখা। পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।

৪| ০৬ ই জুন, ২০২৩ রাত ১১:২১

শেরজা তপন বলেছেন: চলবে। সত্য ঘটনা অবলম্বনে। প্রতিযোগিতার জন্য নয়
আপনার সিরিজ চলুক সাথে আছি কিন্তু এই কথাটায় কষ্ট পাইলাম। তবে পুরো লেখাটা পড়া হয় নাই- কালকে সুযোগ বুজে পড়ে নিব।

০৭ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ২:৪৮

আমি সাজিদ বলেছেন: এই কাহিনী এক পর্বে শেষ করার মতো নয়। প্রতিযোগিতায় কিন্তু লেখা জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল গতকাল অবধি। এজন্যই।

৫| ০৭ ই জুন, ২০২৩ সকাল ৯:৪০

অপু তানভীর বলেছেন: কাহিনীটা পড়ে বেশ মজা পেলাম । পুরোটুকু লিখে ফেলুন দেখি জলদি ।

০৭ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ২:৪৯

আমি সাজিদ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। পরের পর্ব জলদিই লিখবো।

৬| ০৭ ই জুন, ২০২৩ সকাল ১০:০১

শেরজা তপন বলেছেন: শেষমেষ কি হল আর বিশ্বাসঘাতকতা কে করল সেটা জানার ইচ্ছে রইল।
দারুণ এক শহরে আপনাদের বাস ছিল

০৭ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:১৮

আমি সাজিদ বলেছেন: অবশ্যই পরের দুই পর্বে বিশ্বাসঘাতকের নাম জানাবো। আমার শৈশব খুব চমৎকার একটি জায়গায় কেটেছে , আলহামদুলিল্লাহ।

৭| ০৭ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১২:১১

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: চলবে। সত্য ঘটনা অবলম্বনে। প্রতিযোগিতার জন্য নয়।

চলুক...প্রতিযোগিতার জন্য নয় কেন?

০৭ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৪

আমি সাজিদ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। এটা আরও দুই পর্বে শেষ করতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, বাকি পর্বগুলো খুব ভেবে চিন্তে লিখতে হবে। এই কারণে আমি টাইমলাইনের মধ্যেই সিরিজটি শেষ করতে পারবো না। এজন্যই।

৮| ০৭ ই জুন, ২০২৩ দুপুর ১:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লেখা।
ঝরঝরে। কোনো রকম ভান বা ভনিতা নেই। তা উপভোগ্য।

০৭ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:২৭

আমি সাজিদ বলেছেন: বিগত দেড় বছর বাংলায় শুধু পত্রিকা পড়েছি আর ব্লগ। লেখার চর্চা না করতে করতে বড় কিছু লিখতে কষ্ট হচ্ছে।
পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৯| ০৭ ই জুন, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৪

ঢাবিয়ান বলেছেন: আমিও তিন গোয়েন্দার বিড়াট ফ্যান ছিলাম। গোয়েন্দাগিরির প্রচেষ্টা বেশ লাগল। চা বাগানে ছিলেন কি?

০৭ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩৪

আমি সাজিদ বলেছেন: আপনিও তিন গোয়েন্দা ফ্যান জেনে খুব ভালো লাগছে। তিন গোয়েন্দা তো শৈশবের প্রেম। আমি নিজেকে কিশোর পাশা নয় বরং রবিন মিলফোরড ভাবতাম। একজন যোগ্য কিশোর পাশার অভাবে এই প্রচেষ্টা পরে সফল হয় নাই। কিশোরের মতো নেতা না থাকলে রবিন আর মুসারা ভেরেন্ডা ভাজা ছাড়া আর কি করবে ?

১০| ০৭ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২১

মিরোরডডল বলেছেন:



থ্যাংকস সাজিদ লিংক শেয়ার করার জন্য।
গল্পটা পড়েছি, ভালো লেগেছে।



০৭ ই জুন, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৪৪

আমি সাজিদ বলেছেন: ধন্যবাদ মিড আপু।

১১| ০৯ ই জুন, ২০২৩ রাত ১:৪৬

হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: শুরুটা ভালো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.