নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাম্য রহমান

রহমান সাম্য

রহমান সাম্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্নের দেশ “মালয়েশিয়াতে” ২৩ দিন

১৬ ই জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:০২

ইদানিং ঘুরাঘুরি আমার একটা নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খালি এদিক ওইদিক যাইতে মনচায়। কি যে করি... ভ্রমনে নাকি মন সতেজ হয়, অনেক কিছু শেখা যায়। তো চিন্তা করলাম এই শেখাটা বা অভিজ্ঞতাগুলো শেয়ার করে যদি কারও উপকার হয় বা কারও ভ্রমন সহজ ও আনান্দময় হয় তবেই আমার এই লেখাগুলো সার্থক।

বর্তমানে দেখা যায় বাংলাদেশ ও ভারত ঘুরে বেড়াবার পর যাদের বাজেট একটু বেশি তারাই ছুটে চলে যাচ্ছে থাইল্যান্ড অথবা মালয়েশিয়া। এই দুটি দেশের মধ্যে পার্সোনালই মালয়েশিয়াকে আমার একটু বেশিই ভাল লাগে। কারণটা মনে হয় কম খরচে একটা উন্নত দেশের স্বাদ ভোগ করা যায় এই জন্য। প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পর্যটক মালয়েশিয়া ভ্রমন করতে আসে। কেউ আসে স্বপ্নের টুইন টাওয়ার দেখতে, কেউবা আসে নতুন বিয়ের পর হানিমুনে। আর কেনই বা আসবে না? পর্যটকদের জন্য মালয়েশিয়ায় রয়েছে নানারকম চমক। একটি শান্তিপ্রিয় মুসলিম দেশ মালয়েশিয়া। খাবার দাবার মুখরোচক, হালাল-হারামের কোন ভয় নেই, কম খরচে ঘুরে বেড়ানো যায় এমনকি আবহাওয়াও ভাল। পুরো দেশ জুড়ে দেখা যায় সবুজ গাছপালা, পাহাড় আর জঙ্গল। সরকারি নজরদারিতে মালয়েশিয়াতে পর্যটকদের সব ধরণের সুব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মালয়েশিয়ায় পরতে পরতে চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। বার বারই মনে হবে দেশটির রাস্তা থেকে শুরু করে প্রতিটি স্থাপনা যেন পর্যটক আকর্ষণের জন্যই তৈরী করা।

যাবার প্রস্তুতিঃ
আমার মতে যে কোন স্থানে যাওয়ার আগে আবহাওয়া ও সাম্প্রতিক খোঁজ-খবর নিয়ে যাওয়া উচিত। মালয়েশিয়ায় আবহাওয়া অনেক ভাল ও সারাবছর প্রায় একই রকম থাকে। এক ঋতুর দেশ মালয়েশিয়া। এখানে সকালে ঠাণ্ডা, দুপুরের দিকে গরম, বিকালে প্রায় প্রতিদিনই বৃষ্টি হয় ও সন্ধার পর আবহাওয়া ঠাণ্ডা হয়ে যায়। তাই সেখানে যাওয়ার জন্য কোন নির্দিষ্ট সময়ের অপেক্ষা করার প্রয়োজন নাই। তবে আমার মতামত ডিসেম্বর মাস সিলেক্ট না করা কেননা পিক সিজন হওয়াতে ঐ সময় টুরিস্টদের প্রচুর চাপ থাকে এবং স্বাভাবিকভাবেই খরচ বেশি হয়।

ভিসাঃ
অন্যান্য অনেক দেশের মতো মালয়েশিয়ার ভ্রমণ ভিসা পেতে খুব বেশী কষ্ট করতে হয় না। সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে ৩-৫ কর্ম দিবসের মধ্যেই ভিসা পাওয়া যায়। ২০১৪ সালে আমি মাল্টিপাল এন্ট্রি ভিসা পেলেও এখন নতুন পাসপোর্টে সিঙ্গেল এন্ট্রি ভিসা দিচ্ছে। ভিসার মেয়াদ থাকে ৩ মাস আর অবস্থানের মেয়াদ ১৫ দিন থেকে ১ মাস। জনপ্রতি ১ লক্ষ টাকার ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট দেখালেই যথেষ্ট। ট্র্যাভেল এজেন্সিগুলো ৪০০০ টাকার বিনিময়ে এখন ভিসার যাবতীয় কাজ করে দিচ্ছে।
ভিসা হয়ে গেলে পছন্দমত বিমানের টিকেট কেটে উড়াল দেন স্বপ্নের দেশে।

বাজেটঃ
ট্র্যাভেলারদের জন্য সবচেয়ে আসল বিষয় হচ্ছে বাজেটিং। একটা দেশ ঘুরার জন্য আসলে কত টাকা দরকার? এই বিষয়টি আসলে মানুষে মানুষে পরিবর্তনশীল। তবে (৩/৪ দিনে) সর্বনিম্ন আপনি চাইলে ৩০ হাজার টাকাতেও ঘুরে আসতে পারবেন। আর বেশির কোন শেষ নাই।

তারপরেও কিছু টিপস
১। জুটি বা জোড় সংখ্যায় (২/৪/৮) গেলে অনেক জায়গায় খরচ বাঁচবে।
২। বিমানের টিকেট যতো আগে কাটবেন তত কমে পাবেন।
৩। সেখানে ট্রান্সপোর্ট মাধ্যম হিসেবে ট্যাক্সির পরিবর্তে বাস/ ট্রেন ব্যাবহার করুন।

যাতায়াতঃ
বিলাসি না হলে যাওয়া-আসার জন্য এয়ার এশিয়ার টিকেট কাটতে পারে। আগে থেকে কাটলে ভাগ্য ভাল থাকলে ২১ হাজার টাকায় রিটার্ন টিকেট পেয়ে যাবেন।

প্রতিদিন ঢাকা কুয়ালালামপুর রুটে সারাদিন অনেক বিমান চলে। ভাড়ার হার (কম থেকে বেশি) হিসেবে নামগুলো দেওয়া হলঃ
রিজেন্ট এয়ারওয়েজ > বাংলাদেশ বিমান > মালিন্দ এয়ার > মালয়েশিয়ান এয়ার। (ডাইরেক্ট)। এছাড়া ট্রানজিট হয়ে যেতে চাইলে থাই অথবা সিঙ্গাপুর এয়ারে যেতে পারবেন। ভাড়া অনেক পরবে।

ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুর পৌঁছতে সময় লাগবে সাড়ে তিন ঘণ্টা ৫০ মিনিট। কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কে এল আই এ) কুয়ালালামপুর হলেও বিমান বন্দরটি কুয়ালালামপুর মূল শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে। কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর মূল শহরে আসতে হলে ট্যাক্সি, ট্রেন অথবা বাসযোগে আসতে হবে। এয়ারপোর্ট থেকে কেএল সেন্ট্রালে ট্যাক্সি আপনাকে ১০০ রিঙ্গিত নিয়ে নিবে। কম খরচে যেতে হলে সোজা নেমে যাবেন নিচের স্টেশনে। KLIA Ekspres ছিমছাম ট্রেন। এটা আপনাকে নিয়ে যাবে কেএল সেন্ট্রাল রেল ষ্টেশনে। সময় লাগবে ২৮ মিনিট। ভাড়া নিবে মাত্র ৩৫ রিংগিত।

হোটেলঃ
কুয়ালালামপুরে অবস্থান করার জন্য ও থাকার হোটেলের জন্য বুকিট বিনতাং এলাকাকে বেছে নেয় প্রায় সব পর্যটক। এছাড়া আছে চায়না টাউন, মসজিদ জামেক, পুডুরায়া ইত্যাদি জমজমাট এলাকা। পর্যটক হিসেবে মালয়েশিয়া এসে বুকিট বিনতাং এলাকায় থাকলে সব রকমের আনন্দ উপভোগ করা যাবে। হোটেলের ভাড়া দিন প্রতি ২০ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত থেকে ৫০০++ রিঙ্গিত পর্যন্ত হয়। পছন্দ ও রুচির উপর নির্ভর করে হোটেলে থাকার বিষয়টি।

ঘুরাঘুরিঃ
মালয়েশিয়াতে দর্শনীয় স্থানের অভাব নাই। এত বড় দেশ, আছে অনেক কিছুই। সেজন্যই মালয়েশিয়াকে বলা হয় “এশিয়ায় একখণ্ড ইউরোপ”। সবকিছুই বেশ সাজানো-গোছানো। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেক উন্নত। প্রধান ভাষা মালয় হলেও কম বেশি সবাই ইংরেজি ভাষায় কথা বলে। তাই যোগাযোগের ক্ষেত্রে ভাষাগত দিক থেকেও তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না এখানে। ঘুরাঘুরি সংক্রান্ত প্রায় সব তত্থই বিভিন্ন ব্লগ ও ওয়েব সাইটে পাওয়া যাই, তার থেকে ভাল আমি আমার নিজের গল্প শেয়ার করি...

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাঃ
২১শে ডিসেম্বর, রাত ৯টা, সিকিউরিটি চেক করে হজরত শাহাজালাল বিমান বন্দরে ঢুকলাম। এখানকার গার্ডগুলো এমন ভাব নিয়ে থাকে যে নিজেকে মনে করে দেশের প্রধানমন্ত্রীর থেকেও বেশি পাওয়ারফুল। যাই হোক, খুঁজে খুঁজে বের করলাম মালিন্দ এয়ারের ডেস্ক। বোর্ডিং পাশের দীর্ঘ লাইন। ডিসেম্বর মাসে সবারই লম্বা ছুটি। তাই দুনিয়ার সব মানুষ মনে হয় মালয়েশিয়াতে যাচ্ছে। বাগেজে নেওয়ার ওয়েট ছিল ৩০ কেজি, আমার ২০ কেজিও হয়নি। লাগেজ জমা দিলাম, বোর্ডিং পাস নিলাম। [Malindo Air, OD 165] ভদ্রমহিলা কোন ভেজাল না করে একটা সুন্দর থাঙ্ককু দিলে ছেড়ে দিল। আমার ফ্লাইট রাত ১১:৪০মিনিটে। প্রায় সব কাজ শেষ এখন ইমিগ্রেশন বাকি। সময় অনেক আছে। এর ফাকে ডিপারটার কার্ড ফিলাপ করে ফেললাম। ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়ালাম। আমার পালা আসলো। চল্লিশঊর্ধ্ব লোকটি ব্রু কুঁচকিয়ে আমার দিকে তাকালও। আমিও মুড নিয়ে দাঁড়ালাম কারন বুঝে ফেলসি এই লোক ত্যাড়া কথা বলবে আর আমিও সেরেকম উত্তর দিয়ে দিব (আমার আগের সিরিয়ালের এক লোককে দেখসিলাম অযথা হয়রানি করসে, সম্ভবত সে কম শিক্ষিত ও সেদেশে শ্রমিকের কাজ করে)। প্রথমেই বলল নাম কি?
আমিঃ সম্পূর্ণ নাম বললাম।
ইমিগ্রেশনঃ এটাই প্রথম বিদেশ ভ্রমন?
আমিঃ না, আগে ইন্ডিয়াতে গেসি ২ বার।
ইমিগ্রেশনঃ ও আচ্ছা... সেটা তো বাই রোডে...
আমিঃ হুম... কিন্তু সেটা বিদেশ
ইমিগ্রেশনঃ ডলার এনড্রসমেন্ট করেন নাই কেন?
আমিঃ ভাল করে দেখেন, শেষ পৃষ্ঠায় আছে।
ইমিগ্রেশনঃ ও আচ্ছা... হোটেল বুকিং আছে?
আমিঃ আছে, এই নেন দেখেন...
ইমিগ্রেশনঃ আচ্ছা থাক, লাগবে না... কয় দিন থাকবেন?
আমিঃ রিটার্ন টিকেট আপনার হাতেই আছে।
ইমিগ্রেশনঃ তারপর চেহারা স্ক্যান ও পাসপোর্টে সিল দিয়ে বলল, যান
আমিঃ ধন্যবাদ।

ফ্লাইট রাত ১১:৪০মিনিটে। এখনো প্রায় পোঁনে ১ ঘণ্টা আছে। ডিউটি ফ্রি শপগুলো ঘুরে দেখলাম। কিছুক্ষন বসলাম। এনাউন্সমেন্ট আসলো। লাইনে দাঁড়ালাম। প্লেনে উঠার আগে লাস্ট সিকিউরিটি চেক। হ্যান্ড ব্যাগ চেক করলো, আমার মানিব্যাগ খুলে চেক করলো, ৩ হাজার বাংলা টাকা পেল, আমাকে বললও টাকা কেন? আমি বললাম টাকা থাকতেই পারে, ও বলে নিয়ম নাই, মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল, আমি বললাম বাংলা ৫০০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়ার নিয়ম আছে, আপনি যদি অন্য কোন নিয়ম জানেন তাহলে সেটার লিখিত প্রমান নিয়ে আসেন। পরে আর কিছু না বলে দিয়ে দিল, যাওয়ার আগে বলে দাঁড়ান, আমার বেল্ট খুলে চেক ছেড়ে দিয়েছিল। ব্যাটা আসলে ধান্দা করতে চেয়েছিল, পারলো না।

রাত পোঁনে ১২টা, সবাই একে একে প্লেনে উঠে সিটে বসে পরেছে, কাউকে রেখে তো প্লেন যাবে না তবুও কার আগে কে যেতে পারে এইরকম একটা প্রতিযোগীটা। অনেকে সিট খুঁজে পাচ্ছে না, রূপবতী এয়ার হোস্টেজরা স্যার ও ম্যাডামদের সাধ্যমতো সহযোগিতা করছে, সিটবেল্ট বাঁধার নির্দেশ আসলো, কেউ কেউ পারছে না, মোবাইল এয়ারপ্লেন মোডে দেওয়ার কথা বারবার বলা হলেও অনেকেই প্রিয়জনের সাথে শেষ কথা বলছে, কে শুনে এয়ার হোস্টেজের কথা, বাজেট এয়ার লাইনাইন্সে এই দৃশ্য স্বাভাবিক। অবশেষে রানওয়ে ঘেঁষে বিমান উড়ে গেল স্বপ্নের দেশে।

পরের কিস্তি আসছে, ছবিসহ :) ... (চলবে)

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:১৮

বুবলা বলেছেন: দারুন লাগছে পরের পর্ব কবে পাব?

১৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:২২

রহমান সাম্য বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই, আশা করি ১ সপ্তাহের মধ্যেই সম্পূর্ণ ভ্রমনকাহিনি পেয়ে যাবেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.