![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি যা আমি তা। অনেক সময় আমি যা না তাও বটে ! সব মিলিয়ে আমি মনে হয় একেবারেই যা তা!
কাদা মাটি মাখা মানুষের দল
গাদাগাদি হয় আকাশটা দেখে
আকাশে বসত মরা ঈশ্বর,
নালিশ জানাবে ওরা বল কাকে?
ঘরহীন ওরা ঘুম নেই চোখে .........
একাত্তরের যশোর রোড না। আমি বলছি ২০১৩ সালের এপ্রিল-মে মাসের সাভারের কথা। সাভার নামটি আমার কাছে পরিণত হয়েছে এক বিভীষিকায়। সাভার- রানা প্লাজা এ যেন একবিংশ শতাব্দীর বদ্ধভূমি। যে একবার গলিত-বিকৃত লাশের সারি দেখেছে সে বুঝতে পারবে জীবনের ভয়ানক রূপটি। সভার- লাশের গন্ধে ঘুম না আসা এক মৃত্যুপুরীর নাম। যেখানে হত্যা করা হয়েছে শত-শত মানুষকে। সাভারের পোশাক শ্রমিক হত্যাকে আমি “Tragedy” বলব না। একে আমি ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ খুন হিসেবে দেখতে চাই। মানুষ কতটা নীচে নামলে এভাবে শত শত মানুষকে হত্যা করতে পারে তা আমার বোধ-বুদ্ধির বাইরে। অবশ্য পোশাক শ্রমিকেরা মানুষ হিসেবে বিবেচিত হয় না আমাদের সমাজে। “পোশাক শ্রমিক” যেন আলাদা একটা জাত!! কোন ছেলে বা মেয়ে যদি একটু রং-চংয়ে পোশাক পড়েন, আঞ্চলিক ভাষায় কথা কথা বলেন তবে তাকে বলা হয় “গার্মেন্টস কর্মী”। “পোশাক শ্রমিক” বিবেচিত হয় গালি হিসেবে! বাংলাদেশের সবথেকে বড় বৈদেশিক রপ্তানি খাত গড়ে উঠেছে যাদের হাত ধরে তাদের নাম ব্যবহৃত হয় একজনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার ক্ষেত্রে এর থেকে আফসোস আর কি বা হতে পারে?
লাশ, লাশ আর লাশ – সাভার পরিণত হয়েছে এক ভয়ংকর মৃত্যুপুরীতে। আমার ক্যাম্পাস থেকে সাভারের রানা প্লাজা খুব কাছে হওয়ায় আমার প্রায়ই যাওয়া পরছে সেখানে। হয়তো দেখতে, হয়তো সাহায্য করতে, হয়তো বা এমনিতেই। যে কয়বারই গিয়েছি অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে ফিরতে হয়েছে আমাকে। গলিত, বিকৃত লাশ বা শত শত লাশের গন্ধ আমাকে কষ্ট দিয়েছে। তবে সব থেকে কষ্টের যায়গা এখন অধরচন্দ্র বিদ্যালয়। সেখানে নিখোঁজদের স্বজনেরা অপেক্ষায় আছে তাদের স্বজনদের মৃত দেহ পাবার আশায়।কতটা কষ্ট বুকে নিয়ে তারা অপেক্ষা করছে তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। প্রতিদিন ২০-৩০ টা গলিত লাশ আসছে সেখানে। আর স্বজনেরা সেই লাশ গুলো দেখতে দৌড়ে যাচ্ছেন। বিকৃত লাশের মাঝে তারা খুঁজছেন তাদের প্রিয় স্বজনদের। কষ্টের সেই তীব্রতা অনুভব করার ক্ষমতা শুধু সেই স্বজন হারাদেরই আছে। আমি গিয়েছিলাম সেই লাশ দেখতে, যে লাশ প্রতিদিন দেখে যাচ্ছেন স্বজন হারারা। লাশের সেই বিকৃত রূপ, তীব্র কটু গন্ধে আমার বমি আসার জোগাড় হয়েছিল। আমার এক বন্ধু ঐ দিন ভাত খেতেই পারেনি। একটু চিন্তা করুন মাত্র ২/১ টা লাশ দেখেই আমাদের এই অবস্থা। আর যারা প্রতিদিন ওই লাশ গুলোর মাঝেই খুঁজে যাচ্ছেন তাদের আপনজনদের তাদের কি অবস্থা! প্রতিদিন লাশের গাড়িতে আসছে লাশ আর সেই লাশ দেখতে ছুটে যাচ্ছেন তাদের স্বজনেরা। কতটা কষ্টের অনুভূতি!!লাশের সেই বিকৃত রূপ, তীব্র কটু গন্ধ উপেক্ষা করে তারা প্রতিনিয়ত খুঁজে যাচ্ছেন তাদের প্রিয়জনের মরদেহ। স্বজন হারা গরীব মানুষ গুলো জানেন না তাদের এই অপূরণীয় ক্ষতি কিভাবে তারা কাটিয়ে উঠবে।
ও হ্যাঁ, বলতে ভুলেই গিয়েছি সাভার হত্যা কান্ডের ঘটনায় সাংবাদিকদের রমরমা একটা মৌসুম গেল। সেদিন অধর চন্দ্র বিদ্যালয়ে এক সাংবাদিক গাড়ি থেকে নামলেন। চোখে সানগ্লাস, নাকে মাস্ক বাধা এক নারী সাংবাদিক। গড়ি থেকে নেমেই তিনি ডাকলেন কিছু লোকদের যারা অপেক্ষায় ছিলেন স্বজনদের মৃতদেহের । তিনি তাদের ডেকে বললেন, এই তোমরা হাত উঁচু করে তোমাদের হারানো আত্মীয় স্বজনদের ছবি গুলো তুলে ধর। সবাই তাদের হাতের ছবি গুলো তুলে ধরল। তিনি ছবি তুললেন। এরপর বললেন, যাও এবার যাও!!! আমি দূর থেকে তাকিয়ে দেখলাম। কতটা নিচু মানের সাংবাদিকতা করা যায় তা দেখাচ্ছেন এদেশের সাংবাদিকরা। নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধান পাবে এমন আশায় তার ভিড় জমাচ্ছেন সাংবাদিকদের কাছে। আর কতিপয় সাংবাদিকরা ব্যস্ত তাদের ব্যবসা রক্ষায়......... ছিঃ লজ্জা! এ লজ্জা ব্যর্থ মনুষ্যত্বের। বাতাসে লাশের গন্ধের সাথে আরও পাওয়া যাবে অনেক অমানবিকতার গন্ধ!
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:০০
নিজাম বলেছেন: হায় অভাগা দেশ! হায় অভাগা জাতি!! হায় অভাগা পোশাক শ্রমিক!!! আল্লাহর কাছে দোয়া করি আল্লাহ যেন তাঁদের উত্তম বদলা দিয়ে দেন।