![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিকাল ৫টা । সূর্য পশ্চিম
আকাশে ঢলে পড়বে পড়বে ভাব ।
পাখিরা তাদের বাসার
উদ্দশ্যে রওনা হয়েছে । শহরের ব্যস্ত মানুষগুলো নিজেদের অফিসের কাজকর্ম
ছেড়ে বাসার পথে রওনা হচ্ছে । ঠিক
এরকম একটা গৌধুলী মাখা বিকেলে ছয়
তালা বাসার
একটা রুমে একাকী বসে আছে তিথি ।
তিথির হাতে একটা কাঁচের বোতল।
বোতলের গায়ে একটা লাল রং এর
মাথার খুলি আঁকা। খুলির দুই
পাশে দুইটা হাড়। নিচে লাল
কালিতে বড় বড়
করে লেখা "Poison ! It's
Dangerous"
তিথির কোনো ইচ্ছাই নেই এই
মরণঘাতী পদার্থটা খেয়ে পৃথিবীর
মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে । বাট
তাকে এটা খেয়েই মরে যেতে হবে।
এ ছাড়া যে আর কোনো উপায় নেই তার
কাছে । তিথি ভাবছে ঢকঢক
করে একবারে খেয়ে নিবে নাকি ধীরে ধীরে খাবে ।
খাওয়ার আগে বোতলের মুখ
খুলে শুঁকে দেখছে তিথি । ভয়াবহ
একটা উত্কট গন্ধ।
তিথি ভাবছে কীভাবে ও এটা খাবে ।
খাওয়ার সাথে সাথে তো ও
বমি করে ভেলবে । আর
তাহলে তো তিথি মারা যাবে না ।
কিন্তু কী করবে সে ???
মৃত্যুকে যে আলিঙ্গন করতে ওকে হবেই ।
মরে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে আর
মরে যেতে হবে দুইটার
মাঝে পার্থক্য আছে। মানুষ মাত্রই
আবেগী প্রানী। আবেগে হুটহাট
মরে যেতে ইচ্ছে করে। রেজাল্ট
খারাপ সুইসাইড করব । বাসায়
বকেছে নদীতে ঝাপ দিয়ে বিলীন
হয়ে যাব। । প্রেমে ছ্যাকা ফ্যানের
সাথে ঝুলে যাব।
আর মরে যেতে হয় যখন বেঁচে থাকার
কোন উপায় থাকে না। তিথিরও আর
কোন উপায় নেই। এই রকম উপায়হীন
অবস্থায় তাকে যে ফেলেছে তার
নাম সাকিব ।
একদিন এই রকমই
একটা গৌধুলী রাঙা বিকেলে দুই বছর
ধরে বন্ধু বন্ধু
বলে আসা ছেলেটি তিখি এর
হাতে একট টকটকে লাল গোলাপ
ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল,
" তোমার মুখের ওই মিস্টি হাসি
ভালোবাসি , ভালোবাসি !"
ভাললাগাটা তিখির আগে থেকেই
ছিল। তবুও অদ্ভুত এই
রাঙা বিকেলে সাকিবের
ধরে ভীত গলায় বলেছিল,
'কখনো ছেড়ে যাবে না তো?'
হাতে হাত ঘষে ভালোবাসার
পরশ দিয়ে বলেছিল সাকিব,
'কখনো নয়।'
এরপর প্রতিদিন দেখা করত তারা । একসাথে বাদাম খাওয়া , কিছু
ভালো লাগার কথা আর কিছু মধুর
খুনসুটি ।
একদিন হঠাত্
ভালবেসে তিথির কপালে সাকিব
এঁকে দেয় উষ্ণ
চুমু। উষ্ণতা যেন অনুভূতি।
অনুভূতিরা এক হতে চায়। ভালবাসার
আদরে ভিজে যেতে চায়।
ভালবাসা কপালে থাকে না।
নিম্নগামী হয়। দুটি ঠোটের
মিলনে তিথির
অভিমানি গলা আবেশে বলে ওঠে,
'তুমি খুব দুষ্টু।'
দুষ্টু সাকিবের হাত গুলোর
দুষ্টামি সময়ের আপেক্ষিকতায়
উষ্ণতা খুঁজে ফিরে রিকশার হুডের
আড়ালে অথবা পার্কের নির্জন
বেঞ্চে। তিথি বাঁধা দেয় না। ওই
যে হুমায়ূন স্যার বলেছিল -
"কিশোরী মেয়ের ভালবাসার আবেগ
প্রচন্ড তীব্র হয়।"
আর যে ভালবাসায়
কেউ নিজের জীবন
দিয়ে দিতে পারে । সে ভালবাসার
টানে নশ্বর দেহ দিতে বিবেক মৌন
থাকে তিথির । মৌনতা সম্মতির লক্ষন
জেনে সাকিব তার ভালবাসা উজাড়
করে তিখিকে দিয়ে দেয়। আর
তিথি ভালবাসায় নিজেকে উজাড়
করে দিয়ে হল উপায়হীনা।
ভালবাসা পেয়ে গেলে মানুষ
ভালবাসার মূল্য কমিয়ে দেয়। শুরু
হয়ে যায় অবহেলা।
কারো ভালবাসা পেয়ে গিয়ে কারো অবহেলা পেতে ভাল
লাগেনা। অবহেলা থেকে ঝগড়া শুরু।
ঝগড়ার শেষে ব্রেকআপ। ব্রেকআপ
থেকে রাগ। রাগে ঘৃণা। ঘৃণার ফল
তিথি আর সাকিবের অন্তরঙ্গ
ছবি চলে গেল
ইন্টারনেটে।
তিথি টানা ঘন্টা দুয়েক ধরে ঝিম
ধরে বসে থেকে একটা বুদ্ধি বের
করে। ফ্রিজে রাখা কোকা কোলার
সাথে বিষ মিশিয়ে খেয়ে ফেলবে।
কোকা কোলার স্বাদে বিষের উত্কট গন্ধ
চাপা পড়ে যাবে। মৃত্যুটা হবে খুব
সিম্পল। তিথি ফ্রিজ
খুলে কোকা কোলার বোতল বের করে।
বের
করে ঘরে ফিরে আসতে গিয়ে বারান্দায়
চোখ চলে যায়। বারান্দায়
বাবা বসে আছেন। তিথি অবাক
হয়ে লক্ষ্য করে ওর পাথরের মত শক্ত
বাবা আজ কাঁদছেন। এই
বাবাকে কখনো কাঁদতে দেখে নি তিখি ।
এমনকি শত কষ্টেও না । আর আজ সেই
বাবা কিনা কাঁদছে । তিথির হাত
থেকে বিষের বোতল পড়ে যায়।
ছুটে গিয়ে বাবার
পা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ
করে কাঁদতে থাকে তিথি। বাবারা সব
বোঝেন। সব জানেন।
বাবারা কখনো তার সন্তানের
সাথে ব্রেকাপ করেন না।
বাবা তিথির মাথায় হাত
রেখে বললেন,
'আমি তোকে ক্ষমা করেছি মা।'
তিথি বাবাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে ওঠে !!!!!!!
©somewhere in net ltd.