নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপনার ব্লগের একটি সুন্দর শিরোনাম এখানে লিখুন

সন্দীপ মজুমদার

সন্দীপ মজুমদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

অণু গল্প : ভালোবাসার অপমৃত্যু

১২ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১১:০৩

""কিরে গাধা!
ইজি ক্যাচটা ছেড়ে দিলি ক্যান?!""

সাকিবের ধমকে আবিরের হুশ ফেরে। চেয়ে দেখে বলটা গড়িয়ে বাউন্ডারীর
বাইরে চলে গেছে। একবার বলের
দিকে তাকায় আরেকবার সামনের
বাসার ছাদের দিকে তাকায়।

দেখতে পায় ওর দিকে ফিরে মুখ
চেপে হাসছে তিথি। আজও একই কাজ করেছে আবির।
তিথিকে দেখতে গিয়ে ক্যাচ মিস।

তবুও
টিমের ক্যাপ্টেন যখন আচ্ছামত
বকা দিচ্ছিল ওকে, ওর চোখে শুধু
ভেসে উঠছিলো তিথির সেই
দুষ্টুমি ভরা হাসিটা। এত সুন্দর
করে হাসে কিভাবে মেয়েটা?! ওর
হাসি দেখলে আবিরের ভেতর কেমন যেন
অনুভূতি হয়। মনে হয় হাসির ধাক্কায়
সে যেন হারিয়ে যাবে অজানা কোথাও।
চারপাশে থাকবে না কেউ। শুধু ও আর
তিথি, দুজন হয়ে থাকবে দুজনার...... .

গার্লস স্কুলটার সামনে এই নিয়ে ৪র্থ দিনের মত দাঁড়িয়ে আছে আবির। ঠিক
করে ফেলেছে যেভাবেই হোক
তিথিকে বলবেই মনের কথা। আগের ৩দিন তিথি ওর সামনে দিয়ে গেলেও
শুধু সাহসের অভাবে বলতে পারে নি কথাটুকু।
আজকে তাই শক্ত এক পণ করেই
বেরিয়েছে। হয়
বলবে নয়তো কোনোদিনও তিথির
সামনে যাবে না। যদিও আবির
জানে এই পণ সে রাখতে পারবে না।
তিথির মুখটা অন্তত একবার
না দেখলে আবিরের শ্বাস-প্রশ্বাস
বন্ধ হয়ে যায়!

ছুটির ঘণ্টা দিয়ে দিয়েছে। আবির
এদিক সেদিক খুঁজতে থাকে তিথিকে ।
ওই তো আসছে ও। আবির
জোরে জোরে শ্বাস নেয়। পারবে তো ও?
ভাবতে ভাবতে তিথি ওর
সামনে চলে আসে। ফিক
করে হেসে দিয়ে চলে যেতে থাকে সামনের
দিকে। হঠাৎ আবির জোরে ডাক দেয়--

তিথি.......

তিথি অবাক
হয়ে ঘুরে তাকায়। ও অনেক আগে থেকেই
জানে আবির ওকে প্রচন্ড ভালোবাসে।
কিন্তু মুখ ফুটে বলতে পারে না। সে ও ঠিক করে রেখেছিলো, যেদিন
বোকাটা মুখ
ফুটে বলতে পারবে সেদিনই
তার সাথে কথা বলবে, এর আগে না। আজ
হঠাৎ এভাবে ডাক দেয়ায়
সে অবাক হয়ে যায়। আবির
দৌঁড়ে আসে ওর দিকে।

হাতে একটা কাগজ
ধরিয়ে দিয়ে ছুটে পালিয়ে যায়।
তিথি তাকিয়ে থাকে অবাক চোখে। বাসায় যেয়েই কাগজটা খুলে দেখে সে।

গোটা গোটা অক্ষরে কয়েকটা লাইন লেখা-

"তোমার মুখের ওই
মিষ্টি হাসি ভালোবাসি, ভালোবাসি
শুধু তোমাকেই
ভালোবাসি"

লেখাগুলো পড়ে হাসতে হাসতে পরে যাবার
উপক্রম হয় তিথির ।
বোকাটা ভালোবাসি ভালোবাসি বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছে।
ভালোই লাগে তিথির। চোখের
সামনে কল্পনায় ভেসে ওঠে বোকাটার
সাথে সে হেঁটে যাচ্ছে কোনো এক
রাস্তা ধরে। বোকাটা শক্ত করে ওর
হাত ধরে রেখেছে, এই যেন
ছুটে যাবে।
তিথি আরেকটা হাতে আবিরের
বাহুটা ধরে রাখে।
মাথাটা এলিয়ে দিয়েছে আবিরের
কাঁধে। এটাই যেন তার পরম শান্তির
জায়গা, সবচেয়ে সুখের স্থান.....

পরদিন আবির আবার
দাঁড়িয়ে থাকে স্কুলের সামনে তিথির
জন্য। দূরে দেখতে পায়
তিথি গুটিগুটি পায়ে হেঁটে আসছে।
আবিরের আবারো বুক কাঁপতে থাকে।
যদি তিথি ওকে না করে বসে?
ভাবতে ভাবতে তিথি এসে পরে সামনে।
ওকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। আবির
এগিয়ে যায় তার দিকে।
তিথি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে।
আবিরও খুঁজে পায় না কি বলবে।

-আমার
সাথে একটু আসবে? ৫ মিনিট? হঠাৎ
আবির বলে বসে।

-এখন তো স্কুল,
কিভাবে যাবো?

- আজকে না ই গেলে নাহয়? ক্লাস
টিচারকে বলে দিয়ো তোমার
মাথা ব্যাথা ছিলো...

তিথি বুঝতে পারে না কি বলবে। তারও
প্রচন্ড ইচ্ছা হচ্ছিলো আবিরের
সাথে যেতে। অজান্তেই
দুজনে হাঁটতে থাকে সামনের দিকে।
আবির একবার তাকায় তিথির দিকে।
মেয়েটা একবারের জন্যও
মাথা তুলে তাকায়নি ওর দিকে। এ
কি লজ্জ্বা? ও লজ্জ্বা কেন পাচ্ছে?!

আবির জিজ্ঞেস করে-

-চিঠিটা পড়েছ?

-হ্যাঁ।

-কিছু বলবে?

তিথি চুপ করে থাকে। আবির
আস্তে করে তিথির হাতটা ধরে।
হাতটা যেন কেঁপে ওঠে ওর স্পর্শে।
কয়েক মুহুর্ত সব যেন নিস্তব্ধ
হয়ে যায়।

তিথি আস্তে করে আবিরের
হাতটা চেপে ধরে। আবির
তাকিয়ে দেখে তিথির মুখ
জুড়ে একটা লজ্জ্বা মাখা হাসি ছড়িয়ে পড়েছে।

আবিরের মনে হয় এই
মুহুর্তে পৃথিবীতে ওর চেয়ে সুখী আর
কেউ নেই..... কেউ না...

হয়তো বিধাতা আবিরের ভাগ্যে সুখটুকু
রাখেননি। তাই কিছুদিন পরই তিথির
বাবা বদলী হয়ে যান সিলেটে। ক্লাস টেনে পড়া এক ছেলে তো আর পারে না রাজশাহীতে নিজের
ফ্যামিলি ছেড়ে ভালোবাসার মানুষটার
জন্য সিলেট চলে যেতে। তাই যেদিন
তিথিরা চলে যাচ্ছিল,
তিথি শেষবারের মত আবিরের
সাথে দেখা করতে এসেছিলো।

দুজন শুধু
সামনাসামনি দাঁড়িয়ে থাকে। দুজনের সব কথা হয় চোখের জলে। হঠাৎ তিথির
সৎবিৎ ফিরে আসে। দেখতে পায় ওর চোখের পানিতে আবিরের বুকের
কাছটা একদম ভিজে গেছে। কখন যে ও
জড়িয়ে ধরেছিলো আবিরকে বলতে পারবে না।
এক ছুটে ও চলে আসে ওখান থেকে।
আবির
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে সেইখানে।

তিথির
সাথে সাথে যেনো ওর ভালোবাসাটুকুও
ওকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আবির
কেঁপে উঠে। এমন কেন মনে হচ্ছে তার?
ফেসবুকে আর ফোনে তো নিয়মিতই
কথা হবে তাদের। তবু কেন ওর এমন
লাগছে?
মনে হচ্ছে যেন আর কোনোদিন
কাছে পাবে না ওর তিথি কে......

বিধাতা হয়তো আবিরের উপর একটু
বেশিই রুষ্ট ছিলেন, তাই শুধু
তিথিকে তার কাছ
থেকে সরিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত হলেন না,
তাকে একদম নিজের
কাছে নিয়ে গেলেন। আবির যখন তিথির
গাড়ি এক্সিডেন্টের খবর পেল, তখনই
ওর মনে হল, সব শেষ। সেই
অনুভূতিটা ফিরে এলো আবার। তবুও মনের
এককোণে ছোট্ট একটা আশা ছিল,
হয়তো সাধারণ একটা এক্সিডেন্টই
হয়েছে। ওর তিথি সুস্থই আছে।

কিন্তু
না, ওই যে বিধাতার ইচ্ছা ছিলো অন্য
কিছু, তাই আবিরকে তিথির মৃতদেহটাই
দেখতে হলো।
সাদা কাপড়ে মোড়ানো দেহটাকে এতটাই
জীবন্ত লাগছিলো যে আবিরের
মনে হচ্ছিলো তিথি এখনই
উঠে এসে আবিরের চোখের
পানিটা মুছে দিয়ে বলবে-

"" ধুর
গাধা, আমি কি মরতে পারি ?""

আবিরের তখনো মনে হচ্ছিলো সবটাই
একটা দুঃস্বপ্ন, হয়তো এখনই
ঘুমটা ভেঙ্গে যাবে তার। কিন্তু
সে জানে না, কিছু দুঃস্বপ্ন মানুষ
জেগে থেকেই দেখে, জীবনের
প্রতিটা মুহুর্তই বয়ে বেড়ায় সেই
স্বপ্নের দুঃস্মৃতিকে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.