নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সরদার ভাই।

সরদার ভাই

সাধারণ ভাত মাছ খাওয়া বাঙালী। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে চাকরি করছি। ভালোবাসি বই পড়তে, গান শুনতে, ম্যুভি দেখতে এবং ঘুরে বেড়াতে।

সরদার ভাই › বিস্তারিত পোস্টঃ

পৃথিবীর ক্যালেন্ডার সমূহ

১৩ ই জুলাই, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৯

ক্যালেন্ডার বা দিনপঞ্জি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অতি পরিচিত একটি বস্তু। আমরা সবাই কম বেশী বাংলা ক্যালেন্ডার, ইংরেজী ক্যালেন্ডার এবং আরবী ক্যালেন্ডারের সাথে পরিচিত। ইদানিং অনেকে চাইনা ক্যালেন্ডারের কথা জানে দেখলাম টিভিতে নিউজ দেখার কল্যাণে। আজ আমি আপনাদেরকে জানাবো পৃথিবীতে প্রচলিত এবং পরিচিত আরো কিছু ক্যালেন্ডারের সাথে। ভালো লাগলে জানাতে ভুলবেন না। তাহলে আপনাদের জন্য ইনফরমেশন জোগাড় করতে আনন্দ লাগবে।

বঙ্গাব্দ
১৪১৯ বঙ্গাব্দের আষাঢ় মাসে সনাতন বাংলা বর্ষপঞ্জী এবং সংস্কারকৃত বাংলা বর্ষপঞ্জীর পার্থক্য চিহ্নিত হয়েছে।

বঙ্গাব্দ, বাংলা সন বা বাংলা বর্ষপঞ্জি হল বঙ্গদেশের একটি ঐতিহ্য মণ্ডিত সৌর পঞ্জিকা ভিত্তিক বর্ষপঞ্জি। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সৌরদিন গণনা শুরু হয়। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে একবার ঘুরে আসতে মোট ৩৬৫ দিন কয়েক ঘণ্টা সময়ের প্রয়োজন হয়। এই সময়টাই এক সৌর বছর। গ্রেগরীয় সনের মতন বঙ্গাব্দেও মোট ১২ মাস। এগুলো হল ‌ বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র, আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ, মাঘ, ফাল্গুন ও চৈত্র। আকাশে রাশিমণ্ডলীতে সূর্যের অবস্থানের ভিত্তিতে বঙ্গাব্দের মাসের হিসাব হয়ে থাকে। যেমন যে সময় সূর্য মেষ রাশিতে থাকে সে মাসের নাম বৈশাখ।

বাংলাদেশ এবং পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, অসম ও ত্রিপুরা অঞ্চলে এই বর্ষপঞ্জি ব্যবহৃত হয়। বঙ্গাব্দ শুরু হয় পহেলা বৈশাখ বা বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে। বঙ্গাব্দ সব সময়ই গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জীর চেয়ে ৫৯৩ বছর কম। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী আজকের তারিখ হল ২৭ আষাঢ়, ১৪২৩ বঙ্গাব্দ।

জুলিয় বর্ষপঞ্জি

জুলিয়ান বর্ষপঞ্জী খৃষ্টপূর্ব ৪৬ খ্রিষ্টাব্দে জুলিয়াস সিজার কর্তৃক প্রবর্তিত একটি ঐতিহ্যবাহী ক্যালেন্ডার। এটি রোমান বর্ষপঞ্জীর ভিত্তি করে প্রবর্তন করা হয়। এ বর্ষপঞ্জি খৃষ্টপূর্ব ৪৫ খ্রিষ্টাব্দে মিশরের রোমান বিজয়ের পর থেকে কার্যকর করা হয়। এটি রোমান সাম্রাজ্য, অধিকাংশ ইউরোপের একটি উদিয়মান ক্যালেন্ডার ছিল। এটি ধীরে ধীরে উন্নতিসাধনের মাধ্যমে ১৫৮২ সালে পোপ গ্রেগরি ১৩ কর্তৃক গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জী রুপে প্রবর্তন করা হয়।

জুলিয়ান পঞ্জিকায় বছর হিসাব করা হত ৩৬৫ দিনে এবং দিনগুলো ১২ টি মাসে ভাগ ছিল। প্রতি ৪বছর পর ফেব্রুয়ারি মাস অধিবর্ষ হত। জুলিয়ান বর্ষপঞ্জীতে গড়ে ৩৬৫.২৫ দিনে এক বছর হত। এটি ছিল একটি সম্পূর্ণ সৌর ভিত্তিক বর্ষপঞ্জী।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী, গ্রেগোরিয়ান বর্ষপঞ্জী, পাশ্চাত্য বর্ষপঞ্জী, ইংরেজি বর্ষপঞ্জি বা খ্রিস্টাব্দ হল আন্তর্জাতিকভাবে প্রায় সর্বত্র স্বীকৃত বর্ষপঞ্জী। ১৫৮২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পোপ ত্রয়োদশ গ্রোগোরির এক আদেশানুসারে এই বর্ষপঞ্জীর প্রচলন ঘটে। সেই বছর কিছু মুষ্টিমেয় রোমান ক্যাথলিক দেশ গ্রেগোরিয় বর্ষপঞ্জী গ্রহণ করে এবং পরবর্তীকালে ক্রমশ অন্যান্য দেশসমূহেও এটি গৃহীত হয়।

পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি কর্তৃক বর্ষপঞ্জী সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ছিল কারণ পূর্ববর্তী জুলিয়ান বর্ষপঞ্জীর গণনা অনুসারে একটি মহাবিষুব থেকে আরেকটি মহাবিষুব পর্যন্ত সময়কাল ধরা হয়েছিল ৩৬৫.২৫ দিন, যা প্রকৃত সময়কাল থেকে প্রায় ১১ মিনিট কম। এই ১১ মিনিটের পার্থক্যের ফলে প্রতি ৪০০ বছর অন্তর মূল ঋতু থেকে জুলিয়ান বর্ষপঞ্জীর প্রায় তিন দিনের ব্যবধান ঘটত। পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরির সময়ে এই ব্যবধান ক্রমশ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১০ দিনের এবং ফলস্বরূপ মহাবিষুব ২১ মার্চের পরিবর্তে ১১ মার্চ পড়েছিল। যেহেতু খ্রিস্টীয় উৎসব ইস্টারের দিন নির্ণয়ের সাথে মহাবিষুব জড়িত সেহেতু মহাবিষুবের সাথে জুলিয়ান বর্ষপঞ্জীর এই ব্যবধান রোমান ক্যাথলিক গির্জার কাছে অনভিপ্রেত ছিল।

গ্রেগোরিয়ান বর্ষপঞ্জীর সংস্কার দু'টি ভাগে বিভক্ত ছিল: পূর্ববর্তী জুলিয়ান বর্ষপঞ্জীর সংস্কার এবং ইস্টারের তারিখ নির্ণয়ের জন্য গির্জায় ব্যবহৃত চান্দ্র পঞ্জিকার সংস্কার। জনৈক চিকিৎসক অ্যালয়সিয়াস লিলিয়াস কর্তৃক দেয় প্রস্তাবের সামান্য পরিবর্তন ঘটিয়ে এই সংস্কার করা হয়।

থাই (শ্যামদেশীয়) সৌর বুদ্ধাব্দ

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার থাইল্যান্ডে একটি সৌর বর্ষপঞ্জি প্রচলিত আছে যা বুদ্ধাব্দ নামেই পরিচিত। এই অব্দটিও "সূর্যসিদ্ধান্ত" দ্বারা প্রভাবিত এবং এই অব্দে সূর্যসিদ্ধান্তের সৌরবর্ষ গণনার পদ্ধতিটি অনুসৃত হয়ে থাকে। সূর্যের একেকটি রাশিতে অবস্থানের উপর ভিত্তি করে একেকটি মাস গণিত হয়। ভারতে প্রচলিত বঙ্গাব্দে এবং প্রাচীন শকাব্দেও অনুরূপ প্রণালীতেই গণিত হয় মাস এবং দিনাঙ্ক। এই অব্দে একেকটি মাসের নামকরণ হয়েছে সৌরমণ্ডলে অবস্থিত একেকটি রাশির সংস্কৃত নামানুসারে।

ইরানি বর্ষপঞ্জী

ইরানি বর্ষপঞ্জী অথবা পারস্য বর্ষপঞ্জী হল বৃহত্তর ইরানে প্রায় দুই সহস্রাব্দব্যাপী প্রচলিত বর্ষপঞ্জী। ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে জলবায়ু, ধর্মীয় ও প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে এই বর্ষপঞ্জী সংস্কার করা হয়েছে।

অধুনা ইরানি বর্ষপঞ্জী বা সৌর হিজরি হল ইরান ও আফগানিস্তানের জাতীয় বর্ষপঞ্জী। এই বর্ষপঞ্জী অনুসারে বছর শুরু হয় ইরানি সময়ে গণিত মহাবিষুবের দিনে। বর্ষশুরুর এই দিনটি নির্ণীত হয় গ্রেগোরিয়ান বর্ষপঞ্জীর তুলনায় অধিকতর নিখুঁত উপায়ে। কারণ মহাবিষুবের প্রকৃত সময় নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই বর্ষপঞ্জী গাণিতিক নিয়মের পরিবর্তে জ্যোতির্বিজ্ঞানের গণনার উপর নির্ভরশীল।

ইংরেজিতে এই বর্ষপঞ্জীর অব্দ চিহ্নিতকরণে AP অর্থাৎ লাতিন শব্দ Anno Persico-র সংক্ষিপ্ত রূপ ব্যবহার করা হয়। ইরানি বর্ষপঞ্জীতে সাধারণতঃ ২১ মার্চ অথবা তার দুই একদিন আগে বা পরে বর্ষ শুরু হয়। এই অব্দের সাথে ৬২১ অথবা ৬২২ যোগ করে খ্রিস্টাব্দ নির্ণয় করা যায়।

বাইজেন্টাইন বর্ষপঞ্জী

বাইজেন্টাইন বর্ষপঞ্জী হল ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চ কর্তৃক ব্যবহৃত একটি সৌর ভিত্তিক পঞ্জিকা। এটি কনস্টান্টিনোপল সৃষ্টির যুগ (Creation Era of Constantinople) বা বিশ্ব এর যুগ (Era of the World) নামে পরিচিত। এটি ৯৮৮ থেকে ১৪৫৩ সাল পর্যন্ত বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে ব্যবহৃত ক্যালেন্ডার।

বাইজেন্টাইন পঞ্জিকা মুলত জুলিয়ান বর্ষপঞ্জীর উপর ভিত্তি করে প্রণয়ন করা। এর বছর শুরু হয় সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ থেকে।

শকাব্দ

শকাব্দ (অথবা শালীবাহনাব্দ) হল ভারতীয় উপমহাদেশে বহুলপ্রচলিত এক প্রাচীন সৌর অব্দ। এই অব্দ বঙ্গাব্দের ৫১৫ বছর পূর্বে এবং খ্রিস্টাব্দের ৭৮ বছর পরে প্রচলিত হয়। শকাব্দের উৎস নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতানৈক্য আছে। কিন্তু অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতানুসারে প্রাচীন ভারতীয় নৃপতি শালীবাহনের প্রয়াণ দিবস থেকেই শকাব্দের সূচনা। রাজা শালীবাহনের রাজত্বকালে একবার বহিরাগত শক জাতি তাঁর রাজ্য আক্রমণ করে। তখন শালীবাহন শকদের পরাজিত করেন এবং ‘শকারি’ উপাধি গ্রহণ করেন। সেখান থেকেই এই অব্দের নাম হয় শকাব্দ। শকাব্দ একটি সৌর অব্দ এবং পূর্বে এর মাস এবং দিনাঙ্ক গণিত হত খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে উদ্ভূত প্রাচীন ভারতীয় জ্যোতির্বিষয়ক গ্রন্থ ‘সূর্যসিদ্ধান্তের’ সৌরবর্ষ গণনার বিধি মান্য করে অর্থাৎ রবিসংক্রান্তি অনুসারে।

একটি রাশি থেকে অপর একটি রাশিতে সূর্যের আপাতগমনের(প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর বার্ষিক গতি) ফলে মাস পরিবর্তিত হত। পূর্ব ভারতে প্রচলিত বঙ্গাব্দে এবং ভাস্করাব্দে বর্ষগণনার ক্ষেত্রে এখনও এই প্রাচীন পদ্ধতিটিই অনুসৃত হয়ে থাকে। শকাব্দে অঞ্চলভেদে বিভিন্ন সময়ে বর্ষারম্ভ হত। যেমন উত্তর ভারতে বছর শুরু হত চৈত্র মাসে কিন্তু পূর্ব ভারতে নববর্ষ অনুষ্ঠিত হত বৈশাখ মাসে। ভারতীয় ইতিহাসের আধুনিক যুগেও অন্যান্য অব্দের পাশাপাশি শকাব্দের ব্যবহার বহুলভাবে লক্ষিত হয়। আসামে "ভাস্করাব্দ" নামক একটি অব্দ প্রচলিত থাকলেও শকাব্দের ব্যবহারই বহুল প্রচলিত। সূর্যসিদ্ধান্তের প্রাচীন নিয়ম মেনেই অসমে ১ বহাগ (বৈশাখ) পালিত নববর্ষ উৎসব "বহাগ বিহু" থেকে শকাব্দ গণনা করা হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীতে বঙ্গদেশে প্রকাশিত বিভিন্ন দৈনিক এবং সাময়িক পত্রে শকাব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য “তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা”।

হিজরী বর্ষপঞ্জী

ইসলামি বর্ষপঞ্জি বা মুসলিম বর্ষপঞ্জি (হিজরী বর্ষপঞ্জি হিসাবেও পরিচিত) একটি চন্দ্রনির্ভর বর্ষপঞ্জি। বিভিন্ন মুসলিম দেশ এই বর্ষপঞ্জি অনুসরণ করে, আর পৃথিবীব্যাপী মুসলমানগণ অনুসরণ করেন ইসলামের পবিত্র দিনসমূহ উদযাপনের জন্য। ইসলাম ধর্মের শেষ বাণীবাহক মুহাম্মদ(সাঃ) মক্কার ক্বুরায়েশদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে মক্কা থেকে মদীনা চলে যান। তাঁর এই জন্মভূমি ত্যাগ করার ঘটনাকে ইসলামে 'হিজরত' আখ্যা দেয়া হয়। রাসুল মুহাম্মদ (সা) -এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের ঘটনাকে চিরস্মরণীয় করে রাখার উদ্দেশ্যেই হিজরী সাল গণনার সূচনা। ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (রা) -এর শাসনামলে ১৭ই হিজরী অর্থাৎ রাসুল মুহাম্মদ (সা) -এর মৃত্যুর সাত বছর পর চন্দ্র মাসের হিসাবে এই পঞ্জিকা প্রবর্তন করা হয়। হিজরতের এই ঐতিহাসিক তাৎপর্যের ফলেই হযরত ওমর রা. এর শাসনামলে যখন মুসলমানদের জন্য পৃথক ও স্বতন্ত্র পঞ্জিকা প্রণয়নের কথা উঠে আসে তখন তাঁরা সর্বসম্মতভবে হিজরত থেকেই এই পঞ্জিকার গণনা শুরু করেন। যার ফলে চান্দ্রমাসের এই পঞ্জিকাকে বলা হয় ‘হিজরী সন’। রতিদিন সূর্যাস্তের মাধ্যমে দিন গণনার শুরু হয়। তবে মাস গণনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ভূখন্ডে খালি চোখে অথবা খালি চোখানুগ যন্ত্রপাতির (যেমন: দূরবীণ, সাধারণ দূরবীক্ষণ যন্ত্র) সহায়তায় চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে। মাসগুলো চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ২৯ অথবা ৩০ দিনের হয়। যেমাসে ২৯ দিন শেষ হলে নতুন মাসের চাঁদ দেখা যায় না, সে মাসে ৩০ দিন পূর্ণ করে মাস শেষ করা হয়।

বুদ্ধাব্দ

বুদ্ধাব্দ অথবা বুদ্ধনির্বাণাব্দ হল শাক্যমুনি বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ দিবস থেকে গণিত অব্দ। খ্রিস্টজন্মের ৫৪৩ বছর পূর্বে বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে কুশীনগরে ভগবান বুদ্ধ পরিনির্বাণ (পালি: পরিনিব্বাণ) লাভ করেন। সেই বিশেষ দিন থেকেই ১ বুদ্ধাব্দের সূচনা ধরে নিয়ে প্রচলিত হয় "বুদ্ধাব্দ"। প্রত্যেক বছর চান্দ্র বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে (যা "বুদ্ধপূর্ণিমা" নামে খ্যাত) আরম্ভ হয় এই অব্দ। এটি সম্পূর্ণ চান্দ্রাব্দ এবং এই অব্দের মাস এবং দিনাঙ্কের গণনাপদ্ধতি অপরাপর সকল ভারতীয় অব্দের ন্যায় প্রাচীন "সূর্যসিদ্ধান্ত" থেকে গৃহীত। ভারতীয় চান্দ্রাব্দ গণনাপদ্ধতি অনুসারে বুদ্ধাব্দেও মলমাস গণনার রীতি প্রচলিত আছে। এর ফলস্বরূপ বুদ্ধাব্দ চান্দ্রাব্দ হওয়া সত্ত্বেও সম্পূর্ণ ঋতুনিষ্ঠ।

চীনা বর্ষপঞ্জী

চীনা বর্ষপঞ্জী বা চায়না বর্ষপঞ্জী চীনের একটি ঐতিহ্যবাহী চন্দ্র ভিত্তিক বর্ষপঞ্জী। যার দ্বারা চীনের জ্যোতিষবিজ্ঞানে দিন, মাস ও বছর হিসাব করা হয়। এটি চীন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অবস্থানরত চীনা জাতির ব্যবহার করা ঐতিহ্যমন্ডিত পঞ্জিকা। এ বর্ষপঞ্জী অনুসারে চীনে ছুটি নির্ধারন এবং বিয়ের শুভদিন বির্ধারন থেকে ব্যবসার শুভদিনও নির্ধারন করা হয়।

চীনা বর্ষপঞ্জির দিন গগনা শুরু হয় মধ্যরাত থেকে এবং পরের দিন মধ্যরাত পর্যন্ত। মাস শুরু হয় নতুন চাঁদ দেখার দেওয়ার দিন থেকে এবং শেষ হয় পরের নতুন চাঁদ দেখার পূর্বে। বছর শুরু হয় বসন্তকালের নতুন চাঁদ দেখার মাধ্যমে। বর্তমান চীনা বর্ষপঞ্জী অনেক বিবর্তনের ফসল। অনেক জ্যোতিবিদ্যাবিজ্ঞানী জোয়ার- ভাটা সহ বিভিন্ন মৌসুমি কারণে এ বর্ষপঞ্জী অনেক পবির্তন ও পরিবর্ধন করেন। এ বর্ষপঞ্জি আগের প্রায় ১০০ এর অধিক বার পরিবর্তিত হয়েছে। কোরীয় বর্ষপঞ্জী ও ভিয়েতনামের বর্ষপঞ্জী এ বর্ষপঞ্জীরই অংশ।

কোরীয় বর্ষপঞ্জী

কোরীয় বর্ষপঞ্জী বা কোরিয়ান বর্ষপঞ্জী হল পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশের মত কোরিয়ার একটি ঐতিহ্যমন্ডীত চন্দ্র নির্ভর বর্ষপঞ্জী। কোরীয় মেরিডিয়ান অনুসারে দিন গগনা করা হয়। কোরিয়ার ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উৎসব এ পঞ্জিকা ভিত্তিক পালিত হয়।

১৮৯৬ সালে গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জী সরকারিভাবে গৃহীত হলেও প্রথাগত ছুটি, আচার-অনুষ্ঠান এ পঞ্জিকা অনুসারে হিসাব করা হয়। এমনকি পুরনো প্রজন্মের মানুষেরা বয়সও এ পঞ্জিকার উপর ভিত্তির করে হিসাব করে থাকে। এ পঞ্জিকার প্রথম দিন কোরিয়ার সর্ববৃহত উৎসব সিউলাল বা কোরিয়ান নববর্ষ পালিত হয়।

নেপাল সংবৎ

নেপাল সংবৎ মূলত নেপালের কাঠমাণ্ডু উপত্যকায় প্রচলিত একটি চান্দ্র অব্দবিশেষ।

বিক্রম সংবৎ

বিক্রম সংবৎ ভারতীয় নৃপতি বিক্রমাদিত্য কর্তৃক প্রবর্তিত একটি অব্দবিশেষ। এটি ভারতের একটি বহুল প্রচলিত অব্দ এবং নেপালের জাতীয় অব্দ। বিক্রম সংবৎ জাতীয় অব্দ হিসেবে স্বীকৃত হলেও এর পাশাপাশি গ্রেগোরিয়ান বর্ষপঞ্জি এবং নেপাল সংবতের প্রচলনও নেপালে ব্যাপকভাবে রয়েছে।

উজ্জয়িনী নগরীর চন্দ্রবংশীয় রাজা বিক্রমাদিত্য শকদের পরাজিত করে তাঁর বিজয়োপলক্ষে ৫৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রবর্তন করেন চান্দ্র অব্দ বিক্রম সংবৎ। বিক্রম সংবৎ গ্রেগোরিয়ান বর্ষপঞ্জি থেকে ৫৬.৭ বছর এগিয়ে রয়েছে। এটি একটি চান্দ্রাব্দ এবং প্রাচীন সূর্যসিদ্ধান্ত অনুসারে তিথি মতে গণিত হয় এই অব্দের মাস এবং দিনাঙ্ক। উত্তর ভারত এবং নেপালে এই অব্দে নববর্ষারম্ভ হয় চান্দ্র চৈত্র মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে। কিন্তু পশ্চিম ভারতে এই একই অব্দ আরম্ভ হয় চান্দ্র কার্তিক মাসের শুক্লা প্রতিপদ তিথিতে।

মায়া পঞ্জিকা

মায়া পঞ্জিকা একরূপ বর্ষগণনা পদ্ধতি যা মায়া সভ্যতায় তথা কলম্বাস-পূর্ববর্তী মধ্য আমেরিকায় প্রচলিত ছিল। আধুনিক গুয়াতেমালা ও মেক্সিকোর কোন কোন অংশে এটি অদ্যাবধি ব্যবহৃত হয়। সে সময়কার মানুষের গড় আয়ুর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মায়া জনগোষ্ঠী ৫২ বৎসরের (১৮,৯৮০ দিনের) পঞ্জিকাচক্র ব্যবহার করতো। এই সময়ের বহির্ভূত ঘটনা-দুঘর্টনার উল্লেখের জন্য ৫,১২৬ বর্ষব্যাপী একটি অধিপঞ্জিকা উদ্ভাবন করা হয় যার শুরু খ্রিস্টপূর্ব ৩,১১৪ সনে এবং শেষ ২০১২ সালে। এই অধি-পঞ্জিকাটি 'মায়া পঞ্জিকা' হিসাবে উল্লিখিত। ২০১২ সালের ২১শে ডিসেম্বর মায়া পঞ্জিকার শেষ দিবস। অনেকের ধারণা ছিলো ২০১২ সালের ২১শে ডিসেম্বর তারিখে সময় শেষ হয়ে যাবে এবং পৃথিবী ধ্বংস হবে। অনেকের ধারণা এদিন ঘটনাচক্রে পৃথিবীতে নতুন জামানার পত্তন হবে। কিন্তু তার কিছুই হয়নি।

গুপ্তাব্দ

৩২০ সালে চন্দ্রগুপ্ত এ সাল গণনার প্রচলন করেন। গুপ্তাব্দের অপর নাম ছিল 'সংবৎ'।

মঘী সাল
মঘী সন গণনা শুরু হয় খ্রিস্টাব্দ ৬৩৯ সাল থেকে।

বিক্রমাব্দ
খ্রিস্টাব্দ ৫৭ অব্দ থেকে বিক্রমাব্দ গণনা শুরু হয়। বাংলা সনের সাথে ৬৫০ বছর যোগ করলে বিক্রমাব্দ সন পাওয়া যায়।

লক্ষ্মনাব্দ
সেন বংশের রাজা লক্ষন সেন এর প্রবর্তক বলে ধারণা করা হয়। পার্বত্য ত্রিপুরা অঞ্চলে ৬২১ খ্রিস্টাব্দে এই সনটি চালু হয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.