নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সায়েমা খাতুনঃ নৃবিজ্ঞানী, গবেষক ও লেখক
গর্ভাবস্থা কি ট্যাবু? বাচ্চা হওয়া কি লজ্জার বিষয়, না অসম্মানের? গর্ভবতী নারীকে কি লজ্জায় লুকিয়ে থাকতে হবে? গর্ভকালই কি মাতৃত্বের পূর্ণ বিকশিত কাল নয়? এই যৌবনদীপ্ত তরুণী মা-ই কি সৃজন- পালনের উৎস নয়? প্রজাতির ধারা রক্ষাকারী মহাশক্তি নয়? মাতৃত্বের সকল দশা, সকল পর্যায়কে কি সম্মান করা সম্ভব নয়? যৌবন থেকে বার্ধক্যে?
মাতৃত্বকে সম্মান আর কেবল নিজের মাকে সম্মান - দুইটা আলাদা বিষয়।
পিতৃতান্ত্রিক পুরুষেরা কেবল নিজের মাকে সম্মান করে, আর তার মায়ের এই সম্মান নির্ভর করে জগতের বাদবাকী মায়েদের অসম্মানের উপর। মায়ের সম্মান মানে হল সাবালক রোজগেরে কাবিল পুত্রের দ্বারা প্রাপ্ত সম্মান। রোজগেরে কাবিল পুত্রের মা হওয়ার বরাতে পিতৃতান্ত্রিক মর্যাদা ব্যবস্থায় কেবল এই বিশেষ নারী ক্ষমতার সোপানে উপরে চলে যায় এবং বাদবাকি নারীদের নিপীড়ন করবার বৈধতা অর্জন করে।এই ক্ষমতাবান পুরুষের মা হলে তার পক্ষ হয়ে অন্য মায়েদের উপর পাহারাদারি, নজরদারি, খবরদারি, নিয়ন্ত্রণ, জুলুম-পীড়ন সবই জায়েজ। এঁরা শেষ অবধি পিতৃতন্ত্রের পিলার হিসাবে কাজ করে। ফ্যালাসের ক্ষমতার ভাগ পায়। পুরুষের মায়ের এই সম্মানের দাম দেয়ার জন্যে মূল্য চুকাতে হয় বাদবাকি নারীদের। বাদবাকি নারী মানে, কন্যার মা, এবং নাবালক বাচ্চাদের মা। বাঙ্গালী পুরুষতান্ত্রিক পুরুষের নিজেদের মায়েদের সম্মান জানানোর প্রথম ও প্রধান পদ্ধতি হল পদে পদে পরিবারেরর ভেতরে-বাইরে নতুন মায়েদের অবজ্ঞা, অপদস্থ ও অসম্মান করা এবং মায়ের সম্মানের নামে মাতৃত্বের প্রতি মুহূর্তের গৌরবময় চরম সুখকর জীবনকে বিষাক্ত করে তোলা। তাঁর বিশ্রাম ও শান্তিকে বিনষ্ট করা। আর নিজের মায়ের সাথে তুলনা করে পদে পদে খাটো ও অপমান করা। পুরুষ কর্তাদের আম্মাদের যাবতীয় ডিপ্রাইভেশনের উসুল তোলা হয় বাচ্চাদের মায়েদের জীবন বরবাদ করবার বিনিময়ে। নবজাতক ও নাবালকের স্বার্থও এই বিষাক্ত মাতৃপ্রেমের কাছে পরাস্ত!
পিতৃতান্ত্রিক আবাসে থাকাকালীন মাতৃত্বের সব চাইতে নাজুক অবস্থা গর্ভাবস্থা এবং শিশু সন্তানের দেখভাল - এই চরম নাজুক দশায় নারীর ভার লাঘবে এই পরিবারগুলো কেবল সম্পূর্ণভাবে হাত গুটিয়েই রাখে না, বরং সারাক্ষণ দোষ খোঁজার জন্যে পিছে লেগে থাকবার জন্যে অতন্দ্র প্রহরী নিয়োগ করে। মায়েদের বাচ্চা নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ, হয়রান ও পেরেশান করে রাখে। এই সমাজ সারাক্ষণ ভালো মা ও খারাপ মায়ের নাটক চালিয়ে যায়। আর রাষ্ট্র মাতৃত্বকে বায়োপলিটিক্সে নিয়ন্ত্রণ করলেও খাটাখাটনি, দায়-দায়িত্বের বেলায় সবই মায়ের গোষ্ঠীর উপর ছেড়ে দেয়। নারীকে শেষ পর্যন্ত তার মা (ভাইবোনসহ) ছাড়া আর কেউই প্রায় সাহায্য করে না। নারী একমাত্র তাঁর মায়ের সহায়তায় শিশুদের অক্লান্ত পরিশ্রমে বড় করার পর পুরুষের গোষ্ঠী অপরের পরিশ্রম শোষণ করে "আমাদের বাচ্চা" বলে মালিকানা দাবী করতে আসে।এদিকে কন্যা তাঁর এহেন মায়ের প্রতি কর্তব্য ও ভালবাসার সম্পর্ক রক্ষা, বার্ধক্যে মায়ের দেখভাল ও খেদমত পর্যন্ত করতে পারে না।
এটা কোন ব্যক্তির বিষয় নয়, ধর্ষণের সংস্কৃতির মতই এটা মায়ের প্রতি অসম্মানের সংঘবদ্ধ একটা সংস্কৃতি। মাকে পদে পদে অপদস্থ করবার সংস্কৃতি। না হলে এই বাংলা ভাষাতেই কিভাবে মাকে নিয়ে এত সব জঘন্য সব গালি পয়দা হয়েছে? বাঙ্গালী পুরুষ নিজের মাকে নিয়ে গান লিখে ফাটিয়ে ফেলে, কেন্দে ভাসিয়ে সাগর বানিয়ে ফেলে, গায়ের চামড়া দিয়ে পাপোশ বানিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় আর সেই একই মুখে অন্যের মাকে সদর্পে অকথ্য গালি দেয়, প্রকাশ্যে ও নির্ভয়ে ধর্ষণের ইচ্ছা প্রকাশ করে নিজের পৌরুষ জাহির করে। বাঙ্গালী পুরুষের ইডিপাস কমপ্লেক্সকে আজও কেউ প্রশ্ন করতে পারেনি। এই বিষাক্ত মাতৃপ্রেমের এই ছলনার ফাঁদে অনেক দিন ধরে আমরা ফেঁসে আছি।
২| ১৩ ই মে, ২০২২ ভোর ৪:৪৮
গরল বলেছেন: সমাজেতো এর উল্টোটাই বেশি দেখা যায়, বেশির ভাগ মানুষইতো নিজের পরিবার মানে বউ বাচ্চার কথা আগে ভাবে। পরে ভাবে মা এর কথা। বাংলাদেশে এখনও বৃদ্ধাশ্রম অত সুলভ না হওয়াতে মাকে নিয়ে চলে ভাই বোনদের মধ্যে ঠেলাঠেলি, এ ওর বাসায় পাঠায়, ও আবার আর একজনের বাসায়। অনেক মাই বৃদ্ধ বয়েসে একাই থাকে, বুয়ারাই দেখাশুনা করে। আপনি যেটা বলেছেন সেটা তো অবশ্যই অন্যায়, এর উল্টোটাও অন্যায়। আপনার অভিজ্ঞতা থেকে হয়ত আপনি ঠিক লিখেছেন কিন্তু আমি এর উল্টোটাই বেশি দেখেছি।
৩| ১৩ ই মে, ২০২২ সকাল ৮:০০
বিজন রয় বলেছেন: আপনি যে সমস্যা নিয়ে বললেন তা সমাজে অবশ্যই আছে, এবং সেটা খুবই অন্যায়, তার প্রতিবাদও করি। কিন্তু আপনার লেখাটি পড়ে মনে হরো সমস্ত পুরুষজাতিই এটার জন্য দায়ী।
না, এটা ঠিক নয়।
তাহলে এতদিন সমাজটা শেষ হয়ে যেত। এখানো সমাজটা যতটুকু ঠিকে আছে তা ওই কিছু ভাল মানুষের জন্য। সেটা নারী-পুরুষ উভয়ই।
সমাজে ভাল খারাপ সব জায়গাতেই আছে। এটা সৃষ্টির আদি কাল থেকেই।
আপনার জন্য শুভকামনা।
৪| ১৩ ই মে, ২০২২ সকাল ৯:৫৮
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: লেখাটি মুলত পুরুষ বিদ্বেষী। নিরপেক্ষভাবে লেখা হয়নি। উপরে ব্লগার খায়রুল আহসান, গরল এবং বিজন রয়ের মন্তব্য ভালো লেগেছে।
৫| ১৩ ই মে, ২০২২ সকাল ১০:৩৬
নতুন বলেছেন: মাতৃত্বকে সম্মান আর কেবল নিজের মাকে সম্মান - দুইটা আলাদা বিষয়।
পিতৃতান্ত্রিক পুরুষেরা কেবল নিজের মাকে সম্মান করে, আর তার মায়ের এই সম্মান নির্ভর করে জগতের বাদবাকী মায়েদের অসম্মানের উপর। মায়ের সম্মান মানে হল সাবালক রোজগেরে কাবিল পুত্রের দ্বারা প্রাপ্ত সম্মান।
এই অভিযোগ অনেকটাই সত্য কারন সমাজের অনেক মানুষই গর্ভবতী মা কে শারিরিক বা মানুষিক ভাবে চাপে রাখে, কিন্তু সময় পাল্টাচ্ছে। এখন অনেকেই এই বিষয়গুলি খেয়াল রাখে।
৬| ১৩ ই মে, ২০২২ সকাল ১১:৪০
শায়মা বলেছেন: আপুনি
আসলেই মুগ্ধ হয়েছি আজকে। পর পর দুইটা চিন্তার খোরাক ও আলোচনার মত পোস্ট পড়লাম আজকে।
আমি কখনও পুরুষকে এককভাবে নারীর প্রতি অন্যায়ের কারণ ভাবিনা।
বরং কিছু নেগেটিভ পুরুষের সাথে সাথে কিছু বা অধিকাংশ নারী সহযোগীতা মনোভাবাপন্ন নারী তথা নারী পুরুষ তথা সমাজ ও পরিবারকে দায়ী মনে করি।
ভালো করে ভেবে দেখলে এটা বুঝা যায় শুধু এককভাবেই পুরুষ না নারীরাও নারীদেরকে নিজেদেরকে ছোট করে একে অন্যের উপর বিষদাগার চাপিয়ে।
বিশেষ করে বাড়ি থেকেই প্রথমে যার সূচনা হয়।
৭| ১৩ ই মে, ২০২২ দুপুর ১২:৩৭
রাজীব নুর বলেছেন: একসময় বলা হতো- মেয়েদের ঘর দুইটা ।
১। আতুর ঘর।
২। রান্না ঘর।
কিন্তু মেয়েরা এখন স্বাধীন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোর চেয়ে আমাদের দেশের নারীরা অনেক ভালো আছেন। মূলত ধর্ম নারীদের কোনঠাসা করে রেখেছে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৩ ই মে, ২০২২ ভোর ৪:২৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: পোস্টের প্রথম বাক্যটির সাথে সম্পূর্ণ একমত, তবে দ্বিতীয় বাক্যটি সম্পূর্ণ না হলেও, আমি বলবো বহুলাংশে অসত্য এবং আপত্তিকর। এটি একটি সাংঘাতিক রকমের জেনারেলাইজড অবজার্ভেশন ও কমেন্ট। বাক্যের দ্বিতীয় শব্দটি- 'কেবল' বাক্যটিতে একটি ভয়ঙ্কর মাত্রা যুগিয়েছে। আর শেষাবধি পরের বাক্যগুলো ক্রমান্বয়ে পুরুষবিদ্বেষ প্রসূত, এবং একই দোষে দুষ্ট।
যে পুরুষ তার নিজের মাকে সম্মান করতে জানে না, সে কখনোই মাতৃত্বকেও সম্মান করতে জানবে না।