নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সায়েমা খাতুনঃ নৃবিজ্ঞানী, এথনোগ্রাফার এবং গল্পকার

সায়েমার ব্লগ

সায়েমা খাতুনঃ নৃবিজ্ঞানী, গবেষক ও লেখক

সায়েমার ব্লগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বজুড়ে বাংলা ভাষার চর্চাঃ প্রসঙ্গ উত্তর আমেরিকা

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৭:১৯

বাংলাকে কেন আমাদের দরকার? আরও স্পষ্ট করে বললে বলা যায়, এই গোলকায়নের যুগে কেন আমাদের বাংলাকে দরকার?

বাংলাদেশীরা এখন বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে একটা উল্লেখযোগ্য ডিয়াস্পরা বা দেশান্তরী জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করেছে, যাদের বলা হচ্ছে, অনাবাসী বাংলাদেশী। ২০১৫ সালে এই ছড়িয়ে পড়া দেশান্তরী বাংলাদেশীরা দেশে ১৫.৪ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন।বিরাট বড় একটা দেশান্তরী বাংলাদেশী গোষ্ঠী কর্মরত আছেন সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এবং সারা বিশ্ব জুড়ে। বাংলাদেশ সরকার এবং UNDP এর যৌথ হিসেবে বলা হয়েছে, ২৪,০০,০০০ বাংলাদেশী অভিবাসী অথবা স্থায়ী কর্মী হিসেবে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী অভিবাসীর সংখ্যা প্রধানত ১৯৭০ এর দশক থেকে বাড়তে শুরু করে, ২০০০-২০১৫ সালের দিকে ৫৭,০০০ থেকে ১,৮৮,০০০ জনে পৌঁছায়।এদের প্রথম ভাষা বাংলা।

বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশী মানুষ যে ভাষাগুলোতে কথা বলে তার মধ্যে বাংলা ভাষার স্থান ৭ম।পৃথিবীতে মোটামুটি ২৬,৫০,০০,০০০ মানুষ বাংলায় কথা বলে জানা যাচ্ছে।এর মধ্যে ২২,৮০,০০,০০০ জনের প্রথম ভাষা এবং আরও ৩,৭০,০০,০০০ জনের দ্বিতীয় ভাষা বাংলা। বাংলার সীমানা পেরিয়ে বৈশ্বিক কজমোপলিটান লন্ডন, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি, লস এঞ্জেলেস, টরোণ্টো, প্যারিস, সিডনী, বার্লিনের মত শহরগুলোতে আমরা ধীরে ধীরে একটা ভিন্ন ধরনের বাংলা কমিউনিটি গড়ে উঠতে দেখতে পাচ্ছি।এই বাংলাভাষী কমিউনিটিগুলো নতুন দেশে নতুন ধরনের জীবনাচারে নিজেদের মানিয়ে নিতে নিতে নিজেদের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিকেও বিশ্বময় ছড়িয়ে দিচ্ছে।বাংলা খাবার, পোশাক, আচার-উৎসবকে একটা কজমো জীবনধারায় নিয়ে আসছে।এই বড় বড় বৈশ্বিক শহরগুলোর বহুত্ববাদী সংস্কৃতির বুনটের ভেতর বাঙ্গালীরা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চায় একটা নতুন চেতনার আভাস ফুটে উঠেছে। বাংলা ভাষা এবং সাহিত্যের নতুন এক ধরনের চর্চা গড়ে উঠছে। এই সব দেখে শুনে, এমন আশা কি যুক্তিসঙ্গত হবে যে, কয়েক প্রজন্ম পরে দেশের সীমানা পেরিয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নতুন নতুন কেন্দ্র গড়ে উঠার সম্ভাবনা আছে?

বাংলার বাইরে বাংলা ভাষার চর্চার ক্ষেত্রে প্রধান ভাবনা বা দুর্ভাবনা হল, অভিবাসী পরিবারের বাচ্চাদের বাংলা ভাষা শেখানো।পরের প্রজন্মের মধ্যে বাংলাকে সঞ্চারিত করা।এই ভাষা শেখানোর জন্যে এই সব শহরগুলোতে কমিউনিটির উদ্যোগে অনেক অনেক বাংলা স্কুল গড়ে উঠেছে, যেগুলোকে ভাষা-শিক্ষণ বিদ্যার পরিভাষায় বলা হচ্ছে পরম্পরাগত ভাষার(Heritage Language)বিদ্যালয়।এই স্কুলগুলোর কোন কোনটির বয়েস ৩ থেকে ৪ দশক পর্যন্ত।বাংলা স্কুল ছাড়াও বইমেলা, বাংলা পত্রিকা, সাহিত্য সংগঠনও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাঙ্গালী অধ্যুষিত মহানগরগুলোতে যারা নিয়মিতভাবে তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে এবং পশ্চিমা কলোনিয়াল দেশের কেন্দ্রগুলোতে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসার ঘটিয়ে চলছে।মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোর এইসব উদ্যোগগুলোর সাথে কোন কার্যকর যোগাযোগ বা সমর্থনের কর্মসূচি নেই বললেই চলে।

আমরা উইস্কন্সিনে বসাবাসরত বাংলাদেশীরা স্বেচ্ছাশ্রমে একটা বাংলা স্কুল ২০১৫ সাল থেকে কমিউনিটির উদ্যোগে চালিয়ে আসছি।এই অক্ষর বাংলা স্কুলে শিক্ষার্থীদের সামনে আমাদের প্রথম যে প্রশ্নটার মুখোমুখি হতে হয়, তা হল, কেন আমাদের বাংলা দরকার?পরিবারগুলো ভাবছে, এখানে বড় হওয়া বাচ্চারা বাংলা শিখে কি করবে?আমেরিকা-কানাডায় বড় হওয়া বাচ্চারা কেন আদৌ বাংলা শিখতে যাবে?এতো রকম কোর্সের চাপের মধ্যে আবার বাংলা কখন শিখবে?মা-বাবা আর কত জায়গায় দৌড়াবে?এই দেশে বাংলা শেখার জাগতিক ও প্রায়োগিক কোন সুবিধা (বাংলা ভাষার প্রতি ভালবাসা ছাড়া)আছে কিনা?বাংলার শিক্ষকেরা ভাবছেন, দ্বিতীয় ভাষা বা পরম্পরা ভাষা হিসেবে বাংলা শেখানোর চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে, বাংলা ভাষা শেখানোর প্রচলিত টেক্সট বইগুলো কি এই দেশে তেমন করে কাজে লাগবে?এই ভাষাশিক্ষণের pedagogical ও টেকনিক্যাল চ্যালেঞ্জগুলো কি?

- এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমরা এখনও স্পষ্ট করে বলতে পারি না।কিন্তু আপাতত এই প্রশ্নগুলোই বাংলা চর্চায় একটা অগ্রগতির চিহ্ন বলে মনে করি।

গত কয়েক দশক ধরে বাংলা ভাষা চর্চার ক্ষেত্রে অনেক বড় বড় বদল আসছে।বিশ্বায়নের চাপ এবং ইংরেজি ও হিন্দি ভাষার আধিপত্যে বাংলা ভাষা প্রবলভাবে রূপান্তরিত হয়ে চলেছে। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবেই বানানরীতির আমূল বদল আনা হয়েছে। আবার কথ্য বাংলায় অনায়াসে প্রচুর ইংরেজি পদের ব্যবহার স্বাভাবিক হয়ে গেছে।সুশীল ভদ্রলোকের নাগরিক বাংলাকে কৃত্রিম ও জনবিচ্ছিন্ন বলে এখন বিরাগও প্রবল।সাহিত্যের ভাষায় এবং মিডিয়ায় সুশীল বাংলার ব্যবহারকে অহরহ কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে। সামাজিক গণমাধ্যমে, বিশেষ করে ফেসবুকে, বাংলা লেখালেখির এক রকম বিস্ফোরণই ঘটেছে। বলা চলে, ডিজিটাল নাগরিকদের আত্মপ্রকাশে বাংলা ভাষায় মত-ভাব-ভাবনার প্রকাশ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে, যার মুখোমুখি হওয়ার সময় আমরা একবার এই জলধিতরঙ্গে ডুবে যাচ্ছি, এবং ভেসেও উঠছি।আমার কাছে এই সময়টাকে সৃষ্টির পূর্ববর্তী বিশৃঙ্খলার মত বোধ হয়।একটা বড় ধরনের রূপান্তরন দৃশ্যমান হল, পশ্চিমবঙ্গের বাংলাকে মান ধরে নেয়ার কলোনিয়াল অভ্যাস থেকে অনেক দূরে সরে আসা সম্ভব হয়েছে।বাংলার সম্মুখে নতুন যুগ উঁকি দিচ্ছে।বাংলা ভেঙ্গে চলছে চিরচেনা, জানা-শোনা, প্রচলিত ভাবনার ও ভৌগোলিকের দৃশ্য-অদৃশ্য সীমানাগুলোকে।

ফেব্রুয়ারি ২০-২১, ২০২৪
উইস্কন্সিন

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:১০

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: বাঙালী জাতির জীবন মানের যত উন্নয়ন ঘটবে বিশ্বজুরে বাংলা ভাষার ততো প্রসার ঘটবে, সফল হউক একুশের চেতনা।

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:২৫

শেরজা তপন বলেছেন: আপনার শেষের কথাগুলোর উত্তর আসলে কারো কাছেই নেই- কিন্তু প্রশ্নগুলো তো ঠিক, শুধু ভালোবাসার টানে অযথা শিশু কিশোরদের চাপ দিয়ে এমন একটা কঠিন ভাষা শিখিয়ে কি লাভ?

৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:০৫

কামাল১৮ বলেছেন: বিদেশে যারা বাংলা শিখছে তারা শিখছে বাবা মার প্রেরনায়।মূল সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শুধু ভাষা শিখে তারা বাংলাদেশে গিয়ে সেই সমাজের সাথে খাপ খেয়ে চলতে পারবেনা।বরং যে দেশে বাস করে সেই সমাজের সাথে গভীর ভাবে মিশে যাওয়াই ভালো।
বিহারিরা যদি বাঙালির সাথে একাত্ম হয়ে মিশে যেতো তবে তাদের এই সমস্যা হতো না।যারাই মূল সমাজ থেকে বিছিন্ন হয়ে বাঁচতে চেয়েছে তারাই ইতিহাসের কোন এক সময়ে সমস্যায় পড়েছে।মঙ্গল যে দেশ বাস করছে সেই দেশের মূল স্রোতে মিশে যাওয়া।

৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:৪৬

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: ইউকের অনেক টেক্সি চালক,হোটেলবয় দেশে এলে খুব গর্বের সাথে বলে,"আমার ছেলে মেয়ে বাংলা জানেনা "

৫| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩

এম ডি মুসা বলেছেন: বাঙালি জাতি সংকর জাতি।

৬| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:০৬

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: তথ্য বহুল পোস্ট। আসলে যোগ্যতমের জয় হয় এটা ভাষার বেলায়ও ব্যতিক্রম নয়...দেখা যাক কি হয়।

৭| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: বিদেশ গেলে টের পাওয়া যায়, নিজের দেশ কি আর নিজের ভাষা কি?

৮| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৭:২৪

সায়েমার ব্লগ বলেছেন: আপনার সকলের সুচিন্তিত মন্তব্যের জন্যে অশেষ ধন্যবাদ!

৯| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:১২

ধুলো মেঘ বলেছেন: ইউটিউবার ট্রাভেল ভ্লগার নাদিমের বাংলা শুনলে মনে হয় বাংলা ভাষার গ্লোবাল কন্ডিশন আসলেই খুব খারাপ। কোক স্টুডিওতে দেখলাম এক ঢঙ্গী গায়িকাকে দিয়ে শাহনাজ রহমাতুল্লার গাওয়া 'ঘুম ঘুম ঘুম' গানটি গাওয়ানো হয়েছে। সেই এই গানটাকে রীতিমত বলৎকার করে ছিবড়ে বানিয়ে ছেড়েছে। পরে এক সাক্ষাৎকারে দেখলাম এই গায়িকা বাংলায় কথাই বলতে পারেনা। এমনকি বাংলা বোঝেও না। এই হচ্ছে ভাষা চর্চার হাল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.